রাজাকারের ফাঁসি ও জামাত নিষিদ্ধ দাবিতে জাতিসংঘের সামনে সমাবেশ: প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ডা. ইমরানের
এনা, নিউইয়র্ক, ১৮ মার্চ, ২০১৩ (বিডিএনএন২৪ ) :- আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে রাজাকারদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে সোচ্চার সকল প্রবাসীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানালেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ডা. ইমরান এইচ সরকার। গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান ইমরান সরকার। একইসাথে তিনি সকলকে আহবান জানান অহিংস আন্দোলনকে জাগ্রত রেখে যুক্তির মাধ্যমে জামায়াতি অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানাতে। ১৭ মার্চ রোববার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত মধ্যরাতে) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে প্রবাসীদের বিরাট এক সমাবেশ ডা. ইমরান এইচ সরকার ঢাকা থেকে টেলিফোনে বক্তব্য রাখেন। এ সময় সমাবেশ ভিন্ন এক আমেজে আপ্লুত হয় এবং সকলে সমস্বরে জয় বাংলা ধ্বনিতে পুরো এলাকা মুখরিত করেন।
একাত্তরের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দাবি আদায়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন জোরালো ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে প্রবাসীদের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীতের পর পবিত্র কোরআন, গীতা এবং ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে শুরু এ সমাবেশে শপথ বাক্য পাঠ করান নতুন প্রজন্মের সাইমন হোসেন। কোরআন থেকে পাঠ করেন হাজী মনির, গীতা থেকে সবিতা দাস এবং ত্রিপিটক পাঠ করেন রতন বড়–য়া। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নিউইয়র্ক গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীর পাশাপাশি সর্বস্তরের প্রবাসীর উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। ইমরান এইচ সরকারের সাথে এ টেলি কনফারেন্সের সমন্বয় করেন মূলধারার রাজনীতিক ও এ সমাবেশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম ড. নূরন্নবী। এ সময় তার পাশে ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মিঠুন আহমেদ, শিতাংশু গুহ, জাকারিয়া চৌধুরী, মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, আকবর হায়দার কিরণ, এন আমিন, মিসবাহ আহমেদ, রতন বড়–য়া, দুরুদ মিয়া রনেল, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক নূরনবী কমান্ডার।
সমাবেশের মেজাজের পরিপূরক বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে প্রবাসীরা এসেছিলেন বস্টন, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সী, দেলওয়ারে, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, আটলান্টিক সিটি এবং স্বাগতিক নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থান থেকে। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনে আমেরিকায় গত ৫ ফেব্র"য়ারি থেকে বহু সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। সবগুলোর চেয়ে এটি ছিল বড় এবং সুসংগঠিত। প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে প্রবাসীরা সমবেত হন এখানে। এ সমাবেশ থেকে নিউইয়র্কে বসবাসরত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান খানকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবিও উঠে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের চিহ্নিত করার কথাও বলেন অনেকে। জামায়াত-শিবিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জনের ডাকও দেয়া হয় সমাবেশ থেকে। গান, কবিতা এবং শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো সময়। গতানুগতিক বক্তৃতার কোন ব্যবস্থা ছিল না। শ্লোগানেই নিজের কর্তৃত্ব প্রদর্শন করেছেন সকলে। অনেকের মাথায় ছিল 'রাজাকারের ফাঁসি চাই' লেখা ব্যানার।
'আমাদের আন্দোলন অহিংস, শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক', 'আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে নই-সন্ত্রাসী জামাত-শিবিরের বিরোধী', ফাঁসি চাই যুদ্ধাপরাধীদের', 'এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়-আল বদর রাজাকার', পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা', 'মৃত্যুদন্ড দিতে হবে-যুদ্ধাপরাধীদের', 'হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই-হিন্দু কেন পুড়ে ছাই?', 'একাত্তরের হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার', অবিলম্বে ফাঁসি দিয়ে-রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই', 'দাবি মোদের একটাই-রাজাকারের ফাঁসি চাই', 'সন্ত্রাসী সংগঠন-জামাত-শিবির নিষিদ্ধ কর', 'সংখ্যালঘু নির্যাতন-বন্ধ কর করতে হবে', 'মন্দিরে হামলা কেন-বিএনপি জবাব চাই', 'হিন্দুরা টার্গেট কেন-জামাত-বিএনপি জবাব চাই', 'রুখতে হবে সন্ত্রাস-গড়তে হবে ঐক্য', 'বাংলাদেশের গণতন্ত্র-বিপন্ন হতে দেব না', 'ভুলিনি ভুলবো না-একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ', ভুলিনি ভুলবো না-মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার', 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নেই', 'রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই', 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিকল্প নেই', 'যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ', 'জয় বাংলা', 'হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই-রাজাকারের ফাঁসি চাই', 'জাগো জাগো-বাঙালি জাগো', 'জেগেছে বাঙালি-এবার তোদের রক্ষা নাই', ইত্যাদি।
বিরাট একটি জাতীয় পতাকা সামনে ধরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল নিউইয়র্ক জাগরণ মঞ্চ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ইউএসএ কমিটি', যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম একাত্তর, নিউইয়র্ক যুব কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখা, নিউইংল্যান্ড শাখা, বাঙালির চেতনামঞ্চ, উদীচী, বিপা, বাংলাদেশ পূজা সমিতি, জ্যামাইকা মহামায়া মন্দির, বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন্ পরিষদ, কানেকটিকাট হিন্দু কম্যুনিটি, বাংলাদেশ-৭১, সার্বজনীন পূজা টউদযাপন কমিটি, ব্র"কলীন গৌর নিতাই মন্দির, ব্রঙ্কস পূজা কমিটি, ব্রঙ্কস সনাতন পূজা কমিটি, আটলান্টিক সিটি সৎসঙ্গ, সঙ্গীত পরিষদ, শিল্পককলা একাডেমি, বস্টনের জাগরণ মঞ্চ শিল্পীদল, বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন, শব্দ রিসাইটেশন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ইত্যাদি। গণজাগরণ মঞ্চের মেজাজ অক্ষুন্œ রাখার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে নিষেধ করা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যানার এনেছিলেন। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা পরিলক্ষিত হলেও আয়োজকরা অসীম ধৈর্যের পরিচয় দেয়ায় শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে। এ প্রসঙ্গে সমাবেশের জন্যে সিটি প্রশাসন থেকে অনুমতি সংগ্রহকারী মানবাধিকার সংগঠক রতন বড়–য়া বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতার এমন আচরণে আমরা ব্যথিত। সবকিছু নিরবে সহ্য করেছি বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে। আশা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতির অবতারণা আর হবে না।
অংশগ্রহণকারী সকলেই নেতৃত্ব দেন শ্লোগানে। সমাবেশ শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। এদিকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদার এবং একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসি দাবিতে ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউজের সামনে আরেকটি বড় ধরনের সমাবেশের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমন্বয়কারী শিতাংশু গুহ।
http://khabor.com/news/2013/03/18/201302999902275230444214.htm
ওয়াশিংটন, ১৮ মার্চ ২০১৩ (বিডিএনএন২৪ ) :- যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত রাজাকার সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে ...।