আস্তানায় কাবা শরিফ বানিয়ে হজ করাচ্ছেন ভণ্ডপীর (ওপরে), পীরকে সিজদায় মত্ত এক ভক্ত। ইনসেটে হজবাবা খ্যাত মতিউর রহমান
পবিত্র কাবাঘরের অনুকরণে তৈরি পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট মাপের ছোট্ট একটি ঘর। কালো রঙের কাপড়ে ঢাকা। সেই ঘরকে কেন্দ্র করে কয়েকশ নারী-পুরুষ লাইন ধরে প্রদক্ষিণ করছে। প্রত্যেকের পরনে হজের পোশাক, সাদা কাফনের কাপড়। প্রণামের ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে সেই কালো ঘরটি প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছেন। কণ্ঠে তাদের চিরাচরিত হজের সেই আহ্বান— 'আল্লাহুমা লাব্বাইক…'। এসব মানুষ নিজেদের হাজী বলেই মনে করেন।
রাজধানী থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ-দোহারের একটি গ্রামের এক পীরের আস্তানায় এমনই নিজস্ব তরিকার হজ পালিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ হজ পালিত হয়ে গেল ৯ সেপ্টেম্বর। আর এ হজ পালন হয় রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। হজ শেষে সেই পীরের আস্তানায় ঈদও উদ্যাপিত হচ্ছে। সেই পীর এখন 'হজবাবা' নামেই পরিচিত। বেসরকারি টিভি চ্যানেল 'নিউজ টোয়েন্টিফোর'-এর টিম আন্ডারকাভারের অনুসন্ধানে এ হজবাবার নানা কীর্তি উঠে আসে; যা গতকাল চ্যানেলটিতে প্রচারিত হয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আর সারা জীবনের পাপমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পবিত্র মক্কায় হজ পালনে যান বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। চোখের জলে স্রষ্টাকে স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নিজের কৃতকর্মের। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাখো মুসলমান তাওয়াফ করেন পবিত্র কাবাঘর। কিন্তু দোহারের জয়পাড়ায় সেই 'হজবাবা' সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর হজ নিয়ে প্রতারণা করে আসছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ হজবাবা প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে তার ১২ থেকে ১৫টি বাড়ি। জমিজমা রয়েছে অনেক।
আস্তানার সন্ধানে : ৯ সেপ্টম্বর, ২০১৬, বেলা ১১টা। নবাবগঞ্জ-দোহারে মেলে এ হজবাবার আস্তানা। বড় করে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। তাতে লেখা 'নটাখোলা কাদরিয়া পাক দরবার শরীফ, ধ্যান মঞ্জিল'। এটা অনেকটা সুরক্ষিত দুর্গের মতো; যার ফটকে ফটকে থাকেন পাহারাদার। আছেন উজির-নাজির-পাইক-পেয়াদা। সেই ধ্যান মঞ্জিলেই চলে হজ করার পুরো আয়োজন। হজের ওই সময়টুকু বাদে হজবাবা সব সময় নারীবেষ্টিত অবস্থায় থাকেন। কেউ তার পিঠ, কেউ হাত, কেউ আবার পা টিপে দিচ্ছেন। কেউ তাকে সিজদা করছেন। কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবাকে তার অসুখ-বিসুখের নালিশ দিচ্ছেন, আবার সেগুলোর সমাধান দিচ্ছেন বাবা। এরই মধ্যে এক মহিলা তার দুই কিশোর সন্তানকে নিয়ে বাবার দরবারে আসেন। উদ্দেশ্য তাদের মুরিদ বানানো। তার প্রথম আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় হজবাবার পায়ে মাথা ঠোকানোর মধ্য দিয়ে।
পীরের আস্তানায় ঢুকতেই আলোঝলমলে চতুর্ভুজ আকারের দুটি কবরের দেখা মেলে। সেটাই নটাখোলা কাদেরিয়া পাক দরবার শরিফ কাম মাজার; যা একই সঙ্গে বিশ্ব ধ্যান মঞ্জিল। এর বাম দিকে হজবাবা বা পীরের নারীভক্তকুল গভীর মনোযোগে তাদের ঢঙে প্রার্থনায় মশগুল। পাশে অনেকে আবার প্রার্থনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার মোবাইলে ফেসবুকিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একটু ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় এদের তৈরি কাবাঘর। তার ঠিক পাশে ঝালর-খচিত পীরবাবার আসন রয়েছে। তাদের বানানো কথিত কাবাঘরের সামনেই অনেকটা এলোমেলো অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় এক যুবতীকে। তিনি গান শুনছিলেন। হজবাবার নাম মতিউর রহমান। তিনি ভণ্ডপীর হলেও নিজেকে চিকিৎসক বলে দাবি করেন। এমন ভিজিটিং কার্ডও রয়েছে। মতি মিয়া শুধু পীরই নন, ডাক্তারও। তার ভিজিটিং কার্ড বলছে তিনি ভারত থেকে অল্টা মেডিসিনে পিএইচডি। এ ছাড়া আমেরিকার ওয়ার্ল্ড সোসাইটির সদস্য।
স্থানীয়রা বলেছেন, ১৫ বছর আগে নবাবগঞ্জের গালিমপুরে তার আস্তানা ছিল। সেখানকার লোকজন তাকে পুলিশ দিয়ে বিতাড়িত করে। পরে জয়পাড়ায় আস্তানা গাড়েন তিনি।
http://khabor.com/archives/
আরও পড়ুন:
এক 'হজবাবার' যত ভণ্ডামি | 175622 | Bangladesh Pratidin
সময় অপচয় - চরমোনাই পীরের ভণ্ডামি সমগ্র - ৪ আল্লাহ্র... | Facebook
Md Asad - পীর মানে কি ? পীর শব্দটি ফারসী শব্দ। এটি যেমন... | Facebook
চরমোনাই পীরের ভণ্ডামি সমগ্র – freeislamicbanglabooks
চরমোনাই পীরের ভণ্ডামি :| আমাদের কথা
এই সে ভণ্ড পীরের ভিডিাও, যেখানে সে তার ভণ্ডামি বাংলাদেশ ... - পিপীলিকা
বাংলার আলোড়ন সৃষ্টিকারী মাজারের ভণ্ড পীর ফকিরদের ভণ্ডামী গান ...
সা ম গ্রি ক আ ঙু ল: ভণ্ডপীরদের ভণ্ডামী
ভণ্ডপীরদের ভণ্ডামী (১ম পর্ব ) - আহমদ আবদুল হালিম এর বাংলা ব্লগ । bangla ...
__._,_.___