Banner Advertiser

Monday, May 25, 2015

[mukto-mona] নজরুল দর্শন: অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয় চেতনা



নজরুল দর্শন: অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয় চেতনা : দ্যুতিময় বুলবুল

প্রকাশ তারিখ: ২৫/০৫/২০১৪ ৩:৫০:৫৭ অপরাহ্ন

unnamed-11-336x375বাংলা ও বাঙালির প্রগতিশীল চিন্তা ও চেতনার অন্যতম প্রধান কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস-সহ সকল সৃষ্টিকর্মে আছে দ্রোহ, আছে দেশপ্রেম, আছে মানবপ্রেম, মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতা। তার ক্ষুরধার লেখনি ও বক্তৃতা-বিবৃতির মূল বিষয়বস্তু মানুষ ও মানবতার জয়গান, স্বাধীনতা ও মুক্তির চেতনায় দেদীপ্যমান। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেননি তিনি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার-অনাচার মানেননি। শাষিতের ওপর শাসকের শোষণ-নিপীড়ন সহ্য করেননি। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে ছিলেন সোচ্চার। ন্যায় ও সাম্যের আবাহনে তিনি ছিলেন অক্লান্ত-অবিরাম। তার কণ্ঠে ছিল ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রিক শৃঙ্খল মুক্তির গান। তার সৃষ্টিকর্ম এবং চিন্তা-চেতনা বাঙালি জাতি তথা পরাধীন ভারতবাসীকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা প্রিয় মানবমণ্ডলীর মনন ও মানসে তার অজর বিদ্রোহের বাণী ও সুর অনুরণীত হয়েছে প্রতিনিয়ত। অবহেলিত-অপমানিত, নির্যাতিত-বঞ্চিত মানুষ তার দ্রোহের অনির্বাণ শিখায় জ্বলে উঠেছে বজ্রশপথে। অনাচার ও অত্যাচার প্রতিরোধে উৎপীড়িতের চিরদিনের প্রেরণা তিনি।

বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলই প্রথম কবি, যিনি গণমানুষের পক্ষে এবং শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে লেখার জন্য কারাবরণ করেছেন। তার গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে, পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তার দ্রোহ ছিল বুকের গহীন গভীর থেকে উৎসারিত। তার প্রতিবাদী কণ্ঠ পৌঁছে গিয়েছিল পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের চিত্তে ও চেতনায়। তাই তাকে দ্রোহের কবি বা বিদ্রোহী কবি নামে অভিহিত করা হয়।

বিংশ শতাব্দির বাংলাসাহিত্যে নজরুলই ছিলেন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সবচে' উচ্চকণ্ঠ। তার কবিতা ও গানে সত্য ও সুন্দরের বাণী এবং সুরের প্রতিফলন ঘটেছে সব সময়। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধুমকেতু হয়ে প্রকাশ। সৃষ্টিকর্ম ও জীবনাচরণ-সর্বত্রই দ্রোহের আগুন। তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহীর মতো অতুলনীয় কবিতা ও ভাঙার গানের মতো বিখ্যাত কাব্য, ধুমকেতুর মতো জ্বালাময়ী সাময়িকী। ব্রিটিশ শাসকের কারাবন্দি হয়ে লিখেছেন 'রাজবন্দির জবানবন্দি'র মতো নির্ভিক ও সাহসী সাহিত্যকর্ম। তার সৃষ্টিকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল যেমন প্রবল, তেমনি পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল দুর্বার।

অবহেলিত ও সাধারণ জনগণের প্রতি ছিল কবির প্রগাঢ় ভালোবাসা। পরাধীন ভারতের মুক্তির জন্য তিনি ছিলেন ব্যাকুল প্রাণ। সাম্রাজ্যবাদী শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য, স্বাধীনতার প্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি ভারতবাসীর অন্তরে অন্তরে। পরাধীন দেশে স্বাধীনতার জন্য যে গণজাগরণ প্রয়োজন, নজরুল লেখনির মাধ্যমে সেই গণজাগরণ সৃষ্টিতে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তার অগ্নিঝরা কবিতা কখনো প্রজ্জ্বলিত করেছে সাম্যবাদী চেতনা, কখনো যুগিয়েছে ন্যায্য অধিকারের প্রেরণা। এক হাতে বাঁশের বাঁশরী, আরেক হাতে রণতুর্য নিয়ে বিদ্রোহী নজরুল বিজয় কেতন উড়িয়েছেন বাংলা সাহিত্যের নানা শাখা-প্রশাখায়।

নজরুল ঊপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন অসংখ্য লেখায়। তিনি ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ মেটাতে ছিলেন সদা তৎপর। তার কাব্যভাবনার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে হিন্দু-মুসলমান মিলন কামনা। আধুনিক বাংলা কাব্যে নজরুলই একমাত্র কবি, যিনি একইসঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান উভয় ঐতিহ্যকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে দেখলে হিন্দু-মুসলিম বাঙালির ধর্মীয় আবদ্ধতা ও গোঁড়ামি এবং চিন্তা-চেতনার সীমাবদ্ধতা ও নিশ্চলতার মধ্যে প্রায় এককভাবে জাগৃতিক বেগ ও ব্যাপকতা এনেছিলেন নজরুল। গোটা বাঙালি জাতিকে তিনি জাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ওই চেতনার প্রোজ্বল শিখায়।

নজরুলের ধারণা, হিন্দু-মুসলমান বিরোধের অন্যতম কারণ হিন্দুর 'ছুৎমার্গ'। তাই তিনি 'ছুৎমার্গ' প্রবন্ধে লিখেছেন, "হিন্দু হিন্দু থাক, মুসলমান মুসলমান থাক, শুধু একবার মহাগগনতলের সীমাহারা মুক্তির মাঝে দাঁড়াইয়া মানব তোমার কণ্ঠের সেই সৃষ্টির আদিম বাণী ফুটাইয়া বল দেখি, 'আমার মানুষ ধর্ম'। দেখিব, দশদিকে সার্বভৌম সাড়ার স্পন্দন কাঁপিয়া উঠিতেছে। মানবতার এই মহাযুগে একবার গণ্ডি কাটিয়া বাহির হইয়া আসিয়া বল যে, তুমি মানুষ, তুমি সত্য।"

রক্ষণশীল, মূঢ় ও সামাজিক চেতনাহীন তথাকথিত মুসলমানরা তাকে 'কাফের' ফতোয়া দিয়েছেন। নানাভাবে নিন্দা-সমালোচনা করেছেন। এমনকি ওই বিরুদ্ধবাদীদের তরফ থেকে এমন কথাও বলা হয়েছে যে, 'লোকটা মুসলমান না শয়তান'। গোঁড়া, পরশ্রীকাতর ও কট্টরপন্থি হিন্দুবাদীরাও তাকে নানাভাবে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মুসলমান ও হিন্দুদের এই আক্রোশ নজরুলের চিন্তার স্বচ্ছতা, ভাবনার প্রগতিশীলতা ও সমন্বিত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের দীপ্রতাকে ম্লান করতে পারেনি। এ ব্যাপারে নজরুল বলেছেন, …. এরা কি মনে করেন হিন্দু দেবদেবীর নাম নিলেই সে কাফের হয়ে যাবে? তাহলে মুসলমান কবি দিয়ে বাংলাসাহিত্য সৃষ্টি কোনোকালেই সম্ভব হবে না ….জৈগুন বিবির পুঁথি ছাড়া।….বাংলা সাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই সাহিত্য। এতে হিন্দু দেবদেবীর নাম দেখলে মুসলমানের রাগ করা যেমন অন্যায়, হিন্দুরাও তেমনি মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে নিত্য প্রচলিত মুসলমানী শব্দ তাদের লিখিত সাহিত্যে দেখে ভ্রু কুঁচকানো অন্যায়। নজরুলের এই চেতনা রেনেসাঁসের চেতনা। বঙ্গদেশে যে অপূর্ণ রেনেসাঁসের উদ্ভব হয়েছিল নজরুলের কাব্য সাধনার এই ধারায় তা আরও কিছুটা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়।

মনুষত্বের সত্যকে তুলে ধরতে গিয়েই নজরুল হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য চেয়েছেন। তার শেষ ভাষণে বলেছেন, "কেউ বলেন আমার বাণী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু-মুসলিমকে এক জায়গায়  ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।"

নজরুলমানসে হিন্দু ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক নয়, পরিপূরক। কারণ, তার সাম্যবাদী চিন্তা। তাই তো তিনি ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য হিন্দু-মুসলমান বিভেদের পরিণতি সতর্ক করে লিখেছেন, 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার' কবিতা। বলেছেন, 'হিন্দু না ওরা মুসলিম? ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন? কাণ্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।' আবার 'হিন্দু-মুসলমান' কবিতায় তিনি লিখেছেন,  মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান,/ মুসলিম তার নয়নমণি,/হিন্দু তার প্রাণ।'

প্রত্যক্ষভাবে নজরুল কবিমানসে মানবতাবোধ তথা সত্যসন্ধানের প্রকাশ ঘটেছে সাম্যবাদী (১৯২৫), সর্বহারা (১৯২৬), ফণিমনসা (১৯২৭), সন্ধ্যা (১৯২৯) ও প্রলয়শিখা (১৯৩০) কাব্যে। এসব কাব্যে তিনি সব ব্যবধান পেরিয়ে মানুষের জয়গান গেয়েছেন। মানুষকেই তিনি মহিয়ান বলে জেনেছেন। তাই ধর্মান্ধতার তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি। 'মানুষ' কবিতায় ধর্মান্ধ পূজারি ও মোল্লাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির-কাবা নাই' এবং স্রষ্টাকে পাওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন 'শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও সখা সত্যসিন্ধু জলে'। কবির লক্ষ্য শাসক ইংরেজদের বিতাড়ণ এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচন। তাই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার মধ্যেও তার প্রত্যাশা, 'যে লাঠিতে আজ টুটে গম্বুজ, পড়ে মন্দির চূড়া/সেই লাঠি কালি প্রভাতে করিবে শত্রু-দূর্গ গুড়া' (হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ: ফণিমনসা)। শুধু ধর্মীয় ব্যবধান ঘোচানো নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপও তিনি কামনা করেছেন। তার সমতাচেতনা, সত্যপ্রিয়তা ও মানবতাবোধ নারীর মর্যদা প্রতিষ্ঠায়ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কুলি ও মজুরের সম্মান এবং চাষীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তার আবেগ দিয়েছে চেতনার বেগ ও বিশ্বাস দিয়েছে চিন্তার গতি। তাই তার প্রকাশ এতো তীব্র ও আন্তরিক।

হুমায়ুন কবিরের মতে, বাংলার বিপুল কৃষকসমাজের সঙ্গে ছিল নজরুলের গভীর আত্মীয়তা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও বলেছেন, নজরুল কৃষক পরিবারের সন্তান; সে কারণেই তার রচনা এতো দ্রুত জনসমাজকে আচ্ছন্ন করতে পেরেছে। জনসমাজে গৃহীত হওয়ার একটা কারণ তার রাজনীতি ও রাজনৈতিক চেতনা। ত্রিশের মেধাবী কবিরা যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী কাব্যচর্চা করছিলেন, তখন ভারতীয় সমাজের মেধাবী অপরাংশ সংগঠিত হচ্ছিল ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে। তাদের সঙ্গে জেগেছিল সাধারণ মানুষও। নজরুল এই অপরাংশের ভাব ও তৎপরতাকে ভাষা দিয়েছেন। তাই তো ধূমকেতু পত্রিকাকে বিভিন্ন বিপ্লবী দল নিজেদের পত্রিকা মনে করত। মুজফফর আহমদ লিখেছেন: 'আমাদের ভাষার জোর নেই, সংগ্রামশীলতা নেই, এই ধারণা আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল ছিল বলেই আমরা স্লোগান দিতাম হিন্দুস্থানীতে। নজরুল ইসলামের অভ্যুদয়ের পর আমরা বুঝেছি যে, বাংলাভাষাও জোরালো, সংগ্রামশীল ও অসীম শক্তিশালিনী। যেমন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে 'ভাঙার গান'-এ কবির দুঃসাহসী উচ্চারণ, 'কারার ঐ লোহ-কবাট/ভেঙে ফেল, কররে লোপাট/রক্ত-জমাট/শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!' আবার অর্থনৈতিক শোষণের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কবি 'কুলি-মজুর' কবিতায় লিখছেন, দেখিনু সেদিন রেলে/কুলি ব'লে এক বাবু সা'ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!/চোখ ফেটে এল জল,/এমনি ক'রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?' ধর্মীয় ভণ্ডামী ও গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে ধিক্কার, নিন্দা জানিয়ে ভৎসনা করে তিনি 'মানুষ' কবিতায় লিখছেন, 'হায় রে ভজনালয়,/তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়!/মানুষেরে ঘৃণা করি'/ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি' মরি'/…. পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! মূর্খরা সব শোন,/মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো'। আবার নারীর সমান অধিকারের কথা বলতে গিয়ে কবি 'নারী' কবিতায় বলছেন, 'সাম্যের গান গাই/আমার চোখে পুরুষ-রমণী কোন ভেদাভেদ নাই।' আর সকল মানুষের সমতার কথা বলতে গিয়ে মধ্যযুগের বাঙালি কবির 'সবার উপরে মানুষ সত্য/তাহার উপরে নাই' সেই বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নজরুল বলছেন, 'গাহি সাম্যের গান-মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান/নাই দেশ কাল পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/ সব দেশে সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।'

কবি মুসলিম ও হিন্দু উভয় ধর্মের ওপর পড়াশুনা করেছেন। অসংখ্য ইসলামি গান, গজল, হামদ, নাত লিখেছেন। আবার তিনি কালিবন্দনা করেছেন, শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন। ছেলেবেলার মসজিদ, মক্তব, মাজার জীবন কাটিয়েছেন। লেটো দলে গান বাজনা করেছেন। ছন্নছাড়া বাউন্ডেলে জীবনও ছিলো। সৈনিক জীবনের কঠোর অনুশাসনও দেখেছেন। সৃষ্টিশীল মুক্তজীবনের নানা উত্থান-পতনও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। বিয়াল্লিশ বছরের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও শিক্ষা এবং অভাব-অনটন ও ঘাত-প্রতিঘাতের বাস্তব প্রতিফলন এবং তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার অনুরণন ঘটেছে সাহিত্য ও সঙ্গীতের নানা শাখায়।

আর্থিক সমস্যায় নজরুল পড়াশুনা করতে পারেননি। কবিদলে কাজ করেছেন, রেলওয়ে গার্ডের খানসামাগিরি করেছেন, চা-রুটির দোকানে রুটি বানিয়েছেন-এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তার বাল্য ও কৈশোর কেটেছে। তরুণ বয়সে তিনি মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আড়াই বছর কেটেছে তার সেনা জীবন। এই সৈনিক জীবনেই করাচিতে তার সাহিত্যে হাতেখড়ি। প্রথম গদ্য রচনা বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী, প্রথম প্রকাশিত কবিতা মুক্তি-সহ গল্প হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি রচনা করেন। এ সময় তার ফার্সি শিক্ষা, দেশি-বিদেশি বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গীত শিক্ষা, নানা গদ্য-পদ্য চর্চা করেন। কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকাসহ রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং ফার্সি কবি হাফিজের লেখাও এ সময় পাঠ করেন তিনি।

১৯২০ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, সৈনিক জীবন ত্যাগ করে তরুণ নজরুল গেলেন কলকাতায়। মনোনিবেশ করলেন সাহিত্য চর্চায়। মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভূতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হতে থাকলো। কলকাতার সাহিত্য সমাজে বেশ কিছু লেখা প্রশংসিত হলো। ফলে কবি, সাহিত্যিক ও পাঠক সমাজে নজরুলের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলো। বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিকদের সঙ্গে গড়ে ওঠলো বন্ধুত্ব।

ওই সময় চলছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। আর মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতাদ্বয়ের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের তাড়ানো। আর খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্তশাসন টিকিয়ে রাখা। কারণ, এই সমন্বিত সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলিফা মনে করতেন। নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাস করতেন না। তবুও অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। কারণ, সংগ্রাম দুটি ভারতের হিন্দু-মুসলমান'র সম্মিলিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে পরিণত হয়েছিল। তাই বিভিন্ন শোভাযাত্রা ও সভায় গান গেয়ে জনগণকে উজ্জীবিত করেন তিনি। এ সময় নজরুলের লেখা গান কবিতা এবং প্রবন্ধে বিদ্রোহের প্রকাশ সুস্পষ্ট। এই অসহযোগের প্রেক্ষাপটেই ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী"। কবিতাটির মাধ্যমে নজরুল সারা ভারতে সাহিত্য সমাজে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। মানবতার শক্তির জাগরণের অসামান্য কাব্যরূপ নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা। যেখানে রণক্লান্ত বিদ্রোহী কেবল তখনই শান্ত হবে 'যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।' বিদ্রোহী কবিতাটি একটি পরাধীন জাতিকে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার সাহস যোগায়। 'চির উন্নত মম শীর' বুকের ভেতর আওয়াজ তোলে প্রতিটি মুক্তিকামী পরাধীন সত্তার। তবে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল।

নজরুল সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা স্বরাজে বিশ্বাস করতেন। মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ছিল বিপরীত। তবে মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদে নজরুলের সমর্থন ছিল। তাই কামাল পাশার নতুন তুরস্ক গড়ার আন্দোলনে সাঁই দিয়েছেন। তার রাষ্ট্রীয় ধ্যান ধারণায় প্রভাবিত হয়েছেন। অনুপ্রাণীত হয়ে 'কামাল পাশা' কবিতাও লিখেছেন। নজরুল ভেবেছিলেন তুরস্কের মুসলমানরা যা করতে পেরেছে, ভারতীয় মুসলমানরা তা পারবে না কেন? গোঁড়ামী, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নজরুলের অবস্থান ছিল কঠোর। এক্ষেত্রে কামাল পাশারও প্রভাব ছিল। তার বিদ্রোহী জীবনেও সে প্রভাব সুস্পষ্ট।

১৯২০ সালের ১২ জুলাই শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ। নজরুলের জীবন নতুন মোড় নিলো। নবযুগে যোগ দিয়ে শুরু হলো তার সাংবাদিক জীবন। নিয়মিত লিখছেন। কিন্তু ওই বছরই "মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?" শিরোনামে তার প্রবন্ধের জন্য  পত্রিকাটির জামানত বাজেয়াপ্ত হলো। নজরুলের ওপর শুরু হলো পুলিশের নজরদারী। দমলেন না নজরুল। রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের সংস্পর্শে এসে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হলো তার। ফলে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেন। বামপন্থি নেতা মুজফফর আহমদের সঙ্গে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস ও বন্ধুত্বের সুবাদে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হলেন নজরুল। মুজাফফর আহমদ ছিলেন এ দেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রদূত। তার কাছ থেকেই নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু হয়। মুজফফর আহমদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশ নেন। এ সময় নজরুল সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন। উল্লেখ্য, ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বরে মুজফফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাড়িতে ছিলেন, সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। তবে কমরেড মুজফফর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও এই দলে যোগ দেননি নজরুল।

তবে ১৯১৭ সালের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে প্রভাবিত করে। নতুন সমাজতান্ত্রিক সভ্যতার প্রতি তার আন্তরিক ঝোঁক ছিল প্রবল। ফলে তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতাগুচ্ছ। এরইসঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদ-জাগো অনশন বন্দী ওঠো রে যত ….। শুধু ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদ নয়, তিনি 'শুদ্রের মাঝে যে রুদ্রের জাগরণ' দেখেছেন তার তাৎপর্য ও গভীরতা সামান্য নয়। কারণ তিনি বলেছেন: স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাড়াল। তার লেবার স্বরাজ পার্টি গঠন, তার কর্মসূচিতে কারখানা জাতীয়করণের বিধান, সর্বহারা শ্রমিক কুলি মজুরদের নিয়ে কবিতা রচনা, বইয়ের নাম 'সাম্যবাদী' রাখা, সাম্রাজ্যবাদীদের ডাকাত (পরের রাজ্য লুট করে খায়। ডাকাত ওরা ডাকাত।) নামে অভিহিত করা- সব কিছু মিলে নজরুলের যে চরিত্র সৃষ্টি হয় তা সেকালের পক্ষে ছিল অভাবনীয়। লেনিন পুশকিনের কবিতা থেকে 'ইস্ক্রা' শব্দ নিয়ে পত্রিকার নামকরণ করেছিলেন। ইস্ক্রা মানে 'স্ফুলিঙ্গ'। স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের সৃষ্টি হবে এই ছিল লেনিনের বিশ্বাস; হয়েছিলও তাই। নজরুল নিজের পত্রিকার নাম রেখেছিলেন 'ধূমকেতু'; ইস্ক্রার খুব কাছাকাছি। নিতান্তই কি কাকতালীয় যোগাযোগ? তিনি যখন ধূমকেতু সম্পর্কে বলেন: ওই ধূমকেতু আর উল্কায় চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে তখন তার মধ্যে একটা সূচিন্তিত যোগাযোগই আবিষ্কার করা যায়। তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেডফ্লাগের অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান। এ সময় সাম্যবাদী চেতনায় দীক্ষিত হন নজরুল। একইসঙ্গে তার কবিতা ও সংগীতচর্চাও চলে।

উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের কবি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী নজরুল ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে, তাতে অর্ধ-সাপ্তাহিক ধুমকেতু'র বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশির্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,/দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!/অলক্ষণের তিলকরেখা/রাতের ভালে হোক না লেখা,/জাগিয়ে দে রে চমক মেরে/আছে যারা অর্ধ-চেতন।" পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লেখা থাকতো।

ধূমকেতু দাবি করে পূর্ণ স্বাধীনতা। 'সর্বপ্রথম, ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। ….ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীদের অধীনে থাকবে না।' পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা 'আনন্দময়ীর আগমনে' প্রকাশিত হয়। অক্টোবরে প্রকাশিত হয় অগ্নিবীণা কাব্য ও যুগবাণী প্রবন্ধ গ্রন্থ। আনন্দময়ীর আগমনে রাজনৈতিক কবিতা হওয়ায় ধূমকেতুর ৮ নভেম্বর সংখ্যা নিষিদ্ধ করে সরকার। ২৩ নভেম্বর বাজেয়াপ্ত করে যুগবাণী। ওই দিনই তাকে কুমিল্লায় গ্রেফতার করা হয়। নেয়া হয় কলকাতায়।

১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবানবন্দী দেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে প্রদত্ত ওই জবানবন্দী বাংলাসাহিত্যে 'রাজবন্দীর জবানবন্দী' নামে বিশেষ মর্যদায় প্রতিষ্ঠিত। এই অতুলনীয় রচনায় ব্রিটিশ সরকারের বিচারকের বিচার করার অধিকার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। জবানবন্দীতে নজরুল লিখেছেন, "আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।… আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায় বিচারে সেবাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে….।" ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ইসমাইল হোসেন সিরাজীর পর নজরুল দ্বিতীয় বাঙালি কবি, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী কবিতা ও সাহিত্য রচনার জন্য এবং রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ হন।

১৯২৩ সালের ২২ জানুয়ারি, আলিপুর জেলে বন্দি নজরুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি উৎসর্গ করলেন তাকে। লিখলেন, 'শ্রীমান কবি নজরুল ইসলাম. স্নেহভাজনেষু'। উল্লসিত নজরুল। জেলে বসে লিখলেন কবিতা, 'আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে'। মে মাসে হুগলী জেলে নজরুল অনশন ধর্মঘট শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথ টেলিগ্রাম পাঠালেন। লিখলেন: 'এরাব ঁঢ় যঁহমবৎ ংঃৎরশব, ড়ঁৎ ষরঃবৎধঃঁৎব পষধরসং ুড়ঁ.'ডিসেম্বরে নজরুল কারামুক্ত হলেন। কিন্তু সরকার একের পর এক তার গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। প্রকাশের পরপরই বাজেয়াপ্ত হয় বিশের বাঁশি, ভাঙার গান ও প্রলয়শিখা। প্রলয়শিখার জন্য প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কবিকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন। হাইকোর্টে কবি জামিন পেলেন। পরে গান্ধী-আরউইন চুক্তির ফলে 'সরকার পক্ষ আপত্তি না করায়' পেলেন অব্যাহতি।

বস্তুতপক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী বাংলার তারুণ্যের প্রতিমূর্তি। বিশ শতকের প্রথম চার দশকের বাংলাসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃত। ইউরোপ সম্পর্কে মোহভঙ্গ এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের বলিষ্ঠ কলম সৈনিক। নজরুলের কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও বক্তব্য তৎকালিন পরাধীন ভারতের তরুণ সমাজ তো বটেই, আজও বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করে।

নজরুলের এই অবিস্মরণীয় জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধের জন্য মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে 'জাতীয় কবি'র মর্যাদা পান। ১৯২৯ সালে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সংবর্ধনা কমিটি করে বাঙালির 'জাতীয় কবি' হিসেবে নজরুলকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। নজরুলের এই সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং সভাপতি ছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং আলোচক ছিলেন সাহিত্যিক এস ওয়াজেদ আলী প্রমুখ। তারা নজরুলের সাহস ও দেশপ্রেমের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। নজরুল ১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থন লাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান। ফলাফল তার পক্ষে যায়নি। এরপর সক্রিয় রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণ কমে যায়। কিন্তু সাহিত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক চিন্তার বহির্প্রকাশ অব্যাহত থাকে।

নজরুলের রাজনৈতিক চেতনা সমৃদ্ধ পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির কবিতা ও গান বাঙালির সকল আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৪৭ সালে অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার গান ও কবিতা বাঙালিকে সাহস ও শক্তি দিয়েছে। যে পাকিস্তানকে কবি নজরুল তার রাষ্ট্রদর্শনে 'ফাঁকিস্তান' বলে অভিহিত করেছেন। বাঙালি সেই ব্যালটের ফাঁকির রাষ্ট্র বুলেটে ভেঙেছে ১৯৭১ সালে। এ ক্ষেত্রে নজরুলের চেতনা ছিল বাঙালির অন্যতম পাথেয়।

নজরুলের বাংলাদেশ ভাবনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে দারুণ প্রভাবিত করেছিল। তিনি যে বাংলার জয় ও বাঙালির জয় কামনা করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। বাঙালির মুক্তি ও গণজাগরণের জাতীয় স্লোগান নির্ধারণ করেছিলেন 'জয় বাংলা'। যা ছিল ১৯৭১ সালে শত্রুদের বিরুদ্ধে বাঙালির রণ হুংকার। জাতীয় চেতনার স্মারক। প্রকৃতপক্ষে নজরুল এবং বঙ্গবন্ধুই বাংলার হাজার বছরের সমন্বয়বাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ জীবনচর্চার ভাববস্তুকে নবরূপে বিন্যস্ত করে বিপুল গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। যদিও আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথের 'সোনার বাংলা' বিনির্মাণই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ও প্রেরণা, স্বপ্ন ও সাধনার ঠিকানা। কিন্তু নজরুলের বাংলাদেশ কিংবা জীবনানন্দের রূপসী বাংলা-সেটাও মুজিব চেতনার অভিন্ন অংশ। মূলত রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং জীবনানন্দ বঙ্গবন্ধুর চেতনায় মিশে গেছেন বাংলা ও বাংলার প্রকৃতি, বাঙালি জাতিসত্তার প্রেম ও জাতীয় মুক্তির স্বপ্নের ঐক্য ও প্রেরণা থেকে। তারা একই জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় মনন ও মানসের উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের চিন্তাধারার মৌল অংশকে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এজন্যই তিনি দুই মহান কবির বিপুল-বিশাল সৃষ্টি সম্ভার থেকে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও রণ সংগীত। পূর্ব বাংলার বাউল সুরে রচিত রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে করেছেন জাতীয় সংগীত এবং নজরুলের 'চল চল চল/উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল' গানটিকে করেছেন রণ সংগীত।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্বাধীন পূর্ব বাংলার 'বাংলাদেশ' নামকরণের জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে ঋণী। আর নজরুলের কাছে ঋণী 'জয় বাংলা' স্লোগানের জন্য। এই জয় বাংলা স্লোগান অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ 'বাংলার মুখ'। বিশিষ্ট গবেষক শমসুজ্জামান খান লিখেছেন, 'বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভেতর থেকে নজরুল চয়ন করেছিলেন: 'বাংলা বাঙালির হোক। বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক'- এ অবিনাশী পঙ্ক্তিমালা। এসব পঙ্ক্তি না থাকলে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু 'জয় বাংলা'  স্লোগান তুলতে পারতেন না।' নজরুলের বাংলাদেশ বন্দনা: 'নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মমঃ' বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টির বাইরে ছিল না। কবি 'ভাঙার গান' (১৯২২) কাব্যগ্রন্থে 'পূর্ণ অভিনন্দন' কবিতায় হুবহু 'জয় বাংলা' শব্দ ব্যবহার করেছেন। বঙ্গবন্ধু সম্ভবত সে চেতনা থেকেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসেন কবি নজরুলকে এবং জাতীয় কবি হিসেবে তাকে সম্মানিত করেন।

বাঙালির জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা সম্পর্কে বিখ্যাত পণ্ডিত ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের বক্তব্য অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। 'বাঙালি বাংলাদেশ' প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, জয় বাংলা শুধু একটি রাজনৈতিক জিগির-স্লোগান নয়, এ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র বা 'ইসমে আজম'। এ বীজমন্ত্রটি যিনি আবিষ্কার করেন তিনি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ সাহেবের অদ্ভূত পৌরুষব্যঞ্জক কণ্ঠে যেদিন এ 'ইসমে আজম' উচ্চারিত হলো, সেদিন তড়িৎ প্রবাহের মতো দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হলো সে অমোঘ মন্ত্র। তাদের অন্তরের সুপ্তচেতনা জেগে উঠল এবং লুপ্ত অনুভূতি পুনরুজ্জীবিত হলো। তারা ভাবল জাতিত্বে তারা হিন্দু নয়, তারা বৌদ্ধ নয়, তারা খ্রিস্টান নয়, তারা মুসলমান নয়, তারা বাংলাদেশের মানুষ, তারা বাঙালি। এ যে দেশপ্রেম, এ যে জাতীয়তাবোধ, 'জয় বাংলা' তারই বীজমন্ত্র, তারই 'ইসমে আজম'।

যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ থেকে নজরুলের জয় বাংলার চেতনার উদ্ভব, তার শেকড় প্রত্থিত আছে বাঙালি জাতিসত্তার গভীরে। নজরুলের বাঙালিত্বের এই রূপরেখা বহুমাত্রিক ও বৈচিত্রময়। এখানে বাঙালিত্বের সারাৎসারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় পুরাণ ও ইসলামী ঐতিহ্যের মহৎ উত্তরাধিকার। এর সঙ্গে আরও মিলেছে আধুনিক বাঙালির আন্তর্জাতিক চেতনা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা ও রেনেসাঁসের মূল্যবোধসহ সভ্যতার নানা অনুসঙ্গ। নজরুলের বাঙালিত্ব এ সবকিছু নিয়েই। বাংলার সুলতানি আমলের সুলতানদের বাঙালিত্বের সাধনা থেকে শুরু হয়ে সপ্তদশ শতকের কবি আব্দুল হাকিম, লালন ফকির, রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসুদন, বঙ্কিমচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষচন্দ্র বসু, একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, বেগম রোকেয়া, তাজউদ্দিন আহমদ, স্যার জগদীশচন্দ্র,  মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহাম্মদ এনামুল হক, সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এই বাঙালি পরিচয়ে গর্বিত। তাই তো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি'। ড. মুহম্মদ এনামুল হকের ভাষায়, 'দেশের স্বল্পসংখ্যক মূঢ় লোক, দেশদ্রোহী স্বাধীনতাবিরোধী 'জয় বাংলার' বীজমন্ত্রে অনৈসলামিক ভাব ও প্রভাব বর্তমান, এ কাল্পনিক অজুহাতে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এর প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছে।

নজরুল পরাধীন বাংলা ও ভারতবর্ষে উপনিবেশিক শাসনের অসহনীয় জ্বালা সইতে পারছিলেন না। সামন্ততান্ত্রিক পশ্চাৎপদ সমাজ ও বিদেশি শাসনের জাতাকল থেকে বেরিয়ে আসার তীব্র বাসনা নজরুলকে ব্যাকুল করে তুলেছিল। কবি হিসেবে তার আবির্ভাবের আগেই শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আর কবি হিসেবে তিনি যখন পূর্ণ প্রকাশিত তখন শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। একদিকে নিজ সমাজে বৈষম্য ও অরাজকতা অন্যদিকে বিদেশিদের শোষণ-লুণ্ঠন কবিকে ক্ষীপ্ত করে তোলে। তাই তো 'আমার কৈফিয়ত'-এ ক্ষোভ দুঃখ ও যন্ত্রণাকাতর কবি বলছেন, 'বন্ধু গো আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে।/দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।' আর ঊপনিবেশিক শাসকদের উদ্দেশ্যে বলছেন,'প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,/যেন লেখা হয় আমার রক্তলেখায় তাদের সর্বনাশ।'

দুই দশকের বেশি সাহিত্যজীবনে নজরুল বহু লড়াই সংগ্রাম করেছেন। সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য, হিন্দু-মুসলমানের সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামী, সামন্ত ও পশ্চাৎপদ সমাজ, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কূপমণ্ডুকতা ও ঊপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি। নিজের যাপিত সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রিক যন্ত্রণাকে সৃষ্টিকর্মের মধ্যে অঙ্গীভূত করে, নজরুল হয়ে উঠেছিলেন একটি স্বাধীন দেশ জাতি ও জীবনের রূপকার। তাই তিনি ব্যক্তি হয়েও সমষ্টির। সমকালের হয়েও মহাকালের।

নজরুল সাহিত্য ও সঙ্গীত সাধনা করেছিলেন পরাধীন দেশে, যে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য তার লেখা গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত হয়, একের পর এক। কবিকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। জেল হয়। জেল-জুলুমের প্রতিবাদে অনশন করতে হয়। আর তিনি কিংবদন্তির নায়কে পরিণত হন। কিন্তু পরাধীন যুগের এই কবির মন মানসিকতা ও সৃষ্টিকর্মে পরাধীনতার কোনো ছোঁয়া নেই। নজরুলের সৃষ্টির ভূবনে তিনি স্বাধীন। নজরুলের স্বাধীন চিত্ততার যে জাগরণ তা তার সুস্থাবস্থায় কোনো দিন লয় হয়নি। নতুন সৃষ্টির সাধনা ছিল নজরুলের শিল্পীসত্তার মূল প্রেরণা ও প্রবণতা। আর সে জন্যই সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প সর্বক্ষেত্রে পুরানো ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধ ভাঙার জন্য তিনি বিদ্রোহী। কবি নিজেই বলেছেন, আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, যা মিথ্যা-কলুষিত-পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ভণ্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

কবি আরও বলছেন, আমি যশ চাই না, খ্যাতি চাই না, প্রতিষ্ঠা চাই না, নেতৃত্ব চাই না। জীবন আমার যত দুঃখময়ই হোক, আনন্দের গান-বেদনার গান গেয়ে যাব আমি। দিয়ে যাব নিজেকে নিঃশেষ করে সকলের মাঝে বিলিয়ে। সকলের বাঁচার মাঝে থাকবো আমি বেঁচে। এই আমার ব্রত, এই আমার সাধনা, এই আমার তপস্যা। কবি তার কথা রেখেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে তার জীবনের ট্রাজেডির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে নজরুল নিজেই বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ আমাকে প্রায় বলতেন, "দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মত, কীটসের মত খুব বড় একটা ট্রাজেডী আছে, তুই প্রস্তুত হ'।" জীবনে সেই ট্রাজেডি দেখবার জন্য আমি কতদিন অকারণে অন্যের জীবনকে অশ্রুর বরষায় আচ্ছন্ন করে দিয়েছি। কিন্তু আমারই জীবন রয়ে গেল বিশুষ্ক মরুভূমির মত দগ্ধ। মেঘের উর্ধ্বে শূণ্যের মত কেবল হাসি, কেবল গান, কেবল বিদ্রোহ।

১৯৪১ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিল কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির রজত-জয়ন্তী উৎসবে সভাপতির ভাষণে হঠাৎ কবি নিজের সম্পর্কে বললেন, 'যদি আর বাঁশী না বাজে, কবি বলে বলছিনে,-আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি, আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, নেতা হতে আসিনি। আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলামনা বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।' তবে তিনি চলে গেলেও বাঙালি যে তাকে ভুলতে পারবেনা সেটাও তিনি জানতেন। তাই তো কবি গেয়েছেন, 'আমি চিরতরে দূরে চলে যাব/তবু আমারে দেবো না ভুলিতে।' না তিনি ভুলতে দেননি। বাঙালি তাকে ভুলতে পারেনি, পারবেও না। কারণ তিনি চিরদিনের বাঙালি-বাঙালির চিরদিনের।

 লেখক : সাংবাদিক, গবেষক

http://www.atntimes.com/?p=144872



__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___

[mukto-mona] Re: {PFC-Friends} Re: [BDPANA] Re: Khaledanama 3



জেহাদীরা  তো  এটাই  চায় / পৃথিবীর  যাবতীয়  সভ্যতা, আধুনিক  জ্ঞান  তথা সমগ্র 
মানবিকতা  ধ্বংস  করে  আমাদেরকে  নিয়ে  যেতে  চায়  মধ্য যুগের  অন্ধকারে  /
লক্ষ্য  করুন  মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে বসে এখানে খেয়ে পরে  এখানকার  পোশাক পরে 
অনবরত  পরোক্ষ -প্রতক্ষ্য  ভাবে  সমর্থন দিয়ে  যাচ্ছে  এই  সব  মুখোশ  ধারীরা /




On Friday, May 22, 2015 11:19 PM, Muhammad Ali <manik195709@yahoo.com> wrote:


ছবিটি ভালো করে দেখুন। এটি সিরিয়া ,ইরাক বা আফগানিস্তানে কোনো আত্মঘাতি বোমা আক্রমনের চিত্র নয়। খোদ আমাদের ঢাকা শহরের ছবি এটি ! ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দ্যেশে এক পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল তত্কালীন বিএনপি সরকার। মহিলানেত্রী আই ভি রহমান সহ ২৪ টি তরতাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায় 'সেই কালো দিনে' ! সেই দিন কোথায় ছিল মানবতা কমিশন , কোথায় ছিল সুশীল সমাজ ? আজ খালেদা জিয়ার সমাবেশে যদি এই ধরনের হামলা হতো , খালেদা জিয়ার কানের পর্দা যদি ফেঁটে যেতো , তা হলে জননেত্রী আর আওয়ামী লীগ সরকারের 'মন্ডুপাত' করত বিশ্ব মানবতা কমিশন , সুশীল সমাজ আর তাদের তল্পিবাহক মিডিয়া গ্রুপ।
Muhammad Ali Manik's photo.




On Friday, May 22, 2015 7:58 PM, 'Tanvir Nowaz' via PFC-Friends <pfc-friends@googlegroups.com> wrote:


Lots of countries and human right orgs have pitched in and have extended their help in this unprecedented humanitarian crisis, except Bangladesh itself whose own citizens are the victims !!! Even Turkey who has no stake in this have send in ships to rescue them.  Malaysia, Indonesia, Thailand have provided temporary shelters. UN is providing food and aids. 

EXCEPT BANGLADESH!  Bangladesh Govt has not send in any ship to rescue it own citizens.  Bangladesh Govt has not send in any food or aids to their citizens!! 

The attitude of Bangladesh govt is to deny their existence and deny its responsibility.  One minister said that he only deals with legal migrants, the 'illegal' migrants are not his headache. 

It's because the govt does not care about its own citizens. The govt does not care about them because the govt is not elected by them. The power occupation by this govt is not dependent on the people's will. The govt does not have to be accountable to the people as it has decimated all means of holding the govt accountable such as elections, rallies, demonstrations etc.  

The govt without the consent of the people does not feel need to serve the people on whom it's not dependent on for its existence ! How else one can explain such aloofness, such gross denial of the plight of its own citizens?




On Friday, May 22, 2015 8:56 AM, "Muazzam Kazi kazi4986@yahoo.com [BDPANA]" <BDPANA@yahoogroups.com> wrote:


 
 
Why you or your government is reluctant to talk about the Bangladeshi people those who are dying in the ocean?  They are poor Bangladeshi, there for you or your BAL does not care about them. Why Bangladeshi government did not rescue these poor Bangladeshi? Is it the spirit of our liberation war?
Your beloved government massacred the spirit of our liberation war. Your beloved government killed our voting rights. Your beloved government betray with 160 million people. Do you know the election pledge of BAL in 2008?
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গায়েবি ভোটের উৎসবে যোগ দিয়েছেন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারাও ঢাকা দক্ষিণের নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলামকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে দেখা যায় তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ প্রতীকে সিল মারেন এর আগে সকালে এই ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটারদের ফিরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একইভাবে বাংলাবাজার সরকারি বিদ্যালয়ে পোলিং কর্মকর্তা ইলিশ মার্কায় সিল মারার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসেন বেলা সাড়ে ১১টায় এই ঘটনা ঘটে পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ইলিশের সিল সম্বলিত ব্যালট পেপার রেখে চলে যান ওই কর্মকর্তা পাশেই ব্যালট ভর্তি বাক্স পড়ে থাকতে দেখা যায়। Source: Manabzamin (4/29/2015)

 

From: Nurul Bachchu <bachchuhaq13@yahoo.com>
To: Bangladeshi Americans <bangladeshiamericans@googlegroups.com>; NewEngland Awami League <bishawdipta@yahoo.com>; Bangladesh-progressives Googlegroups <bangladesh-progressives@googlegroups.com>; Shah DeEldar <shahdeeldar@gmail.com>; Borakh Bash <borakhbash@gmail.com>; Bhin-Golardho Naseem <golardho@yahoo.com>; Quazi Nuruzzaman <quazinuru@yahoo.com>; Smahmood20 <smahmood20@yahoo.com>; Gonojagoron Moncho <projonmochottar@gmail.com>; Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>; Akm Rahman <71gdncboston@gmail.com>; Saokot Hossain <saokot_nccbl@yahoo.com>; Dr.Gholam Mostofa <mostofadrgholam@gmail.com>; Isha Khan <bdmailer@gmail.com>; Rezaul Karim <rezaulkarim617@gmail.com>; M. Aleem <aleem53@yahoo.com>; Farida Majid <farida_majid@hotmail.com>; Osman Gani <mo.gani@hotmail.com>; Helal Uddin <heuddin@gmail.com>; Nahid Sitara <naheedsitara1@gmail.com>; Firoze Khan <khanboston@gmail.com>; Nazrul Islam <nislam@gmail.com>; Suhas Barua <suhasboston@gmail.com>; Zainul Abedin' via PFC-Friends <pfc-friends@googlegroups.com>; Bazlul Wahab <bazlul@yahoo.com>; Md. N. Uddin <md.uddin@comcast.net>; Muazzam Kazi <kazi4986@yahoo.com>; Anowar Hossain <anowarboston@yahoo.com>; Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>; Omtajul Haq <omtajul@yahoo.com>; Mina Farah <farahmina@gmail.com>; Ojana Pothik <pothik2302@yahoo.com>; Hakikul Chowdhury <bapsnewsagency@yahoo.com>; Shahadat Hussaini <shahadathusaini@hotmail.com>; Shah DeEldar <shahdeeldar@yahoo.com>; Abdul Momen <abdul_momen@hotmail.com>; Osman Gani <osmangani@gmail.com>; Americanbangladeshi <americanbangladeshi@googlegroups.com>; Mokto Mona <mukto-mona@yahoogroups.com>; NewEngland Awami League <neawamileague@gmail.com>; Tamanna Karim <tamannak2013@gmail.com>; Bipul Kamal <bipulnahar@yahoo.com>; Rakhal Bandho <rakhalbandho@gmail.com>; Lokman Hossain <lokhossain@yahoo.com>; Iqbal Yusuf <iqbalyousuf1@yahoo.com>; Farukh Chowdhury <farukhchowdhury@gmail.com>
Sent: Friday, May 22, 2015 12:00 AM
Subject: Khaledanama 3

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
Decrease fontEnlarge font
ঢাকা: ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করা সহজ হবে না। একে তো বিদেশি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল এখন খালেদা জিয়ার নেই, তারওপর এ সাক্ষাতের ব্যাপারে সরকারও ইতিবাচক নয়।

তাই বিষয়টি নির্ভর করছে ভারতের সিদ্ধান্তের উপর। তবে এ ব্যাপারে ভারত আগ্রহ নাও দেখাতে পারে। কারণ এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষ‍াতের কথা বলেও সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। এ বিষয়টিকে ভারত সহজভাবে নেয়নি। তাছাড়া গত জানুয়ারিতে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর মিথ্যা ফোনের বিষয়টিও রয়েছে। 

আগামী ৬ জুন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এই সময় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। 
 
বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সরকারের মনোভাবের কথা জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তারা বলেন, বিষয়টি ভারতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। মোদি সাক্ষাৎ দিতে চাইলে দিতে পারেন, সেটা তাদের বিষয়। তবে খালেদা জিয়ার অবস্থান ও পূর্বের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা কম।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কোনো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি ঢাকায় সফরে এলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয় নিয়েও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিরক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছিলেন, বিদেশি কূটনীতিক যারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং এক একটি মন্তব্য করেন তাদের মনে রাখা উচিত- তিনি এখন আর বিরোধী দলের নেতা নন, সংসদেও নেই।

এদিকে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর মতে, বিএনপি এখন আর বিরোধী দলে নেই। খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতাও নন। এমনকি সংসদে দলের কোনো প্রতিনিধিত্বও নেই। বিদেশি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান সরকারি সফরে এলে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা করা কোনো প্রটোকলের মধ্যে পড়ে না। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করতে পারবেন কি না সেটা ভারতের উপর নির্ভর করবে। 

এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রবণ মুখার্জি যখন আসেন তখন তার সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার দেখা করার কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করেননি। এটা করে খালেদা জিয়া তাকে চরম অসম্মান করেছেন।শুধু তাই নয়, প্রণব মুখার্জির সফরের সময় বিএনপি হরতাল দিয়েছিলো। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রধান সফরে এলে তার প্রতি ন্যূনতম কোনো সৌজন্য দেখিয়ে হরতাল প্রত্যাহার করেনি।
 
সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রবণ মুখার্জির সঙ্গে দেখা না করার ওই বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি ভারত। প্রবণ মুখার্জি কংগ্রেস নেতা ও ওই দলটি মনোনীত রাষ্ট্রপতি হলেও সেখানকার সব রাজনৈতিক দল তাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবেই দেখে। বিজেপিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাছাড়া গত জানুয়ারিতে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন বলে বিএনপি প্রচার করে। পরে অমিত শাহ নিজেই মিডিয়াকে জানান, খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি তিনি। এ বিষয়টি তার জন্য বিব্রতকর ছিলো।

এদিকে এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাক্ষাতের উদ্দেশ্য তো আসলে সৌজন্য দেখানো নয়। গত বছর বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি মনে করেছিলো এইবার আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে নেমে যেতে হবে। এর পর জুনে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় আসেন। সুষমার সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করেন খালেদা জিয়া। ওই সময় খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয় সুষমা স্বরাজের কাছে তুলে ধরেন। সুষমা স্বরাজ অবশ্য সরাসরি জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।  

নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ভারতের বিষয়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হবে কিনা সেটা ভারত ঠিক করবে। এ ব্যাপারে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে সাক্ষাৎ না করে তাকে চরম অসম্মান করেছেন খালেদা জিয়া। তখনও সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। সাক্ষাতের কথা বলে সাক্ষাত না করার চেয়ে অসম্মান তো আর কিছু হতে পারে না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ভারতের বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চাইলে দেখা করতে পারেন। তবে এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি যখন এসেছিলেন তার সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করতে চেয়েও দেখা না করে তাকে অসম্মান করেছেন। অমিত শাহর মিথ্যা ফোনকলের খবর প্রচার করেছেন। এখন আবার সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিভাবে দেখা করতে চান! 





--
You received this message because you are subscribed to the Google Groups "PFC-Friends" group.
To unsubscribe from this group and stop receiving emails from it, send an email to pfc-friends+unsubscribe@googlegroups.com.
For more options, visit https://groups.google.com/d/optout.






__._,_.___

Posted by: Nurul Bachchu <bachchuhaq13@yahoo.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___

[mukto-mona] বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও 'জয় বাংলা'



বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব ও 'জয় বাংলা'
শামসুজ্জামান খান
'জয় বাংলা' স্লোগানটি বাংলাদেশের উদ্ভবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। গ্রামভিত্তিক, সমন্বয়বাদী ও লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক চেতনাঋদ্ধ সাংস্কৃতিক বোধের ভেতর থেকে এর শক্তি সমন্বয় করে প্রবলভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ ভূখণ্ড ও ভারতীয় উপমহাদেশের সনাতন ধর্মীয় স্পর্শকাতরতার কূটচক্রের আবহে এই স্লোগান বিগত বছরগুলোতে অপেক্ষাকৃত ছোট স্পেসে টিকে থেকেছে। বলা যেতে পারে, এর ঐতিহাসিক বিকাশ প্রক্রিয়ার মূলধারার চেয়ে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও আরোপিত রাজনৈতিক কূটকৌশল সামরিক, ছদ্মসামরিক এবং বাংলাদেশবিরোধী শক্তির অনুচরদের মদদে শক্তি অর্জন করে জনগণকে কিছু বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হওয়ায় এমনটি ঘটেছিল। মুক্তবুদ্ধি মননজীবী, স্বচ্ছ চিন্তার সংস্কৃতিকর্মী ও সাহিত্যিক-শিল্পীদের একটা বড় অংশ ও আলোকিত নতুন প্রজন্মের ছাত্র এবং তরুণদের একটা বিশাল বাহিনী স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ধারা বা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য চিন্তার সেক্যুলার প্যাটার্নের সঙ্গে যুক্ত আছে। তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে মূল ধারার ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন। তবু তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান এত দিন নিচু মাত্রায় থাকায় 'প্রজন্ম ৭১' বা 'একাত্তরের যাত্রীরা' এত দিন সোচ্চারভাবে 'জয় বাংলার' ব্যবহার করেছে এটা চোখে পড়েনি। ছাত্ররাজনীতি ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ-চেতনার বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়াতেই মূলত এমনটা ঘটেছিল। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর এই ফেব্রুয়ারিতে সেই জায়গাটা নিয়ে ষাট-সত্তরের দশকের দ্রোহি ছাত্র আন্দোলনের মশাল হাতে তুলে নিয়ে ইতিহাসকে তার স্বাভাবিক প্রগতির ধারায় ফিরিয়ে এনেছে।

দুই.
ঐতিহাসিকভাবে দেখলে হিন্দু-মুসলিম বাঙালির ধর্মীয় আবদ্ধতা ও গোঁড়ামি এবং চিন্তা-চেতনার নিশ্চলতার মধ্যে প্রায় এককভাবেই জাগৃতির প্রবল বেগ ও ব্যাপকতা এনেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। গোটা বাঙালি জাতিকে তিনি জাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ওই চেতনার প্রোজ্বল শিখায়। তাঁর চিন্তার সহযোগী ছিলেন কমবেশি মাত্রার সক্রিয় জীবনমুখী ও আধুনিক বাঙালি জাতি গঠনের সাধনায় নিয়োজিত সাহিত্য সাধক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, ক্ষিতিমোহন সেন, এস ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন কবীর, বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এবং রাজনীতি ক্ষেত্রে এ কে ফজলুল হক, সুভাষ চন্দ্র বসু, সি আর দাশ প্রমুখ। এই বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার জাতীয়তাবাদীরাই ১৯৩০ সালে নজরুলকে বাঙালি জাতির 'জাতীয় কবি' হিসেবে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। আর রক্ষণশীল, মূঢ় ও সামাজিক চেতনাহীন তথাকথিত মুসলমানরা তাঁকে 'কাফের' আখ্যা দিয়েও পূর্ণ পরিতৃপ্ত হয়নি। তাদেরই একজন নজরুলকে বলেছিলেন : 'লোকটা মুসলমান না শয়তান'। সাম্প্রদায়িক মুসলমান ও হিন্দুদের আক্রোশ নজরুলের চিন্তার স্বচ্ছতা, প্রগতিশীলতা ও সমন্বিত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের দীপ্রতাকে কিছুমাত্র ম্লান করতে পারেনি। তিনি অবৈজ্ঞানিক ও উদ্ভট দ্বিজাতিতত্ত্বের রাজনৈতিক প্রজনন পাকিস্তানকে 'ফাঁকিস্তান' নামেই আখ্যাত করে গেছেন। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় জিন্নাহর উর্দুর পক্ষে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বক্তব্যের বিরোধিতা দিয়ে শুরু করে মুজিব ধীরে ধীরে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের অগ্রনায়কের ভূমিকায় চলে আসেন। প্রকৃতপক্ষে নজরুল এবং বঙ্গবন্ধুই বাংলার হাজার বছরের সমন্বয়বাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ জীবনচর্যার ভাববস্তুকে নবরূপে বিন্যস্ত করে বিপুল গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।

তিন.
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সাহিত্যকে ভালোবাসতেন। বক্তৃতা-বিবৃতি ও আলাপচারিতায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করতেন। এতে সাধারণ্যে এমন ধারণা চালু হয়ে যায় যে শেখ মুজিব রবীন্দ্র ভক্ত; এ ধারণায় বিন্দুমাত্র ভুল নেই। তবে মুজিবের উত্তরাধিকারের মধ্যে শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, নজরুলেরও অবস্থান ছিল বেশ দৃঢ়। তাই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের চিন্তাধারার মৌলিক অন্তঃসারকে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি করতে চেয়েছিলেন তিনি। আমার এ অনুমানের উদাহরণ খুব স্পষ্টভাবেই চোখে পড়ে। প্রথম উদাহরণ তো এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। বিদ্রোহী কবিকে ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্য কারো পক্ষে এটা সম্ভব ছিল না। কবিকে এ দেশে আনার মধ্যে শেখ সাহেবের ভেতরের চিন্তা কী ছিল তা আমরা হুবহু বলতে পারব না। তবে অনুমান করতে পারি। আমাদের অনুমান অবশ্য নিছক অনুমান নয়। ওই অনুমানের পক্ষে কিছু তথ্য-প্রমাণ হাজির করব।
দ্বিতীয় ও মূল উদাহরণের কথাটিকে যদি এভাবে তুলি যে প্রাজ্ঞ চেতনা ও ইতিহাসবোধ শেখ সাহেবের চিন্তার পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল। আর সে জন্যই বাংলার দুই মহান কবির ভাবনা থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বপ্রধান দুটি মৌল স্তম্ভকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। এর একটা জাতীয় সংগীত। পূর্ব বাংলার বাউল সুরে রচিত রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানকে তিনি খুব যথার্থভাবেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করেছিলেন। অন্যটি সেক্যুলার বাংলাদেশের প্রতীক: 'জয় বাংলা'। নজরুলের বাংলাদেশ বন্দনা: 'নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মমঃ' বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টির বাইরে ছিল না। এর পরে তো তিনি নজরুলের কাছ থেকে আরো স্বচ্ছ এবং লাগসই পঙ্‌ক্তিই পেয়ে যান। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভেতর থেকে নজরুল চয়ন করেছিলেন : 'বাংলা বাঙালির হোক। বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক'- এ অবিনাশী পঙ্‌ক্তিমালা। এসব পঙ্‌ক্তি না থাকলে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু 'জয় বাংলা' স্লোগান তুলতে পারতেন না। 'বাংলার জয় হোক' আর 'জয় বাংলার' মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে! অতএব, নজরুলের কাছে বঙ্গবন্ধু বিশেষভাবে ঋণী তাঁর 'জয় বাংলা' স্লোগানের জন্য। আমাদের উদ্ধৃত পঙ্‌ক্তিতে অর্থ ঠিক থাকলেও শব্দের কিছু ভিন্নতা আছে; ('বাংলার জয় হোক'; আর বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করেছেন 'জয় বাংলা') কিন্তু কবি তাঁর 'ভাঙার গান' (১৯২২) কাব্যগ্রন্থে 'পূর্ণ অভিনন্দন' কবিতায় হুবহু 'জয় বাংলা' শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, ফরিদপুরের এক বিপ্লবী অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র দাস, যাঁকে কবি মাদারীপুরের 'মর্দ্দবীর' বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁর কারামুক্তি উপলক্ষে ওই কবিতাটি রচিত। কবিরা দিব্যদৃষ্টির অধিকারী। নজরুলের ভাঙার গানের ওই কবিতা সে কথাকেই মনে করিয়ে দেয়।
কবি নজরুল ও তাঁর চিন্তার অনুসারী কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হোসেনদের ঢাকা থেকে বহিষ্কার করেছিলেন ঢাকায় রক্ষণশীল নবাব ও তাঁর অনুচররা। বঙ্গবন্ধু নজরুলকে যেন বিপরীত চেতনার প্রতীক প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এ ঘটনার তাৎপর্য অনেক।
তো এখানেই একটা মৌলিক প্রশ্ন ওঠে, তা হলো : নজরুলকে যদি 'জাতীয় কবি' অর্থাৎ বাঙালির সমন্বিত জাতিসত্তার মূল ধারক হিসেবে গ্রহণ করে এই অভিধায় অখ্যাত করা হয় তাহলে তা করার অধিকার ছিল বঙ্গবন্ধুর এবং যাঁরা 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ' ও 'জয় বাংলা'য় বিশ্বাস করেন তাঁদের। 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ' ও 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম'-ওয়ালাদের নজরুলকে 'জাতীয় কবি' বলার অধিকার তো সংগত কারণেই থাকে না। কারণ, 'লেবার স্বরাজ পার্টির' স্রষ্টা ও আধুনিক বাঙালিত্বের তাত্তি্বক ও সাধক কবি নজরুল অমন বিষয় রাজনীতি ক্ষেত্রে অনুমোদন করেননি। অতএব, তাঁরা নজরুলকে 'জাতীয় কবি' বললে তার পেছনের মতলবটা এক মৌলিক বিরোধ হয়ে দাঁড়ায়। নজরুলের মতো মহান কবিকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে 'জাতীয় কবি' বলা এও ইতিহাস ও সত্যের এক ধরনের বিকৃতি।
চার.
'জয় বাংলা'কে স্বীকার না করলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌলচারিত্র্যকে অস্বীকার করা হয়। যাঁরা এ স্লোগান বর্জন করেছেন, তাঁরা প্রকৃত বাঙালি নন, বাংলাদেশের মৌল জাতীয় সত্তায় বিশ্বাসী নন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামেও বিশ্বাসী নন এবং আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তির তাঁরা শত্রুপক্ষ। বিখ্যাত পণ্ডিত ড. মুহাম্মদ এনামুল হক (তিনি আরবি ভাষা সাহিত্যে অনার্স এবং মুসলিম বাংলা সাহিত্য ও Sufism in Bengal গ্রন্থের লেখক) বলেছেন, 'জয় বাংলা' শুধু একটি রাজনৈতিক জিগির-স্লোগান নয়, এ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র বা 'ইসমে আজম'। এ বীজমন্ত্রটি যিনি আবিষ্কার করেন তিনি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ সাহেবের অদ্ভুত পৌরুষব্যঞ্জক কণ্ঠে যেদিন এ 'ইসমে আজম' উচ্চারিত হলো, সেদিন তড়িৎ প্রবাহের মতো দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হলো সে অমোঘ মন্ত্র। তাদের অন্তরের সুপ্তচেতনা জেগে উঠল এবং লুপ্ত অনুভূতি পুনরুজ্জীবিত হলো। তারা ভাবল জাতিত্বে তারা হিন্দু নয়, তারা বৌদ্ধ নয়, তারা খ্রিস্টান নয়, তারা মুসলমান নয়, তারা বাংলাদেশের মানুষ, তারা বাঙালি। এ যে দেশপ্রেম, এ যে জাতীয়তাবোধ, 'জয় বাংলা' তারই বীজমন্ত্র, তারই 'ইসমে আজম'।
দেশের স্বল্পসংখ্যক মূঢ় লোক, দেশদ্রোহী স্বাধীনতাবিরোধী 'জয় বাংলার' বীজমন্ত্রে অনৈসলামিক ভাব ও প্রভাব বর্তমান, এ কাল্পনিক অজুহাতে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এর প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছে (ড. মুহম্মদ এনামুল হক, বাঙালি বাংলাদেশ)।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও বলেছেন, 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।' তাহলে বাংলার সুলতানি আমলের সুলতানদের বাঙালিত্বের সাধনা থেকে শুরু হয়ে সপ্তদশ শতকের কবি আবদুল হাকিম ও লালন ফকির, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহাম্মদ এনামুল হক, মওলানা ভাসানী (তাঁরা সবাই 'বাঙালি' বলতেন) ও শত মনীষীর চিন্তাকে অমান্য ও অশ্রদ্ধা করে আমরা কী ইতিহাসের ধারা থেকে বিচ্যুত হইনি? বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতা এখানেই যে তিনি তাঁদের চিন্তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন।

পাঁচ.
বঙ্গবন্ধুকে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে হত্যা করে বাংলাদেশের মূল চারিত্র্য অর্থাৎ চার রাষ্ট্রনীতি বদলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদ খুব যথার্থভাবে বলেছেন : "বাংলাদেশের সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' লিপিবদ্ধ করার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করে যারাই ক্ষমতায় আসে তারা সংবিধানকে বিনষ্ট করে।" তিনি বলেন, 'পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় মূলনীতি ও প্রস্তাবনার পরিবর্তন করে এমন অবস্থায় দেশকে নিয়ে আসা হয়েছে, যাতে মনে হয় আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি, ধর্মযুদ্ধ করেছি। এই সংশোধনীর প্রস্তাবনায় রয়েছে ধর্ম নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল' (ভোরের কাগজ, ১৫ জুলাই ১৯৯৫)। এ অবস্থায় 'জয় বাংলাকে' উড়িয়ে দেওয়া হবে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে 'জয় বাংলা' তো ইতিহাসের অনেক আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের ধারার সঙ্গে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও গণজাগরণ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিপুল গণসমর্থনধন্য এ স্লোগানটি ড. মুহাম্মদ এনামুল হকসহ সব দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী অন্তরের সঙ্গে সমর্থন করেছিলেন। আর কবি নজরুল ইসলাম তো এ 'জয় বাংলার' মূল উদ্ভাবক। এমনকি মওলানা আকরম খাঁ তাঁর 'মোস্তফা চরিত' গ্রন্থে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নামের সঙ্গে 'জয় মোহাম্মদ' ব্যবহার করেছেন। অতএব আমাদের গোটা ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক ভেবে-বুঝেই বঙ্গবন্ধুও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ মূল ভাবনার দায় তো মূল নেতার বা প্রধান চরিত্রের, দৌবারিকের নয়।
লেখক: মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমী [ঢাকা, শনিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ৪ ফাল্গুন ১৪১৯, ৫ রবিউস সানি ১৪৩৪]
http://www.kalerkantho.com/print_edition/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1155&cat_id=2&menu_id=20&news_type_id=1&index=0&archiev=yes&arch_date=16-02-2013#.VWOQ1dJViko

'জয় বাংলা' স্লোগান বঙ্গবন্ধু নজরুলের একটি কবিতা থেকে নেন
তারিখ: ২৬/০৫/২০১৫
  • কুমিল্লায় নজরুলজয়ন্তী উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

পূর্ণ-অভিনন্দন
- কাজী নজরুল ইসলাম---ভাঙ্গার গান
এস অষ্টমী-পূর্ণচন্দ্র! এস পূর্ণিমা-পূর্ণচাঁদ!
ভেদ করি পুন বন্ধ কারার অন্ধকারের পাষাণ-ফাঁদ!
এস অনাগত নব-প্রলয়ের মহা সেনাপতি মহামহিম!
এস অক্ষত মোহান্ধ-ধৃতরাষ্ট্র-মুক্ত লৌহ-ভীম!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর! ......
.........................................
.................................
ওগো অতীতের আজো-ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি ধূম্রশিখ!
না-আসা-দিনের অতিথি তরুণ তব পানে চেয়ে নিনিমিখ।
জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!
জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!
স্বাগত ফরিদপুরের ফরিদ, মাদারিপুরের মর্দবীর,
বাংলা-মায়ের বুকের মানিক, মিলন পদ্মা-ভাগীরথীর!

সর্বমানবিক কবি  [কাজী নজরুল ইসলাম ] by মুহম্মদ নূরুল হুদা | 


ব্যবধানে স্বাধীনতা লাভ করলো তারই স্বপ্নধৃত বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যেমে এমন একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্যেই তিনি ডাক দিয়েছিলেন ১৯৪২ সালে : 'বাংলা বাঙালির হউক, বাংলার জয় হউক।' বাঙালিকে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে যুদ্ধান্ত্র হাতে নিতে হবে আর তাড়াতে হবে ভিনদেশি দখলকারদের, যাদেরকে তিনি 'রামা' বা 'গামা' বলেছেন। তাঁর উক্তি : "এই পবিত্র বাংলাদেশ/ বাঙালির– আমাদের।/ দিয়া প্রহারেণ ধনঞ্জয়,/ তাড়াব আমরা, করি না ভয়/ যত পরদেশী দস্যু ডাকাত / 'রামা'দের, 'গামা'দের।" আরো স্মরণ করা যেতে পারে, 'জয় বাংলা' শীর্ষক বাঙালির চিরকালের জয়ধ্বনিও প্রথম তার কণ্ঠেই উত্থিত। তাঁর 'ভাঙার গান' কাব্যগ্রন্থের 'পূর্ণ-অভিনন্দন' কবিতায় তিনি লিখেছেন, 'জয় বাংলা-র পূর্ণ চন্দ্র, জয় জয় আদি অন্তহীন'

নজরুল দর্শন: অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয় চেতনা : দ্যুতিময় বুলবুল

প্রকাশ তারিখ: ২৫/০৫/২০১৪ ৩:৫০:৫৭ অপরাহ্ন




__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___