ব্লগার পরিচয়ে ভীতি কেন?
লেখক: অর্বাচীন মেঘ
রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়। যুগে যুগে এরা খুন হয়েছে,হচ্ছে, সামনেও হবে। বাংলাদেশ নামক অসাধারণ (!) রাষ্ট্রের কাছে এর বিচার চেয়ে লাভ নেই। বিচার কোনদিন হবেও না। এদেশে অন্যায়কারী-সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পায়। আর মুক্তমনাদের গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসীদের মত গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয় (বাংলাদেশে চার ব্লগারকে কিভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গণমাধ্যমে এনেছিলো তা ভুলে যাওয়ার কথা নয়)।
অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর প্রায় সব গণমাধ্যমেই তাকে ব্লগার হিসেবে পরিচয় দেওয়া হলো। প্রথমত বাংলাদেশের এক-দুইটি গণমাধ্যম (যেখানে অভিজিৎ রায় লিখতেন) তার পরিচয় জানতো। আর জানতো তার পাঠকরা। এর বাইরে আরেক শ্রেনীর মানুষও অভিজিৎকে চিনতো, যারা তার খুনী।
'ব্লগার' শব্দটাকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার শুরু করে মৌলবাদীরা। তাদের প্রপাগান্ডার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে 'ব্লগার' শব্দটি প্রচণ্ডভাবেই নেতিবাচক।
আমার মূল কথাটা এখানেই। অনেকে বলছেন, গণমাধ্যম 'ব্লগার' পরিচয়টা সামনে এনে মুক্তমনাদের হত্যা জায়েজ করছে। কারণ খুন হওয়া থাবা বাবা, অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত এদের মূল পরিচয় ব্লগার নয়। ব্লগার পরিচয় দিয়ে এদেরকে 'নাস্তিক' হিসেবে চিহ্নিত করে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুন হওয়াকে যৌক্তিক করা হচ্ছে।
অভিজিৎ রায়ের বড় পরিচয় কি এটাই, যে তিনি একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী? নাকি এটা, যে তিনি একজন মুক্তমনা, লেখক, ব্লগার, যুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। অভিজিৎ অনেক পরিচয়েই পরিচিত কিন্তু তার লেখা পড়েছেন ব্লগের মাধ্যমে।
অনন্ত কি একজন ব্লগার নয়? একজন ব্যাংকারকে কেন মৌলবাদীরা খুন করবে? মৌলবাদীরা খুন করেছে তাকেই, যে তাদের জন্য হুমকি। যুক্তিবাদী অনন্ত, বাবু, থাবা বাবাকেই এরা হত্যা করবে। একজন ব্যাংকার, চাকুরিজীবি, স্থপতিকে নয়। এরা প্রত্যেকেই ব্লগ এবং অনলাইন জগতে তাদের চিন্তার স্ফূরণ ঘটাতেন। ব্লগ ছিলো তাদের কাছে শক্তিশালী হাতিয়ার। আমাদের অনেকের কাছেই মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা ব্লগ। নিজেদের জানা-বোঝার জায়গাটাকে আরও শক্তিশালী করার জায়গা ব্লগ।
যে মৌলবাদী (হেফাজতের মত অশিক্ষিত) ব্লগ বোঝে না, কিংবা মাদ্রাসার গরীব ছাত্র যাকে বোঝানো হয়েছে ব্লগ হলো শয়তান, নাস্তিকদের জায়গা তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অনেক মুক্তমনা, যুক্তিবাদীকে দেখেছি তারা গণমাধ্যমকে দোষারোপ করছেন (গণমাধ্যমের পক্ষে সাফাই গাচ্ছি না)। যারা খুন হয়েছেন তারা কি কখনও নিজেদের ব্লগার পরিচয় দিতে পিছপা হতেন? আমরা কেন হচ্ছি?
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় সময় মৌলবাদীরা ব্লগারদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলো তখন অনলাইন-অফলাইনে অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন। ব্লগ কি তা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন। আজ তাহলে কিছু মানুষ কেন ব্লগার খুন হওয়া মুক্তমনাদের ব্লগার পরিচয় নিয়ে শঙ্কিত?
যারা বলছেন গণমাধ্যম 'ব্লগার' শব্দ ব্যবহার করে খুন সাধারণ মানুষের মধ্যে জায়েজ করছেন তাদের বলি, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে খুব বেশি লাভ আছে? এরাই নীরবে দাঁড়িয়ে অভিজিৎকে খুন হতে দেখেছে। এদের মধ্যেই পহেলা বৈশাখে যৌন নির্যাতন হয়েছে। এরা সবাই মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান। এরা কেউ মানুষ না। এই সাধারণ মানুষই কোন মুক্তমনা খুন হলে বলে, "মরছে ভালো হইছে। ইসলাম নিয়ে উল্টো-পাল্টা লিখলে এটাই হবে।" অনেক হিন্দুকে দেখেছি তারা একটু চুক, চুক করে দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু যেই শোনে খুন হওয়া মুক্তমনা ব্লগার ব্যক্তিটি হিন্দু ধর্মের ভণ্ডামি নিয়েও লিখেছেন অমনি চেহারা পাল্টে ফেলে।
এই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের পাশাপাশি মানুষও একই রকম। এর পরবির্তন কিভাবে হবে সেটা ভিন্ন আলোচনা।
(ব্লগ নিয়মিত পড়লেও লেখালেখি করা হয় না। অসংলগ্নভাবে নিজের কথাগুলো প্রকাশ করলাম।)
###
__._,_.___