১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৫ |
ধর্ম সবসময়ই মানুষের অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ একটি চেতনা, একটি আধ্যাত্মিক জীবন দর্শন। সাধারণ মানুষ ধর্ম পালন করেন, সাধারণ মানুষ ধর্মকে যুক্তিহীনভাবে বিশ্বাস করেন, আস্থা রাখেন এবং হৃদয়ের একটি বিশেষ জায়গাতে ধর্মকে সংরক্ষণ করেন। আমাদের দেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মের পাশাপাশি আমাদের লোকজ সংস্কৃতি এবং আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য একই সাথে লালন পালন করে এসেছেন। ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থসমূহকে যারা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করেন এবং ধর্মের মূল সুরটুকু অবহেলা করে শুধুমাত্র ধর্মকে উপজীব্য করে বেঁচে থাকতে চান, সেই কট্টর ধর্মীয় অনুভূতির সাথে আমাদের দেশের মানুষের সম্পর্ক খুবই অল্প। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হবার পর থেকেই আমাদের এই অঞ্চলে কট্টর ধর্মগুলোকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার জায়গা থেকে টেনে বের করে রাজনীতি নোংরা ময়দানে নামিয়ে দেয়া হয়েছে, এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ভোট এবং শোষণের রাজনীতি পাকাপোক্ত করা হয়েছে।
ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা আমাদের দেশে খুব কৌশলেই প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন-মাফিক সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেরি কে টমাস আমাদের দেশে এসে বলেছিল, এই দেশের নিম্নবিত্ত জনগণের ছেলেপেলেরা পড়বে মাদ্রাসায়, মধ্যবিত্ত ছেলেপেলেরা পড়বে বাঙলা মাধ্যমে এবং উচ্চবিত্তরা পড়বে ইংরেজি মাধ্যমে। ব্রিটিশরা আমাদের এই অঞ্চলে যেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ এবং বিভাজনের বীজ বপন করে গিয়েছিলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বর্তমানে সারাবিশ্বে সেই একই পদ্ধতিতে শোষণ এবং আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করে যাচ্ছে। হেরি কে টমাস আমাদের বুঝিয়ে গিয়েছেন, কীভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা চালুর মাধ্যমে, অশিক্ষা আর কুসংস্কার জিয়িয়ে রাখার মাধ্যমে ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদ নামক বিষবৃক্ষটিকে লালন পালন করতে হয়, এবং প্রয়োজন-মাফিক কীভাবে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে হয়। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কীভাবে ধীরে ধীরে ধর্মান্ধ মৌলবাদীতে পরিণত করতে হয়, তার প্রেসক্রিপশনই ছিল তার বক্তব্য। কারণ হচ্ছে ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা যেমন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় দেশে অশিক্ষা কুশিক্ষা আর দেশকে ক্রমশ মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যাওয়ার বাহন হিসেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব-পাকিস্তান এই রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রীয় চরিত্র প্রায় অভিন্ন, এবং তারা বাঙলাদেশের স্বীকৃত শত্রু হিসেবেই বাঙলাদেশের জন্মের সময় এই রাষ্ট্রটি গর্ভে থাকা কালীন সজোরে লাথি মেরেছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল।
একাত্তরে পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী জামাত শিবির এই দেশে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তারা হত্যা করেছে, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এই দেশকে মেধাশুন্য করে ফেলার অশুভ পরিকল্পনাও তারা করেছিল। শুধু তাই নয়, লক্ষ লক্ষ নারীকে তারা ধর্ষণ করেছে সেই সময়ে, সেসব স্মৃতি ভোলা যায় না। বিভিন্ন কায়দায় একের পর এক দিনের পর দিন তারা ধর্ষণ করেছে আমাদের শিশুকন্যা থেকে শুরু করে আমাদের মমতাময়ী মাকে। শোনা যায়, একটি কক্ষের ভেতরে নগ্ন করে আমাদেরই আদরের, আমাদেরই অনেক স্নেহের মেয়েদের রাখা হত, যেন তারা জামা দিয়ে গলার ফাঁস বানিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে। প্রতিটি রাতে প্রতিটি দিনে প্রবল ধর্ষণ আর অত্যাচারে আমাদের মা এবং বোনেরা আত্মহত্যার চেষ্টা করতো, কিন্তু পাকবাহিনী তাদের মরে যেতেও দিতো না, কারণ মৃত মেয়েরা ধর্ষণের উপযোগী নয়। আমাদের মেয়েদের স্তন কেটে নেয়া হত, আমাদের ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়েদের শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হত। একাত্তরের কিছু ছবি পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় আমাদের প্রিয় মানুষগুলো, আমাদেরই স্বজনেরা মরে পরে আছে রাস্তার মাঝখানে, ধর্ষিত হয়ে কোন নারী পরে আছে নগ্ন হয়ে, তার মুখে মাছি বসছে, তার শরীরের কিছু অংশ খুবলে খেয়ে ফেলেছে নরপশুরা। আমাদের দেশের সমস্ত রাস্তাঘাট ভরে উঠেছিল মানুষের লাশে, ধর্ষিতা রমণীদের ক্ষতবিক্ষত শরীরে। সেই সব দৃশ্যের ভয়াবহতার ছবিগুলো দেখলে গা শিউরে ওঠে। মানুষ কীভাবে এই কাজগুলো করেছে ভাবতেই প্রবল ঘৃণায় সমস্ত সত্ত্বায় কাঁপন ধরে যায়!
আর যাদের পরিবারের সদস্যদের লাশ পুকুরে, ডোবায়, নদীতে পরে ছিল, তাদের নিদারুণ কষ্টের কথা, যন্ত্রণার কথা, সেই দৃশ্য কল্পনা করে দুঃস্বপ্নের ঘোরে জেগে ওঠার ভয়াবহ স্মৃতি তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে অনেকগুলো বছর। আমরা হয়তো এখন আর সেসব দিনের কথা আর মনে রাখি নি, কিন্তু যাদের বাবা নিহত হয়েছেন, যাদের মাকে কয়েকটি নরপশু মিলে ছিন্নভিন্ন করেছে, তাদের সেই দুঃসহ স্মৃতি তারা কীভাবে ভুলে যাবে? ধর্ষিতা মুখগুলো আর রাস্তায় পরে থাকা অসংখ্য মৃতদেহগুলো এখন পরিসংখ্যানের এক একটা সংখ্যা হয়ে বইপত্রে জমা হয়ে আছে, তাদের আর কোন আর্তনাদ নেই, তাদের আর কোন রক্ত নেই, আর কোন কান্না নেই।
আমরা সাধারণ মানুষও যার যার মত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছি, কেউ স্বাধীনতার মাসে একটু হা পিত্যেস করেই ব্যাপারগুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি। এখন অনেক বছর কেটে গেছে, তাই আমাদের কারোরই আর তেমন কিছু যায় আসে না। আমরা এখন এই দেশকে নতুন করে পাকিস্তান বানাবার স্বপ্ন দেখছি। যেই পাকিস্তানকে আমরা এক সময় বিদায় জানিয়েছিলাম, সেই পাকিস্তানের ভুত এখন আর আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে নেই, সেই ভুত এখন প্রবেশ করেছে আমাদের খাদ্যে, আমাদের চিন্তায়, আমাদের রক্ত কণিকায়, আমাদের অস্তিত্বের অংশ হয়ে উঠেছে সেই পাকিস্তান। আমরা এখন ইসলামিক টিভিতে রাজাকারদের ওয়াজ শুনি, তারা বেমালুম আমাদের বেডরুমে ঢুকে পরেছে ইসলামের ঝাণ্ডা নিয়ে। তারা আমাদের নানাভাবে নসিহত করেন, তারা আমাদের নানা শলা পরামর্শ দেন, আমরা সেসব শ্রদ্ধার সাথে শুনি, পালন করি। আমরা ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা রাখি, আমাদের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন ছাপায়। তারা আমাদেরই এলাকাগুলোতে ধর্মীয় আসর বসায়, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত তাদের কথা শুনি, কীভাবে মালাউনদের এদের থেকে বিতাড়িত করতে হবে, কীভাবে মালাউন নারীদের গর্ভে ইমানদার মুমিন বাচ্চা প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে, কীভাবে দেশে ইসলাম কায়েম করতে হবে, এসব শুনতে শুনতে আমাদের শরীরে জিহাদি জোশ জেগে ওঠে। আমাদের রক্তে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তকণিকাগুলো ক্রমশ মরে যেতে থাকে, সেখানে জেগে ওঠে রাজাকারের রক্ত, সেখানে জেগে ওঠে প্রতিক্রিয়াশীলতার নেশা, জিহাদের স্বপ্ন।
আমাদের পতাকায় যেই গোল লাল রঙের বৃত্তটি রয়েছে, সেটা রক্তের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতার সূর্যের প্রতীক। আমাদের সেই রক্তে কেনা পতাকা এই সেদিনও তারা নিজেদের গাড়িতে উড়িয়ে সদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে, আমরা তা দেখেও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, যেন আমাদের কিছু যায় আসে না! আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। একটি দল তাদের ক্ষমতায় নিয়ে গেছে, আরেকটি দল তাদের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে। অথচ আমাদের যেন কিছুই করার নেই, আমরা শুধু পাশ কাটাতে শিখেছি, আমরা শুধু ভুলে যেতে শিখেছি।
আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দলই রাজনীতি করে সাধারণত নানান বস্তুগত সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য। কেউ রাজনীতি করে টাকার জন্য, কেউ করে ক্ষমতার জন্য, এসবই মানবিক ব্যাপার স্যাপার, এগুলো নিয়েই আমাদের যুদ্ধ। কিন্তু সেই রাজনীতির সাথে যখনই ধর্মীয় প্রেরণা যুক্ত হয়, পারলৌকিক সুখ সুবিধাও যুক্ত করে দেয়া হয়, এর চাইতে ভয়াবহ আর কিছুই হতে পারে না। একজন আওয়ামী লীগ বা বাম দলের সমর্থক ছাত্র হয়তো আন্দোলন করতে গিয়ে একবার ভাববে, তার বাসায় তার বৃদ্ধা মা রয়েছে, স্কুলশিক্ষক বাবা রয়েছে, কিন্তু একজন জামাত ইসলামী সদস্য তা কখনই ভাববে না। তার উপরে রয়েছে আল্লাহ, উপরে রয়েছে বেহেশতের হাতছানি। মৃত্যু তাকে দমন করতে পারবে না, ভয় তাকে আতংকিত করতে পারবে না। তাই ভয়াবহতার দিক দিয়ে সে পুরো পৃথিবীর জন্যেই ক্ষতিকর। সেই সাথে ভয়ংকর পৃথিবীর সব দেশে ধর্মীয় প্রেরণাকে উপজীব্য করে রাজনীতি করা, সোজা কথায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চরিত্রই নষ্টামি আর নোংরামিতে পরিপূর্ণ।
জামাত শিবির কারা করে? একাত্তরে যেই ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আমরা হারিয়ে দিয়েছিলাম, আজকে এই স্বাধীন বাঙলাদেশে তাদের এত প্রভাব প্রতিপত্তির কারণ কী? তারা কীভাবে এত ক্ষমতাশালী হল? তারা কীভাবে এত শক্তি সঞ্চয় করলো?
সমস্যাগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমনভাবে ঢুকে আছে যে, আমরা কিছুতেই এই বিষ থেকে রেহাই পাচ্ছি না। মাদ্রাসা শিক্ষার নামে এক মধ্যযুগীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করা হচ্ছে এখনও, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত, যার ফলে সাম্রাজ্যবাদ এবং মৌলবাদের এক অশুভ বলয়ের মধ্যে চাপা পরে গেছি আমরা। অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি, শিক্ষানীতি সবকিছুতেই তারা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় বসে গেছে। ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামাত শিবির এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র যে এক এবং অভিন্ন, তা জামাতের হরতালের সময় ভুল করে মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে একটি ইট ছোড়ার জন্য বারবার ক্ষমা প্রার্থনাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়!
অথচ এই জামাত শিবির কখনও ক্ষমা চায়নি এদেশে গণহত্যা চালাবার জন্য, তারা কখনও ক্ষমা চায় নি অগণিত নারীকে ধর্ষণের জন্য, তারা ক্ষমা চায় নি এই দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার জন্য। মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে একটি ইট যেন আমাদের লক্ষ লক্ষ নারীর সম্মান এবং লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত থেকেই বেশি ভয়াবহ, নাহলে একটি ইটের জন্য ক্ষমা চাওয়া গেলেও দেশের মানুষের সাথে করা অপকর্মের জন্য কেন একবারও ক্ষমা চায় নি?
আমরা অতীত খুব দ্রুতই ভুলে যাই। একদিন হয়ত আমাদের দেশের ইতিহাস লেখা হবে। সেই ইতিহাসে থাকবে নানান বিষয়। বাঙালির ইতিহাসে খুব বড় কোন অর্জন নেই, ঘুরে ফিরে সেই বাহান্ন আর একাত্তরের কথাই। বাহান্নতে হঠাৎ করে আমরা একদিন বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে, আমাদের ভাষা না থাকলে আমাদের জাতিসত্তা বিলীন হয়ে যাবে। তাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম সর্বশক্তি নিয়ে। আবার একাত্তরে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের আর পিছু হটার সুযোগ নেই, তাই আমরা জীবন বাজি রেখে নেমে পরেছিলাম যুদ্ধে। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এই যুদ্ধে সে সময়ে আমাদের এই সব অত্যাচারই সহ্য করে যেতে হয়েছে একটি নতুন দিনের স্বপ্নে, একটি নতুন দেশের আকাঙ্ক্ষায়। সেই পাকবাহিনীর বিচার আমরা করতে পারিনি, তাদের সেনাবাহিনী আমাদের দেশে গণহত্যা চালিয়ে অক্ষত অবস্থায় ভারত চলে গেছে, এবং তাদের এদেশীয় চামচা রাজাকার আলবদরদের সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতনের পরেও আজও আমরা কেমন জানি অসহায় তাদের ক্ষমতার কাছে, তাদের রাজনীতির কাছে। তারা প্রকাশ্যে আমাদের হুমকি দেয়, তারা প্রকাশ্যে আমাদের রক্তচক্ষু দেখায়, তারা আমাদেরই রক্তে কেনা পতাকা তাদের গাড়িতে লাগিয়ে বীর-দর্পে ঘুরে বেড়ায়, এ যেন আমাদের ধর্ষিতা মা বোনদের রক্তাক্ত শাড়ির উপরেই তারা দাঁড়িয়ে আছে, এ যেন আমাদের মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের উপরেই তারা পা তুলে দিয়ে আছে।
আমরা পাকিস্তানীদের বিচার করতে পারি নি, এ আমাদের ব্যর্থতা অবশ্যই। কিন্তু এই ব্যর্থতা আরও প্রকট হয়ে যখন আমরা ভাবি, আমরা এদেশের কুলাঙ্গার রাজাকার আলবদরদেরও বিচার করতে পারি নি। আজকে যখন এই বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তারা আমাদের জিম্মি করছে। তারা রাজপথ কাপিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আমাদের জানান দিচ্ছে যে তারা শক্তিশালী, তাদের ক্ষমতা আছে। আর আমরা নপুংসকের মত তাদের তাণ্ডব চেয়ে চেয়ে দেখছি। আমাদের কি কারোর কিছুই করার নেই?
আমরা আমাদের সেই ইতিহাসে কী লিখবো? আমরা আমাদের সন্তানদের কী জবাব দেবো? আজকে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামাত শিবিরের তাণ্ডবে সারা দেশ ভয়ে আতংকে দিশেহারা, তারা আমাদের বারবার ধমক দিচ্ছে, তারা আমাদের চোখ রাঙ্গানী দিচ্ছে। এসব দেখে মনে হয় এই দেশ স্বাধীন বাঙলাদেশ নয়, আমরা যেন আজও স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি নি।
স্বাধীনতার প্রকাশ্য এবং স্বীকৃত শত্রুরা এই বিজয়ের মাসে হরতাল নামক ডরতাল ডেকে তাদের ক্ষমতা আমাদের সামনে প্রদর্শন করেছে, আমাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আমাদের চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বুঝিয়েছে, তারা এই দেশে রাজনীতি করে যাবে এবং আমাদের ক্ষমতা নেই তাদের আটকানোর। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) কয়েকটি বাম দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবিতে ১৮ ডিসেম্বর হরতাল ডেকেছে। এই হরতাল জামাত শিবিরের অশুভ রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমানুষের প্রতিরোধ, এই হরতাল বাঙলাদেশের সেই সব সাধারণ মানুষের হরতাল যারা ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গাতে রেখে ধর্মের নিয়ে ব্যবসা এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতির মত কুৎসিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দেন। আজকে সমগ্র বাঙলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তার, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য লালন পালনকারীদের একত্র হয়ে ধর্মান্ধ মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক এই শক্তিগুলোকে জবাব দিতে হবে, নতুবা মৌলবাদ আমাদের ক্রমশ গ্রাস করতেই থাকবে এবং সাম্রাজ্যবাদের জন্য এখানে প্রস্তুত করা হবে শোষণের উর্বর ক্ষেত্র। আজকে আমরা রুখে না দাঁড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া তারা ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করতেই থাকবে। আমাদের চুপ করে তাদের তাণ্ডবলীলা দেখার সময় শেষ হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াবার সময়, এখন রুখে দাঁড়াবার সময়।
জামাত শিবিরের ডাকা হরতালের জবাব দিতে আগামী ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সহ গণতান্ত্রিক বামমোর্চা হরতাল আহবান করেছে। হরতালের দাবীগুলো হচ্ছেঃ
১) স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির সহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা,
২) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা
৩) তাজরিন গার্মেন্টস-এ আগুনে পুড়িয়ে শতাধিক শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদান,
৪) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো
এই হরতাল সফল করতে হবে, আমাদের দেখিয়ে দিতে হবে এই বাঙলাদেশে তালেবানদের কোন স্থান নেই, এই বাঙলা কোনদিন আফগান হবে না, কোন দিন বাঙলাস্থান হবে না, কোনদিন পাকিস্তান হবে না। আর তাই এখন সকল প্রগতিশীল গোষ্ঠীর একসাথে রুখে দাড়াতে হবে, নতুবা কাল তারা আমাদের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াবে।
Source:
http://www.somewhereinblog.net/blog/realAsifM/29730054
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৪ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...