অনুসরণকারী সাত হামলাকারী পাঁচ
প্রধান সন্দেহভাজনের লাল শার্টে মিলতে পারে আরও ক্লু
সাহাদাত হোসেন পরশ
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জড়িতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য। ডিবি বলছে, এবিটি একক কোনো 'অপারেশনে' সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয়জন সদস্য নিয়ে মাঠে নামলেও ব্যতিক্রম ছিল অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই প্রথম কোনো হত্যা মিশনে এবিটির অন্তত ১২ সদস্য মাঠে ছিল। তাদের মধ্যে সাতজন ছিল অনুসরণকারী, বাকি পাঁচজন সরাসরি হামলায় অংশ নেয়। তবে অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি জড়িত কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে এক বছরের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইর ল্যাবে আটকে রয়েছে অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় ১১ আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন। তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতি থাকলেও ওই প্রতিবেদন পাওয়ার আগে এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া অভিজিৎ হত্যায় জড়িত অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন মুকুল রানা ওরফে শরিফুলের সেই হালকা লাল রঙের শার্ট খুঁজছে পুলিশ। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার দিন অভিজিৎ ও তার স্ত্রী ডা. রাফিদা আহমেদ বন্যার পেছনে পেছনে একজন অনুসরণ করছে। পুলিশ বলছে, অনুসরণকারী ওই ব্যক্তি শরিফুল। যদিও পরে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম মুকুল রানা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে অভিজিৎ হত্যার ঘটনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত
পাওয়া গেছে। প্রধান সন্দেহভাজনের একটি শার্ট খোঁজা হচ্ছে।
অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় গতকাল সমকালকে বলেন, 'আমার প্রত্যাশা দ্রুত অভিজিৎ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হোক। তবে এরই মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে প্রধান সন্দেহভাজন মারা গেছে। সব সময় আমি বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছি। পুলিশ না-কি সহযোগীদের গুলিতে অভিজিৎ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি নিহত হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। কেউ হয়ত মূল সন্দেহভাজনের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছে।'
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবিটির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিজিৎ রায়কে হত্যার টার্গেট করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিজিৎ দেশে ফেরার পর তারা হামলার জন্য লক্ষ্য চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালে অমর একুশে বইমেলা চলাকালে প্রথমে ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের ওপর হামলার দিন ঠিক করা হয়। ওই দিন তিনি মেলায় না যাওয়ায় হামলাকারীদের প্রথম টার্গেট বাস্তবায়ন হয়নি। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় এবিটির সাত সদস্য অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে অনুসরণ করে। অপারেশনে অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনের হাতে ছিল চাপাতি, অন্যজনের কাছে ছিল ক্ষুদ্রাস্ত্র। তবে অভিজিৎকে কুপিয়েছে দু'জন। মুকুল হামলায় মূল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে। অভিজিতের মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা রাজধানীর কুড়িলের একটি বাসায় জড়ো হয়। এরপর যে যার মতো পরিকল্পা অনুযায়ী পালিয়ে যায়।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের হামলাকারীরা উত্তরার একটি বাসায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সেখানে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে হামলার সপ্তাহখানেক আগে টার্গেট করার ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে চূড়ান্ত ব্রিফিং দেওয়া হয়। হামলায় জড়িতদের কয়েকজন এক সময় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি সন্দেহভাজন একাধিক এবিটির সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অভিজিৎ হত্যার অনেক তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া এবিটির সদস্য শিহাবও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উগ্রপন্থিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রথমে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় মুকুলসহ ছয়জন জড়িত। পরে বেরিয়ে আসে, ওই অপারেশনে ১২ জন সদস্য ছিল। অভিজিতের অপারেশনে অংশ নেওয়াদের কয়েকজন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা ও আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টায়ও সম্পৃক্ত। বইমেলা ঘিরে অনেক লোকজনের সমাগম হওয়ায় এবিটির সদস্যরা তাদের প্রচলিত অপারেশনের বাইরে গিয়ে অধিক সংখ্যক সদস্য নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।
ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় ফারাবিসহ সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলার তদন্তে গ্রহণযোগ্য অনেক তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া আলামতের ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলানো যাচ্ছে না। প্রধান সন্দেহভাজনের শার্ট উদ্ধার করা গেলে ডিএনএ প্রতিবেদনের আলামতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে ডিবি। দ্রুত ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য এফবিআইর সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তাদের ওপর হামলা করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিজিৎ। ঘটনাস্থল থেকে দুটি রক্তমাখা চাপাতি ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি চাপাতিতে রক্তের সঙ্গে লম্বা চুল আটকে ছিল। ওই চুল অভিজিতের স্ত্রীর। একটি কালো রঙের ব্যাগের ভেতর দুটি ইনজেকশন, একটি সিরিঞ্জ, কিছু ওষুধ ও পুরনো কিছু পত্রিকা পাওয়া গেছে। ওই ব্যাগের ভেতরে একটি প্যান্টও ছিল। অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে আসে এফবিআইর একটি প্রতিনিধি দল। তারা মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবির সঙ্গে বৈঠক করেছিল। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইর ল্যাবরেটরিতে অভিজিৎ রায় হত্যাকা ের আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ বলছে, এবিটি অনেক অপারেশনে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। হামলার পর টার্গেট করা ব্যক্তির শরীরে ওই ইনজেকশন পুশ করে উগ্রপন্থিরা। অভিজিতের ওপর হামলার পর 'রোটেক্স' নামে এক ধরনের ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে অভিজিৎ হত্যার ঘটনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত
পাওয়া গেছে। প্রধান সন্দেহভাজনের একটি শার্ট খোঁজা হচ্ছে।
অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় গতকাল সমকালকে বলেন, 'আমার প্রত্যাশা দ্রুত অভিজিৎ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হোক। তবে এরই মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে প্রধান সন্দেহভাজন মারা গেছে। সব সময় আমি বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছি। পুলিশ না-কি সহযোগীদের গুলিতে অভিজিৎ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি নিহত হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। কেউ হয়ত মূল সন্দেহভাজনের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছে।'
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবিটির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিজিৎ রায়কে হত্যার টার্গেট করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিজিৎ দেশে ফেরার পর তারা হামলার জন্য লক্ষ্য চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালে অমর একুশে বইমেলা চলাকালে প্রথমে ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের ওপর হামলার দিন ঠিক করা হয়। ওই দিন তিনি মেলায় না যাওয়ায় হামলাকারীদের প্রথম টার্গেট বাস্তবায়ন হয়নি। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় এবিটির সাত সদস্য অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে অনুসরণ করে। অপারেশনে অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনের হাতে ছিল চাপাতি, অন্যজনের কাছে ছিল ক্ষুদ্রাস্ত্র। তবে অভিজিৎকে কুপিয়েছে দু'জন। মুকুল হামলায় মূল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে। অভিজিতের মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা রাজধানীর কুড়িলের একটি বাসায় জড়ো হয়। এরপর যে যার মতো পরিকল্পা অনুযায়ী পালিয়ে যায়।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, অভিজিতের হামলাকারীরা উত্তরার একটি বাসায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সেখানে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে হামলার সপ্তাহখানেক আগে টার্গেট করার ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে চূড়ান্ত ব্রিফিং দেওয়া হয়। হামলায় জড়িতদের কয়েকজন এক সময় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি সন্দেহভাজন একাধিক এবিটির সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অভিজিৎ হত্যার অনেক তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া এবিটির সদস্য শিহাবও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উগ্রপন্থিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রথমে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় মুকুলসহ ছয়জন জড়িত। পরে বেরিয়ে আসে, ওই অপারেশনে ১২ জন সদস্য ছিল। অভিজিতের অপারেশনে অংশ নেওয়াদের কয়েকজন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা ও আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টায়ও সম্পৃক্ত। বইমেলা ঘিরে অনেক লোকজনের সমাগম হওয়ায় এবিটির সদস্যরা তাদের প্রচলিত অপারেশনের বাইরে গিয়ে অধিক সংখ্যক সদস্য নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।
ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় ফারাবিসহ সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলার তদন্তে গ্রহণযোগ্য অনেক তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া আলামতের ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলানো যাচ্ছে না। প্রধান সন্দেহভাজনের শার্ট উদ্ধার করা গেলে ডিএনএ প্রতিবেদনের আলামতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে ডিবি। দ্রুত ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য এফবিআইর সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তাদের ওপর হামলা করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিজিৎ। ঘটনাস্থল থেকে দুটি রক্তমাখা চাপাতি ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি চাপাতিতে রক্তের সঙ্গে লম্বা চুল আটকে ছিল। ওই চুল অভিজিতের স্ত্রীর। একটি কালো রঙের ব্যাগের ভেতর দুটি ইনজেকশন, একটি সিরিঞ্জ, কিছু ওষুধ ও পুরনো কিছু পত্রিকা পাওয়া গেছে। ওই ব্যাগের ভেতরে একটি প্যান্টও ছিল। অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে আসে এফবিআইর একটি প্রতিনিধি দল। তারা মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবির সঙ্গে বৈঠক করেছিল। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইর ল্যাবরেটরিতে অভিজিৎ রায় হত্যাকা ের আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ বলছে, এবিটি অনেক অপারেশনে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। হামলার পর টার্গেট করা ব্যক্তির শরীরে ওই ইনজেকশন পুশ করে উগ্রপন্থিরা। অভিজিতের ওপর হামলার পর 'রোটেক্স' নামে এক ধরনের ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়েছিল।
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৬
আরও পড়ুন:
হত্যার পর খুনিরা বৈঠক করেছিল রেডিসনে, একবছর আগেই খুনিদের প্রোফাইল তৈরি করেন গোয়েন্দারা
__._,_.___