__._,_.___
'ব্যাটা তুই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিস আর বলিস তোর কাছে টাকা নাই! পাঁচ লাখ টাকা দে, নইলে তোকে মেরে লাশ বেড়িবাঁধে ফেলে রাখব। তোকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। ইয়াবা সম্রাট বানিয়ে গুলি চালিয়ে তোর লাশ ফেলে দেব।'—এভাবে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন করে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বীকে। আর এ কাজ করেছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। গতকাল রবিবার আহত রাব্বী এ অভিযোগ করেছেন।
রাব্বী বলেন, শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। শনিবার রাতেই তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গতকাল রবিবার তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গোলাম রাব্বী বলেন, শনিবার রাতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে কল্যাণপুরের বাসায় ফেরার পথে আসাদ গেটে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ঢুকে টাকা তোলেন। রাতে ফিরে বাসাভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বুথ থেকে বের হয়ে টাকা মানিব্যাগে ঢোকাতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে একজন এসে বলল, 'ওই চল, স্যার তোর সঙ্গে কথা বলবে।' তারা টেনেহিঁচড়ে তাঁকে গাড়িতে তোলে। রাব্বী বলেন, গাড়িতে তোলার পর তারা জোর করে তাঁর মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় পুলিশ সদস্যরা। এরপর বলে, 'ব্যাংকে তোর কত টাকা আছে? চল, তোর অ্যাকাউন্ট চেক করা হবে। টাকা না দিলে তোকে ইয়াবা সম্রাট হিসেবে চালান করা হবে।' এ সময় রাব্বী পুলিশকে নিজের পরিচয় দেন। এর পরও তাঁকে এটিএম বুথে নিয়ে জোর করে অ্যাকাউন্ট চেক করায় তারা। যখন দেখে খুবই সামান্য পরিমাণ টাকা আছে, তখন তারা রাব্বীকে ফের টেনে বের করে গাড়িতে তোলে।
রাব্বী আরো বলেন, এসআই মাসুদকে অন্য এক পুলিশ সদস্য বলে, 'স্যার, এই ব্যাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে। কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টে তেমন কোনো টাকা নাই।' তখন ওই 'স্যার' বলে, 'ওই ব্যাটা, তুই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিস আর বলিস তোর কাছে টাকা নাই! টাকা নিয়ে আসবি। পাঁচ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না দিলে কাল সকালে তোর লাশ বেড়িবাঁধে পাওয়া যাবে।'
এসব কথার পর রাব্বীকে তুলে নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘোরাঘুরি করে গাড়িটি। রাব্বী বলেন, 'রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই পুলিশ সদস্যরা আমাকে বন্দুকের বাঁট ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে আর টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। একপর্যায়ে মার সইতে না পেরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলি, ঠিক আছে, আমাকে ফোন করতে দেন। টাকার ব্যবস্থা করি। এই বলে মোবাইল ফোন নিয়ে রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসানকে ফোন করি। সে আসতে চাইলে পুলিশ তাঁকে আসাদ গেট আড়ং এলাকায় আসতে বলার জন্য বলে।' রাব্বী জানান, ফোন কেটে দেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা বলে, 'দেখ, তোকে নিয়ে যেতে যদি দুই-একজন আসে তবে কথা বলব। আর যদি বেশি লোক আসে, তবে গাড়ি টান দিয়ে সোজা বেড়িবাঁধের দিকে যাওয়া হবে।' এ সময় আরেক পুলিশ সদস্য বলে ওঠে, 'একে ছেড়ে দিলে তো কাল সকালে সবার চাকরি খাবে। সবাইকে জেলেও নিয়ে ছাড়বে।'
এদিকে রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসান জানান, তিনি ১০-১২ জন সাংবাদিক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে নিয়ে আড়ং এলাকায় হাজির হন। বেশি লোকজন দেখে পুলিশ গাড়ি টান দেয়, কিন্তু আড়ং মোড়ে সিগনালে পড়ায় গাড়িটি থেমে যায়। এরপর জাহিদ হাসান ও তাঁর সঙ্গীরা সেখানে গেলে এসআই মাসুদ ও সঙ্গীরা দাবি করে, রাব্বী জেনেভা ক্যাম্পের সন্দেহজনক এলাকা থেকে বের হয়েছেন। তাঁর কাছে ইয়াবাসহ অবৈধ জিনিসপত্র আছে। কিন্তু তল্লাশি করতে দিচ্ছেন না। তাঁকে এ কারণে আটক করা হয়েছে।
এ সময় জাহিদসহ অন্যরা বলেন, অবৈধ জিনিসপত্র কোথায়? আর থাকলে থানায় নিয়ে চলেন এবং মামলা করেন। এসব কথার একপর্যায়ে রাব্বীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রাব্বীর বন্ধু ওসমান গণি জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় যান রাব্বী ও তাঁর বন্ধুরা। সেখানে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগের একটি কপি মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ফারুক হোসেনকেও দেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত এসআই মাসুদ শিকদারসহ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, পুলিশের নির্যাতনের শিকার গোলাম রাব্বী সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এর আগে তিনি দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদক এবং সময় টেলিভিশনে প্রতিবেদক ও সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
Many of you are forwarding non-Mukto-mona group sub-links, and hundreds of personal e-mail IDs exposed? Can't you cut them out before posting? I think this is a privacy and security issue.