http://www.bkagoj1.com/print-edition/2015/01/15/14123.php
অমিত শাহ নয়, ফোন করেছিলেন হান্নান শাহ!
শ্যাম জাজু আমায় স্পষ্টত: বলেছেন, 'অমিত শাহ কল দেননি।' তিনি আরো যোগ দেন, 'বিজেপি ওভাবে কাজ করেনা।' এ খবরটি তার উদ্বৃতি দিয়ে প্রকাশ করা যাবে কিনা জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন, 'সেটা ঠিক হবেনা' এবং পরামর্শ দেন যে, 'ইগনোর ইট।' আমাদের দেখা করার কথা ছিলো বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ-এর সাথে। তিনি ওরিস্যা ছিলেন, আটকে যান তাই ফিরতে দেরী হয়। আমাদের তাই দেখা হয় বিজেপি'র ন্যাশনাল সেক্রেটারী শ্যাম জাজু'র সাথে। তিনি আমদের মিষ্টিমুখ করান, আশ্বাস দেন অমিত শাহ-এর বরাবরে আমাদের বার্তা পৌছে যাবে। আমাদের এ বৈঠকটি হয় ৯ই জানুয়ারী বিকালে বিজেপি সদর দফতরে। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে বিস্তৃত এলাকা নিয়ে বিশাল বিজেপি অফিস দেখে বিস্মৃত হই। পাশ থেকে রাশিয়া থেকে আগত প্রেমানন্দ দেবনাথ বলেন, 'ক্ষমতায় থাকলে এমনই হয়!' দিল্লীর টিভি সাংবাদিক নামতা গুপ্তা একথা শুনে বলেন, 'সোনিয়া গান্ধীর ভবনের কাছে এটা নস্যি।' এও জানালেন, বিজেপি'র সদর দফতর একদা ছিলো জনসংঘের অফিস এবং প্রায় ৭০/৮০ বছর আগে কেনা। যাহোক, ওই দফতরের একটি অফিসে আমরা শ্যাম জাজু'র সাথে কথা বলি। তবে ওপরের কথোপকথন বৈঠকের আলোচ্য ছিলোনা, বরং তা পরের আলাপ-চারিতা। এখন অবশ্য এ খবরের তেমন গুরুত্ব নেই, কারণ অমিত শাহ নিজেই গুমর ফাঁস করে দিয়েছেন।
মিডিয়ায় অমিত শাহ'র ফোন নিয়ে অনেক মুখরোচক সংবাদ দেখেছি। ঠিক ওই সময়টায় দিল্লী ছিলাম বিধায় এবং দেশীয় সাংবাদিকদের গুতাগুতিতে অনেকের সাথে আমার এনিয়ে কথা হয়েছে। একজন জানালেন, 'বিজেপি অনেক সতর্ক, বিদেশ মন্ত্রক-কে পাশ কাটিয়ে এমন কাজ করবে না।' সতর্ক যে তা বোঝা যায়, কারণ অমিত শাহ বিদেশী বলে প্রথমটায় আমাদের সাথে দেখা করতে রাজি ছিলেন না। যদিও অমিত শাহ ফোন করেছেন কিনা তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা ছিলোনা, তবু এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, তিনি ফোন করেননি এবং ওটা বিএনপি'র একটি অপ-প্রচার। বিএনপি এমন ভুল কেন করতে গেল তা কে জানে! ৫ই জানুয়ারী সভা করতে না দেয়ার সরকারী ভুল সিদ্বান্ত এবং অবরোধের ডাক দিয়ে বিএনপি যেটুকু অর্জন করতে পেরেছিলো, দু'টি মিথ্যা প্রচারনায় তা ভেস্তে যাচ্ছে।। এরমধ্যে একটি অমিত শাহ-এর ফোন এবং অন্যটি কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি। এদু'টো ঘটনা থেকে এটা স্পস্ট যে, বিএনপি দেশের জনগনের ওপর ভরসা না করে বিদেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল এবং ভারত-আমেরিকার ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বেশ 'দৃষ্টিকটু'।
আমেরিকার প্রসংগ আপাতত: থাক, কিন্তু ভারতের সাথে বিএনপি'র সখ্যতা যে খুব একটা গড়ায়নি তা কলকাতা ও দিল্লীর বিভিন্ন মহলের সাথে কথাবার্তা বলে বুঝতে অসুবিধা হয়নি। মোদী সরকার, ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, আরএসএস বা ভিএইচপি কোথাও বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কোলকাতা, দিল্লীতে বিভিন্ন মহলে কথাবার্তায় কখনো সখনো আমার মনে হয়েছে, 'দিল্লি এখন আমাদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার।' পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহার সাথে দেখা করলে তিনি বলেন, বিএনপি'র প্রতিনিধিদল আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন, আওয়ামী লীগের নেতারাও আসেন, ক'জন মন্ত্রীও যোগাযোগ রাখেন এবং দু'একটি নামও বললেন। আরো বললেন বাংলাদেশের সাথে সু-সম্পর্কের কথা। জানালেন, করিডোর বিনিময় একরকম চূড়ান্ত, তিস্তাচুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছাও ব্যক্ত করলেন। তিনি নিজেই জানালেন, একসময় তিনি তিস্তা চুক্তির বিরোধী ছিলেন, এখন পক্ষে, বললেন, এটা হবে বিজেপি'র সাফল্য। এ প্রসঙ্গে মিস্টার সিনহা পশ্চিমবংগ বিজেপি'র সাবেক সভাপতি ড: তথাগত রায়ের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টানলেন। বুঝলাম কেন ড: রায় ঢাকায় বিভিন্ন সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথাবার্তা বলেছেন এবং হিন্দুদের সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। ড: তথাগত রায়কে চিনি কমপক্ষে একদশক, এবং তার বক্তব্য যে বিজেপি'র বক্তব্য তা বুঝতে অসুবিধা হবার কারণ নেই। যদি তাই হয়, তবে বিএনপি কোথায়? ভারত বিরোধী বিএনপি বর্তমানে ভারতের দাসানুদাস হয়েও তো তেমন সুফল বয়ে আনতে পারছে না!
মোদ্দা কথা হলো, মোদী আওয়ামী লীগের পক্ষে, পুরো ভারত তাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। সামনে মমতা ঢাকা যাচ্ছেন, মোদী যাচ্ছেন; করিডোর হবে, তিস্তা হবে। দুই দেশ দুই সরকারের মধ্যে মাখামাখি আরো বাড়বে। এরমধ্যে সিনহা-কে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীও সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। 'দেবে আর নেবে মিলাবে মিলিবে--' এমন যদি হয় তবে সামনে বিএনপি'র জন্যে আরো দূর্দিন। সেক্ষেত্রে অমিত শাহ-এর ফোন নাটক বিএনপি'র জন্যে নুতন বিড়ম্বনা! তবে একজন কৌতুক করে বললেন, আসলে ফোন করেছিলেন হান্নান শাহ, ভুল করে এসে গেছে অমিত শাহ-এর নাম! ভানু'র একটি কৌতুক দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই: ভানু একজনের হাত দেখে বলেন, 'তোমার কাঁশিতে মৃত্যু হবে।' ক'মাস পর লোকটি এসে জানান দিলো তার 'ফাঁসিতে' মৃত্যুদন্ডের রায় হয়েছে। ভানু তখন বললেন, 'কাঁশি' আর 'ফাঁসি'-তে তেমন কোন তফাৎ নেই, শুধুমাত্র 'ক' আর ''ফ'- এখন গিয়া ঝুইল্যা পড়। পাঠক, অমিত শাহ আর হান্নান শাহ-এ কি আর এমন তফাৎ?
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ১৩ই জানুয়ারী ২০১৫।
SitangshuGuha 646-696-5569
__._,_.___