সুদখোরদের সমাজসেবার এক ধরনের মুকুট পড়ানো হয়েছে : ড. বারকাত
ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্যমোচন আসলে একটি গল্প
আমাদের অর্থনীতি :06.03.2017
বিশ্বজিৎ দত্ত ও জাফর আহমেদ: ক্ষুদ্রঋণে র সফলতার অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প বা উপাখ্যান শোনা যায় কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল ঠিক তার উল্টোটাই প্রকাশ পেয়েছে। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের অর্থনীতিবিদ ডেভিড রডমেন তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন: 'সবচেয়ে নির্ভুল বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের গড় ভূমিকা শূন্য।'
তবে একটা ব্যাপার সত্য ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে ধারাবাহিকভাবে একটা পক্ষই লাভবান হয়, আর তা হছে ঋণদাতা। যে সুদ তারা আয় করেন তা বার্ষিক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আগে এ ধরনের সুদখোরদের বলা হতো 'ঋণ-হাঙ্গর'। কিন্তু এখন তাদের আখ্যায়িত করা হয় ক্ষুদ্রঋণদাতা হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই ক্ষুদ্রঋণদাতারা সামাজিকভাবে এত স্বীকৃত যে, মনে হয় তাদেরকে সমাজসেবার জন্য এক ধরনের মুকুট পরিয়ে রাখা হয়। এভাবেই দিনে দিনে ক্ষুদ্রঋণ হয়ে উঠেছে গরিবের কাছ থেকে ধন, সম্পদ আনার সামাজিকভাবে গৃহীত পদ্ধতি। উল্লেখ্য, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সমালোচনা করে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি নিবন্ধ ছাপেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের নৃতত্ত্ববিদ জ্যাসন হিকেল। সেখানে ডেভিড রডম্যানের বই থেকে এই অংশটুকু দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্যদূরীকরণ সম্ভব নয় বরং ক্ষুদ্রঋণ পুরো বাংলাদেশকে দারিদ্র্যে পরিণত করার কর্মসূচি।
তিনি বলেন, প্রথমে একজনকে ঋণ দিলে তাকে দারিদ্র্যে বাঁধা শুরু হয়। তারপর ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পুরোপুরি ওই মানুষটিকে বেঁধে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণকারী কিছু লোক ফুলে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়। আর দারিদ্র্যের জালে বাধা পড়ে যান ওই ঋণ গ্রহীতা।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে সবগুলো প্রাক ধারণা নির্ভর। এ সব গবেষণা হয়েছে আগে থেকে নির্ধারিত ফলাফলের ভিত্তিতে। ফলে সব গবেষণাতে ক্ষুদ্রঋণে র মহত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্মোহ গবেষণা হয়নি। ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে ৩০/৪০ শতাংশ সুদ না নিলে মুনাফা করা সম্ভব নয়। ফলে সহজেই অনুমেয় ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্যদূরীকরণের কোনো কর্মসূচি নয়। এটা লাভজনক মুনাফার একটি ব্যবসা। দারিদ্র্যদূরীকরণ করতে মাইক্রোক্রেডিট নয় প্রয়োজন মাইক্রোগ্রান্ড। যা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যমান। অর্থনীতিবিদ ড. এমএম আকাশ বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মানুষ গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ জনকে ক্ষুদ্রঋণ দিলে ৯২ জন দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করতে পারে না।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আমার ব্যক্তিগত গবেষণা যেটা ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে আমি দেখিয়েছি ১০০ জনের মধ্যে ৭ জন মানুষ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছে।
ডিএফআইডির গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণ আসলে 'বালির বসতি'। কারণ ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ সফল ভূমিকা রেখেছে এমন কোনো সঠিক বা নির্ভুল প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং সত্যিকার অর্থে যেটা দেখা যায় তা হচ্ছে, ক্ষুদ্র ঋণ আসলে ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য কমায় না, বরং আরও বাড়ায়। ক্ষুদ্রঋণের বেশিরভাগ অংশই ব্যয় হয় ভোগের পিছনে যা দিয়ে ঋণগ্রহীতা তার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন। যেমন, গবেষণায় দেখা গেছে, সাউথ আফ্রিকায় ক্ষুদ্রঋণের প্রায় ৯৪ ভাগই ব্যয় হয় মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ে। কাজেই এই ঋণগ্রহীতারা ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে নতুন কোনো আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেন না যা দিয়ে তারা ওই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এই ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের আরও ঋণ নিতে হয় এবং তারা এক সময় ঋণের চাপে পিষ্ট হয়ে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে সমালোচক মিলফোর্ড বেটম্যান বলেছেন, এই ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলন আসলে ল্যাটিন আমেরিকায় পরিচালিত মার্কিন মুল্লুকের 'কনটেইনমেন্ট স্ট্র্যাটেজি'-এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যার মাধ্যমে জনগণকে বামধারার আন্দোলন থেকে দূরে রাখা হয়। তারা বলে, দারিদ্র্য আসলে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি ব্যক্তিগত সমস্যা। সম্পাদনা: রাশিদ
বিশ্বজিৎ দত্ত ও জাফর আহমেদ: ক্ষুদ্রঋণে র সফলতার অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প বা উপাখ্যান শোনা যায় কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল ঠিক তার উল্টোটাই প্রকাশ পেয়েছে। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের অর্থনীতিবিদ ডেভিড রডমেন তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন: 'সবচেয়ে নির্ভুল বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের গড় ভূমিকা শূন্য।'
তবে একটা ব্যাপার সত্য ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে ধারাবাহিকভাবে একটা পক্ষই লাভবান হয়, আর তা হছে ঋণদাতা। যে সুদ তারা আয় করেন তা বার্ষিক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আগে এ ধরনের সুদখোরদের বলা হতো 'ঋণ-হাঙ্গর'। কিন্তু এখন তাদের আখ্যায়িত করা হয় ক্ষুদ্রঋণদাতা হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই ক্ষুদ্রঋণদাতারা সামাজিকভাবে এত স্বীকৃত যে, মনে হয় তাদেরকে সমাজসেবার জন্য এক ধরনের মুকুট পরিয়ে রাখা হয়। এভাবেই দিনে দিনে ক্ষুদ্রঋণ হয়ে উঠেছে গরিবের কাছ থেকে ধন, সম্পদ আনার সামাজিকভাবে গৃহীত পদ্ধতি। উল্লেখ্য, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সমালোচনা করে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি নিবন্ধ ছাপেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের নৃতত্ত্ববিদ জ্যাসন হিকেল। সেখানে ডেভিড রডম্যানের বই থেকে এই অংশটুকু দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্যদূরীকরণ সম্ভব নয় বরং ক্ষুদ্রঋণ পুরো বাংলাদেশকে দারিদ্র্যে পরিণত করার কর্মসূচি।
তিনি বলেন, প্রথমে একজনকে ঋণ দিলে তাকে দারিদ্র্যে বাঁধা শুরু হয়। তারপর ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পুরোপুরি ওই মানুষটিকে বেঁধে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণকারী কিছু লোক ফুলে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়। আর দারিদ্র্যের জালে বাধা পড়ে যান ওই ঋণ গ্রহীতা।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে সবগুলো প্রাক ধারণা নির্ভর। এ সব গবেষণা হয়েছে আগে থেকে নির্ধারিত ফলাফলের ভিত্তিতে। ফলে সব গবেষণাতে ক্ষুদ্রঋণে র মহত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্মোহ গবেষণা হয়নি। ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে ৩০/৪০ শতাংশ সুদ না নিলে মুনাফা করা সম্ভব নয়। ফলে সহজেই অনুমেয় ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্যদূরীকরণের কোনো কর্মসূচি নয়। এটা লাভজনক মুনাফার একটি ব্যবসা। দারিদ্র্যদূরীকরণ করতে মাইক্রোক্রেডিট নয় প্রয়োজন মাইক্রোগ্রান্ড। যা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যমান। অর্থনীতিবিদ ড. এমএম আকাশ বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মানুষ গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ জনকে ক্ষুদ্রঋণ দিলে ৯২ জন দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করতে পারে না।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আমার ব্যক্তিগত গবেষণা যেটা ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে আমি দেখিয়েছি ১০০ জনের মধ্যে ৭ জন মানুষ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছে।
ডিএফআইডির গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণ আসলে 'বালির বসতি'। কারণ ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ সফল ভূমিকা রেখেছে এমন কোনো সঠিক বা নির্ভুল প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং সত্যিকার অর্থে যেটা দেখা যায় তা হচ্ছে, ক্ষুদ্র ঋণ আসলে ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য কমায় না, বরং আরও বাড়ায়। ক্ষুদ্রঋণের বেশিরভাগ অংশই ব্যয় হয় ভোগের পিছনে যা দিয়ে ঋণগ্রহীতা তার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন। যেমন, গবেষণায় দেখা গেছে, সাউথ আফ্রিকায় ক্ষুদ্রঋণের প্রায় ৯৪ ভাগই ব্যয় হয় মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ে। কাজেই এই ঋণগ্রহীতারা ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে নতুন কোনো আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেন না যা দিয়ে তারা ওই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এই ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের আরও ঋণ নিতে হয় এবং তারা এক সময় ঋণের চাপে পিষ্ট হয়ে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে সমালোচক মিলফোর্ড বেটম্যান বলেছেন, এই ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলন আসলে ল্যাটিন আমেরিকায় পরিচালিত মার্কিন মুল্লুকের 'কনটেইনমেন্ট স্ট্র্যাটেজি'-এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যার মাধ্যমে জনগণকে বামধারার আন্দোলন থেকে দূরে রাখা হয়। তারা বলে, দারিদ্র্য আসলে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি ব্যক্তিগত সমস্যা। সম্পাদনা: রাশিদ
http://amaderorthoneeti.net/new/2017/03/06/71551/#.WXazCogrKUk
সম্পর্কিত বিষয়:
ইউনূসকে বাঁচাতে জয়কে চাপে রেখেছিল হিলারির দফতর
__._,_.___