মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য লেখা পাঠানো হল। প্রকাশের জন্য সদয় বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো। সুখের খোঁজে মুসলিম বিশ্ব অতিথি লেখক অভিজিৎ রায় দরিদ্র রাস্ট্রগুলোর সাথে ধর্মের একটা কো-রিলেশন দেখিয়েছিলেন। এর পর অনেকগুলো সূচক আমাদের সামনে এসেছে যেমন- ব্যর্থ রাস্ট্র, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্ট্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব নেতিবাচক সূচকগুলোতে শীর্ষ দেশ গুলো প্রায় একই থাকে। এবং এগুলোর সাথেও ধর্মের কো-রিলেশন টানা হলে গ্রাফ গুলো প্রায় একই থাকে। ২০ মার্চ "আন্তর্জাতিক সুখ দিবস" উপলক্ষে গ্যালপ রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে সুখী রাস্টের তালিকা। তালিকাটা উল্টালে হয়ে যায় "অসুখী রাস্ট্রের তালিকা"। সুখী রাস্ট্রের তালিকার সর্বশেষ ৫ টি দেশ; অর্থাৎ ৫ টি সবথেকে অসুখী রাস্ট্র হল - সুদান, তিউনেশিয়া, বাংলাদেশ, সার্বিয়া, তুরষ্ক। সার্বিয়া ছাড়া বাকি দেশগুলোতে মুসলনাদের শতকরা হার ৯০- ৯৯%।অসুখীর তালিকার প্রথম ১৫ টি দেশের ৯ টিই মুসলিম রাস্ট্র। সুখী রাষ্ট্রের তালিকায় কয়েকটি মুসলিম দেশ বাদ দিলে বাকিদের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি আরো কিছু অস্থিতিশীল রাষ্ট্র। নইলে অসুখী রাস্ট্রের তালিকায় যোগ হত আরো কিছু ইসলামিক স্টেট। ইসলামিক রাস্ট্রের নাগরিকদের মনস্তাত্ত্বিক গবেষনার সময় এসেছে। কি কারণে এরা অসুখী? দেখা গেছে অর্থনৈতিক শক্তিমাত্তা সুখ পরিমাপের খুব একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ মানদন্ড নয়। কারন সুখি রাস্ট্রের তালিকার প্রথম ১০ ল্যাটিন আমেরিকার যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ইউরোপ আমেরিকার শক্তিশালী দেশগুলো থেকে বেশ খানিকটা পিছনে। তবে অর্থনীতিটা গুরুত্ত্বপূর্ণ না হলেও একেবারে ইগনোর করার মতও ফ্যাক্টর না। কারন ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর পরেই সুখী রাস্ট্রের তালিকার মধ্যস্থান পর্যন্ত আধিপত্য দেখা যায় স্ক্যান্ডিনেভীয়ান এবং ইউরোপীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো, পাশাপাশি আমেরিকা, কানাডা, সিংগাপুরের মত দেশও আছে উপরের দিকেই। যাইহোক, তারপরও সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থনৈতিক কারনে ইসলামী রাস্ট্রগুলো অসুখী এমন হাইপোথিসিস গ্রহন করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিকগন নিজেদের অসুখী ভাবছেন কেন? যাদেরকে জন্মাবধি শেখানো হয় ইসলাম সর্বোচ্চ শান্তির ধর্ম। শতকরা ৯৭- ৯৯ ভাগ মুসলিম জনসং্খ্যার দেশ সুদান, তিউনিসিয়া, তুরস্কের যেখানে কথিত স্বর্গ হবার কথা সেদেশগুলোর নাগরিকরাই পৃথিবীর সব থেকে অসুখী মানুষ। বাংলাদেশ, পাকিস্থান, আফগানিস্তান এই দেশগুলোর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। একটি জাতি গঠিত হয় জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। কিন্তু ইসলাম অনুসারীরা ধর্মের ভিত্তিতে একটা জাতি কল্পনা করে নেয়। এবং বাস্তবে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্ত্বা হয়েও সমগ্র পৃথিবীর সিংহভাগ মুসলিম কিছু কমন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, যেগুলো নিঃসন্দেহে তাদের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলছে। ৩। ধার্মিকদের প্রার্থনা থেকে তাদের মানসিকতার কিছুটা আঁচ করা যায়। অমুসলিমদের প্রার্থনা মুসলিমদের প্রার্থনা থেকে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন- বৌদ্ধ ধর্মে প্রার্থনার সময় বলা হয়- জগতের সকল প্রানীর কল্যান কামনা করে এদের প্রার্থনা শেষ হয়। পক্ষান্তরে, মুসলমানদের প্রার্থনায় হরহামেশাই শোনা যায়, অমুকের হস্তপদ ধ্বংস হয়ে যায়, নিঃবংশ হোক। এদের প্রার্থনায় সকল প্রানী দূরে থাক সমগ্র মানব জাতির কল্যান চাওয়ার কথা ভুলেও শোনা যায়। শুধু মুসলিম উম্মার শান্তি সমৃদ্ধিই এদের প্রার্থনার মুল বিবেচ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রার্থনা অর্থহীন বা সুযোগ নেই মুসলমানদের জন্য, কারণ তাদের কল্পিত স্বর্গে অন্যদের কোন প্রবেশাধিকার নেই। সকল সুখ, শান্তি যেন সব তাদের জন্যই। এরকম একটা আত্নকেন্দ্রিক, আত্নহংকারী মন সুখী হতে পারেনা। মুসলমানরা মুটামুটি সারা পৃথিবী জুড়েই অসহিষ্ণু, এবং সহিংসতা প্রিয়। তাদের কাছে মুসলমান ব্যতীত সকলেই শত্রু। তাদের দৃষ্টিতে একজন অমুসলিম মানেই শত্রু, ষড়যন্ত্রকারী, এবং ইসলাম অবমাননাকারী। এমন কি অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা পর্যন্ত এই ধর্মে নিষেধ আছে। অধিকন্তু, এরা সব সময় প্রতিপক্ষ খোজে। অমুসলিম প্রধান দেশে অমুসলিম দের অমুসলিমদের ইসলামের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে দেখে, যেসব দেশে প্রায় সবাই মুসলমান সেসব দেশে একগ্রুপ আরেক গ্রুপকে সহীহ মুসলমান না এই যুক্তি দেখিয়ে ইসলামের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করায়। যেমন পাকিস্তানে এমন কোন জুম্মার দিন পাওয়া যাবে না যেদিন শিয়াদের হাতে সুন্নীরা মার খাচ্ছে নতুবা সুন্নীদের হাতে শিয়ারা মার খাচ্ছে। কার্যত অনেক মুসলিমদেশে মুসলমানরা সর্বদাই তটস্ত থাকে ইসলামপন্থিদের জন্য। যেমন, পাকিস্তানে প্রায় দেড়শতাধিক স্কুল ছাত্র তালিবানদের হাতে মারা গেল। নাইজিরিয়ায় মসজিদে ব্রাশ ফায়ারে প্রায় ৮০ জনকে হত্যা করল বোমে হারাম গোষ্ঠি। সব ক্ষেত্রেই আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে গুলি চালানো হল। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে খুব বড় প্রতিবাদও দেখা যায়নি। খুব সম্ভব ইসলামিস্ট জংগীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা অনৈসলামিক কাজ হয়ে যায় কিনা এরকম একটা দ্বিধা দন্দ্ব কাজ করছে। কার্যত এমন অসস্তিকর অবস্থায় প্রতিটি মুসলিম দেশ ভূগছে। এগুলোকেও অসুখী হবার একটা ফ্যাক্টর ধরা যেতে পারে। ইসলামী স্কলাররা প্রায়ই এমন ধারনা দেন যে, পৃথিবীটা মুমিনদের কাছে কারাগারস্বরূপ, এখানে জীবনটাকে যত কম উপভোগ করা যাবে তাদের জন্য কথিত স্বর্গে যাওয়া ততই সহজ হবে। এই ধারণাটি প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়েছে অনুন্নত ইসলামী দেশগুলোতে। ফলে এসব জায়গায় জীবন বিমুখ এক বিরাট জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে। এরা জীবনের সুক্ষাতিসুক্ষ আনন্দ গুলো থেকে নিজেদের দুরে রাখছে। জীবনটা উপভোগের বিষয় এই চিন্তা করাও তাদের কাছে পাপ। কোন অনুষ্ঠান বা খেলা দেখে আনন্দ পাওয়াও এরা অনৈসলামিক মনে করে। কোন খাবার হাতে নিয়ে ভাবে এটা হালাল কিনা। স্বাভাবিকভাবেই এরা সুখী হতে চায় না কারণ তাতে তাদের কথিত পরকালের অবারিত সুখ ধরা নাও দিতে পারে। মুসলমানদের মানসিক হীনমন্যতা তাদের অসুখী হবার পেছনে অনেকখানী দায়ী। কোন সুপারস্টার ইসলাম গ্রহন করেছে, এধরনের খবর মুসলমানদের কাছে টনিকের কাজ করে। স্বাভাবিক অবস্থায় কতটা অসুখী না হলে একজন পর্ণস্টারের ইসলাম ধর্ম গ্রহনের খবর এদেরকে উৎফুল্ল করে। অসহায় ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো ধরে বাচার শেষ চেষ্টার মতই পর্ণস্টার থেকে মহাকাশ্চারী, ফুটবলার, অভিনেতা, গায়ক ইসলাম গ্রহণ করছে এইখবর শুনে সুখী হবার চেষ্টা করে। কোন অমুসলিম বিজ্ঞানী কালোজিরার একটা গুন আবিস্কার করেছে, কিংবা কোন অমুসলিম বিজ্ঞানী রোযা রাখার একটা উপকারীতা খুজে পেয়েছে এগুলো অসুখী মুসলমানদের সাময়িক মানসিক প্রশান্তি দেয় বিনিময়ে মরিশ বুকাইলি'রা আখের গুছিয়ে মিটিমিটি হাসে। যাই হোক, ফিরে যাই "হ্যাপী প্লানেট ইনডেক্সে"। জিডিপি র্যাংকিং এ ১১৮ তম অবস্থানের গুয়েতেমালা সুখী রাস্ট্রের তালিকায় হয়েছে ২য়। আসলে সারা ল্যাটিন আমেরিকার অবস্থাটা এরকমই। এই মহাদেশের লোকেরা পৃথিবীতে সব থেকে বেশী হাসে। একবেলা না খেলেও মুখের হাসিটা ঠিকই থাকে। সারা মহাদেশ জুড়েই রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলার এক শক্তিশালী বলয়। মানবিক গুনাবলী বিকাশের সব কিছুই আছে বলা চলে। ইউরোপের মত এতটা যান্ত্রিকও হয়ে ওঠেনি এদের জীবন। সুখী হতে চাইলে এদের অনুসরণ করা যেতেই পারে তাই। শান্তিই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে হাতে ছুরি নিয়ে যে সেটা প্রতিষ্ঠা করা যায় না বাস্তব অভিজ্ঞতা সেটাই বলে। |
__._,_.___