শিবিরের বুকে লাল-সবুজ, ব্যানারে 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো'!
প্রকাশিত: বিকাল ০৫:০১ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
সম্পাদিত: রাত ০৪:২৫ ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট ।।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আল বদর সেজে বুদ্ধিজীবীসহ বাঙালিদের হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল বিজয়ের ৪৪ বছর পর সেই সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা এবার রাজধানীর রাস্তায় প্রকাশ্যে করেছে বিজয় র্যালি। রীতিমতো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজয় দিবসের সকালে রাজধানীতে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে বিজয় র্যালি করেছে সংগঠনটি। এমনকি তাদের ব্যানারে লেখা ছিল 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো'!
অথচ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত এ সংগঠনসহ তাদের মূল সংগঠন জামায়াতের রাজনীতি মার্চ মাসের মধ্যে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল।
জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি'র সঙ্গে যৌথভাবে র্যালি করার প্রস্তাব দিয়েছিল জামায়াত-শিবির। কিন্তু বিএনপি সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এককভাবে র্যালি করে শিবির। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম নামে চারটি ভাগে নেমে সকালে বিজয় মিছিল শুরু করে শিবির কর্মীরা।এসব র্যালিতে দলটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নেতা-কর্মী অংশ নেয়।
এদিনে একেকটি বিজয় র্যালিতে তাদের একেক রকম প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখার র্যালিতে অংশ নেওয়াদের মধ্যে সামনের দুই সারির নেতা-কর্মীদের পরিধানে ছিল বাংলাদেশের পতাকার লাল-সবুজ টি-শার্টসহ রঙ-বেরঙের নানা ধরনের পোশাক, অনেকে শার্টের ওপরে এই টি-শার্ট চাপিয়ে র্যালিতে অংশ নেন।পেছনে অনেকের মাথায় ছিল লাল-সবুজ রঙের ফেটি, হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা।আর সামনে বহন করা ব্যানারে লেখা ছিল 'স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো'! একই রকম প্রস্তুতি নিয়ে র্যালি করেছে সংগঠনটির রাজধানী পশ্চিম শাখাও। তাদের টি-শার্টের বুকে ছিল হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র। এদিন রঙিন সাজে নেমেছিল দলটির দক্ষিণ শাখার নেতা-কর্মীরা। তারা মহান বিজয় দিবস লেখা প্ল্যাকার্ডও বহন করে।এছাড়া সংগঠনটির ঢাকা উত্তর শাখার ইংরেজিতে লেখা ব্যানারে 'কালারফুল র্যালি' লেখা থাকলেও তাদের স্বাভাবিক পোশাকেই দেখা গেছে। র্যালিতে বাংলাদেশের পতাকাও বহন করা হয়।
এ বিষয়ে ছাত্র শিবিরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখা ছাত্র শিবিরের র্যালিটি শুরু হয় সকাল ৭টায় বনশ্রী এলাকা থেকে। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাতের নেতৃত্বে এ র্যালিতে শাখা সভাপতি এম শামিম, সেক্রেটারী শরিফুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার শিবিরের র্যালিটি শুরু হয় বসুন্ধরা এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টায়। কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে এ র্যালিতে শাখা সভাপতি হাসান জারিফসহ শাখার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী পশ্চিম শাখা শিবিরের র্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় মানবাধিকার সম্পাদক শাহ মো. মাহফুজুল হক ও শাখা সভাপতি সুলতান মাহমুদ। সকাল ৮টায় ধানমণ্ডি ১৫ এলাকায় এ র্যালি শুরু হয়ে আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা শিবিরের র্যালিটি বের হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সকাল ৭টায়। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আনিসুর রহমান বিশ্বাস। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল হক, শাখা সভাপতি সাদেক বিল্লাহসহ দলটির উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মী।
লেখক ও অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'তারা মিছিল করতে চাইলে আমরা কী করতে পারি? আমাদের কিছুই করার নাই। তাদের আমরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে পারি, কিন্তু তাতে কী হবে? তারা তো এই দেশের নাগরিক। তাদের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। তারা যে ভণ্ডামির রাজনীতি করে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এগুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।'
এবিষয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আসলে তারা অস্তিত্ব নিয়েই সংকটে পড়েছে। তারা শেষ সময়ে এমন কিছুর চেষ্টাতো চালাবেই। এটা এমন কিছু না। আমাদের বিজয় মিছিলের কাছে, আমাদের জয়বাংলা স্লোগানের কাছে ওদের মিছিল খুবই নগন্য।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামী ছয়মাস বা একবছর পর ওদের চিহ্ন থাকবে না। ওরা হারিয়ে যাবে। ওরা ওদের শেষ চেষ্টাতো করবেই।'
প্রসঙ্গত মুক্তিযুদ্ধকালে এই সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। সংগঠনটির তদানীন্তন কেন্দ্রীয় নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আল-বদর বাহিনী গঠন করে দেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য নেশায় মেতে ওঠে। তারা দেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর হাতের রক্তের দাগ মুছে ফেলতে দলটির নাম পাল্টে ফেলে এর চতুর নেতারা। দলের নতুন নামকরণ করা হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। একইসঙ্গে অন্যান্য জামায়াত নেতার মতো ছাত্রসংঘের নেতারাও এসব হত্যাকাণ্ডের দায় বারবার অস্বীকার করতে থাকে।
তবে দীর্ঘদিন পার হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। সেই বিচারে তদানীন্তন ইসলামী ছাত্র সংঘের দুই শীর্ষ নেতা কামারুজ্জামান সোহাগপুরে গণহত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার অভিযোগে সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। এরই মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
/এসটিএস/এআরআর/টিএন/
Note:
'১৯৭২ সালের দালাল আইন' ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে বাতিল করে দেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের মুক্ত করে দেয় সাবেক এ সামরিক সরকার। এছাড়া যেসব রাজাকার পাঁচ বছর ধরে পালিয়ে ছিল তারাও তখন বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে আসে। এ সুযোগে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় জামায়াত। তাদের পুরনো 'ছাত্রসংঘ'কে নতুন করে ঢেলে সাজায় । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সংগঠনটির কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। রাজনীতির মাঠে প্রকাশ্যে নামে 'বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির' নামের দেশবিরোধী সংগঠনটি।
শুধু 'সংঘ' বাদ দিয়ে 'শিবির' যুক্ত করা হয়, আর সবকিছুই একই থাকে। পতাকা, মনোগ্রাম সবই এক।
নাম পরিবর্তনের নেপথ্যে
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের মূলশক্তি ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের হাতে। কারণ ছাত্র সংঘ মানেই তরুণ রাজাকারদের শক্তি। ১৯৭৬ সালে যখন জামায়াত রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করে তখন জামায়াতের নীতি নির্ধারকদের মনে এই ভয় ছিল যে, ছাত্র সংঘ নামটাকে হয়তো এ দেশের মানুষ একাত্তরে তাদের জঘন্য কর্মকাণ্ডের জন্য ভুলে যাবে না। এই চিন্তা থেকেই তারা ছাত্র সংঘের 'সংঘ' কেটে সেখানে 'শিবির' যোগ করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র সংঘের হিংস্র এবং পৈশাচিক কার্যকলাপ বাংলাদেশের মানুষের মনে একটা স্থায়ী ঘৃণার ভাব সৃষ্টি করেছে। জামায়াত ভালো করেই জানে এই ঘৃণাটা কখনো দূর হবে না। ইসলামী ছাত্র সংঘের কথা উঠলেই অবধারিতভাবে আলবদর বাহিনীর কথা চলে আসবে। ফলে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা বাধাগ্রস্ত হবে।
[A tacit admission :'ইসলামী ছাত্র সংঘই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির, অবধারিতভাবে আলবদর বাহিনী' ।
আলবদর বাহিনী প্রধানত জামায়াতের কর্মী দ্বারাই গঠিত হয়েছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ' নাম পাল্টিয়ে 'বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির' নামে যাত্রা শুরু করে:
GB wkweiB †mB QvÎmsN
http://www.amadershomoys.com/newsite/2015/12/18/468363.htm#.VnNEaLYrJSM
'ছাত্র সংঘ' থেকে 'ছাত্র শিবির' - সামহোয়্যার ইন ব্লগ
ছাত্র শিবিরের আমলনামা (২) - Shobuj Bangla Blog সবুজ বাংলা ...
http://www.somewhereinblog.net/blog/onujibblog/28882040
__._,_.___