উজানের পানির তোড়ে ভেসে গেছে বিএনপির লংমার্চ আন্দোলন
দেশ-বিদেশের মিডিয়াকর্মীরা তুলতে পারেনি ধু ধু বালুচরের ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৩ এপ্রিল ॥ তিস্তা নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচী। পানি শূন্য ধু-ধু বালুচরে পরিণত হওয়া মৃতপ্রায় তিস্তা নদীকে বাঁচাতে বিএনপি দুই দিনের লংমার্চের কর্মসূচী পালন করেছে। ২৩ এপ্রিল তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহের ন্যায্য হিস্যা দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সৃষ্টি করতে বিএনপি এই কর্মসূচীর ডাক দেয়। লংমার্চ কর্মসূচী নিয়ে সরকার ও প্রতিবেশী দেশ ভারত কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছিল। সরকার সব সময় দাবি করে আসছে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সর্ম্পক রয়েছে। যে কোন সময় তিস্তা নদীর পানির হিস্যা নিয়ে চূড়ান্তভাবে চুক্তি হবে। দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের একাধিক বৈঠকে খসড়া চুক্তি অনুমোদন হয়ে আছে। এখন স্থায়ীভাবে চুক্তি হতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে হঠাৎ ৩ হাজার ৬শ' কিউসেক পানি এসেছে। এই পানিপ্রবাহকে দুই দেশের সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফসল বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দাবি করছেন।
ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিস্তা পানিচুক্তি নিয়ে নির্বাচনের আগে ইস্যু সৃষ্টি হতে পারে। এই অজুহাত দেখিয়ে ভোটের কৌশলগত কারণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকার তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও তাঁর দলের গঠিত পশ্চিমবঙ্গের সরকার তিস্তা পানিচুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে পানিচুক্তিটি হতে হতে হয়নি। তীরে এসে তরী ডুবার মতো ঘটনা ঘটে যায়।
বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে তিস্তা নদীর পানিচুক্তিকে ইস্যু করে বাংলাদেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিকভাবে জনমত তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগে। তারা বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করতে চায় ভারত মুখে বলে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুতের সম্পর্ক, বাস্তবে তারা বন্ধু নয়। তাই তারা তিস্তা সেচ প্রকল্পের দোয়ানী ব্যারাজে লংমার্চ আন্দোলনের ডাক দিয়ে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা দাবি করতে ভারতের ওপর ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।
ভারতও বিষয়টি বুঝতে পেরে লংমার্চ কর্মসূচীতে আসা দেশী-বিদেশী সংবাদকর্মী যাতে জনমত তৈরি করতে ধু-ধু বালুচরের ছবি তুলতে না পারে ও লংমার্চে আসা লাখ লাখ মানুষ যাতে মৃতপ্রায় তিস্তার ধু-ধু বালুচরের রূপ দেখতে না পারে- সে কৌশলগত কারণে ভারত রাতারাতি তিস্তা নদীতে পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে লংমার্চে যোগ দিতে এসে ধু-ধু বালুচরের পরিবর্তে পানিতে ভরা টইটুর যৌবনা তিস্তাকে দেখতে পায় সকলেই। এতে সবাই অবাক। জনতাকে বলতে শোনা গেছে- ভারতের ছেড়ে দেয়া তিস্তা নদীর পানির তোড়ে বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচী ভেসে গেছে। এখন আর বিএনপির কাছে কোন রাজনৈতিক ইস্যু থাকল না।
সিপিবিসহ বাম দল নিয়ে গঠিত মোর্চা নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা বিশ্ব জনমত তৈরিতে ১৭ ও ১৮ এপ্রিল তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচী পালন করেন। এতে বহির্বিশ্বে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জনমত তৈরি হয়। তাই ভারত সরকার বাধ্য হয়ে তিস্তা নদীতে তাদের দাবিকৃত শুষ্ক মৌসুমে ৩ হাজার ৫শ' কিউসেক পানি ছেড়ে দিয়েছে। সিপিবিসহ বাম দলগুলো এই পানিপ্রবাহের চুক্তির স্থায়িত্ব করতে চূড়ান্ত চুক্তির দাবি জানায়। তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানিরপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচী ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।
বুধবার তিস্তা ব্যারাজের উজানে রিজার্ভারে বালুচরগুলো পানির নিচে ঢাকা পড়ে গেছে। পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে তিস্তা নদী। প্রমত্তা তিস্তা যেন তার পুরনো যৌবন ফিরে পেয়েছে। ভারত সরকার ব্যারাজের উজানে গড়া গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়েছে। তাই ২৩ এপ্রিল বিএনপির লংমার্চে আসা জনতা শুষ্ক পানিশূন্য তিস্তা নদীকে দেখতে পায়নি। তারা পানিতে ভরপুর তিস্তাকে দেখেছে। আবারও বিএনপির রাজনীতি ভারত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাছে পরাজিত হলো।
বুধবার ভোর থেকেই লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে লংমার্চে যোগ দিতে মানুষের ঢল নামে। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিএনপির ডাকা এই লংমার্র্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। লংমার্চ সফল করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় সন্ধ্যায় মিছিল মিটিং করেছেন। গ্রামে গ্রামে মাইকিং ও লাখ লাখ টাকা খরচ করে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল লংমার্চে ৩ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানো। বিএনপির সেই পরিকল্পনা সফল করতে প্রচারে সফল হলেও শেষ পর্যন্ত লংমার্চের সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের জমায়েত করতে পারেনি। দেশ-বিদেশের শত শত মিডিয়াকর্মী লংমার্চের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসে। তারাও লংমার্চের সংবাদ নিতে এসে ধু-ধু বালুচরে ভরা তিস্তা নদীর ছবি তুলতে পারেনি। ভারতের উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে তিস্তা এখন প্রমত্তা নদীতে পরিণত হয়েছে। ভারতের ছেড়ে দেয়া পানির তোড়ে বিএনপির লংমার্চ আন্দোলন ভেসে গেছে। লংমার্চ কর্মসূচীতে ১০-১৫ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে।
তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম জানান, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র ২৮০ কিউসেক। পানিশূন্য তিস্তার বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হয়েছিল। তাই ভারত সরকারের সঙ্গে যৌথ নদী কমিশনের কর্তারা পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা নদীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। রিজার্ভারের ধু-ধু বালুচরগুলো পানিতে টইটুর হয়ে গেছে। ঢাকা পড়ে গেছে ধু-ধু বালুচরগুলো। আশা করা যাচ্ছে ভারত সরকারের বোধগম্য হয়েছে। তিস্তার ক্ষতি মানে শুধু বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি হবে তা নয়, এতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ক্ষতি বেশি হবে। কারণ উত্তরাঞ্চলের মরু প্রক্রিয়ার প্রভাব ভারতের উত্তরাঞ্চলেও পড়বে। তিস্তা নদীতে ৩ হাজার ৫শ' কিউসেক পানি আসায় নদীটির ভাটি অঞ্চলেও কিছু পানিপ্রবাহ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেটের ১০-১২টি গেট সামান্য খুলে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে খুলে দিলে বন্যা ও ফ্লাডওয়াশ হতে পারে। সে কারণে ব্যারাজের গেটগুলো হঠাৎ খুলে দেয়া হয়নি। গেট সামান্য খুলে দিয়ে অল্প অল্প পরিমাণ পানি মূল নদীর ভাটিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে ব্যারাজের প্রধান নালাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি শুষ্ক মৌসুমে কৃষক পাবে। ভারতের ছেড়ে দেয়া পানি প্রধান নালা দিয়ে ৮টি জেলার ৩৫টি উপজেলার মধ্যে ২৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নালায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে কৃষক উপকৃত হবেন। বুধবার বেলা ১১টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৬শ' কিউসেক। এই পানিপ্রবাহ হু হু করে বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে তিস্তাপাড়ের মানুষ আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছে।
সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) এবং লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান, লংমার্চ সফল করতে লাখো মানুষ তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে এসেছে। বিএনপির এই লংমার্চ সফল হয়েছে। বুধবার ভোররাত থেকে তিস্তা ব্যারাজ মুখে মানুষের ঢল নামে। এমনকি জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে ভারত সরকার গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে তিস্তায় পানি পাঠিয়েছে। তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহের এই ন্যায্য হিস্যার জন্য আওয়ামী লীগের কোন অর্জন নেই। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে ভারত থেকে আওয়ামী লীগ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় না থেকেও বিএনপি তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে ছেড়েছে। যার প্রমাণ তিস্তা নদীর আজকের পানিপ্রবাহ। বিএনপির এই লংমার্চের আন্দোলন সফল হয়েছে।
স্থানীয় পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান জানান, তিস্তা নদী বাঁচা-মরার এই আন্দোলন শুধু বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন দেশের আপামর সাধারণ মানুষের আন্দোলন। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাই আন্দোলন সফল। পানিপ্রবাহ তাই তার প্রমাণ।
পানি কমে গেছে
নিজস্বসংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, হঠাৎ উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই পানি আবার কমে গেছে। মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬ কিউসেক। বুধবার সেই পানি নেমে আসে ১ হাজার ২৪২ কিউসেকে। যা ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে পানি কমে যায় ১ হাজার ৭৬৪ কিউসেক।
তিস্তার পানিতে বিএনপির লংমার্চে আসা নেতাকর্মীদের গোসলের ধুম
বুধবার দুপুরে তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী হেলিপ্যাড মাঠে বিএনপির লংমার্চের সমাপনী জনসভায় যোগ দিতে আসা রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা যায় তিস্তা নদীতে নেমে লাফঝাঁপ আর গোসল করতে। এ সময় সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে যখন অনেক বক্তা বলছিলেন চেয়ে দেখেন তিস্তা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। তখন এ বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা লংমার্চের টি শার্ট পড়ে তিস্তায় গোসলে ব্যস্ত ছিল। এ সময় তাঁদের মন্তব্য করতে শোনা যায় তিস্তার স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের আনন্দ ভুলবার নয়।
ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিস্তা পানিচুক্তি নিয়ে নির্বাচনের আগে ইস্যু সৃষ্টি হতে পারে। এই অজুহাত দেখিয়ে ভোটের কৌশলগত কারণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকার তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও তাঁর দলের গঠিত পশ্চিমবঙ্গের সরকার তিস্তা পানিচুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে পানিচুক্তিটি হতে হতে হয়নি। তীরে এসে তরী ডুবার মতো ঘটনা ঘটে যায়।
বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে তিস্তা নদীর পানিচুক্তিকে ইস্যু করে বাংলাদেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিকভাবে জনমত তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগে। তারা বিশ্ব দরবারে প্রমাণ করতে চায় ভারত মুখে বলে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুতের সম্পর্ক, বাস্তবে তারা বন্ধু নয়। তাই তারা তিস্তা সেচ প্রকল্পের দোয়ানী ব্যারাজে লংমার্চ আন্দোলনের ডাক দিয়ে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা দাবি করতে ভারতের ওপর ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।
ভারতও বিষয়টি বুঝতে পেরে লংমার্চ কর্মসূচীতে আসা দেশী-বিদেশী সংবাদকর্মী যাতে জনমত তৈরি করতে ধু-ধু বালুচরের ছবি তুলতে না পারে ও লংমার্চে আসা লাখ লাখ মানুষ যাতে মৃতপ্রায় তিস্তার ধু-ধু বালুচরের রূপ দেখতে না পারে- সে কৌশলগত কারণে ভারত রাতারাতি তিস্তা নদীতে পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে লংমার্চে যোগ দিতে এসে ধু-ধু বালুচরের পরিবর্তে পানিতে ভরা টইটুর যৌবনা তিস্তাকে দেখতে পায় সকলেই। এতে সবাই অবাক। জনতাকে বলতে শোনা গেছে- ভারতের ছেড়ে দেয়া তিস্তা নদীর পানির তোড়ে বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচী ভেসে গেছে। এখন আর বিএনপির কাছে কোন রাজনৈতিক ইস্যু থাকল না।
সিপিবিসহ বাম দল নিয়ে গঠিত মোর্চা নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা বিশ্ব জনমত তৈরিতে ১৭ ও ১৮ এপ্রিল তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচী পালন করেন। এতে বহির্বিশ্বে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জনমত তৈরি হয়। তাই ভারত সরকার বাধ্য হয়ে তিস্তা নদীতে তাদের দাবিকৃত শুষ্ক মৌসুমে ৩ হাজার ৫শ' কিউসেক পানি ছেড়ে দিয়েছে। সিপিবিসহ বাম দলগুলো এই পানিপ্রবাহের চুক্তির স্থায়িত্ব করতে চূড়ান্ত চুক্তির দাবি জানায়। তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানিরপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএনপির লংমার্চ কর্মসূচী ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।
বুধবার তিস্তা ব্যারাজের উজানে রিজার্ভারে বালুচরগুলো পানির নিচে ঢাকা পড়ে গেছে। পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে তিস্তা নদী। প্রমত্তা তিস্তা যেন তার পুরনো যৌবন ফিরে পেয়েছে। ভারত সরকার ব্যারাজের উজানে গড়া গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়েছে। তাই ২৩ এপ্রিল বিএনপির লংমার্চে আসা জনতা শুষ্ক পানিশূন্য তিস্তা নদীকে দেখতে পায়নি। তারা পানিতে ভরপুর তিস্তাকে দেখেছে। আবারও বিএনপির রাজনীতি ভারত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাছে পরাজিত হলো।
বুধবার ভোর থেকেই লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে লংমার্চে যোগ দিতে মানুষের ঢল নামে। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিএনপির ডাকা এই লংমার্র্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। লংমার্চ সফল করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় সন্ধ্যায় মিছিল মিটিং করেছেন। গ্রামে গ্রামে মাইকিং ও লাখ লাখ টাকা খরচ করে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল লংমার্চে ৩ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানো। বিএনপির সেই পরিকল্পনা সফল করতে প্রচারে সফল হলেও শেষ পর্যন্ত লংমার্চের সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের জমায়েত করতে পারেনি। দেশ-বিদেশের শত শত মিডিয়াকর্মী লংমার্চের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসে। তারাও লংমার্চের সংবাদ নিতে এসে ধু-ধু বালুচরে ভরা তিস্তা নদীর ছবি তুলতে পারেনি। ভারতের উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে তিস্তা এখন প্রমত্তা নদীতে পরিণত হয়েছে। ভারতের ছেড়ে দেয়া পানির তোড়ে বিএনপির লংমার্চ আন্দোলন ভেসে গেছে। লংমার্চ কর্মসূচীতে ১০-১৫ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে।
তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম জানান, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র ২৮০ কিউসেক। পানিশূন্য তিস্তার বিষয়ে সরকারকে অবহিত করা হয়েছিল। তাই ভারত সরকারের সঙ্গে যৌথ নদী কমিশনের কর্তারা পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টায় তিস্তা নদীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। রিজার্ভারের ধু-ধু বালুচরগুলো পানিতে টইটুর হয়ে গেছে। ঢাকা পড়ে গেছে ধু-ধু বালুচরগুলো। আশা করা যাচ্ছে ভারত সরকারের বোধগম্য হয়েছে। তিস্তার ক্ষতি মানে শুধু বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি হবে তা নয়, এতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের ক্ষতি বেশি হবে। কারণ উত্তরাঞ্চলের মরু প্রক্রিয়ার প্রভাব ভারতের উত্তরাঞ্চলেও পড়বে। তিস্তা নদীতে ৩ হাজার ৫শ' কিউসেক পানি আসায় নদীটির ভাটি অঞ্চলেও কিছু পানিপ্রবাহ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেটের ১০-১২টি গেট সামান্য খুলে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে খুলে দিলে বন্যা ও ফ্লাডওয়াশ হতে পারে। সে কারণে ব্যারাজের গেটগুলো হঠাৎ খুলে দেয়া হয়নি। গেট সামান্য খুলে দিয়ে অল্প অল্প পরিমাণ পানি মূল নদীর ভাটিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে ব্যারাজের প্রধান নালাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি শুষ্ক মৌসুমে কৃষক পাবে। ভারতের ছেড়ে দেয়া পানি প্রধান নালা দিয়ে ৮টি জেলার ৩৫টি উপজেলার মধ্যে ২৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নালায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে কৃষক উপকৃত হবেন। বুধবার বেলা ১১টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৬শ' কিউসেক। এই পানিপ্রবাহ হু হু করে বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে তিস্তাপাড়ের মানুষ আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছে।
সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) এবং লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান, লংমার্চ সফল করতে লাখো মানুষ তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে এসেছে। বিএনপির এই লংমার্চ সফল হয়েছে। বুধবার ভোররাত থেকে তিস্তা ব্যারাজ মুখে মানুষের ঢল নামে। এমনকি জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে ভারত সরকার গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে তিস্তায় পানি পাঠিয়েছে। তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহের এই ন্যায্য হিস্যার জন্য আওয়ামী লীগের কোন অর্জন নেই। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে ভারত থেকে আওয়ামী লীগ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় না থেকেও বিএনপি তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে ছেড়েছে। যার প্রমাণ তিস্তা নদীর আজকের পানিপ্রবাহ। বিএনপির এই লংমার্চের আন্দোলন সফল হয়েছে।
স্থানীয় পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান জানান, তিস্তা নদী বাঁচা-মরার এই আন্দোলন শুধু বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন দেশের আপামর সাধারণ মানুষের আন্দোলন। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাই আন্দোলন সফল। পানিপ্রবাহ তাই তার প্রমাণ।
পানি কমে গেছে
নিজস্বসংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, হঠাৎ উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই পানি আবার কমে গেছে। মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬ কিউসেক। বুধবার সেই পানি নেমে আসে ১ হাজার ২৪২ কিউসেকে। যা ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে পানি কমে যায় ১ হাজার ৭৬৪ কিউসেক।
তিস্তার পানিতে বিএনপির লংমার্চে আসা নেতাকর্মীদের গোসলের ধুম
বুধবার দুপুরে তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী হেলিপ্যাড মাঠে বিএনপির লংমার্চের সমাপনী জনসভায় যোগ দিতে আসা রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা যায় তিস্তা নদীতে নেমে লাফঝাঁপ আর গোসল করতে। এ সময় সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে যখন অনেক বক্তা বলছিলেন চেয়ে দেখেন তিস্তা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। তখন এ বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা লংমার্চের টি শার্ট পড়ে তিস্তায় গোসলে ব্যস্ত ছিল। এ সময় তাঁদের মন্তব্য করতে শোনা যায় তিস্তার স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানিতে গোসলের আনন্দ ভুলবার নয়।
__._,_.___