From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Saturday, June 9, 2012 1:57 PM
Subject: আগে হবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
ন্যুরেমবার্গ বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ মিত্রশক্তির বেশকিছু রাষ্ট্র থেকে বিচারক আনা হয়। সারা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ আর ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মিলে চার বছরে মাত্র ৯৯ যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছেন। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে সাক্ষ্যÑপ্রমাণ হিসেবে পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে শুরু করে ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক এই অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, আমাদের এখানেও বিচারের ব্যাপারে তাই সবার আগে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বেছে নিতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার পরে বাকিদের বিচার করতে হবে। তা না হলে বছরের পর বছর ধরে বিচার কার্যক্রম চলতেই থাকবে। কেননা, ন্যুরেমবার্গ সর্বোচ্চ শক্তি কাজে লাগিয়ে ৪ বছরে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছে। তাই আমাদেরকে এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে যেন না যায় সরকার। যত দ্রুত সম্ভব শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। বিচারের প্রক্রিয়া অবশ্য ধীরে ধীরে সেদিকেই এগুচ্ছে।
২৫ মার্চ, ১৯৭১। ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সূচনা ঘটে এদিন। পাক হানাদার ও তাদের দোসররা মিলে হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলার মুক্তিকামী জনতার ওপর। এ হত্যাযজ্ঞ চলে দীর্ঘ ৯ মাস, রূপ নেয় গণহত্যায়। সেই গণহত্যাকারীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও এসেছে ২৫ মার্চ। তবে তা দেশ স্বাধীন হবার ৩৯ বছর পর।
এই হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে থেমে যায় বিচার প্রক্রিয়া। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ সময়। দিনে দিনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ব্যাপক গণদাবিতে পরিণত হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মহাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দেয়। জনগণ তাদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। সরকার গঠন করে মহাজোট। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাবটি। শুরু হয় প্রক্রিয়া। কিন্তু তারপর সরকারের ধীরগতি নিয়ে নানা সংশয় দেখা দেয় জনমনে। অবশেষে ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে, গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি ও আইনজীবী প্যানেল। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজও শুরু হয়ে গেছে বিচার প্রক্রিয়ার।
দেশের আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, '৭৩ সালে আমাদের আইনটি সর্বাঙ্গীণ পরিপূর্ণ একটি আইন। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে না থাকলেও আমাদের আইনটিতে আপিল করার সুযোগ রেখে 'ন্যায়বিচারের পরাকাষ্ঠা' দেখানো হয়েছে বলে মনে করেন সবাই। তাছাড়া জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশন মেনে তৈরি করা হয়েছে এই আইনটি। আইন নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের চালানো অপপ্রচার তাই ধোপে টিকছে না। সাধারণ ক্ষমা ও সিমলা চুক্তির বিষয়টি নিয়েও বিভ্রান্ত হবার কোনো সুযোগ নেই। ধাপে ধাপে সবাইকেই বিচারের আওতায় আসতে হবে।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের আগে বিচার করার দাবি অনেকদিন ধরে জানিয়ে আসছে জনগণ। এ বিষয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। সরকার এমন কিছু বলছে না, তবে প্রক্রিয়া চলছে এমনই। জানা যায়, তদন্তের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ উত্থাপিত হবে, তাদেরকেই আগে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তিও ধাপে ধাপে নিশ্চিত করা হবে। যাদের আগে রায় হবে, তাদের শাস্তিও আগে কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে সরকার সবার কাছে তথ্য-প্রমাণ চেয়ে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছে। অনেকেই তথ্য-প্রমাণ দেয়া শুরু করেছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে কাজ চলছে। বেসরকারিভাবে অনেকেই তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছেন। এসব তথ্যের অধিকাংশই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের। তাই শীর্ষদেরই আগে তদন্ত হবে ও মামলা হবে। আর এই প্রক্রিয়া ধরেই আগে হবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরে শুরু হওয়া এই বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়েও নানা বিভ্রান্তি আছে জনমনে। বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এসব অবশ্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে '৭১ সালে প্রকাশিত সংবাদপত্র-পত্রিকার সংবাদ বড় প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হয়। পত্রিকার কাটিংয়ের আইনগত ভিত্তি সম্পর্কেও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি গোলাম রব্বানী বলেন, পত্রিকার কাটিং বা ছবি দালিলিক সাক্ষ্য। '৭৩-এর বিশেষ আইনে এ বিষয়টিতে আরো জোর দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ দ্রুতগতিতে ন্যায়বিচারের প্রেক্ষাপটে বিচারকার্য শেষ করা হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ন্যায়বিচারের স্বার্থে কিছু সময়ের প্রয়োজন হতে পারে, সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আবার জনগণ বিচারের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে এটাও বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের দুটো বিষয় মনে রেখে কাজ এগিয়ে নেয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্যানেলের আইনজীবীরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। শিক্ষিত, অভিজ্ঞ, উদ্দীপ্ত এবং প্রাজ্ঞজনদেরই এই প্যানেলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অভিযোগগুলো এবং বিচার প্রক্রিয়া আদৌ জটিল নয়। সুতরাং সবকিছু সফলভাবেই ঘটবে বলে আশা করা যায়।
'অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ মেলেছে'
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শিক্ষাবিদ
নিজেকে সবসময়ই অপরাধী মনে হতো। আমাদের বিজয়ের মধ্যেও একটা কালো ছায়া ছিল। এই ছায়া দূর করে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন অনেক জরুরি ছিল। অবশেষে সেই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ মেলেছে। সরকারের এই ঘোষণা তাই আমাদের প্রীত করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিচার সম্পন্ন করার পালা। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দায়সারা গোছের বিচার করার কোনো সুযোগ নেই। সময় নিয়ে হলেও সঠিক বিচার করতে হবে। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে আবার কোনো প্রশ্ন যেন তৈরি না হয়। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়েও কোনো প্রশ্নের সুযোগ নেই। এটা একটি জাতীয় দায়িত্ব। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারেও আমি আশাবাদী। তারা নিশ্চয় তাদের দায়িত্ব গুরুত্বসহকারে পালন করবেন। তথ্য-প্রমাণের আলোকে আইনসিদ্ধভাবে বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ইতিহাসের পাতায় তারা নিজেদের নাম লেখাতে পারবেন। তাদের সামনেও তাই এটা বিরাট একটি সুযোগ।
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ
শিক্ষাবিদ
এই দিনটির জন্য আমাদের অনেক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। অবশেষে সবার প্রত্যাশা পূরণ করে ট্রাব্যুনাল গঠিত হয়েছে। এটা অবশ্যই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য একটি ইতিবাচক দিক। তাছাড়া, সরকার যাদের নাম ঘোষণা করেছে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। এরা সবাই অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, বিচার প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ হয়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের এই বিচারের দিকে গোটা বিশ্বই তাকিয়ে আছে। তারা যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে না পারে। যারা অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হবে তারাও যেন বিচার প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে অংশ নিতে পারে। তারা বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়ে আসলে তাদের সঙ্গে লড়ার জন্যও আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমাদের দেশের যেন মান রক্ষা হয় এবং অপরাধীদের বিচার যেন নিশ্চিত হয়।
'সহযোগিতার জন্য আমরাও মাঠে আছি'
রাশেদ খান মেনন
সভাপতি, ওয়ার্কার্স পার্টি
সরকারের এই পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের আশা আকাংক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে। কমিটিতে যারা জায়গা পেয়েছেন তাদের মনে রাখতে হবে, শুধু বিচার করলেই হবে না জনগণের সেন্টিমেন্টকেও মাথায় রাখতে হবে। জনগণের সেন্টিমেন্ট মাথায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করাই তাদের দায়িত্ব। আর শুধু এই কমিটির ওপর সব ছেড়ে দিলে হবে না। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবেও তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সেই সহযোগিতার জন্য আমরাও মাঠে আছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত হবার ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। কমিটিকে অবশ্যই অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে একটি আর্ন্তজাতিক মান সম্পন্ন বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
আকবর আলি খান
সাবেক উপদেষ্টা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার
অবশেষে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এই খবরটি শুনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করছি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। অবশ্য, ন্যায়বিচারের ব্যাপারে আমি যথেষ্ট আশাবাদী। সরকার ঘোষিত কমিটিতে যাদের নাম এসেছে এদের অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, এদের সম্পর্কে আমার কাছে তেমন কোনো তথ্যও নেই। তবে, বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে আমি মোটামুটি আশাবাদী।
সুলতানা কামাল
মানবাধিকারকর্মী
এটা আমাদের অনেকদিনের দাবি ছিল। প্রসিকিউশন নিয়োগের মধ্য দিয়ে সেই দাবি পূরণের রাস্তা তৈরি হয়েছে। এটা সবার কাছেই প্রত্যাশিত ছিল। ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহার অনুযায়ী এই পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে সরকারও বেশ আন্তরিক। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অন্যায়ের বিচার না হলে গণতন্ত্র কার্যকারিতা হারাতে পারে। যিনি প্রধান কৌঁসুলি নিযুক্ত হয়েছেন তিনি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন সদস্য। তার যোগ্যতা, সততা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমি জানি। বাকিদের সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে, সবাই নিশ্চয় যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতেই নিযুক্ত হয়েছেন। আমাদেরও অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে করে যতটা সম্ভব স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যাচাই-বাছাই করে যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে বিচারকার্য সম্পন্ন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।