ইসলাম আর জামাতে ইসলাম এক নয়
ধর্ম অবমাননাকারী কারা? শাহবাগের নতুন প্রজন্মের নাকি মৌলবাদী জামাতীরা? শাহবাগের আন্দোলন থেকে প্রায় এক মাসেও একটি গাড়িও ভাঙচুর হয়নি, কোনো মসজিদে আগুন দেয়া হয়নি, কোনো মঞ্চ গুড়িয়ে হয়নি, কোনো উস্কানি দেয়া হয়নি, সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা হয়নি, তান্ডব চালানো হয়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দের গণ জাগরণের কর্মসূচি স্থগিত করার সাথেই সাথেই জঙ্গি জামাতীরা হায়ানার মতো সহিংসতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর 'ধার্মিক' জামাতে ইসলামের 'শান্তি'র নমুনা দেশবাসী আবারো দেখলো। জামায়াত-শিবির সারাদেশে মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, ব্যাপক নাশকতা, সাংবাদিকদের উপরে সন্ত্রাসী আক্রমন, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান, জাতীয় পতাকা ছেঁড়া, মসজিদে অগ্নি সংযোগ, শহীদ মিনার ভাংচুর, একুশের গ্রন্থমেলায় আগুন, ট্রেনে আগুন, মসজিদ থেকে বোমাবাজি, এভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে উন্মাদনা মেতে উঠলো। সেদিন এক শিবিরের ওয়েব সাইটে দেখলাম, এক ধর্মব্যবসায়ী জামাতী হরতালের ভেতর পবিত্র কোরান শরিফ হাতে নিয়ে কৌশলে পুলিশের মুখোমুখি হচ্ছে। পুলিশ বিব্রত! খবরে প্রকাশ, শিবিরের কর্মিরা আন্দোলন কর্মি সেজে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দায় চাপাবে শাহবাগ আন্দোলনের উপর।
তাহলে প্রশ্ন, কারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী করলো? কারা ধর্মকে ব্যবহার করে সারাদেশে নীল নাশকতায় লিপ্ত হলো? তার পেছনে ১/২ টি হলুদ সংবাদপত্র গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে উস্কানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অপপ্রচারে লিপ্ত। অথচ শাহবাগে নতুন প্রজন্ম আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়; যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। আর তারা মাত্রাহীন মিথ্যাচার করে বানোয়ট খরব ছেপে ধর্মীয় অনুভূতিতে সম্পূর্ণ উদ্দশ্যপ্রণোদিত ভাবে উস্কানি দিচ্ছে। শাহবাগের অহিংস গণজাগরণকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাঁনোর পায়তারায় ক্ষেপিয়ে তুলছে মৌলবাদীদের। বিচারপতি থেকে শুরু করে সম্পাদক পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা উদ্দ্যেশপ্রণোদিত ভাবেই দেশটাকে ভয়াবহ সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে!
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, মৌলবাদীরা সব সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাঁনোর চেষ্টা করেছে। ১৯৫২ সালে ইসলামিক ভাষা হিসেবে উর্দূকে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের সালাম-বরকতদের খুন করেছে, ১৯৭১ সালে হিন্দুদের খতমের নামে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি হত্যা করেছে, ১৯৯০ সাল মন্দির জ্বালিয়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি, ২০১২ সালে কক্সবাজারে বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ জনপদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাগুলো তারই দৃষ্টান্ত।
২০০৪ আমার প্রকাশনীর বই নিয়ে মৌলবাদীরা ব্লাসফেমি আইন জারির জন্য উঠে পড়েমলেগেছিলো। তখন ইনকিলাব, সংগ্রাম আর খরব পত্র দেশে সাম্প্রতিক দাঙ্গা বাধাঁনোর উস্কানি দিয়ে মসজিদগুলো গরম করেছিলো। এরা সব সময় উছিলা খোঁজে।
শাহবাগ কখনোই ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। তবু আন্দোলনকারীদেরকে তারা নাস্তিক-মুরতাদ অর্থাৎ ইসলাম বিরোধী বলেছে। তারা শাহবাগের জাগরণকে বানচাল করতেই নীলনকশা অনুযায়ী নাস্তিক আস্তিক বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। সেই উছিলায় জামাতের জঙ্গীরা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ঢাল বানিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বিভ্রান্ত করে অসুস্থ উন্মাদনায় মেতে ওঠার চক্রান্তে লিপ্ত। আর বিরোধী দলও ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত হানার ইস্যুটা কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
কোথায় যেনো পড়লাম- 'পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহম্মদ আলী জিন্নাহ একজন নাস্তিক ছিলেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান দেশ ভাগের সময় জিন্নাহ ছিলেন মুসলমানদের নেতা। একজন নাস্তিক হয়েও তিনি ছিলেন ইসলামী জাতিয়তাবাদের নেতা। তার নাস্তিকতা নিয়ে কেউ কোন দিন সেই প্রশ্ন তোলেনি'।
আবার নবীদের ক্ষেত্রে মওদুদীর বেয়াদবী পূর্ণ মন্তব্য করেছেন। লিখেছেন- "নবীগণ মা'ছুম নন। প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ) তাফহীমাত, ২য় খন্ড ৪৩ পৃষ্ঠা। উদাহরণ দিয়েছেন, মুসা (আঃ) এর"। (ইসলাম ও মওদুদীবাদ/ স্বকৃত নোমান, ঢাকা রিপোর্টার২৪ ডট কম, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৩।) তারা এ সব নিয়ে কথা বলে না! তারা প্রগতিশীলদের জোর করে 'নাস্তিক' বানিয়ে ফয়দা হাসিল করার চেষ্টা চালায়।
রাজীব হায়দারের লেখাগুলো ছিল মূলত ধর্ম-দর্শন নিয়ে। সেখানে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো অবমাননাকর বক্তব্য ছিল না। জামাত শিবির ভণ্ড। এরা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, আস্ফালন দেখায়। তাই তারা ঘোষণা দেয়, শাহবাগের নাস্তিকদের যদি সরকার ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না করে তাহলে পল্টনের ময়দানে জবাই করা হবে। লন্ডনী জামাতী ইমাম অশালীন নোংরা ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সুমন কবিরের গানের জন্য বলছে, এটা হিন্দুদের মদদ। তারা আন্দোলনকারীদের অশালীণ ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে, শাহবাগের মোমবাতি জ্বালানকে বলেছিল অগ্নিপূজা, আন্দোলনকে গাঞ্জাখোরের আড্ডা, বেলেল্লাপনা, বেশ্যাখানা বলে অপপ্রচার করছে, জানাজা নিয়ে নতুন ফতোয়া দিচ্ছে।
'ধার্মিক' জামায়াতে ইসলামী একাত্তর সালের মতো পবিত্র কোরান, হাদীস, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের একমাত্র সোল-এজেন্ট হিসেবে নিজেদের জাহির করছে। ধর্ম ও নবীদের যেভাবে ব্যবহার করছে তা যুক্তির বাইরে এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য। তাই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারা মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে, ঠিক তেমনি আজ আরও বহু কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়েছে। তাই তথ্য মন্ত্রি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ধর্মের নামে জামায়াত মসজিদ ব্যবহার করছে, মুসল্লিদের ব্যবহার করছে।
জামায়াত তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে৷ তাই দেশের সাধারণ নিরীহ, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভালো ভাবে অবগত করতে হবে ইসলাম আর জামাতে ইসলাম এক না।
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল/
__._,_.___