যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে |
নিউজ-বাংলা ডেস্ক | |||
সোমবার, ২১ জুলাই ২০১৪
|
__._,_.___
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে |
নিউজ-বাংলা ডেস্ক | |||
সোমবার, ২১ জুলাই ২০১৪
|
Bhorer Kagoj, 22nd July 2014:
http://www.bkagoj1.com/new/blog/2014/07/22/187528.php
মালয়েশিয়ার বিমান ধ্বংস এবং ইউক্রেন সংকট
ক'মাস আগে মালয়েশিয়ার একটি বিমান মধ্য আকাশ থেকে হারিয়ে যাবার পর ১৭ জুলাই ২৯৮ জন যাত্রী-ক্রুসহ দ্বিতীয় বিমান ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ইউক্রেন আবার বিশ্বপরিক্রমায় আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষত: আমেরিকা-রাশিয়ার 'ডগ-ফাইট' এখন তুঙ্গে। ইউক্রেন-মলদোভা প্রশ্নে পশ্চাদপসরণের পর এবার ওবামা বেশ তর্জন-গর্জন করছেন, ভাবটা এই যে, এবার 'বাগে' পেয়েছি। একেই বলে, 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে, উলু-খাগড়া ----'। মালয়েশিয়ার দু'টি বিমান নাই, বা বিমান ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম,প্রায় ৬শ মানুষ হত-নিখোজ, কিন্তু আমেরিকা ও রাশিয়া এ নিয়ে একে অপরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত। আগেরবার আমেরিকা সুবিধা করতে পারে নাই, এবার তাই আগ বাড়িয়ে বলে দিয়েছে, বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় রাশিয়ার হাত থাকতে পারে। কিভাবে? আমেরিকার থিওরী হলো, রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের এলাকা থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপনাস্ত্রে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ওই ক্ষেপনাস্ত্র বিদ্রোহীদের নাই বা থাকলেও উত্ক্ষেপণের ট্রেনিং নাই, সুতরাং রাশিয়ার হাত আছে। রোববার ২০শে জুলাই জন কেরী এবং সিনেট ইন্টিলিজেন্স কমিটির চেয়ারওম্যান ডায়ান ফেইনস্টেন বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, রাশিয়ার উচিত দাযিত্ব স্বীকার করে নেয়া যে ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীরা ভুলক্রমে মালয়েশিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত করেছে। রাশিয়া কি তা করবে? মনে হয়না। ডায়ান ফেইনস্টেন আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার সাথে আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ব চলছে। এরআগে শনিবার ১৯শে জুলাই যুক্ত্ররাষ্ট্র-রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীদ্বয় বলেছেন, 'দুর্ঘটনাস্থল আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্যে খুলে দিতে হবে, যাতে এ ঘটনার জন্যে করা দায়ী তা সনাক্ত করা যায়।' আসলে কি তা কখনো জানা যাবে, নাকি মধ্য আকাশে বিমান হারিয়ে যাবার মত ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষিপ্ত্কারী কখনই সনাক্ত হবেনা?
এপি বলেছ, মালয়েশিয়ার বিমান ধ্বংস ঘটনা ইউক্রেন ক্রাইসিস চিত্র পাল্টে দিতে পারে। এপি'র মতে, যদি প্রমান হয়, রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীরা এজন্যে দায়ী তবে পুটিন বাধ্য হতে পারেন বিদ্রোহীদের প্রতি সাহায্যের হাত সংকুচিত করতে অথবা ইউরোপ তাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরো জোরদার করতে পারে এবং ইউক্রেনকে আরো সমরাস্ত্র দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া আরো বিপাকে পড়বে ও বিদ্রোহীরা দুর্বল হবে এবং ইউক্রেন তাদের দমন করার প্রয়াস নেবে। কিন্তু যদি বিদ্রোহীরা এটা করেছেন তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হয়, বরং প্রমাণিত হয় যে, ইউক্রেন করেছে বা অন্যকিছু, তবে দৃশ্যপট উল্টে যাবে, পুটিন যথারীতি বিদ্রোহীদের সাহায্য অব্যাহত রাখবেন। ওবামাকে আবার হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ার বিমান ধ্বংস ঘটনা সরকারকে কিছুটা নি:শ্বাস ফেলার সুযোগ দেবে। কারণ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকট বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ওয়াশিংটনে সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির হিয়ারিং-এ বলেছেন, ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন গ্রহনযোগ্য নয় এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে সকল পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু করা দরকার। ইউক্রেনে নুতন সংকট কিছুকালের জন্যে হলেও যুক্ত্ররাষ্ট্রের দৃষ্টি ওদিকে নিবদ্ব থাকবে, যাতে লাভ মহাজোট সরকারের।
নিকট অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ইউক্রেন সংকটে ওবামার হুমকিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন থোরাই কেয়ার করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্বে অবরোধরও তেমন কার্যকর হচ্ছেনা, কারণ তাতে কারণ পশ্চিম ইউরোপও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জার্মানী তো উল্টে গিয়েছিলো, ওবামা ফোন-টোন করে কোনরকমে ফিরিয়ে এনেছেন। ইউক্রেন ভেঙ্গে স্বাধীন ক্রিমিয়া গঠন এবং রাশিয়ার সাথে সংযুক্তির প্রস্তুতি এবং এর পরপরই 'রিপাবলিক অব মলদোভা' রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত হবার ইচ্ছে প্রকাশ এবং তথাকার পার্লামেন্টে এমত একটি প্রস্তাব গ্রহণ ও রাশিয়াকে অনুরোধ ইত্যাদি আমেরিকা ও ইউরোপর জন্যে সুখকর ছিলোনা। ইউক্রেনের ইতিহাস সবার জানা, মলদোভার ইতিহাস গুগুল ঘাটলে জানা যাবে। তবে এটুকু বলা যায়, পূর্ব ইউরোপের এ দেশটির ইতিহাস জানা যায় ১৩৫০ থেকে। ১৮১২ সালে রুমানিয়া ও মলদোভার আনুষ্ঠানিক পত্তন ঘটে। ১৯১৮ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক হিসাবে মলদোভা স্বল্পকালের জন্যে স্বাধীন হলেও রুমানিয়ার সেনা হস্তক্ষেপে তা রুমানিয়ার অংশে পরিনত হয় এবং ১৯৪০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সংযুক্তি ঘটে। অশ্রুত এ দেশটি ১৯৯১ সালে পুনরায় স্বাধীনতা লাভ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর। মলদোভা নিয়ে এসময়ে মাথাব্যথার কারণ হলো, ইউক্রেনের সাথে এর পূর্ব, উত্তর-দক্ষিনে সীমান্ত আছে। আর পশ্চিমে আছে রুমানিয়া। কথায় বলে, পাগল ভালো হলেও ঝুল থাকে একযুগ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যে ১৪টি নুতন দেশ জন্ম নেয়, সেইসব দেশে এখনো কমবেশি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থ্যা বিদ্যমান। আমেরিকা জানে সমাজতন্ত্র ঠেকাতে ধর্ম ব্যবহার উত্তম। কিন্তু ওই অঞ্চলে ধর্মীয় উন্মাদনা ততটা শক্তিশালী নয়। তাই পুটিনের শক্ত মনোভাব ওখানকার মানুষ পছন্দ করছে। অবশ্য পুটিন কিছুকাল আগে ক্রিস্টিয়ানিটির পক্ষে কথা বলে পশ্চিমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি সমাজতন্ত্রের পথে হাটবেন না।
তাহলে ওবামা এখন কি করবেন? চীন ৬০-এর দশকে আমেরিকাকে 'কাগুজে বাঘ' বলে আখ্যায়িত করেছিলো; ওবামা তা প্রমান করছেন অর্ধ-শতাব্দী পর। আমেরিকানরা এটা সহজভাবে নেবে না। ওবামা তাই অনেকের না-পছন্দ। ইরান ও সিরিয়া নিয়ে হামকি-ধামকির পর ওবামা চুপসে গেছেন, কারণ রাশিয়া আছে ওই দুই দেশের পেছনে। বিন লাদেনকে হত্যার পর ওবামা প্রশাসন চাঙ্গা হয়ে উঠলেও ইরান-সিরিয়া-ক্রিমিয়া বা মলদোভা আগামী নির্বাচনগুলোতে ডেমক্রেটদের বিপাকে ফেলবে এবং হয়তো হোয়াইট হাউজ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও ভারতের সাথে ক্রিমিয়া এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে ওবামা প্রশাসন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যুক্ত্ররাস্ট আমাদের দেশের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন চায়নি; ভারত চেয়েছে। ভারত-রাশিয়া দীর্ঘ দিনের বন্ধু। দুই বন্ধুই আমেরিকাকে জানান দিয়েছে যে, আমেরিকা তুমি সারা দুনিয়ায় মাতব্বরী কর, আপত্তি নেই, তবে আমাদের ঘরের দুয়ারে এসে ঝামেলা করোনা। আমেরিকা কি ভারত বা রাশিয়াকে শত্রু বানাবে? না। আমেরিকা অত বোকা নয়। অন্তত: ভারতকে শত্রু শিবিরে ঠেলে দেবেনা। এজন্যে হয়তো দেবযানী মামলাও উঠিয়ে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন একদা বলেছিলেন, 'রাশিয়াকে ঘাটিও না, বরং ওদের সন্মান করতে শেখো। পুটিন হয়তো জোর করেই সেই সন্মান আদায় করে নিতে চাচ্ছেন। আমেরিকা তাই নিকট অতীতে কিছুটা সময় তেতো ঢেকুর গিলেছে; এবং সময়-সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে। এবার সেই সুযোগ এসেছে মালয়েশিয়ার বিমান ভুপাতিত করার মধ্য দিয়ে, আমেরিকা চাচ্ছে সেটা কাজে লাগাতে। ভুলে গেলে চলবে না, দীর্ঘ সময় পার হলেও যাত্রীবাহী প্যানএম বিমান ধ্বংসের প্রতিশোধের আগুনে আমেরিকা সবংশে গাদ্দাফি ও লিবিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সাদ্দামকে ছাড়েনি। আমেরিকা না চাইলে বঙ্গবন্ধুও মরতো না। আমেরিকা কিছু ভুলেনা। নিউইয়র্ক-এ কনসাল জেনারেলের বিরুদ্বে মামলা কিসের ইঙ্গিত ছিলো কে জানে!
রাশিয়া-আমেরিকার হুঙ্কার শুনে অনেকে নুতন করে 'ঠান্ডা যুদ্ব' শুরুর কথা বলছেন। কেউ আরো একধাপ এগিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্বের কথা বলছেন। কিছুই হবেনা। যারা মার্কিন বিরোধী, তারা হটাত করে রাশিয়ার সমর্থক হয়ে গেছেন। ছোট ছোট দেশগুলো ভাবছে, আমেরিকা-রাশিয়া ঝগড়ায় লেগে থাকলে ওদের সুবিধা। হয়তো তাই। রাঘব বোয়ালরাও সেটা জানে। তাই ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মাঝেমধ্যে সমস্যা হলেও বড় ধরনের সংঘাতে এরা জড়াবে না। আমেরিকা জানে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর কখনো হবেনা। রাশিয়াও জানে, আমেরিকার সমকক্ষ হওয়া যাবেনা। তাছাড়া এই দুই শক্তিকে মিলে চীনকে ঠেকাতে হবে। প্যান ইসলামও এই দুই শক্তির বড় মাথাব্যথা। সম্প্রতি চীনের একটি রেলওয়ে স্টেশনে একটি জঙ্গী মুসলীম গ্রুপের আক্রমনে অর্ধশত মানুষের মৃত্যু ঘটনায় বেজিং বিগড়ে আছে। তদুপরি বিমান নিখোজ ঘটনায় মালয়েশিয়া তথ্য গোপন করছে বা সময়মত জানাচ্ছেনা, চীন প্রকাশ্যে এই অভিযোগ করেছে। একটি থিওরী আছে যে, 'উইগোর জঙ্গী মুসলিম গ্রুপ' একাজ করে থাকতে পারে; যদি তা কখনো প্রমাণিত হয়; তাহলে সমস্যা বাড়বে। আমেরিকার কাছে এমুহুর্তে রাশিয়ার চাইতে জঙ্গী সমস্যা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। রাশিয়া-আমেরিকা-চীন-ভারত জঙ্গী সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং সময়ের আবর্তে এরা একসাথে জঙ্গী সমস্যা নির্মূলে এগিয়ে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবেনা। জঙ্গী কর্মকাণ্ড করে বেশিদূর যাওয়া যায় না। বাংলাদেশে খালেদা জিয়া তা এখন বুঝলেও অন্যরা বুঝবে কবে? এ সময়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ব চলছে। এই প্রথম বড়বড় মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছেনা। মিশরের আনীত যুদ্ববিরতি প্রস্তাব ইসরাইল মেনেছে, কিন্তু হামাস নাকচ করেছে। টাইমস পত্রিকা লিখেছে, হামাসের পক্ষে মুসলিম বিশ্বে তেমন সাড়া নেই; বিক্ষোভ-টিক্ষোভ যা আছে তা আমেরিকাতে বা ইউরোপে। এর শুভদিক হচ্ছে, যুদ্ভ নয়, টেবিলেই আরব-ইসরাইল সমস্যার সমাধান হতে হবে, এ বার্তা জানান দেয়া। তেমনি মালয়েশিয়ার বিমান ধ্বংসের পর কিছুটা অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা গেলেও বা বাক-যুদ্বের মহড়া হলেও সবাইকে আবার টেবিলেই ফিরে আসতে হবে এবং এখন সেই লক্ষণ সুস্পস্ট। বাংলাদেশে যেমন অনেক সমস্যার কোন সমাধান হয়না, বিশ্ব ইতিহাসেও সম্ভবত: মালয়েশিয়ার দু'টি বিমান দুর্ঘটনার কোন সমাধান কোনদিনও হবেনা। মধ্যখান থেকে কিছু সাধারণ মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারায়। মানবাত্মার এ বলিদান, বিশ্বশান্তির জন্যে উত্স্বর্গ হোক, এ সান্তনা ছাড়া আমাদের আর কিইবা করার আছে?
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক
কলাম লেখক
২১শে জুলাই, ২০১৪।