বিশেষ প্রতিনিধি।।
লন্ডনে থেকেও বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি নেতাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে জেঁকে বসে আছেন তারেক রহমান। ওই বুদ্ধিজীবীরা তারেক রহমানকে 'প্রচণ্ড ভয়' পান। তারা মনে করেন, এখন মুখে যত ঐক্য বা কথাই হোক না কেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানের ভোল পাল্টে যাবে। তিনি কোনও কথা রাখবেন না। সব এলোমেলো করে দেবেন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্রে জানা গেল এমনটাই।
 
এদিকে জাতীয়তাবাদী-সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয়তাবাদী বলয়কে শক্তিশালী করতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে এক নতুন বিএনপি গঠনের মিশনে কাজ শুরু করেছেন মির্জা ফখরুল ও শত নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ।
 
তবে একাধিক সূত্রমতে, এ ঐক্য তৈরিতে বাগড়া দিতে পারে জামায়াতসঙ্গ ও তারেকের প্রভাব খাটানোর ইস্যু। প্রথমত ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকলে বিকল্প ধারা ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মতো দলগুলো জাতীয়তাবাদী বলয়ে না আসার ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ছাড়া জোট হলে সেখানে তারেক রহমানের ভূমিকা কী হবে- তা নিয়েও ধারণা নেই দলগুলোর নেতাদের। জোটের প্রতিটি সিদ্ধান্তে তারেকের জুড়ে বসাটা পছন্দ করবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
 
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ জামায়াতেরও বিরুদ্ধে। তাদের যুক্তি, জামায়াত এখন আর বিএনপির জন্য প্রয়োজনীয় নয়, বরং বোঝা। তাদের যুক্তি- গত নয় বছর জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করে কোনও ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো 'মৌলবাদী তকমা' লেগেছে। জামায়াতের কারণে মিডিয়াও বিএনপির বিপক্ষে বলে দলটির একটি অংশ মনে করে।
 
অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা, অলি আহমেদের এলডিপি, ফেরদৌস আহমদ কোরেশেীর পিডিপিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চায় বিএনপি। এ প্রক্রিয়ায় বিএনপির প্রয়াত নেতা মজিদুল হকের পরিবার, প্রয়াত মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুস সালাম তালুকদার, আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করে ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বিএনপির হুইপ আশরাফ হোসেন, নজির হোসেন ও জহিরউদ্দিন স্বপনসহ অর্ধশতাধিক এমপিকেও বিএনপিতে ফিরিয়ে এনে ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। জানা গেছে, মির্জা ফখরুল সংস্কারপন্থীদের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
 
'ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।' এমনটা মনে করেন বিকল্প ধারা সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, 'সরকার যে অবস্থা করেছে, তাতে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য না হলে দেশে একনায়কতন্ত্র জেঁকে বসবে।'
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মনে করেন, 'ভেতরে-ভেতরে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া হয়তো শুরু হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা এখনও শুরু হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'জামায়াতকে নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেকেরই আপত্তি আছে- এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। এখন ঐক্য প্রক্রিয়ায় এটা বাধা কি না, তা আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়াই ভালো।'
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠনের কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হচ্ছে। হয়তো বিএনপি চেয়ারপারসনের চিন্তায়ও এটি আছে। কিন্তু তিনি বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে শুনিনি।'
বিকল্প ধারার প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আর যাই হোক; জামায়াতকে জোটে রেখে ঐক্য হবে না। পাশাপাশি তারেকের ভূমিকাও নিষ্পত্তি হতে হবে।'
উল্লেখ্য, বিকল্প ধারা ইফতার পার্টিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক অন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে জামায়াতও এলডিপিসহ অন্য দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে; কিন্তু বিকল্প ধারাকে আমন্ত্রণ জানায়নি।
/এমএনএইচ/

বাংলা ট্রিবিউন