প্রিয় মডারেটর, আমি মুক্ত মনায় কিভাবে লেখা পাঠাতে হয় সেই পেজ পড়ে এই
লেখাটার চেষ্টা করেছি। আমি আপনার ব্লগে দারুচিনি দ্বীপ নামে মন্তব্য করে
থাকি। আমি
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=37992 এই লেখাটা আর কিছু
মন্তব্য পড়ে, একজন কে উত্তর দিতে গিয়েই লেখা আকারে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আমি জানি না যে লেখার শিরোনাম কি মেইলের সাব্জেক্ট হিসাবে ইউজ করতে হয়
নাকি, নিজে যে নামে মন্তব্য করছি সেই নাম। আমার এই সিমাবধতাকে
ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি। নিচে শিরোনাম সহ লেখাটা দিলাম,
আর লেখার শেষে আমার নিক নেমের সাক্ষর। বিনীত
দারুচিনি দ্বীপ
মার্ক্সবাদী দের প্রতি
( মার্ক্সবাদের সপক্ষে নামক লেখায় কিছু মার্ক্সবাদীদের; বিশেষ করে
সুব্রত সরকার কে প্রশ্ন করতে গিয়ে ভাবলাম যে লেখা আকারে দেবার চেষ্টা
করি)
প্রথমে একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু । কিছু মানুষ আজকাল ধুয়া তোলে, "পুঁজিবাদ,
সমাজতন্ত্র বুঝিনা, আমি চাই মানুষের পেটে ভাত থাক"! খুবই ভাল কথা সন্দেহ
নেই, কিন্তু এর বাস্তবতা কতখানি
আপনি নিজে যদি একবেলা পেটভরে খাবার খান, তবে যে অন্য আরেকজন কে বঞ্চিত
করেই খাবারটা খাচ্ছেন এটা বোঝেন কি? যেখানে দুনিয়াতে বিলিওন মানুষ না
খেয়ে থাকে আর বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরে, সেখানে আপনি যদি ৩ বেলা শুধু
মাত্র ভাত খেয়েও থাকেন তবু কি সেটা স্বার্থপরতা নয়? আপনি কি আরেকজন কে
বঞ্চিত করেই খাবারটা খাচ্ছেন না? একটু পৃথিবীর মোট জিডিপি কে জনসঙ্খ্যা
দিয়ে ভাগ করেই দেখুন না যে ১% এর সম্পদ কেড়ে নিলেই কি বাকি ৯৯% এর পেট
ভরে যাবে?
সেখানে কিছু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মারক্সিস্ট শুধু যে ৩ বেলা খাবার খান
তা নয়, শীত কালে খুবই আরামদায়ক পোশাক পড়েন, অনেকের হয়ত গাড়িও আছে। যেখানে
কত লোক কঠিন শীতের ভেতরে খালি গায়ে ফুটপাতে শুয়ে হিহি করে কাঁপছে, আর
মৃত্যুর প্রহর গোনার পাশাপাশি এই বসে আছে যে কখন কেউ তাদের একটা গরম
কাপড় দিয়ে যাবে?
তাহলে এখানে আপনারা নিজেরা এত আরাম করেন, আর মুখে সমানাধিকারের বুলি
আওড়ান, কিন্তু কাজের কাজ কতটা করছেন এখানে?
আধুনিক পুঁজিবাদের এই বিরাট যদি দাঁড়িয়ে থাকে লক্ষ কোটি মানুষের অদৃশ্য
কান্না ঘাম রক্ত অশ্রুর গ্রহ-সমান জেলির উপরে, তবে এদের জন্য কতটা কি
করেছেন আপনারা?
অন্তত ইন্টারনেট বিলটা ( মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আর পানি সবচেয়ে
গুরত্ব পুর্ন, ইন্টেরনেট ছাড়াই মানুষ দিনের পর দিনে খুব ভাল ভাবেই
বেঁচেছে, আমি ইন্টারনেট ব্যবহারের বিরুদ্ধে না, আমি শুধু এই অপ্সহন
মার্ক্সিস্ট দের জন্যেই তুলে রাখছি) না দিয়ে তো সেটাও তাদেরকে সব
মারক্সিস্ট দিয়ে দিতে পারেন, যেন সবাই একটা করে কম্বল পায়, সেটা করেন না
কেন?
বড়বড় আর্টকেল ছাপিয়ে আর শীতের ভিতরে হিটিং সিস্টেমে ঘুমিয়ে, গরমের দিনে
এসি গাড়িতে চড়ে ( সবাই না অনেকেই), বড় বড় মানবতার বুলি আওড়ানো যত সহজ,
এইগুলো বিসর্জন দিয়ে কাজটা বাস্তবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক ততটাই
কঠিন। এই সহজ জিনিসটা কেন যে অনেক মানুষ অনুধাবন করতে পারেন না কে জানে।
<blockquote> আপনারা প্রত্যেকেই ভালো ক্যারিয়ারের মানুষ, অত্যন্ত
নিরাপদ জীবন যাপন করেন। ফলে ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা আপনাদের ভাবায় না।
ভাবায় যা খুশী করতে পারবার স্বাধীনতা, যা খুশী বলতে পারবার স্বাধীনতা
থাকা না থাকার প্রশ্ন।এই কারণেই আপনারা কোন তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর ইমার্জেন্স দেখেন, মিলিওনার হতে দেখেন কিন্তু ১% পার্সেন্ট
ভার্সাস ৯৯% আন্দোলন দেখেন না।</blockquote>
এখানে আমি সবিনয়ে প্রশ্ন করতে চাই যে মার্ক্সবাদের পুজারী হিসাবে কি
নিজেরা সত্যি এই ৯৯% এর ভিতর পড়েন? আপনাদের জগত কাপানো বিপ্লবী চে
গুয়েভারা হাভানা চুরুট ঠোটে নিয়ে পোজ দেয়া ছবি বা আইকন কি আপনাদের চোখ
খুলে দিতে পারে না? ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কোহিবা চুরুট ফোঁকাটা নিশ্চয়ই ভুলে
জান নি কেউ? একটা হাভানা চুরুটের দাম কত? আর কিউবানদের উপার্জন কত সেটা
কি আপনারা জানেন না? নাকি বলবেন যে উনারা রাষ্ট্রীয় কাজে এবং জনগনের
সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাই কিছু বাড়তি সুবিধা তাদের প্রাপ্য?
সেখানে আমার প্রশ্ন হল যে সেই কিছুটা সুযোগসুবিধা আসলে কত বেশি হতে পারে?
চিরকাল সমাজতন্তের নামে যে রাষ্ট্রীয় ধনতন্ত্রের জন্ম হয়েছে, এবং সেখানে
দেশের সব সম্পদ যে ১% মানুষের চেয়েও অনেক কম লোকের হাতে থাকে সেটা কি
সত্যি আপনারা বোঝেন না? আদর্শবাদ কি আপনাদেরকে এতটাই চিন্তাশুন্যহীন
রোবটে পরিনত করেছে?
মানুষের বেঁচে থাকতে দরকার খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান আর চিকিৎসা। ক্ষুধা
যেখানে সর্বগ্রাসী, সেখানে না হয় আরেকটি মৌলিক চাহিদা যেটা কিনা শিক্ষা
সেটা বাদ দিয়ে গেলাম। তো আপনারা মার্ক্সবাদীরা তো এখানে বলবেন যে আপনারা
তো এই বঞ্চিত মানুষদের জন্যেই কাজ করেন।
তবে আমি বিনীত প্রশ্ন করতে চাই যে আসলে কি কাজ করেছেন এবং কতখানি করেছেন,
এর একটা প্রমান সহ বিস্তারিত বর্ননা দিচ্ছেন না কেন? নাকি বলবেন যে এ
নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন আর লেখালেখি করছেন যেন জনসচেতনতা বারে?
সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল, " ফেসবুক, বা কোন ফোরামে লম্বা লম্বা লেখা
দিয়ে, আর আবেগপুর্ন কিছু বাগাড়ম্বর করার চাইতে আমার মনে হয় পারলে এই
সময়টা সরাসরি সেই বঞ্চিত মানুষদের পিছনেই ব্যয় করুন না কেন?
আর কিছু না ছাড়তে পারেন, প্রথমে সাইবার লাইফের ঝড় থামান, আপনারা জানেন কি
যে ১ এম বি পি এস আনলিমিটেড ইন্টারনেট কিনতে আপনি যে টাকা বাংলা লায়ন বা
কিউবি কে,দেন সেই টাকা দিয়ে ১ মন মোটা চাল পাওয়া যাবে সাথে কিছু কলাইয়ের
ডাল, একটা দরিদ্র পরিবার এতে অন্তত নুনভাত খেয়েও একটা মাস কাটাতে পারবে?
সেখানে নিজেরা এত খরচ করে বাকি ১% ( চিন্তা করবেন না আমি কিন্তু ৯৯%
লোকের একজন; নেহায়েত সৎ মধ্যবিত্ত মানুষ যাকে কিনা খুব হিসাব করে খরচ
করতে হয়) এর টাকা কেড়ে নিয়ে তথাকথিত জনতার সম্পদ জনতাকে ফিরিয়ে দিয়ে কি
সত্যি পৃথিবী কে ক্ষুধা মুক্ত করতে পারবেন? আর পারলেও সেটা কতদিন? জানেন
কি যে ভিক্ষা বৃত্তি করে পেটের ভাত জুটলেও ভিক্ষুকের সংখ্যা কমে না?
এবার অশোক বাবুর প্রতি,
<blockquote>এদের অনেকে সারাদিনে একবারও প্রস্রাবখানায় যেতে পারে না,
বাড়ি থেকে যে টিফিন নিয়ে যায় তা খাওয়ার সময় পায় না, এই পরিস্থিতির মধ্যে
এদের কাজ করতে হয়।</blockquote>
এই তথ্য পেলেন কোথায় যেটা কিন্তু জানান নি। আর পেলেও কেন এইসব তথ্য শুধু
মারক্সিস্ট রাই পায়? আমাদের মত খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত মানুষরা পায়না কেন?
কই আমাকে তো এমন ভাবে কাজ করতে হয় না। যদিও আমি বাংলাদেশেই থাকি।
তবে আমার দু এক জন বন্ধু আর আত্মীয় আরেক পুঁজিবাদী বা তাদের দোসর ইউকে বা
অস্ট্রেলিয়া থাকেন। তাদের মুখ থেকে কেন আমি এই আজব কথা শুনি না? নাকি আমি
মারক্সিস্ট না বলেই আমাকে সত্য কথা বলেন না তাঁরা??
দয়া করে কি এইসব প্রশ্নের জবাব দিবেন? খুবই সোজা প্রশ্ন, পেটে ভাতের সাথে
জড়িত প্রশ্ন,শিক্ষিত মধ্য বিত্তের ৯টা থেকে ছয়টা পর্যন্ত অফিস করে যদি
তাঁরা কিছু সঞ্চয় করেন, তবে সেটা বাড়তি আর অদরকারি হিসাবে জনতার সাথে
শেয়ার করার নামে লুট করার প্রশ্ন , যা মোটেই কোন আদর্শবাদ কে ধারন করে
না, বিজ্ঞানকেও না, শুধুই ধারন করে দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই
ব্লগের যেসব লোক কে আপনারা অনেকেই দ্বি চারি বলছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
চাইবার অপরাধে (!) \, সেখানে আসল দ্বিচারিতা কি আপনারা জনগণের সেবক
মার্ক্সবাদীরাই করছেন না??
আমার নিজের অভিজ্ঞতার ২টা ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরন দিয়ে শেষ করব। প্রমান
চাইলে দিতে পারব না, আগেই বলে রাখছি। আমার এলাকায় "লেদু মিয়া" নামে এক
লোক আছেন ( আসল নাম)! তিনি এখন বৃদ্ধ । শিশুকাল থেকে নিদারুন অভাব অনটনের
মধ্য দিয়ে, না খেয়ে, আধা পেটা খেয়ে কাটাতেন তিনি ( কোন বিপ্লবী কিন্তু
একবেলা ভাত দেয়নি তাকে), অন্যের দোকানে কাজ করতে শিশু কাল থেকেই। আজ তিনি
আমার এলাকার সবচেয়ে বড় টাইলসের ব্যবসায়ী, এবং কোটি পতি। নিজের নামও লিখতে
জানেন না।
আমার জানা মতে কাউকে ঠকিয়ে তিনি এক পয়সা আয় করেনি, পুরোটাই তার রক্ত আর
ঘামের ফসল।অনেক জনসেবা তিনি করে থাকেন সাধ্যমত ( যেখানে বিপ্লবীদের টিকি
চিহ্ন পাওয়া যায় না), এতিম খানা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা সব জায়গাতেই তিনি
দান করেন। আরো কত যে কি করেছেন তার হিসাব নেই! তবে জনতার সম্পদের নামে কি
এই লোকের কোটি কটি টাকা জিনি কিনা নিজের ঘাম আর রক্ত ঝরিয়ে, না খেয়ে
থেকে, কোন জনদরদী মার্ক্সসবাদীর একফোঁটা সাহায্য না পেয়ে করেছেন, সেই
সম্পদ টাও কি বাকি ৯৯% কে বিলিয়ে দিতে হবে তার? সেটা কোন যুক্তিতে? এটা
আমার জানা পরোক্ষ ঘটনা, বাবা চাচাদের মুখে শোনা, যদিও লেদু মিয়া আজো বেচে
আছেন, কিন্তু তার সংগ্রামের দিনগুলিতে আমার জন্মই হয়নি। আর লেদু মিয়া কি
পুঁজিতে ব্যাবসা শুরু করেছিলেন জানেন? আপনারা যারা মাল্টিন্যাশনাল
কোমপানীতে কাজ করে, মার্ক্সবাদের পুজা করেন, আপনাদের মাসিক বেতনের
অর্ধেকের কম টাকা নিয়ে ইনার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
এবার আমার চোখের সামনে ঘটা একটা ঘটনা। সুজন ( নাম বদলে দিলাম) নামের এক
ছেলে আমার শশুরবাড়িতে ঘরমুছতো আর কাপড় কেচে দিত। এরকম অনেক বাড়িতেই সে
কাজ করত, শিশুকাল থেকে, সেই সাথে একটু বড় হবার পর একই সাথে আরো পরিশ্রম
আর সাথে কিছু জমা টাকা আর ধার করা টাকা ( সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত
মার্ক্সবাদীদের বাড়িভাড়ার সমান আর কি) নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করে। এখন
তার বয়স ২৭/২৮ হবে। সে ঢাকার বাহির টাউন সাইডে ৩ কাঠা জমি কিনে ফেলে
রেখেছে কবে দাম বাড়বে সেই আশায়। ওই মাত্র ৩ কাঠা অবশ্যি লেদু মিয়ার কোটি
তাকার কাছে কিছুই না, তবু দুজনের বয়স বিবেচনায় সুজনও পিছিয়ে নেই।তবে কি
ওই ছেলের খেয়ে না খেয়ে জমানো টাকায় কেনা জমি টা মার্ক্সবাদীরা জনতার
সম্পদ ভেবে বিপ্লব করে লুট করবে? সুজন কাউকে ঠকিয়ে টাকাটা উপার্জন করে
নি।
দারুচিনি দ্বীপ
বি.দ্র.এটাই আমার প্রথম লেখা। জানি না ছাপা হবে কিনা, তবে যদি ছাপা হয়
তবে আমার সীমাবদ্ধতাগুলিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে লেখাটিকে কিভাবে
আরো সমৃদ্ধ করা যায়, সেটির দিক নির্দেশনা পাঠকরা এবং আরো অভিজ্ঞ লেখকরা
দয়া করে দিবেন, এই আবেদন রাখছি!