সরল গরল
সেনাবাহিনীকে নিয়ে মেঠো বক্তৃতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া থেকে | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩
__._,_.___
মিজানুর রহমান খান | তারিখ: ২৭-০৩-২০১৩
বগুড়ায় বক্তৃতা করছেন খালেদা জিয়া
'বিরোধীদলীয় নেতা সংসদ অকার্যকর করার জন্য জোট সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি সতর্ক করেন যে সংস্কার করা ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি আগামী নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি থাইল্যান্ডের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নিতে এবং "ক্ষমতার লোভে" সংসদীয় সরকারব্যবস্থা ধ্বংস না করার আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা অবশ্য বাংলাদেশে থাই রাজনীতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা নাকোচ করেন।'
বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতা এই উক্তি করেছিলেন সংসদে, ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী। অথচ ওই মন্তব্য আজকের বিরোধী দলের নেতার বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর অর্থ, সাত বছর আগে ও পরের রাজনৈতিক অবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। এ প্রসঙ্গের অবতারণা সেনাবাহিনীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার অনভিপ্রেত উক্তির কারণে। তিনি বলেছেন, 'সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে। কাজেই সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের হুমকি সম্পর্কে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, এটা তো রাজনৈতিক। সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানও বলেন এটা তো 'রাজনৈতিক'। এটা আসলে একটা স্বীকারোক্তি যে, রাজনীতি কতটা দায়িত্বহীন কিংবা ভয়ানক। অবশ্য এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাক্যবাণ বিনিময় পরিণামে শূন্যগর্ভ। কিন্তু যা অশুভ তা হলো, মাত্রাভেদে উভয় বিবদমান পক্ষ ক্রমশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের কেন্দ্রে টানার জোরালো প্রবণতা দেখাচ্ছে। নির্বাচনকালে সেনার ভূমিকা নিয়ে এই তর্ক আরও উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে।
থাইল্যান্ডের নির্বাচিত সরকারের অপমানিত হওয়া থেকে আমাদের রাজনীতিকেরা কী শিখেছেন? থাই অভ্যুত্থান ঘটে ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার জনপ্রিয়তা কম ছিল না। অথচ পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো করার আগেই তিনি বিতর্কিত হন, দুর্নীতিগ্রস্তের তকমা তাঁর ললাটে অঙ্কিত হয়। বৌদ্ধ-অধ্যুষিত দেশটির প্রথম মুসলিম সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল সোনধিকে নিয়োগ করে থাকসিন প্রশংসা কুড়ান। অথচ এই জেনারেলই তাঁকে অপসারিত করেন। কিন্তু ক্ষমতার লোভেই তিনি তা করেছিলেন, সেই অভিযোগ জোরালো হয়নি। বলা হয়, থাই ক্যু আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো সহিংস নয়। মৌলিক অধিকারও খর্ব করে না।
ব্যাংককে যেদিন সেনা অভ্যুত্থান ঘটে, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সেনানিবাসে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শুধু বাইরে থেকে নয়, দেশের ভেতর থেকেও স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসতে পারে। সংঘাত, নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তির কারণে এই হামলা হতে পারে। তিনি এ জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থান শিরোনামে যে খবরটি ছাপা হয়েছিল, তার ঠিক পাশের শিরোনামটি ছিল 'বিচারপতি হাসানের বাসায় কড়া পাহারা'। বিচারপতি কে এম হাসানকে মানতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এর চূড়ান্ত খেসারত হলো শেখ হাসিনার সম্মতিতে সৈয়দ আবুল মকসুদ বর্ণিত 'তিনোদ্দীন' সরকারের উত্থান।
খালেদা জিয়াকে থাই অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে আহ্বান তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা এবং আজকের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তা যথার্থ ছিল বৈকি। সেনা দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অপদস্থ হওয়া কারও কাম্য নয়। কিন্তু 'দুর্নীতিগ্রস্ত' থাকসিনের জন্য থাইল্যান্ড কান্না করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী চুয়ান লিকপাই মন্তব্য করেছিলেন, 'রাজনীতিক হিসেবে আমরা কোনো ধরনের ক্যু সমর্থন করতে পারি না। কিন্তু গত পাঁচ বছরে থাকসিন এমন কতিপয় অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, যা সামরিক বাহিনীকে অভ্যুত্থান ঘটাতে বাধ্য করে। থাকসিনই সংকট সৃষ্টি করেছেন।' খালেদা জিয়া ও থাকসিনের আসা-যাওয়ার মধ্যে বেশ মিল ছিল। শেখ হাসিনা তা ধরতে পেরেছিলেন।
থাইল্যান্ডের শ্রদ্ধাভাজন বুদ্ধিজীবী আনন্দ পেনিয়ারাচুন। র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত আনন্দ একবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি অনেকটা থাইল্যান্ডের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। থাকসিনের ক্ষমতাচ্যুতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন আনন্দ। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, '১৯৯২ সাল থেকে থাইল্যান্ড চারটি সাধারণ নির্বাচন দেখেছে। অভ্যুত্থানের কোনো চিন্তা বা গুজব মিলিয়ে গিয়েছিল। সেনারা ব্যারাকে ফিরেছিল। এবং তারা সত্যিকারের পেশাদার সেনা হয়ে উঠছিল। এ অবস্থায় যে অভ্যুত্থানটা ঘটল, তার কারণ সরকার একটা চরম দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা ডেকে এনেছিল, বেরোনোর রাস্তাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল।' ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ নিউজ উইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর আরও মন্তব্য ছিল, 'গত পাঁচ বছরে থাকসিন ও তাঁর দল প্রবল প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিল। সমগ্র সরকারি যন্ত্র ও সশস্ত্র বাহিনী এবং পার্লামেন্টের কতিপয় মহলের ওপর থাকসিন তাঁর কর্তৃত্ব সংহত করেছিলেন। সুতরাং আমি মনে করি, একটি অধিকতর আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।'
থাইল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ নির্বাচিত সরকারের ধারায় পুনরায় ফিরে আসতে কম সময় নিয়েছে। থাকসিন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থাই রাজনীতিতে পাগলা ঘণ্টা বেজেই চলছিল। কেবল ২০০৮ সালই চারজন প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ করে। এঁদের তিনজনই এসেছেন সাংবিধানিক আদালতের ডিক্রিতে। থাকসিনের আর ফেরা হয়নি। জনপ্রিয়তার মানদণ্ডই নির্বাচিত নেতা হিসেবে দীর্ঘকাল টিকে থাকার রক্ষাকবচ নয়। থাকসিন ক্ষমতাই শুধু হারাননি, দলও হারিয়েছেন। নির্বাচনে কারচুপির দায়ে আদালত থাকসিনসহ ১১১ জন বড় নেতা ও তাঁদের দলকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। থাকসিনের অনুসারীরা দুবার দল পাল্টিয়ে ২০১১ সালে একটি নতুন দল নিয়ে জয়ের মুখ দেখলেন। থাকসিনের ছোট বোন ২০১১ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
দুর্নীতির কালিমা নিয়ে থাকসিন রাজনীতিতে পরিত্যক্ত। বাংলাদেশের নেতা হলে তিনি উতরে যেতেন। এখানে কালি মুছতে বেশি সময় লাগে না। প্রধানত খালেদা জিয়ার অপরিণামদর্শিতার কারণে সেনা হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়েছিল। এর পরের ছয়-সাত বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন কিছু ঘটেনি, যাতে বিরোধীদলীয় নেতার উল্লিখিত মূল্যায়ন কোনো সরকারপ্রধানের জন্য একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ও বিচারকদের বয়স বাড়ানোর সংশোধনীর চেতনা অভিন্ন। সেটা ক্ষমতা। 'ক্ষমতার লোভ'। রাজনীতিকেরা সেটা স্বীকার করবেন না। বরং মওকা বুঝে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতেই তাঁরা ও তাঁদের চাটুকাররা সিদ্ধহস্ত।
এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে সশস্ত্র বাহিনীকে ক্রমাগত রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এই দুর্মতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মেঠো বক্তৃতায় কে কত বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রেখেছে, তার একটা প্রতিযোগিতামূলক ফলাফল গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মেঠো বক্তৃতার সূচনা করার সুযোগ হাতছাড়া না করা এবং তা থেকে সুবিধা নেওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার সংযম আমরা দেখি না। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সেনানিবাসে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাজনিত ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। তাঁর কিছু বক্তব্য ছিল কেবল জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন 'কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা যাতে কোনো অপপ্রচারের শিকার না হন, সে জন্য জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার' করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কনিষ্ঠদের 'শ্রদ্ধা ও আনুগত্য জ্যেষ্ঠদের অর্জন করতে হবে।' এ ধরনের বিবৃতি জনসমক্ষে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
অতীতেও আমরা দেখেছি, সেনানিবাসে আয়োজিত পেশাদারি অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানেরা পরোক্ষভাবে হলেও দলীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশে ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন। যেমন প্রধানমন্ত্রী ওই সমাবেশে আশা প্রকাশ করেন যে সেনাবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে যেকোনো 'অসাংবিধানিক কিংবা অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম' প্রতিহত করবে। তাঁর আহ্বান ছিল 'সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিজেদের সজাগ রাখুন, যাতে সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে।'
তারিখটি মনে নেই। সময়টা ১৯৯৪-৯৫ সাল হবে। সিলেটের এক জনসভায় দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই খবরটিও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিতে অনমনীয় বিএনপিকে ঘায়েল করতে সেটাও একটা 'উসকানি' ছিল। খবরটি বিদেশি একটি পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছিল এবং সেটির ক্লিপিং সম্ভবত হংকং মিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিস্মিত লেখক আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতার কাছে জানতে চান, এটাই কি আওয়ামী লীগের অবস্থান? তিনি ত্বরিত উত্তর দেন: আলবৎ! মির্জা ফখরুলের মতো বলেননি, উসকানি নয়, প্রশংসা।
বগুড়ায় বিএনপি নেত্রীর দায়িত্বহীন উক্তির পর তাঁদের পলায়নপরতা দেখার মতো। অথচ এখানে অনুশোচনার কিছু নেই! জাতীয় ভান্ডার তো মহাসমৃদ্ধ। প্রতিপক্ষের ভান্ডার থেকে এ রকমের বা কাছাকাছি কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করলেই হলো। খারাপের সঙ্গে খারাপের তুলনার একটা আত্মঘাতী প্রক্রিয়া চলছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভারে চিড়েচ্যাপ্টা মির্জা ফখরুল বেচারা। কেমন ডাহা মিথ্যা বলছেন। তবে প্রহসনের বিষয়, বিএনপির চেয়ারপারসনের নিন্দনীয় উসকানির দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরে প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে কিংবা কথিতমতে অনাগ্রহী প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি তথাকথিত 'জনতার মঞ্চের' অনুঘটক। সেখানে অবশ্যই 'রাষ্ট্রদ্রোহের' গুরুতর উপাদান ছিল। এর সবটাই 'রাজনৈতিক' তবে সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য বিষাক্ত। আশা করব, সব পক্ষই সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনৈতিক মেঠো বক্তৃতা পরিহার করবে। এর আগে ব্যর্থ ক্যু চেষ্টার সঙ্গে বিএনপিকে কেবলই মেঠো বক্তৃতায় অভিযুক্ত করতে দেখা গেছে। কোথাও আইনের লঙ্ঘন হলে আইনের স্বাভাবিক গতিতে তার প্রতিকার হোক। কিন্তু বক্তৃতাবাজি পরিবেশ দূষিত করে। সেনাবাহিনীকে অহেতুক বিব্রত করে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
Also Read:
Chief Political Correspondent, bdnews24.com
Published: 2013-03-25 13:20:42.0 Updated: 2013-03-25 13:50:03.0
http://bdnews24.com/politics/2013/03/25/fakhrul-blames-media-for-flawed-reporting
MONDAY, MARCH 25, 2013
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া থেকে | তারিখ: ২৪-০৩-২০১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৭-০৩-২০১৩
হরতালের সমর্থনে গতকাল দুপুরে ঢাকা কলেজের সামনে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় বোমা হামলা হয়েছে। ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ট্রেনের একটি বগিতে, রাজধানী ও গাজীপুরে যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাদে সারা দেশে ১৮-দলীয় জোটের ডাকা এই হরতাল শুরু হয়েছে। টর্নেডো-দুর্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। জোটের নেতা-কর্মীদের মুক্তি, 'গণহত্যা' বন্ধ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকার পতনের দাবিতে গত সোমবার এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, গতকাল ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীকে আটকের এক ঘণ্টা পর রাত সোয়া আটটার দিকে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় বোমা হামলা হয়েছে। কে বা কারা থানার পূর্ব পাশের দেয়ালের বাইরে থেকে একটি বোমা ছুড়ে মারে। বোমাটি বিস্ফোরিত হলে ফিরোজ আহাম্মেদ, দবির উদ্দিন, মনির হোসেন নামের তিন পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। ফিরোজকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওই বোমা হামলার কিছুক্ষণ পর রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জেলা স্টেডিয়াম থেকে পুলিশ শিবিরের এক কর্মীকে আটক করে। একই সময়ে কামরুজ্জামান চত্বর থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, এ ছাড়া উপশহর এলাকায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে শিবিরের কর্মীরা ককটেল ছোড়েন। ওই গাড়িতে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান ও সহকারী কমিশনার রোকনুজ্জামান ছিলেন। তবে তাঁরা কেউ আহত হননি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের দুই কর্মী সেলিম রেজা ও মুসফিক জামানকে আটক করে। তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা জিএম ২৫৩/৫৪ নম্বর ট্রেনের একটি বগিতে সাত-আটজন দুর্বৃত্ত আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
গতকাল রাতে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ময়মনসিংহে বগিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার নৃপেন্দ্র চন্দ্র সাহা ও আনসার সদস্য সেলিম রেজাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।
রাজধানীতে সাতটি যানে আগুন: গতকাল রাজধানীতে সাতটি যানে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শাহাজাদী সুলতানা প্রথম আলোকে জানান, গতকাল বেলা ১১টা ৫ মিনিটে সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে সুমাইয়া পরিবহন নামের যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বেলা তিনটার দিকে নিউমার্কেটের ১ নম্বর ফটকের কাছে একটি গাড়িতে এবং বেলা তিনটা ৩৫ মিনিটে সেগুনবাগিচায় একটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মিরপুর-১ নম্বরে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এ ছাড়া বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এবং রাতে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে একটি ট্যাক্সিক্যাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার সময় স্থানীয় জনতা একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
এ ছাড়া ফার্মগেটের খামারবাড়িতে বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টাকালে জনতা চারজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার চান্দনা এলাকায় রাত আটটার দিকে ক্ল্যাসিক পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আগুনে বাসের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে হরতালে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ গতকাল ২০ জনকে আটক করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ঢাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ দাঙ্গা দমনের উপকরণসহ মোতায়েন থাকবে। কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধ করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য থাকবেন ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া গতকাল রাত থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
হরতালের আওতামুক্ত: বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ২২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় টর্নেডোতে বহু প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। এ ছাড়া টর্নেডো-দুর্গত এলাকায় ত্রাণকাজে নিয়োজিত যানবাহনও হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
বরাবরের মতো সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও ওষুধ সরবরাহকারী পরিবহন এ হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এসব যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি না করতে জোটের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।
হরতাল সফল করতে প্রস্তুতি: বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জোটের অন্যান্য শরিক দল হরতাল সফল করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক দলগুলোকে সাধ্যমতো হরতালে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ২৬-০৩-২০১৩
হরতালের আগের দিন রাতে রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সামনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ছবি: হাসান রাজা।
Video URL: http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=rSHJb8ViYqU
Why Chatro gue cadres/Gopali Police/RAB can't prevent such vehicle burning during Hortal eve ?
TUESDAY, MARCH 26, 2013
4 vehicles torched in city
STAR ONLINE REPORT
A bus burns near City College on the Mirpur Road in the capital Tuesday morning after miscreants set it ablaze on the eve of a 36-hour countrywide shutdown that begins at 6:00am Wednesday. Photo: Focus BanglaMiscreants set on fire three vehicles in capital Dhaka on the Independence Day on Tuesday, a day ahead of the BNP-led 18-Party alliance-called 36-hour shutdown across the country.
১৮ দলীয় জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল সামনে রেখে আজ দুপুর থেকেই রাজধানীতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সায়েন্সল্যাব মোড়, নিউ মার্কেট ও খামারবাড়িতে তিনটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া কলাবাগানে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এদিকে, নিউমার্কেট এলাকায় বেলা পৌনে ৩টার দিকে একটি ট্যাঙ্কি্যাবে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পলাশীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
Mr. Nazrul,You are right that Hasina's Chamcha Mohammad Ali doesn't know Columnist Forhad Mazhar.Thank for your comment.
---------- Original Message ----------
From: Nazrul Chowdhury <nazrulic@gmail.com>
To: Muhammad Ali <man1k195709@yahoo.com>
Cc: Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>, "dr.dipumoni@gmail.com" <dr.dipumoni@gmail.com>, "abdul_momen@hotmail.com" <abdul_momen@hotmail.com>, "nurunnabi@gmail.com" <nurunnabi@gmail.com>, "akramulqader@gmail.com" <akramulqader@gmail.com>, "syed.aslam3@gmail.com" <syed.aslam3@gmail.com>, "malamgir1@aol.com" <malamgir1@aol.com>, "projonmochottor@gmail.com" <projonmochottor@gmail.com>, "anis.ahmed@netzero.net" <anis.ahmed@netzero.net>, "ovimot@yahoogroups.com" <ovimot@yahoogroups.com>, "muhanazm@yahoo.com" <muhanazm@yahoo.com>, "akhtergolam@gmail.com" <akhtergolam@gmail.com>, "abid.bahar@gmail.com" <abid.bahar@gmail.com>, "guhasb@gmail.com" <guhasb@gmail.com>, "delwar98@hotmail.com" <delwar98@hotmail.com>, "khabor@yahoogroups.com" <khabor@yahoogroups.com>, "baaiwdc_comm@yahoogroups.com" <baaiwdc_comm@yahoogroups.com>, "srbanunz@gmail.com" <srbanunz@gmail.com>, "drmohsinali@yahoo.com" <drmohsinali@yahoo.com>, "admahmudrahman@gmail.com" <admahmudrahman@gmail.com>
Subject: Re: বর্তমান রাজ ;নৈতিক বাস্ö 8;বতা A must read commentery..
Date: Tue, 26 Mar 2013 13:55:49 -0500I think, this guy- Muhammad Ali does not understand Forhad Mazarin's writing. Mr Forhad Mazar said that he is not atheist. This BAL is a really wastage of society.
Sent from my iPhoneHE IS A BIG TIME "NASTIK" !!
From: Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>
To: dr.dipumoni@gmail.com; abdul_momen@hotmail.com; nurunnabi@gmail.com
Cc: akramulqader@gmail.com; syed.aslam3@gmail.com; malamgir1@aol.com; nazrulic@gmail.com; syed.aslam3@gmail.com; projonmochottor@gmail.com; manik195709@yahoo.com; nazrulic@gmail.com; anis.ahmed@netzero.net; ovimot@yahoogroups.com; akramulqader@gmail.com; muhanazm@yahoo.com; akhtergolam@gmail.com; abid.bahar@gmail.com; guhasb@gmail.com; delwar98@hotmail.com; khabor@yahoogroups.com; baaiwdc_comm@yahoogroups.com; srbanunz@gmail.com; drmohsinali@yahoo.com; admahmudrahman@gmail.com; abdul_momen@hotmail.com; nurunnabi@gmail.com
Sent: Tuesday, March 26, 2013 1:06 PM
Subject: বর্তমান রাজ ;নৈতিক বাস্ö 8;বতা A must read commentery..
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাফরহাদ মজহারবাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ যে চরিত্র গ্রহণ করেছে তাতে শাহবাগের রাজনীতি ও আচরণের বিপরীতে বিপুল মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মাহমুদুর রহমান আমার বন্ধু। তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ। তার নিজস্ব চিন্তা আছে, তিনি আমার মতো কমিউনিস্ট নন, কিন্তু আমি আবার বামপন্থি নই। অতএব নাস্তিকও নই। খেয়ে না খেয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার সঙ্গে কমিউনিজমের কোনোই সম্পর্ক নেই। মনে রাখতে হবে, আস্তিক/নাস্তিক ভাগ শুরু হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের বিরুদ্ধে বেসামরিক যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা প্রচার করেছিল কমিউনিজম নাস্তিকের ধর্ম। তার বিরুদ্ধে জিহাদ ইমানি কর্তব্য। তারা আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষ আলেম-ওলামাদের বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল, কারণ কমিউনিস্টদের একাংশ নিজেদের নাস্তিক বলে জাহির করত। এর ফল তাদের জন্য ভালো হয়নি, ইতিহাস তার প্রমাণ। এতে ধারণা তৈরি হয়েছে নাস্তিকতাই প্রগতিশীলতা। কিন্তু কমিউনিজমের যারা গুরু মার্কস বা লেনিন, তারা কখনোই ধর্মের বিপরীতে নাস্তিকতাবাদ প্রচার করেননি।কিন্তু ধর্মের নামে জালিমের ওপর শোষণ-নিপীড়নের বিরোধিতা করেছেন। গণমানুষের দরদি যে কোনো মোমিন মুসলমান যে কাজটি সব সময়ই করে থাকেন। একই সঙ্গে বার বার বলেছেন, ইতিহাসে ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে যখন ধর্ম জালিম শাসক ও তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে আজ আমরা সেই পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করেছি কি না তার বিচার আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দেব। ফলে 'বামপন্থি' হলেই ওদের প্রগতিশীল ভাববেন না। যাদের মওলানা ভাসানীর মতো আমরা মজলুম, নিপীড়িত, শোষিত মানুষের পাশে দেখি না, দেখি শেখ হাসিনার বাদশাহি টিকিয়ে রাখার গর্হিত কাজে, তাদের 'প্রগতিশীল' বলে মানার কোনো যুক্তি নেই। তারা সারা দেশের গরিব, শোষিত, নিপীড়িত তরুণদের 'তরুণ' বলে স্বীকার করে না। স্বীকার করে না কলকারখানায় যারা এ দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য দিনের পর দিন তাদের রক্ত ক্ষয় করে যায়, যারা পুড়ে মরে, কারখানা ভেঙে চাপা পড়ে, জ্যান্ত কবর হয় তাদের। বাংলাদেশের যেসব 'তরুণ' দেশে দেশে শ্রমিক হয়ে বুকের জল পানি করে এ দেশে অর্থ পাঠায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখে তারা 'প্রজন্ম' নয়। প্রজন্ম হলো তারাই যারা 'জয় বাংলা' স্লোগান দেয়! দিনরাত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পাহারায় ও পুলিশি নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে বিচার মানি না শুধু 'ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই' বলে উৎসব করে। ভেবে দেখুন আমরা গণমাধ্যমের বদৌলতে কী পরিমাণ মিথ্যা ও অবাস্তব জগতে বাস করছি। প্রপাগান্ডা ও মিথ্যাচারেরও একটা সীমা থাকে। রাজনীতির বোঝাবুঝি থাক, কেউ কমিউনিস্ট হোক বা না হোক, 'তারুণ্য' আর 'প্রজন্ম' নামক শাহবাগী ধারণার মধ্যেই যে এ দেশের গরিব, অত্যাচারিত, নির্যাতিত শ্রমিক ও খেটে খাওয়া জনগণকে অস্বীকার করার তত্ত্ব নিহিত রয়েছে তা বোঝার জন্য কাণ্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। গণমাধ্যমের মিথ্যাচারের কারণে আমরা যেন সংগ্রামে বিভিন্ন পক্ষের শ্রেণীচরিত্র বুঝতে ভুল না করি।
আমাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশকে যে জায়গায় আজ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা যারা রাজনীতি একটু একটু বুঝি, আমাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে একটু-আধটু ধারণা রাখেন তাদের এটা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা গুণগত পরিবর্তন ঘটে গেছে। আর আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া যাবে না। শফিক রেহমান ভাই শান্তির কথা বলেছেন, আমাদের এখানে হাজির এমন কেউ নেই যারা শান্তি চান না। আমরা সবাই এখানে শান্তি চাই। কিন্তু অনেকে বলছেন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ ঘটিয়ে দেওয়ার ইতিহাস কিন্তু আওয়ামী লীগের আছে। বাংলাদেশ যদি সেই বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত হয় তাহলে সেটা প্রথম ঘটনা হবে না। গৃহযুদ্ধ এর আগেও বাংলাদেশে হয়েছে। আপনারা ভুলে যাবেন না সেই কথা। কীভাবে সেটা হয়েছিল? যখনই আপনি আপনার ভাষা বা সংস্কৃতিকে আপনার ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয়ের মধ্যে ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ না রেখে তার 'রাজনীতিকীকরণ' করেন, তাকে পলিটিসাইজ করেন, তখনই আপনি দেশে একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করেন। যারা পলিটিক্যাল সায়েন্সে একটু পড়াশোনা করেছেন তারা জানেন 'রাজনীতিকীকরণ' কথাটার মানে কী। নৃতাত্তি্বক বা ভাষাভিত্তিক কোনো একটা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও পরিচয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের আকার দেবেন, একটা রাজনীতি দাঁড় করাবেন, মনে রাখবেন তখন এই রাষ্ট্র দুর্বল হবে, একটি পরিচয়ের বিপরীতে আরেকটি পরিচয় এসে দাঁড়াবে, নতুন সংঘাতের ভিত্তি হবে। যেটা শেষ পরিণতিতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি জন্মানোর উৎস হবে।
আমাদের দেশে বাঙালি আছে, চাকমা আছে, মান্দিরা আছে, আরও অনেক জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। তাদের মধ্যে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলা সহজেই সম্ভব। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং পরস্পরের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবন যাপনে সামাজিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সেটা খুবই সম্ভব। কিন্তু যদি 'বাঙালি'রা বলে তাদের সংস্কৃতিই রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে একমাত্র জাতীয় পরিচয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে সবাইকে এই 'বাঙালিত্ব' স্বীকার করতে হবে, তখনই সেটা অন্য ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তাকে রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে। অথচ বাঙালি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্দপরিচয় এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং সেই পরিচয় স্বীকার বা ত্যাগ করারও কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু আপনি 'বাঙালি' বলে যদি দাবি করেন যে 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ'ই আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ, একে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রনীতির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তাহলে আপনি চাকমাসহ পাহাড়ি ও সমতলের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন। পাহাড়িরা তা মানবে না, মানেনি, মানার কথাও নয়। তাদের আর্জি, আকুতি কিছুই আপনি শুনলেন না। বাঙালি জাতীয়তাবাদকেই রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ও সাংবিধানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন কী হবে? প্রথমে তারা প্রতিবাদ করবে। মানবেন্দ্রনাথ লারমা প্রতিবাদ করলেন, আপনি শুনলেন না। তখন তারা আন্দোলনে নামলেন, আপনি তার পরেও শুনলেন না। এরপর তারা তাদের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র ধারণ করলেন। আপনি যেমন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সত্তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভারত থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন তারাও ভারত থেকে সহযোগিতা পেলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রণধ্বনি বাংলাদেশকে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিল, যার ক্ষত আমরা এখনো শুকিয়ে উঠতে পারিনি। নতুন করে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে এখন আবার নতুন বিষফোঁড়া হিসেবে গাড়া হয়েছে।
সামাজিক, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের 'রাজনীতিকীকরণ' বলতে কী বোঝায় তা আশা করি পরিষ্কার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জায়গা থেকে না বুঝলেও অভিজ্ঞতা থেকেই আপনারা জানেন ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির রাজনীতিকীকরণের অর্থ কী। এমনকি সেক্যুলার বনাম ইসলাম এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তির তর্ক তুলেও এই আকাম আপনি করতে পারেন। যদি বলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদই বাংলাদেশের সবার একমাত্র রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়, বাঙালি ছাড়া আমরা আর কোনো জাতিসত্তাকে রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকার করি না, তাহলে অন্যদের আপনি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করলেন। তারা তখন প্রতিবাদ জানাবে, শক্তি থাকলে অস্ত্র হাতে আপনার মতোই নিজেদের আত্দমর্যাদা ও আত্দপরিচয় রক্ষার জন্য আপনার বিরুদ্ধে লড়বে। আপনার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়বে। পারলে রাষ্ট্রকে দুই ভাগ করে ফেলবে। তাই বলছিলাম বাংলাদেশের প্রথম গৃহযুদ্ধের কথা ভাবুন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ কি বাংলাদেশের প্রথম গৃহযুদ্ধে উসকানিদাতা হিসেবে হাজির হয়নি? বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি? কিন্তু এরাই আবার ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না সেই দাবি তোলে, ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।
মনে রাখবেন গৃহযুদ্ধ আওয়ামী লীগ লাগাতে জানে। আওয়ামী লীগ মনে করে তারাই দেশের একমাত্র মালিক। ফলে সব ক্ষমতারও মালিক। এখন তারা দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে। নতুন যে পরিস্থিতি তারা তৈরি করেছে তাতে সমাজকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একদিকে আছে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা আর অন্যদিকে আছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। যারা অবশ্যই ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাঙালি, কিন্তু একই সঙ্গে ধর্মও তাদের সংস্কৃতির অংশ। ধর্ম তাদের আত্দপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু যদি আপনি নিরন্তর আর বার বার দাবি করেন ভাষা ও সংস্কৃতিই আপনার মূল পরিচয়, ধর্ম নয়; তখন নতুন এক বিরোধ আপনি তৈরি করেন।
সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্র অতিক্রম করে ভাষা ও সংস্কৃতিকে যদি রাজনৈতিকতা ও রাষ্ট্রের স্তরে উন্নীত করে আপনি দাবি করেন, এই স্তরে অর্থাৎ আপনার রাজনৈতিক পরিচয়ে শুধু 'বাঙালিত্বই' স্বীকার করা হবে, ইসলামকে স্বীকার করবেন না; তখন আপনি যেমন ভাষা ও সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক ঝাণ্ডা বানিয়ে সামনে দাঁড়ান, তখন আপনি চান বা না চান প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসলামও তার ধর্মের ঝাণ্ডা নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে বাধ্য। দাঁড়ানোর শর্ত তৈরি হয়ে যায়। বাঙালিকে আপনি বিভক্ত করেন। একদিকে থাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা আর অন্যদিকে ইসলাম ও ধর্মের মর্যাদা রক্ষার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ। আপনি তখন তাদের ধর্মান্ধ, গোঁড়া, পশ্চাৎপদ এবং খুব অপছন্দ হলে 'রাজাকার' গালি দিয়ে থাকেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য বিশ্বের সহযোগিতায় তাকে 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েন। আজ শেখ হাসিনার সরকার সেই দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষকে 'বাঙালি' ও 'মুসলমান'_ এ দুই ভাগে ভাগ করে গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। মানুষের ধর্মানুভূতিকে আহত করা হয়েছে।
যারা ইসলামে বিশ্বাসী তারা নিঃসন্দেহে নাস্তিকতার বিরোধী, এটা তার ইমান-আকিদার অংশ। কিন্তু কেউ যদি নাস্তিক থাকতে চায়, সেটা তার নিজের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের দায়-দায়িত্ব তার নিজের। নাস্তিকদের সঙ্গে মোমিন মুসলমানের সামাজিক কোনো ঝগড়া নেই। ফলে কাউকে যখন তখন মুরতাদ বলা বা তার বিশ্বাসের জন্য শারীরিকভাবে ক্ষতি করা মোমিনের কাজ হতে পারে না। সমাজে নাস্তিক আছে, থাকবে। সামাজিক কোনো ঝগড়া নেই। আপনার ছেলেও নাস্তিক হতে পারে। আপনি তাকে বোঝান, ঘরের মধ্যে বোঝান। নাস্তিকতাও একটা আদর্শ, হতেই পারে। অসুবিধা নেই। কিন্তু আপনি যখন নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে এমনসব কুৎসিত ও কদর্য ভাষায় লেখেন, লেখালিখি করেন, তখন কী হবে? একে দিনের পর দিন যখন প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তখন বোঝা যায় পরিকল্পিতভাবে আপনি বাংলাদেশকে হিংসার পথে নিয়ে যেতে চান। ব্লগে নবী করিম (সা.)-এর বিরুদ্ধে যে কদর্য ভাষায় লেখালিখি হয়েছে তা কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব। এটা কিন্তু নতুন নয়। সব সময়ই সেক্যুলারিজমের নামে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে বাংলাদেশে এসবকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব চিন্তার স্বাধীনতা।
এখন শাহবাগের কিছু ব্লগারের কীর্তিকাহিনী প্রকাশ হয়েছে বলে নয়। শেখ হাসিনা তো এ ধরনের ব্লগারদেরই প্রশ্রয় দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ দু-একটি মন্দ কথা লিখেছে বলে তাদের জেলে ঢুকিয়েছেন তিনি। কিন্তু কুৎসিত ভাষায় লেখা এই ব্লগগুলো এর আগে রাষ্ট্রের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করা হয়নি। এটাকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে উসকানি দেওয়ার জন্যই প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে রয়েছে পাবলিক অর্ডার নষ্ট করতে পারে এমন কাজ করা যাবে না। আমাদের বিচার বিভাগের নজরে আনার পর তারা সুনির্দিষ্টভাবে এসব ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রাষ্ট্র কোনো কিছুই করেনি।
তার পরও ব্লগার রাজীবের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করতে হবে আমাদের। কিন্তু যিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন সেই ছেলের মায়ের যেমন ব্যথা, তার বাবার যেমন ব্যথা, মনে রাখতে হবে ঠিক একই ভাবে একটা ছেলে যদি ইসলামী রাজনীতি করে, আপনি তাকে পছন্দ না করতে পারেন, সমর্থন করতে না পারেন, কিন্তু সে যখন মারা যায়, তাকে যখন গুলি করে মারা হয়, তার বাপের ব্যথা মায়ের বেদনাও আপনাকে বুঝতে হবে। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা সেটা শুনতে পায় না। শেখ হাসিনা শুনতে পান না। আপনি শুনতে পারেন না, আপনি তার মায়ের ব্যথা বুঝতে কিন্তু রাজি নন। কারণ সে নাকি ইসলামী রাজনীতি করে। সে বাঙালি জাতীয়তাবাদী নয়। এরই মধ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছে এমনকি তাদের নিয়েও আমরা কথা বলি না। তাদের নিয়ে মিডিয়াতে কথা বলি না। মানবাধিকার কর্মীরাও কথা বলি না।
আপনি দাবি করছেন আপনি তরুণ প্রজন্ম। আমি আজ সকালে এক তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলি, যে তরুণ প্রজন্ম শাহবাগে যান। আমি তাকে প্রশ্ন করি_ আপনারা 'তরুণ' কিন্তু যে তরুণকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করল সে কি তরুণ নয়? সে তাহলে কোন প্রজন্ম? তাহলে কি তারা জন্তু জানোয়ার? আপনি যদি ইসলামের কথা বলেন তাহলে আপনি 'তরুণ' হবেন না, নিজেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী না ভাবলে আপনি তরুণ প্রজন্মের লোক নন? এটা কী করে হতে পারে? তাহলে এই যে বিভক্তিটা টানা হচ্ছে তার ভিত্তিটা কী? যে গণমাধ্যমগুলো প্রজন্ম প্রজন্ম করছে, লাখ লাখ মানুষ, কোটি কোটি মানুষ, শত কোটি কণ্ঠস্বরের কথা বলছে; তারা কাদের কথা বলছে? তারা কারা? যে গণমাধ্যম এগুলো বলছে তারাও দেশকে আজ দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। প্রতিটি গণমাধ্যম উসকানির জন্য দায়ী। এ ধরনের প্রতিটি গণমাধ্যমকে প্রমাণ করতে হবে, আগামী দিনে যে বিশৃঙ্খলা হবে তার শর্ত তারা তৈরি করেছে দিনের পর দিন, তারা সাংবাদিকতার নামে পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্টের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের একদিন নিশ্চয়ই জবাবদিহি করতে হবে। সাংবাদিকতার ভূমিকা এরা কেউ পালন করেনি।_এ লেখাটি একটি অভিভাষণের অংশবিশেষ।
অনুলিখন : শাহাদাৎ তৈয়বফরহাদ মজহারE Mail : farhadmazhar@hotmail.com