মতামত
সেলিম ওসমানের শাসন কায়েম হোক
তাহলে দেশে সেলিম ওসমানের শাসন কায়েম হোক। সংবিধান স্থগিত হয়ে যাক। প্রয়োজনে দেশের নামটাও বদলে দিয়ে রাখা যেতে পারে 'ওসমানিয়া রাজতন্ত্র।
আইন যখন তিনি নিজের হাতে তুলে নিলেন। শাস্তি দিলেন একজন শিক্ষককে এবং সেই কাজ নিয়ে যখন তিনি দম্ভই করছেন তখন এমনটাইতো আমরা দেখতে চাই।
হাজার হাজার মানুষের সামনে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করালেন তিনি। তার আগে সেই শিক্ষকের গায়ে হাত তুললেন। সংসদ সদস্য এই প্রভাব খাটিয়ে লাঞ্ছিত শিক্ষকের পদ খেলেন। ঘটনায় যখন দিকে দিকে প্রতিবাদ হলো, সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বললেন 'এটা অন্যায় হয়েছে'। শিক্ষক অবমাননায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবাদী কণ্ঠ মুখর হলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচারের দাবি উঠলো। দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আদালত রুল দিলেন।
ঠিক তখন সংবাদ সম্মেলন ডেকে, দম্ভে বুক ফুলিয়ে সেলিম ওসমান ঘোষণা দিলেন, ধর্ম রক্ষায় তিনি শহীদ হবেন। তিনি বললেন, 'এই দুনিয়ায় আল্লাহকে কটাক্ষ করার জন্য আমি কাউকে শাস্তি দিতে পেরেছি তাতে যদি আমার ফাঁসি হয়, স্বেচ্ছায় সেই ফাঁসি গলায় পরে নিবো কিন্তু আমি এই কারণে ক্ষমা চাইবো না। আমি কোনো শিক্ষকের বিচার করি নাই। আমি একজন ইসলামের কটূক্তিকারীর বিচার করেছি।'
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত যে ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহকে নিয়ে কটু কথা বলেছেন এটা এখনো প্রমাণিত নয়। ধরা যাক সে দোষে দোষী-ই হলেন শ্যামলকান্তি। তাহলেও কি তাকে শাস্তি দিতে পারেন সেলিম ওসমান? তিনি একজন সংসদ সদস্য। ল' মেকার। মানে আইন প্রণেতা। তিনি 'বিরোধী দল' জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য। জাতীয় সংসদে যাওয়ার আগে তিনি শপথ নিয়েছেন। তার সে শপথ নিশ্চয় দেশ এবং দেশের মানুষ রক্ষায় ছিল- কোনো ধর্ম রক্ষায় নয়। তিনি শ্যামলকান্তিকে লাঞ্ছিত করে সেই শপথ ভেঙেছেন। তিনি যখন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তিনি শহীদ হতে পারেন নি, হয়েছেন গাজী। এখন ধর্ম রক্ষায় তিনি শহীদ হতেও দ্বিধা করবেন না। ধরে নিচ্ছি তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। তো এই কথা, এই ঘোষণাতো এক ধরণের 'ধর্মযুদ্ধ'। এই যুদ্ধের জন্য কি তার এলাকার মানুষ তাকে নির্বাচন করেছেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন তার নির্বাচনী এলাকা হিন্দু প্রধান। তো হিন্দু ভোটাররা কি তাকে ধর্মযুদ্ধ করার জন্য জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন?
সেলিম ওসমান গণমাধ্যমকে সাক্ষী করে বার বার বলেছেন লাঞ্ছিত শিক্ষক তার কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন বলেই তিনি ওই কাজ করেছেন। হাসপাতালের বেডে থাকা অসুস্থ, অপদস্থ শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, তিনি কখনোই তার প্রাণ ভিক্ষা চাননি। সেলিম ওসমান স্কুলে ঢুকে প্রথমে তাকে তুই-তুকারি করে মারধর করেছেন। তারপর জোর করে কান ধরিয়ে ওঠবসে বাধ্য করেছেন। লজ্জা-অপমানে বিধ্বস্ত শ্যামলকান্তি বলেছেন, তিনি তার অপমানের বিচার চান।
এই বিচার বাংলাদেশ চাইছে। অনুভূতি প্রবণ মানুষ বলছে, সেলিম ওসমান একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে পুরো দেশকে অপমানিত করেছেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ কানে ধরে দাঁড়িয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করছে, নিন্দা জানাচ্ছে আর বিচার চাইছে। এই প্রতিবাদটা একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।
ঠিক তখন 'অপরাধী' সেলিম ওসমান সনাতন কায়দায় ধর্মকে ব্যবহার করে বলছেন, তিনি যা করেছেন ঠিক করেছেন। এরজন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না।
ওসমান পরিবারের ওপর থেকে আগে সরকারের ইমডেমিনিটি বাতিল করতে হবে
http://khabor.com/archives/82120
চড় দিয়ে বাইরে এনে কান ধরতে বলেন সেলিম ওসমান | জাতীয় | Jugantor
__._,_.___