পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা হয় একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে। সে খবর লন্ডনে এসে পৌঁছায় পরদিন দুপুরে। ফ্লিট স্ট্রিটের সাংবাদিকরা এবং লন্ডনে নিযুক্ত কয়েকজন ভিন্ন দেশি সাংবাদিক খবরের সত্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহের আশায় বিবিসি বাংলা বিভাগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েকজন সশরীরেও এসেছিলেন আমার অফিসে। বিবিসি বাংলা বিভাগ তখন পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে খবরের নির্ভরযোগ্য উত্স বলে সম্মানিত ছিল। তাছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের সাইক্লোনের সময় থেকে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য খবরের জন্য আমার ওপর নির্ভর করতে শিখেছিলেন এই সাংবাদিকরা।
তাদের প্রায় সবার একটা প্রশ্নে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম। পাকিস্তান থেকে প্রচার করা হচ্ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানে এসেছেন। এ প্রচারণা দিয়ে তারা ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল যে মুজিব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এ ধারণার মোকাবিলা আমাদের জন্য একটা বড় ভাবনা ছিল। ঢাকা থেকে সদ্য লন্ডনে আসা দু'জন পরিচিত লোক দাবি করেছিলেন যে মুজিব পূর্ব পাকিস্তানেই পলাতক আছেন এবং তারা তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। বিবিসি থেকে এদের দু'জনেরই সাক্ষাত্কার প্রচার করা হয়। সাংবাদিকরা আমাদের কথা শুনছিলেন কিন্তু ষোলোআনা বিশ্বাস করেছিলেন বলে মনে হয় না।
বিশ্বাসযোগ্য খবর আমরা পেলাম চার কিংবা পাঁচ দিনের মধ্যেই। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কালুরঘাট রিলে স্টেশন থেকে জনৈক মেজর জিয়াউর রহমান যে ঘোষণা প্রচার করেন, ফরাসি রেডিও তার একটা রেকর্ডিং ঘুরপথে সংগ্রহ করে প্রচার করেছিল। তারপর থেকে আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা এবং সে যুদ্ধে দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিশ্বাস করাতে কোনো সমস্যা হয়নি।
মেজর জিয়াউর রহমানের নাম আমি সে-ই প্রথম শুনেছিলাম। আরও পরে মুক্তিযুদ্ধে তার শৌর্য-বীর্যের আর তার সংগঠনী প্রতিভার খবর ধীরে ধীরে চুইয়ে চুইয়ে আসতে থাকে। বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে যাই। দেশের বিভিন্ন শহর-নগরে গেছি তখন। সর্বত্রই একটা নাম শুনেছি কিংবদন্তির মতোন—মেজর জিয়া, আর তার জেড ফোর্স। কিশোর ছেলেরা বিশেষ করে ধাঁচে চুল ছেঁটে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াত : 'আমি জেড ফোর্স'।
অনেক পরে, তার মর্মান্তিক হত্যারও পর, মূলত ভারত-ঘেঁষা কেউ কেউ পঁচাত্তরের সেনা বিদ্রোহ ও শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নাম জড়িত করার হাস্যকর প্রয়াস পেয়েছেন। বিশেষ করে প্রায় ছয় বছর দিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র'য়ের হেফাজতে থেকে জিয়াউর রহমানের চেষ্টায় দেশে ফিরে এসেই শেখ হাসিনা তত্কালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে খুনি বলে কুত্সা রটনা করতে থাকেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসের র' সম্পাদিত সংস্করণই শিখেছেন, সঠিক ইতিহাস নয়। সুতরাং এজাতীয় দাবি তার পক্ষে অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে অনেকেই কতগুলো ঘটনার মধ্যে যোগাযোগ আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন। ঘটনাগুলো এ রকম : (আগেই বলেছি) প্রায় ছয় বছর হাসিনা ও তার বোন রেহানা দিল্লিতে র'য়ের হেফাজতে ছিলেন। সে সময় দিল্লির নাগরিক সমাজের সঙ্গেও তাদের মেলামেশার সুযোগ ছিল না।
এসব যোগাযোগ উপেক্ষণীয় নয়
জেনারেল এরশাদ ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় র'য়ের উপমহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাসদেও সিংয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার বৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাককে দিল্লি পাঠিয়ে শেখ হাসিনা ও রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া স্বর্ণ ও হীরক অলঙ্কারসহ (টিয়ারা) তখনকার অঙ্কে ৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি হাসিনাকে বুঝিয়ে দেন। হাসিনা দেশে ফিরলেন ১৭ মে ১৯৮১ সালে। তার ১৩ দিনের মাথায় ৩০ মে এক সামরিক ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। মনে রাখতে হবে যে জাতীয়তাবাদী জিয়াকে ভারত মোটেই পছন্দ করেনি। যোগাযোগগুলো উপেক্ষা করার মতো নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৮৬ সালে বিবিসি থেকে ১২ পর্বের একটি অনুষ্ঠানমালা আমি প্রচার করেছিলাম। সে অনুষ্ঠানের অনুলিপি ঢাকার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছিল। সে অনুষ্ঠানগুলোর জন্য আমি সংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর (রানী এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফরের সময়) গুলশানের একটি বাড়িতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার সাক্ষাত্কারও অনুষ্ঠানমালায় সংযোজিত হয়েছিল।
বাকশালী প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকদের নেতা কর্নেল ফারুক রহমান একাধিকবার লন্ডনে টেলিফোন করে আমাকে সাক্ষাত্কার দিতে চেয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদ তার ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কর্নেল ফারুককে নির্বাচন করার সুযোগ দেন। ফারুক তখন আবারও আমাকে ঢাকায় সাক্ষাত্কার দানের এবং তার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার আমন্ত্রণ রাখার প্রবৃত্তি আমার হয়নি। কিন্তু আমার সহকর্মী নিক ন্যূজেন্ট আমার হয়ে কর্নেল ফারুকের সাক্ষাত্কার নেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অশান্তির ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপের কথা ফারুক তখন নিক ন্যুজেন্টকে বলেছিলেন।
কর্নেল ফারুক বলেছিলেন : 'ডিস্ট্যাবিলাইজেশনের পেছনে মূলত বিদেশি দেশগুলো আছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্য বার বার মিলিটারি আসছে; বাইরে থেকে যদি এজেন্ট (পাঠানো এবং) উসকানি দেয়া বন্ধ করে দিত, আর যদি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা যেত, সিভিল-মিলিটারি এক করা যেত, ঔপনিবেশিক পদ্ধতি হটানো যেত, তাহলে বাংলাদেশে কোনো রকমের এই ক্যু-টু বা অসুবিধা হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।'
মোশতাক কীভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন
ছিয়াশি সালে আমি ঢাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাক আহমেদেরও একটা দীর্ঘ সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। মোশতাক সাহেব বিস্তারিত আলোচনায় তখনকার সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বহু কর্মকর্তার নামোল্লেখ করেছেন, কিন্তু একবারও কোথাও জেনারেল জিয়াউর রহমানের নাম আলোচনায় আসেনি। যেমন—১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সকাল বেলা আটটার সময় আমাকে আমার বাসা ৫৪ নম্বর আগা মসিহ লেন থেকে কর্নেল রশিদ সাহেব এবং তার অন্য সহকর্মীরা রেডিও স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে আমি সর্বপ্রথম ফারুক সাহেবকে দেখি। তারপর সাড়ে আটটা থেকে দশটা-এগারোটা পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করি।... রশিদ সাহেবকে বললাম যে আপনারা কারা এসব করেছেন? আবার আমাকে বলছেন দায়িত্ব নিতে। তিনি বললেন, বাংলাদেশে আপনি একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আপনাকে দায়িত্বভার নিতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে, কিন্তু আপনাদের সবাইকে আমি চিনি না। বাহিনীগুলোর প্রধানদের আমি চিনতাম। তারা কোথায়?
'জবাবে রশিদ সাহেব আমাকে বললেন যে আপনি যদি তাদের চান তাদের পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা নিয়ে আসব। সেদিনের সামরিক বাহিনীর প্রধান সফিউল্লাহ সাহেব (যিনি ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন), নেভির প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এমএইচ খান, বিমান বাহিনীর প্রধান একে খন্দকার, বিডিআরের প্রধান জেনারেল খলিলুর রহমান, তারপর বোধ হয় পুলিশ প্রধানও এলেন।... রক্ষীবাহিনীর যে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন (প্রধান ব্যক্তি বোধ হয় সেদিন দেশে ছিলেন না), তিনিও এসে আনুগত্য জানান।'
খোন্দকার মোশতাক দিল্লির প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন না। অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ভারতপন্থী বলে ধারণা প্রচলিত ছিল। অন্তত তার অভ্যুত্থানের দিন (৩ নভেম্বর ১৯৭৫) দিল্লির সাউথ ব্লকে (পররাষ্ট্র দফতর) সেদিন মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়েছিল। এ অভ্যুত্থান সম্পর্কে খোন্দকার মোশতাক আমাকে বলেন, ২ নভেম্বর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ৫০ দিনের মধ্যেই সংসদের নির্বাচন হবে। সে নির্বাচন সম্পর্কে তিনি সেদিন রাত দেড়টা পর্যন্ত স্পিকার আবদুল মালেক উকিল, মন্ত্রিসভার সদস্য ডক্টর মোজাফফর চৌধুরী, মনোরঞ্জন ধর, জেনারেল ওসমানী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর প্রমুখের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপর তিনি শুতে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু অস্বাভাবিক শব্দ শুনে তিনি অন্য একটি কামরা থেকে কর্নেল রশিদকে ডেকে পাঠান, কেননা তার টেলিফোন বিচ্ছিন্ন ছিল। রশিদের কাছ থেকেই তিনি খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের খবর জানতে পারেন।
পরদিন সকালে মিলিটারি সেক্রেটারির কামরায় গিয়ে তিনি খালেদ মোশাররফের টেলিফোনে কল নেন। 'সেখানে খালেদ মোশাররফ আমার সঙ্গে কথা বলে। খালেদ মোশাররফের পর আমি যাকে এয়ারফোর্সের প্রধান নিযুক্ত করেছিলাম, তোয়াব, সেও কথা বলল। সে বলল, আমি এখানে আছি। এই এদের আর্মস সারেন্ডার করতে বলেন। খালেদ মোশাররফও সেই কথাই বলেছে।... তা না হলে বঙ্গভবনেই বোমা ফেলা হবে।'
ভারতপন্থী সামরিক অভ্যুত্থান
খোন্দকার মোশতাক বিমান বাহিনীর মতো সেনাবাহিনীর নেতৃত্বেও রদবদল আনেন। তিনি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে জেনারেল সফিউল্লাহর স্থলে চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করেন। খালেদ মোশাররফ ও তার প্রতি অনুগত অফিসাররা ২-৩ নভেম্বর রাতে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দফতরে অবস্থান নিয়ে তাদের অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন। মনিরুল ইসলাম চৌধুরী তখন চতুর্থ বেঙ্গলে ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরে জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের সময় তিনি তার জনসংযোগ কর্মকর্তা হন এবং কর্নেল মুনির নামে পরিচিত ছিলেন।
ছিয়াশি সালে দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে তিনি আমাকে ১৫ আগস্ট থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের ঘটনাবলির বিশদ বিবরণ দেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট মোশতাকের কাছে খালেদ মোশাররফ ও তার সাথীরা যেসব দাবি জানান, তার মধ্যে বিশেষ করে ছিল— যে সব অফিসার বঙ্গভবনে এবং রেসকোর্সে নিজেদের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট দিয়ে বেষ্টিত করে রেখেছিলেন, ওদের ক্যান্টনমেন্টে ফেরত আসতে হবে; তারপর প্রেসিডেন্ট সাহেবকে সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানদের (জেনারেল জিয়া এবং এয়ার ভাইস মার্শাল তোয়াব) চাকরি থেকে সরাতে হবে। তারপর প্রেসিডেন্ট সাহেবকে প্রেসিডেন্ট হিসেবেই রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ।' লক্ষণীয় যে, কর্নেল মুনিরও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কিংবা পরবর্তী সামরিক অভ্যুত্থানে জেনারেল জিয়াউর রহমানের কোনো ভূমিকা থাকার কথা উল্লেখ করেননি। তবে ২ নভেম্বর রাতে জিয়াকে গৃহবন্দি করার প্রসঙ্গ তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে রানী এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। ১৪ নভেম্বর (১৯৮৩) আমরা ঢাকা পৌঁছি। কথা ছিল পরদিন আমি রানীর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল যাব। কিন্তু অতি ভোরে জনৈক ক্যাপ্টেন হায়দার শেরাটন হোটেলে এসে আমার ঘুম ভাঙালেন। তিনি বললেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমাকে প্রাতঃরাশের নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন, এখুনি আমাকে তৈরি হয়ে তার সঙ্গে যেতে হবে। কর্নফ্লেকস থেকে পরোটা আর ভাজা কিডনি পর্যন্ত বহু পর্বের প্রাতঃরাশ খেতে খেতে জেনারেল এরশাদ আমাকে তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের একটা বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি বলেন যে প্রধান দুটি দলের নেত্রীদের কেউ যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তাকে মনোনয়ন না দেন তাহলে তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে বাধ্য হবেন। নেত্রীদের মতামত যাচাইয়ের দায়িত্ব তিনি চাপিয়ে দিলেন আমার ওপর।
শ্রীমঙ্গল সফর বাতিল করে আমি প্রথমেই গেলাম ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে। অনেক ঘুরিয়ে তিনি যা বললেন তার সার কথা হচ্ছে, জেনারেল এরশাদ কি কি শর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, না জেনে কোনো জবাব দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদ। তিনি আমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যে, আমি জেনারেল এরশাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। এরশাদের নাম শুনেই বেগম জিয়া এমনই ক্রুব্ধ হয়েছিলেন যে আমি আর এরশাদের প্রস্তাবের প্রসঙ্গ তোলার সাহসই পাইনি। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম, পঁচাত্তরে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ও তার স্বামীকে গৃহবন্দি করা এবং একাশিতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যা সম্পর্কে তার স্মৃতি রেকর্ড করে নিয়ে যেতেই এসেছি আমি।
মোশাররফের অভ্যুত্থান—বেগম জিয়ার স্মৃতি
খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেন, '২ তারিখ রাতে আমরা বাইরে গিয়েছিলাম— ডিনার ছিল একটা। রাত প্রায় বারোটার দিকে আমরা ফিরে এসে শুয়ে পড়েছি। রাত্রিবেলা হঠাত্ ২টার দিকে কলিং বেল বাজল। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাসায় কেউ ছিল না। আমার স্বামী নিজেই দরজা খুলল। আমি দেখতে গেলাম কী হয়েছে। সামনের দরজায় গিয়ে বেশ কিছু লোকজন দেখলাম। আর্মি অফিসার আছে দু-চারজন, আরও লোকজন দেখলাম। দেখলাম আমার স্বামী তাদের সঙ্গে বাইরে বারান্দায় বসেই কথাবার্তা বলছে। কী হচ্ছে ব্যাপারটা আমি ঠিক তখনও বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
'ভোরের দিকে যখন আলো হলো, তখন দেখলাম সে তাদের নিয়ে ঘরের ভেতরে ড্রইং রুমে এসে বসল। খুবই নরম্যাল ব্যবহার করছিল সে। বলল এদের চা দাও, নাশতা দাও।... সকাল হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম যে ব্যাপারটা অন্য রকম। আমার (বাসার) গেট-টেট বন্ধ। কেউ বাইরে যেতে পারছে না, কেউ বাইরে যাচ্ছে না। এর মধ্যে এলেন, আমার পাশের বাসায় ছিলেন, এখন তিনি জেনারেল হয়েছেন, জেনারেল মইন (জেনারেল মইনুল ইসলাম চৌধুরী?)। তিনি একটু আলাপ-সালাপ করলেন। তিনি আমাকে বললেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না।'
৭ মার্চের ঘটনাবলি সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, 'সাত তারিখে রাত্রিবেলা, রাত্রি বারোটার সময় থেকে একটু একটু গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। আমরা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর শুনলাম যে কতগুলো স্লোগান হচ্ছে। 'নারায়ে তকবির- আল্লাহু আকবর'—এ রকম স্লোগান হচ্ছে। আস্তে আস্তে ওটা বাড়তে লাগল। এক পর্যায়ে দেখলাম সবাই এদিকে আসছে, আমাদের বাসার দিকে আসছে। আমার বাসার গেট বন্ধ ছিল। সে গেটটা একদম ভেঙে ফেলার মতো অবস্থা। শেষ পর্যন্ত গেটটা ভেঙেই ফেলল, আমার সামনের দরজা ভেঙে সব হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে বলল, স্যার কোথায়? আমার স্বামী তখন বেরিয়ে এলেন, ওদের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর তারা তাকে কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। তার নামে স্লোগান দিচ্ছিল।'
[প্রসঙ্গত, ঢাকা ছাড়ার আগে দুই নেত্রীর প্রতিক্রিয়ার খবর প্রেসিডেন্ট এরশাদকে জানিয়েছিলাম। ২৬ নভেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কমনওয়েলথ সরকার-প্রধান সম্মেলনে আমরা ক'জন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল একে খোন্দকার আমাকে ডেকে জেনারেল এরশাদের কাছে নিয়ে গেলেন। এরশাদ আমাকে বললেন যে অবশেষে তিনি নিজের একটা রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জনদল নাম রাখার প্রস্তাব হয়েছে।]
জেনারেল জিয়াউর রহমানের খুব সম্ভবত চারটি সাক্ষাত্কার নিয়েছি আমি। সমকালীন বিষয়াদি নিয়েই সেগুলোতে মূলত আলোচনা হয়েছে। তবে আমার মনে হয় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং দিকনির্দেশক ছিল ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দীর্ঘ বৈঠক ও আলাপচারিতা—সাক্ষাত্কার নয়। আগে থেকেই সাক্ষাত্কারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থির ছিল। সে অনুযায়ী সেদিন সকালের ফ্লাইটে আমি রাজশাহী থেকে ঢাকা ফিরে আসি। তখন বিমানবন্দর ছিল তেজগাঁওয়ে। বেরুবার মুখে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা। কুশলাদি বিনিময়ের পর তিনি বললেন, সিএমএলএ'র (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক) ইন্টারভিউ নিতে ঢাকায় ফিরেছেন বুঝি। আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলাম। তিনি বললেন, ইন্টারভিউ আজ হবে না। জেনারেল জিয়া কিছুক্ষণ পরেই চাটগাঁ যাচ্ছেন।
আমাকে তথ্য দিতে পেরে তিনি বেশ গর্বিত মনে হচ্ছিল। বললেন, পতেঙ্গা ক্যান্টনমেন্টে গোলমাল চলছে। একজন সার্জেন্ট জনৈক মেজরকে স্যালুট করতে অস্বীকার করায় মেজর তার হাতে গুলি করেছিলেন। খুব টেনশন চলছে সেখানে। জওয়ানরা আবার 'সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের কল্লা চাই' বলে স্লোগান দিচ্ছে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেনারেল জিয়া বিকালে সেখানে যাচ্ছেন। আমার কৌতূহল হলো। ভাবলাম ভদ্রলোককে বাজিয়ে দেখি। তিনি হতাশ করেননি। বললেন, এজাতীয় ঘটনা আরও কোনো কোনো ক্যান্টনমেন্টেও ঘটেছে। চেন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জিয়া এনসিওদের এখান থেকে সেখানে আর সেখান থেকে অন্যখানে বদলি করছেন।
সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলার অভাব সম্পর্কে আমি আগেই বিস্তারিত জেনেছিলাম। আমার বড়ভাই এয়ার কমোডোর এবিএম মাহবুবুর রহমান ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল জিয়ার বাড়ির কাছেই থাকতেন। তিনি কাছের এক অফিসারের খালি বাড়িতে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে বাড়ির দেয়ালে অন্তত এক হাজার বুলেটের গর্ত ছিল। খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের চার দিনে সেনাবাহিনীর ভেতরে অনুরূপ হিংস্রতা আরও বহু হয়েছে বলে বড়ভাই আমাকে বলেছিলেন। বলেছিলেন মিছিল করে সিপাহিদের স্লোগান দানের কথাও। বিমানবন্দরে ভদ্রলোক মোটামুটি একই রকম বিবরণ দিয়েছিলেন আমাকে।
একটি ঐতিহাসিক আলাপচারিতা
শেরাটন হোটেলে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিএমএলএ'র অফিস থেকে টেলিফোন এলো। জেনারেল আমার সঙ্গে সময় নিয়ে গল্প করতে চান। সেদিন তার হাতে বেশি সময় নেই। পরের দিন তার অফিসে যেতে আমার কি খুব বেশি অসুবিধা হবে? গরজ আমারই, সুতরাং বলতেই হলো যে কোনো অসুবিধা হবে না। আমার হাতে তখনকার ভারী টেপ রেকর্ডার এবং আমার ক্যামেরা ছিল। জেনারেল জিয়া আমাকে অভ্যর্থনা করতে নিজেই এগিয়ে এলেন। হাত থেকে ক্যামেরা আর টেপ রেকর্ডার নিয়ে তার পিএস কর্নেল অলির হাতে দিলেন। ইংরেজিতে বললেন, অলি, এগুলো প্রাণপণে রক্ষা করবে। তোমার-আমার কাছে রাইফেল যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মি. রহমানের কাছে টেপ রেকর্ডারও সে রকম। আমাকে ভেতরে তার অফিস কামরায় নিয়ে গেলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
আমার স্যুটের জ্যাকেট খুলে নিজের হাতে কামরার একেবারে শেষ মাথায় ব্র্যাকেটে রাখলেন। বললেন, কি আবার স্যুট-ট্যুট পরে এসেছেন। আমি বললাম, স্যার স্যুট আমার প্রয়োজনে নয়। শীতের দেশে থাকি, বাংলাদেশের ফেব্রুয়ারি আমার জন্য খুবই আরামদায়ক। স্যুট পরেছি আপনার সম্মানে এবং আশ্বাস দিচ্ছি, পকেটে রিভলবার কিংবা মাইক্রোফোন লুকোনো নেই। হো-হো করে হাসলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। আড়ষ্টতা কেটে একটা সহজ-স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি হলো। তারপর আর আমাদের আলোচনায় কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
জেনারেল জিয়া তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর একটা তালিকা দিলেন আমাকে। দেশ ছোট, সম্পদ কম, কিন্তু জনসংখ্যা বিশাল। সবচাইতে বড় সমস্যা দেশের বিশাল শিক্ষিত বেকারের সমস্যা। এদের গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা না গেলে এরাই দেশের সর্বনাশ ডেকে আনবে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে তিনি একটা কর্মসূচি তৈরি করছেন। ওদিকে বাংলাদেশের মানুষ মনেপ্রাণে গণতন্ত্র চায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়। অথচ শেখ মুজিবুর রহমান দুটোরই পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। জিযা বলেন, এ অবস্থা মানুষ কিছুতেই বেশিদিন সহ্য করবে না। তিনি সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞাও যথাশিগগির প্রত্যাহার করা হবে। সে লক্ষ্যে তিনি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তানায়কদের সঙ্গে আলোচনা ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। জিয়া আরও বলেন, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের পতনের একটা বড় কারণ। দেশের দরিদ্রতম জনসাধারণকে কীভাবে খাদ্য দেয়া যায়, সে চিন্তাও করছেন তিনি।
স্বাধীনতার যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছেন তিনি কেন তাদের সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও দেশের সমস্যাগুলোর উল্লেখ করে বলেন, গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং সংহত করা না গেলে এমন দুরূহ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, তাছাড়া এই লোকগুলো তো বাংলাদেশেরই সন্তান। অন্য কোনো দেশ তো আর ওদের নেবে না। কিছুটা হাল্কা সুরে তিনি বলেন, মি. রহমান, আপনি তো বিলেতে থাকেন, ওদের বলে দেখুন না এই লোকগুলোকে নেবে কিনা। তারপর আবার সিরিয়াস হয়ে গেলেন তিনি। বললেন, ওদের দেশে থাকতে দেব, অথচ একঘরে করে রাখব, তাহলে তো প্রতিমুহূর্ত পিঠে ছুরি মারার ভয়ে আমাকে পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে, দেশের কাজ করার সুযোগ পাব কখন? আপনিই বলুন, এই লোকগুলোকে নিয়ে আমি কি করি? তাদের কি আমি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসব?
সেনাবাহিনী নিয়ে জটিল সমস্যা
আগের দিন তিনি কেন চাটগাঁ গিয়েছিলেন জানতে চাইলাম আমি। তিনি বললেন, সেটাও শুনেছেন? তাহলে শুনুন—আমিও জানি যে আজ সন্ধ্যায় আপনিও চাটগাঁ যাচ্ছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনে নিন না। আমি তাকে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড সম্বন্ধে প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, চেইন অব কমান্ড অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে, সেনাবাহিনীর অস্তিত্বের প্রয়োজনে। জেনারেল জিয়া বলেন, সেনাবাহিনীর ভেতরে সমস্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করছে বাইরের কোনো কোনো মহল। বাইরের এই মহলগুলো দেশের ভেতরের কিংবা দেশের বাইরের সে প্রশ্ন তখন আমার মনে আসেনি। এসেছিল কর্নেল ফারুক রহমানের সঙ্গে নিক ন্যুজেন্টের সাক্ষাত্কার শুনে। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। জেনারেল জিয়া তার অনেক আগেই শহীদ হয়েছেন।
আমি বিলেত ফিরে আসার কিছুকাল পরেই জেনারেল জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচির খবর আসে। আমার তখন আমাদের সেই আলাপচারিতার কথা মনে হলো। দরিদ্রতম জনসাধারণের খাদ্য সংস্থানের লক্ষ্যে তিনি কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং খাল খনন ও নদী সংস্কারের কর্মসূচি শুরু করেন। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে পরিবারকে খাদ্য দেয়ার রীতিও তিনিই প্রথমম চালু করেন। পরবর্তী কালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই কর্মসূচির প্রসার ও বিবর্তন করেন। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন যে বিনা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে পারছে, তার কৃতিত্ব রাষ্ট্রপতি জিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাল খনন ও নদী সংস্কারের কর্মসূচিতে দেশজোড়া অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বেকার ও পেশাজীবী সব শ্রেণীর মানুষ ওই কর্মসূচিতে সাড়া দিয়েছিলেন। আমার সহকর্মী (স্যার) মার্ক টালি মযমনসিংহ জেলায় ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের ভাঙন ঠেকানোর জন্য এরকম মাটি কাটার প্রকল্পের খুবই সুন্দর একটা শব্দচিত্র পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন :
'নদী দ্রুততর পাড় ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে নতুন একটা পাটকল আর একটা রেলসেতু ভেসে যাবে। নদীর গতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দুই মাইল লম্বা একটা খাল খননের পরিকল্পনা করা হলো। সে জন্য হাতে ধরে ৬০ লাখ ঘনফুট মাটি কাটতে হবে। প্রথম দিকে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক হয়েছিলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে, সেনাবাহিনী আর পুলিশের লোক, কলকারখানা আর সরকারি অফিস থেকেও লোক এসেছিল। আমার জন্য সবচাইতে বিস্ময়কর ছিল যে, বেশ কিছু মহিলাও এসেছিলেন। মহিলাদের একটি দলের নেত্রী ছিলেন ময়মনসিংহের মহিলা সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান।... প্রথম ঝুড়ি মাটি কাটলেন জেনারেল জিয়া স্বয়ং। জনতা তখন ধ্বনি তুলছিল—জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ।'
মার্ক টালি আমার চাইতেও বেশি বার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তাকে তিনি ভালোভাবেই চিনতেন। জিয়া হত্যার খবর পেয়ে মার্ক মন্তব্য করেছিলেন, 'লোকটা তার প্রাণের সেনাবাহিনীকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। সেজন্যই তাকে প্রাণ দিতে হলো।'
(লন্ডন, ০৪.১.১৩)
serajurrahman34@gmail.com