[Attachment(s) from Sitangshu Guha guhasb@gmail.com [mukto-mona] included below]
বাংলাদেশে কখনোই তালেবানী পতাকা উড়বে না: গাফফার চৌধুরী
কিংবদন্তীর সাংবাদিক, একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে কখনোই কোন তালেবানী পতাকা উড়বে না- এ বিশ্বাস নিয়ে আমি ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শত অপপ্রচার ও প্রতিকুলতার মধ্যে আজকে এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি যেভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাতে আমি আশাবাদী। বাংলদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির বিজয় নিশ্চিত। আজ রোববার ১২ জুলাই জ্যামাইকার ক্রাউন প্লাজা হোটেলের সভাকক্ষে নিউইয়র্ক প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ পক্ষীয় বাঙালি সমাজ প্রদত্ত নাগরিক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠানের মডারেটর মুক্তিযোদ্ধা ড: নুরুন নবী বলেন, আমাদের এই অনুষ্ঠানটি ছিলো জ্যাকসন হাইটসের জুইস প্লাজায়। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির হুমকিতে জুইস প্লাজা কর্তিপক্ষ ভেন্যু বাতিল করে দেয়। ফলে কয়েক ঘন্টার নোটিশে আমাদের এই সভার আয়োজন করতে হয়। ড: নূরন নবী বলেন, মৌলবাদী শক্তি ঘোষণা দিয়েছিলো, তারা কোন অনুষ্ঠান করতে দেবেনা। কিন্তু আজ উদীচী ও আমরা দু'টি অনুষ্ঠান করে তার জবাব দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে জনাব গাফফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের শত্রু দুইটি: মৌলবাদ ও দুর্নীতি। এ দু'টো ধ্বংস করা না গেলে আধুনিক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করা যাবেনা। এজন্যে সেকুলার সোসাইটির ভুমিকা অনেক বেশি। তিনি বলেন, ধর্মান্ধতা বাংলাদেশে প্রগতির পক্ষে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদীরা প্রগতিশীলদের 'মুরতাদ' ঘোষণা দেয়া সম্পর্কে গাফফার চৌধুরী বলেন, একদা এই মৌলবাদী গোষ্ঠী কাজী নজরুল ইসলামকে 'কাফের' ঘোষণা করেছিলো। এমনকি কাজী নজরুলকে ঢাকায় সভা পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। কিন্তু আজ নজরুলকে বলা হয়, 'মুসলিম গণজাগরণের নায়ক'। কবি ইকবালকে 'কাফের' ঘোষণা করেছিলো মৌলবাদীরা। অথচ সেই ইকবালই এখন পাকিস্তানের জাতীয় কবি। তিনি বলেন, এইসব মৌলবাদী ও ফতোয়াবাজদের দের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন দরকার। তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে আজ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অবস্থা করুন। তিনি বলেন, অন্য ধর্মীয় মানুষের হাতে যত মুসলমান মারা যাচ্ছে, তারচেয়ে দশগুণ বেশি মুসলমান মারা যাচ্ছে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। তিনি বলেন, একসময় ভেটিকানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্রিস্টানরা আন্দোলন করেছিলো। তেমনি এখন মৌলবাদ ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দরকার।
অনুষ্ঠানে একুশের গানের প্রনেতা গাফফার চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পক্ষ থেকে একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এটি প্রদান করেন পরে শোনান বেলাল বেগ। সন্মিলিতভাবে এটি তার হাতে তুলে দেন, সৈয়দ মোহন্মদউল্লাহ; বেলাল বেগ; শিতাংশু গুহ, উদীচীর সুব্রত বিশ্বাস; ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ফাহীম রেজা নুর ও স্বীকৃতি বড়ুয়া। ক্রেস্টে লেখা ছিলো:
কিংবদন্তী কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী
বাঙালির নবজাগরণের যাদুমন্ত্র, অমর একুশের গান, "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি"র রচয়িতা, কিংবদন্তী কলাম লেখক, কবি ও সাহিত্যিক, নির্ভীক সাংবাদিক, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অকুতোভয় সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্নেহধন্য, বাঙালি জাতীয়তাবাদের মহীরুহ, দৃপ্তকন্ঠ, আবদুল গাফফার চৌধুরীর বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং দেশ ও জাতির প্রতি বহুমুখি অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কৃতজ্ঞ দেশবাসীর পক্ষে এই শ্রদ্ধাঞ্জলী তাঁর করকমলে অর্পন করা হল।
নিউইয়র্ক প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ পক্ষীয় বাঙালি সমাজ, জুলাই ১২, ২০১৫
শুরুতে উদীচীর শিশু শিল্পীরা দু'টি গান পরিবেশন করে। একুশের গান পরিবেশনার সময় সবাই উঠে দাড়িয়ে সন্মান জানান। অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গাফফার চৌধুরীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন, ড: জিনাত নবী; নিনি ওয়াহেদ, মিথুন আহমদ, শাম্মু; আলপনা গুহ, উর্বি হাই, জীবন বিশ্বাস
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিতাংশু গুহ-র যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কিত এক প্রশ্নোত্তরে জনাব গাফফার চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ত থেকে বহু যুদ্ধাপরাধীর জন্ম হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। মূল অপরাধীদের বিচার শেষ হবেই। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই এই বিচারটা হতে পারছে, অন্য কারো পক্ষে এই বিচার করা সম্ভব ছিলো না। এই বিচার শেষ করতে শেখ হাসিনাকে সাহায্য করতে একট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দরকার। সাংবাদিক মাহবুবুর রহমানের আজকের এই অনুষ্ঠান স্থানান্তর আয়োজকদের বাধ্যবাধকতার কারণ হিসাবে মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রের কথা বললে, হাউজ থেকে জামাত-বিএনপি'র বিরুদ্ধে 'শেম শেম' উচ্চারিত হয়। সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মিথুন আহমদ প্রশ্ন করেন, মৌলবাদীদের উত্থান বা সাম্প্রতিক সংকট থেকে উত্তরণের রণকৌশল কি হওয়া উচিত? উত্তরে গাফফার চৌধুরী বলেন, এজন্যে একটি সামাজিক বিপ্লব দরকার। হাসিনার পক্ষে একা কঠিন। তিনি বলেন, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
__._,_.___