উত্তম চক্রবর্তী/ মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি বীর চট্টলার স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বাঁচাতে খালেদা জিয়া সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করতে চান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় খালেদা জিয়ার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলন করছেন, হুমকি দিচ্ছেন। অনেক চেষ্টা করেও তিনি (খালেদা জিয়া) বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বাঁচাতে পারেননি, যুদ্ধাপরাধীদেরও বাঁচাতে পারবেন না। বাংলার মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। বরং যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, বাংলার মাটিতে তাদের ঠাঁই নেই, ঠাঁই হবে না।
তীব্র জনস্রোতের সামনে বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার কাজই হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খুনী-সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের লালনপালন করা। কিন্তু আমরা আর কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করেন না, শুধু সাজুগুজু করে কীভাবে জনগণের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করা যায় সে কাজেই ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে, আর বিএনপি ক্ষমতায় আসে দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করতে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করতে। কিন্তু ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা হোক না কেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তির দেশ হিসেবে পরিণত করবই।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসী জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে চৌদ্দ দল আয়োজিত বিশাল এই সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চৌদ্দ দলের মহাসমাবেশের কথা থাকলেও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে শেষ পর্যন্ত তা মহাজোটের মহাসমাবেশে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রায় পৌনে এক ঘন্টার ভাষণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নসহ গত তিন বছরে মহাজোট সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন, বিরোধী দলের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এবং আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত তিন বছরে এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর কোন বড় রাজনৈতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ।
মাত্র দু'মাস আগে গত ৯ জানুয়ারি সারাদেশ থেকে লোক এনে পলোগ্রাউন্ড ময়দানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট একটি বড় ধরনের শোডাউন করেছিল। ফলে চৌদ্দ দলের এই মহাসমাবেশটি ছিল আয়োজকদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সকল ভেদাভেদ, গ্রুপিং-বিভক্তি ভুলে গিয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় পক্ষকালব্যাপী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামায় মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে সক্ষম হয়।
পাল্টা শোডাউনে আয়োজকদের হতবাক করে প্রায় দেড় লাখ লোকের ধারণ ক্ষমতার পলোগ্রাউন্ড মাঠ উপচিয়ে চতুর্দিকে প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তীব্র জনস্রোতে বিশাল এই মাঠটিই যেন এক বিন্দুতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বিএনপির চেয়েও তিনগুণ বেশি লোকের সমাগম ঘটেছে চৌদ্দ দলের মহাসমাবেশে। আর চট্টলার সাধারণ মানুষের অভিমত, নিকটঅতীতে এত বড় সমাবেশ আগে তারা কখনও দেখেননি।
বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামান্য ক্ষমতার লোভে বিএনপি নেত্রী ২০০১ সালে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমাকেও সে সময় গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য ৫০ বছরের গ্যাস রিজার্ভ রাখার পর যদি উদ্বৃত্ত থাকে, তবেই তা বিক্রি করা যেতে পারে। আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি। কিন্তু খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সম্পদ ভারতের কাছে বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু আমি ওই সময় বলেছিলাম ক্ষমতায় গেলেও গ্যাস বিক্রি করতে পারবেন না। মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও খালেদা জিয়া ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে পারেননি। কারণ জনগণের শক্তিই হচ্ছে বড় শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তিন বছর আর মহাজোট সরকারের তিন বছরের শাসনামলের সঙ্গে একটু তুলনামূলক বিচার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসে। আর বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছর যেন ছিল মানুষের জন্য অভিশাপ। পুরোটা সময়ই দেশের মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে থেকেছে। ঘরে ঘরে মানুষের হাহাকার আর কান্না ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।
তিনি বলেন, ওই পাঁচ বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে কেউই রেহাই পায়নি। একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর মতোই হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, সীমাহীন দুর্নীতি, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার আর মানুষ হত্যা করে গুম করাই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কাজ। যে দলের নেত্রী (খালেদা জিয়া) নিজ দলের নেতা জামালউদ্দিনকে হত্যা করে লাশ গুম করে দেয়, সেই নেত্রীর কাছ থেকে দেশবাসী কী আশা করতে পারে?
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ করে দেয়া হবেÑ খালেদা জিয়ার এমন ঘোষণার সমালোচনা করে দেশবাসীর উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আইনী লড়াই চালিয়ে আরেকটি বাংলাদেশের সমান ভূখ- আদায় করেছি। খালেদা জিয়া কি ক্ষমতায় এসে এই ভুখ-টি আবার মিয়ানমারের হাতে তুলে দেবেন? মাত্র তিন বছরেই আমরা প্রায় ৩ হাজার তিন শ' মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুত উৎপাদন করেছি, ৫২টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করেছি। খালেদা জিয়া কি তাও বন্ধ করে দিয়ে দেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবেন? তিন বছরে প্রায় ৬৮ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান ও প্রায় সাড়ে চার লাখ বেকারকে সরকারী চাকুরি দিয়েছি। তিনি (খালেদা) কি তাদের চাকরি কেড়ে নেবেন?
বিরোধীদলীয় নেত্রীর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, আর বিদেশে অর্থপাচার করা ছাড়া বিরোধী দলের নেতা দেশকে কী দিয়েছেন? মা হয়ে ছেলেকে তিনি (খালেদা) চুরি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর দুই পুত্রের অর্থ পাচার ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হংকং ও কানাডাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে কীভাবে তার পুত্ররা কীভাবে দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করেছে। এটা দেশের জন্য কতবড় লজ্জার ব্যাপার। আজ বিরোধী দলের নেতার কথা শুনলে মনে হয়- 'চোরের মায়ের বড় গলা'। নিজেও জরিমানা দিয়ে লুণ্ঠিত অর্থ সাদা করেছেন। চুরি করেছেন, এখন আবার ধমক দিচ্ছেন সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করে দেবেন।
মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চট্টগ্রামের যত উন্নয়ন করেছে, অতীতে কোন সরকার তা করতে পারেনি। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিককরণ, কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, আদালত ভবন নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ সবই আওয়ামী লীগ করছে। অচিরেই বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডবল রেললাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও আমরা কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, চট্টগ্রামকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করার কাজে হাত দিয়েছি।
তীব্র জনস্রোতে প্রায় অচল চট্টগ্রাম মহানগর
তিন স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুপুরে মহাসমাবেশের সময় দেয়া হলেও চৌদ্দ দলের এ মহাসমাবেশকে ঘিরে বিপুলভাবে আলোড়িত বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামে মিছিল আর সেøাগানের উত্তাল আবহ ছড়িয়ে পলোগ্রাউন্ডমুখী মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। ভোরে এ নগরীর মানুষের ঘুম ভেঙ্গেছে সেøাগানের নিনাদে। সকাল ১০টা থেকেই 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' সেøাগানে ঊর্মির মতো মিছিলের পর মিছিল নিয়ে বিশাল পলোগ্রাউন্ড ময়দান জনারণ্যে পরিণত করে চৌদ্দ দলের নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হওয়ার আগেই মাঠ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। জনজোয়ারে যেন ভেসে যায় সমগ্র এলাকা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে গত দু'দিন ধরেই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দৃশ্যত রাজনৈতিক উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়; সৃষ্টি হয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলোগ্রাউন্ড ময়দানে এ মহাসমাবেশকে ঘিরে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল আনন্দ-উল্লাস এবং উচ্ছ্বাস। পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন নেতার ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে কোথাও এক চিলতে ফাঁকা ছিল না। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মন্ত্রী আফসারুল আমীন ও নুরুল ইসলাম বিএসসির মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এ মহাসমাবেশকে ঘিরে তাঁরা সকল ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে মিলিত হন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, এ কারণেই জনবিস্ফোরণ ঘটে প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশে।
সকাল থেকেই চট্টগ্রামের চারদিক হতে মিছিল ও শোভাযাত্রা ছিল পলোগ্রাউন্ড অভিমুখী। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পুরো নগরী পলোগ্রাউন্ড অভিমুখী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর মোটামুখী কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশালাকার পলোগ্রাউন্ড অভিমুখী জনতার স্রোতের কারণে নগরীতে যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর পলোগ্রাউন্ড কেন্দ্রিক ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড নিয়ে ধাবমান মানুষের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মিশে যাওয়ার ফলে নগরী মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।
পলোগ্রাউন্ডকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিমে আগ্রাবাদ, পূর্বদিকে নিউমার্কেট, উত্তরে লালখান বাজার-ওয়াসা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘিরে শুধু মানুষ আর মানুষের পদচারণা দেখা যায়। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নগরীর উৎসুক লোকজনের উপস্থিতিও কম ছিল না। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পুরো বিভাগের লোকজনের উপস্থিতি পলোগ্রাউন্ডে দেখা যায়। একসঙ্গে বিভিন্ন নেতাকে ব্যক্তি প্রচারণা ও শোডাউনের জন্য নিজ নিজ পক্ষে লোকসমাগম ঘটাতে দেখা যায়। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি এবং পলোগ্রাউন্ড ময়দানের চারপাশে নেতৃবৃন্দের ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানারে ব্যক্তি প্রচারণার বিষয়টিও ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠে।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রামের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মঈনউদ্দিন খান বাদল এমপি, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার ইসলাম মাহমুদ এমপি, সাম্যবাদী দলের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ন্যাপের এ্যাডভোকেট এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর ইসলাম সেলিম।
মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, ইসহাক মিয়া, ফজলে হোসেন চৌধুরী এমপি, আবুল কাশেম মাস্টার এমপি, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আবদুল লতিফ এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, হাসিনা মান্নান এমপি, চ্যামন আরা বেগম এমপি, মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ, জায়েদুল আলম, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, শাহজাদা মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর হায়দার চৌধুরী রোটন এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল হোসেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের তিন সিনিয়র নেতা কাজী ইনামুল হক দানু, এমএ সালাম ও মোসলেম উদ্দিন।
মহাসমাবেশে অন্য নেতারা যা বলেনÑ
চৌদ্দ দলের মহাসমাবেশে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, চট্টগ্রামের তীব্র জনস্রোত দেখে যান, আপনার আন্দোলন করার সাধ মিটে যাবে। খালেদা জিয়াকে যোগ্য জবাব দিয়েছে বীর চট্টলাবাসী। পেছন থেকে বন্দুক হাতে আর কেউ আসতে না পারে সেজন্য তিনি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়ার কথা ও কাজের সঙ্গে কোন মিল নেই। তাঁর মুখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা মানায় না। তাঁর আমলে নির্বাচন মানেই ছিল ভোট ডাকাতি, ভোট ছিনতাই আর মিডিয়া ক্যু। একমাত্র শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছে যে, দলীয় গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
তোফায়েল আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরে বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন। আজ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাঙালী জাতিকে সমুদ্রসীমায় আরেকটি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, খালেদা জিয়া আজ ধরা খাইছে। পাকিস্তান থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন, আর তাঁর পুত্ররা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এখন নিজেকে বাঁচাবেন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে বাঁচাবেন নাকি দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রকে বাঁচাবেনÑ এ নিয়ে বড়ই পেরেশানিতে আছেন খালেদা জিয়া।
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়া এ পলোগ্রাউন্ড থেকেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন সরকারকে ল্যাংড়া লুলা করে দেবেন। বীর চট্টলাবাসী মহাসমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করে খালেদা জিয়াকেই লুলা বানিয়ে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
জাসদের হাসানুল হক ইনু পাকিস্তানের দালালদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে দেশের স্বার্থ বিক্রি করেন, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেন। আর শেখ হাসিনার সরকার দেশের স্বার্থ ছিনিয়ে আনেন। খালেদা জিয়াকে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ এবং দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রকে ত্যাজ্য করার আহ্বান জানিয়ে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করুন, মহাজোটের পাশে থাকুন।
জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন, গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলা এবং অর্থনীতির মেরুদ-কে ভেঙ্গে ফেলার কর্মকা- দেশবাসী দেখেছে। বিদেশীদের স্বার্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের ভূখ-কে অস্ত্র পাচারের জন্য ব্যবহার করেছিল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তা হতে দেয়নি।
আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, একাত্তরে বাঙালী নিধনে আনা পাকিস্তানের জাহাজ সোয়াত থেকে অর্থ খালাস করতে যাওয়ার কারণে জিয়াউর রহমানকে বাঙালীরা ধাওয়া দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের সমুদ্র জয় দিয়েছেন।
সাম্যবাদী দলের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সমুদ্রপারের চট্টগ্রামের মানুষ আজ সমুদ্রের মতোই গর্জে উঠেছে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় খালেদা জিয়াদের কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।