কয়লা বিদ্যুৎ
ভুল উন্নয়ন, রামপাল প্রকল্প এবং ভারতের অভিজ্ঞতা
কয়লা বিদ্যুৎ
ভুল উন্নয়ন, রামপাল প্রকল্প এবং ভারতের অভিজ্ঞতা
সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিটি সমাজের জন্যই বিদ্যুৎ দরকার, কিন্তু তার পরিমাণ নির্ভর করে উন্নয়ন লক্ষ্যের ওপর। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালেই পার্থক্যটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। তারা ভারতের চেয়েও অনেক উন্নত এইচডিআই (মানব উন্নয়নসূচক) অর্জন করেছে ভারতের মাথাপিছু বিদ্যুৎ খরচের ২-৩ ভাগের ১ ভাগ মাত্র খরচ করেই। পৃথিবীতে এমন উদাহরণ অজস্র। মনে রাখা প্রয়োজন, এইচডিআই স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান বা আয়কেও উন্নয়নের সূচক হিসেবে গণনা করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম এইচডিআই মাত্রায়, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫৭০–তে অবস্থান করছে, যার মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ভারতে মধ্যম এইচডিআই মান শূন্য দশমিক ৬০৯-এ পৌঁছেছে, যখন তার মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ৭৭০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ভারতের এইচডিআই মাত্রা বাংলাদেশের থেকে কিছুটা বেশি হলেও ভারতের মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহার বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২৫০ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় সমাজে প্রচণ্ড রকম অসমতা বিদ্যমান। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা এইচডিআই মাত্রায় শূন্য দশমিক ৭৫৭ পৌঁছেছে, যখন তাদের মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ৫৫০ কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা ভারতের মাত্র ৭১ শতাংশ। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো ভয়াবহ পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতির কারণ থাকার পরও বাংলাদেশ কোন পথ বেছে নেবে, তা তার নিজের সিদ্ধান্ত।
ভারতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎ সক্ষমতা গত ২৫ বছরে বেড়েছে ৫ গুণ, যা জিডিপি বৃদ্ধিতে মৌলিক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ (৩০০ মিলিয়ন) এই বিদ্যুৎ-সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয়ের দৈনিক আয় বৈশ্বিকভাবে গৃহীত দারিদ্র্যসূচকের নিচে: মাত্র ১০০ রুপির কম। যদিও দেশটির জাতীয় মাথাপিছু আয় বছরে ৯৩ হাজার বা দিনে ২৫৫ রুপি। অথচ বড় এক জনগোষ্ঠী এখনো অপুষ্ট। বর্তমানে যখন ভারতীয় বৈদ্যুতিক বাজারে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে, তখন অন্ধকার ও দারিদ্র্যে নিমজ্জিত বিপুল জনগোষ্ঠীও বিদ্যমান। কার্যত ধনী ও মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের মাথাপিছু ব্যয় ক্রমশ উঁচু থেকে উঁচুতে উঠছে, যা অধিকাংশ বাড়তি উৎপাদন ও সক্ষমতা শুষে নিচ্ছে। এই ইলেকট্রিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও অবকাঠামোতে জনগণের অসম প্রবেশাধিকার স্পষ্ট। অথচ এই ইন্ডাস্ট্রি মূলত গড়ে উঠেছে সর্বজনের টাকায়, সব রকমের পরোক্ষ করের টাকায়, যার ভার দরিদ্রদেরও বহন করতে হয়েছে। এই উদাহরণ মোটেই অনুসরণীয় নয়।
ভারতে গ্রামীণ (কৃষি ও কারিগরি) অর্থনীতিতে একটি তীব্র দুরবস্থা যাচ্ছে। ১৯৯১ সালে অন্তত ২৫ শতাংশ জিডিপি এসেছে কৃষি খাত থেকে, যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল ৭০ শতাংশ মানুষ। বর্তমানে ১৪ শতাংশ জিডিপি আসছে এই খাত থেকে, যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৬০ শতাংশ মানুষ। স্পষ্টতই যে 'উন্নয়ন পথ' আমরা বেছে নিয়েছি, তা গ্রামীণ এবং ছোট-মাঝারি কৃষকদের দারিদ্র্যকরণ করে চলেছে, যারা এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ। যদি আমরা সামাজিক দুর্যোগ প্রতিহত করতে চাই, তবে দ্রুত
এবং মূলগতভাবে আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য ও ধারা পরিবর্তন করতে হবে।
বিদ্যুতের ক্রমবর্ধনশীল চাহিদা মূলত তৈরি হয় সম্পদ বা টাকার পুঞ্জীভবন এবং নগরায়ণের বৃদ্ধির ফলে। ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা যা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন তা হলো, ১৯৭০ ও '৮০ পর্যন্ত সেবা খাতের উন্নয়নের ওপর ভর করে বৃহৎ গ্রামভিত্তিক সমাজের উন্নয়ন (যা অনেকটা বর্তমান বাংলাদেশের মতো) সাধিত হয়েছে। এটা চীনের বিদ্যুৎনির্ভর ম্যানুফ্যাকচারিং খাত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেবা খাতের ক্ষেত্রে একই মাত্রার উন্নয়নের জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মতো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। যুগপৎভাবে, সেবা খাত প্রচুরসংখ্যক জরুরিভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে, যা মধ্যম বা ভারী ম্যানুফ্যাকচারিং খাত স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে তৈরি করতে অক্ষম। এবং কৃষিভিত্তিক ছোট শিল্প খাত খুব কম বিদ্যুৎ খরচে দ্রুত প্রবৃদ্ধি তৈরি করতে পারে, যা আবার লাখ লাখ মানুষের হাতে আয়ের অর্থ তুলে দেয়, দারিদ্র্য দূর করে, যা কিনা এসডিজিরও (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে) প্রথম লক্ষ্য। মূলত এই কৌশল এসডিজির প্রথম চারটি লক্ষ্যই একসঙ্গে পূরণ করে।
বর্তমানে ভারতের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৪৪ হাজার মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ক্ষমতাকে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেগাওয়াটে পরিণত করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। ভারত ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সৌর জোটও গঠন করেছে। সৌরবিদ্যুতের খরচও দিনকে দিন কমে আসছে। যদি ভারত তার লক্ষ্য এমনকি ৭০ শতাংশও অর্জন করতে পারে, তবে আগামী অন্তত ১৫ বছরের জন্য কোনো কয়লা, পারমাণবিক বা বৃহৎ বাঁধনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন হবে না। আমি এসব তথ্য ও চিত্র গত এক বছরে অনেক ফোরামে দেখিয়েছি এবং এখন ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিদ্যুৎবিষয়ক নীতিনির্ধারকেরা সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। সেখানে বলা হচ্ছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতের কোনো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজন নেই।
আমি সর্বান্তঃকরণে রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সমর্থন জানাই। এর পেছনে অনেকগুলো শক্তিশালী কারণ রয়েছে। যেমন:
ক) ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুত প্রভাবের ফলে বিদ্যমান যেকোনো প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যবস্থা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব দ্রুত আঘাত হানতে সক্ষম এমন দুটি জলবায়ুগত দুর্যোগের (বড় ঝড় ও সামুদ্রিক প্লাবন) বিরুদ্ধে সুন্দরবন খুব বড় সুরক্ষা। আমরা ভারতীয় সুন্দরবন অংশের কাছে এ ধরনের কোনো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বেলাতেও ঠিক একই কারণে একই রকম জোরালো প্রতিবাদ জানাব।
খ) একটি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ন টন পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। কিন্তু এটা বাংলাদেশের প্রধান মাথাব্যথার বিষয় নয়। এ দেশের কার্বন নির্গমনের হার যথেষ্ট কম। কিন্তু রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চহারে অ্যাসিডিক অক্সাইড নির্গত করবে, যা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মাটির অম্লতা মারাত্মক বাড়াবে। এর ফলে সমুদ্রের নিকটবর্তী নদীর পানির অম্লতাও বৃদ্ধি পাবে, যা পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন বা পিএইচ ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বন ধ্বংসের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। কেবল একটি রামপাল প্রকল্পই নয়, ওই এলাকায় যে দ্রুত হারে জমিদখল ও শিল্পায়ন ঘটছে, তা এই বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করবে।
গ) একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সুন্দরবনের মতো এই জটিল বনাঞ্চল–প্রক্রিয়াকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দুরূহ।
ঘ) ভারতীয় অংশের সুন্দরবন, যা ইতিমধ্যে উচ্চ পিএইচ মানের কারণে নৃতাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা আরও বেশি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।
ঙ) দরিদ্র ও প্রকৃতিনির্ভর লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং যে দেশ এখন পর্যন্ত নাগরিকের মৌলিক সুবিধাগুলোর ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে, তার জন্য এ ধরনের প্রকল্প পাপের সমান।
সৌম্য দত্ত: ভারতীয় জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি, ইন্ডিয়া পিপলস সায়েন্স ফোরাম।
Sent: Sunday, January 29, 2017 4:52 AM
To: pfc; LA Discussion
Subject: {PFC-Friends} প্রধানমন্ত্রী বললেন, টাইগারকে জিজ্ঞাসা করেন
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "PFC-Friends" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to pfc-friends+unsubscribe@googlegroups.com.
For more options, visit https://groups.google.com/d/optout.
__._,_.___
Posted by: Shah Deeldar <shahdeeldar@yahoo.com>
****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:
http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68
http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585
****************************************************
VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/
****************************************************
"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190