SUNDAY, APRIL 09, 2006
Nizami-Khaleda Buys Foreign "Damage Control"
The government will be spending seven crore taka (about $1m) on this from the people's tax revenues.
|
__._,_.___
|
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলরা সবাই বাংলা ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য ভূমিকা চিত্রিত করেছেন। এর মধ্যে মার্কিন পলিটিক্যাল অফিসার কিলগোর ওয়াশিংটনকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত মুজিবকে দোষী সাব্যস্ত করতে পাকিস্তান সরকার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকাকে বিবেচনায় নিতে পারে। পাকিস্তানি শাসকেরা জানেন মুজিব পিন্ডিকে অবজ্ঞা করেন। পাকিস্তানের অখণ্ডতায় তিনি নিষ্ঠাবান নন।
১৯৬৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু মার্কিন পলিটিক্যাল অফিসার এন্ড্রু আই কিলগোরের কাছে বলেছিলেন যে তাঁকে (মুজিবকে) হত্যার জন্য দুজন আততায়ীকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে ১৯৬৮ সালের ২৬ জুন কিলগোর কেন মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দণ্ড দেওয়া হতে পারে তার কারণ বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটনকে জানিয়েছিলেন।
কিলগোর লিখেছিলেন, মুজিব একজন আন্দোলনপ্রবণ জাতীয়তাবাদী। তাঁর রয়েছে আইনবহির্ভূত রাজনৈতিক কার্যক্রমের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৩৯-৪১ সালে তিনি যদিও একজন ছাত্র ছিলেন কিন্তু ওই সময়ে কলকাতার 'ব্ল্যাক হোলে' নিহতদের স্মরণে গঠিত স্মৃতিসৌধ অপসারণের জন্য যে আন্দোলন হয় মুজিব ছিলেন তার অন্যতম নেতা।
উল্লেখ্য, ১৭৫৬ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের 'ব্ল্যাক হোল' কারাগারে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যরা শতাধিক ব্রিটিশ সৈন্যকে বন্দী করেছিল। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এদের স্মরণে ওই স্মৃতিসৌধ হয়েছিল।
কিলগোর লিখেছেন, 'কলকাতায় মুজিব ছিলেন 'রশীদ আলী' উপদলের নেতা। এই উপদলটি সাবেক ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সদস্যদের নিয়ে গঠিত। যাঁরা দেশভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টি চেয়েছিলেন।' উল্লেখ্য, কর্নেল রশীদ আলীর গ্রুপটি ব্রিটিশদের তাড়াতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছিল।
কিলগোরের বর্ণনায়, 'বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে ঢাকার প্রথম আন্দোলন হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৪৮ সালের মার্চ। আর মুজিব ছিলেন ওই আন্দোলনের নেতা। ১৯৪৯-৫৪ সালে মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ যে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে মুজিব ছিলেন এর অন্যতম সংগঠক। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি মুজিবের গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আবেগতাড়িত অঙ্গীকার রয়েছে। সে কারণে তিনি অব্যাহতভাবে পাকিস্তান সরকারের নিপীড়ন সয়েছেন। সুতরাং মনমানসিকতা এবং আদর্শগতভাবে পূর্ব পাকিস্তান সরকার উৎখাতে তাঁর সামর্থ্য রয়েছে।'
কিলগোর মন্তব্য করেন, 'তাই এটা সন্দেহ করার কারণ রয়েছে যে মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন কিংবা সমর্থন দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগকেই তিনি স্বায়ত্তশাসন আদায়ের উপযোগী মনে করেছেন। প্রতীয়মান হয় যে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ মুজিবকে দণ্ড দেবে।'
১৯৫৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মার্কিন কনসাল গিনি ক্যাপ্রিও লিখেছেন, প্রাদেশিক সাবেক পাঁচ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁরা জামিনে ছাড়াও পেলেন। কিন্তু আটকে রাখা হলো মুজিবকে। ২০ অক্টোবর ১৯৫৮ থেকে মুজিব বন্দী। অনেকেই ভাবেন যে সরকার যেকোনো বাঙালি রাজনীতিকের চেয়ে মুজিবকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। বিনা বিচারে তাই তাঁকে জেলে রাখা হয়। মার্কিন কনস্যুলেট মনে করেন যে একজন বাঙালি জাতীয়তাবাদী হিসেবে মুজিবের শক্তিশালী আবেদন রয়েছে। এটা সোহরাওয়ার্দী ও আতাউর রহমান খানের সঙ্গে তুলনীয়। কিন্তু সাংগঠনিক সামর্থ্য এবং দলীয় কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে মুজিবই সেরা। তাই পাকিস্তান সরকারের চোখে সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি শেখ মুজিবুুর রহমান।
১৯৬৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মার্কিন কনসাল মিসেস ডরিস মেটকাফ লিখেছেন, সোহরাওয়ার্দীর স্বর্ণযুগে ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুসলিম শব্দটি ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে। ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণ করে। এই আওয়ামী লীগই উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে সরকারি ভাষা করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। মুজিবই ছিলেন সে আন্দোলনের প্রধান নেতা।
১৯৬৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মার্কিন কনসাল লিখেছিলেন, 'মুজিব একজন সত্যিকারের "মাটির সন্তান" হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। দেশভাগের পরে মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। এসব কারণে ঢাকার আইন স্কুল থেকে মুজিবকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।'
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন কনসাল স্কয়ার্স ওয়াশিংটনকে জানিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান কনস্যুলেটের একজন কর্মকর্তাকে বলেছেন, তিনি পিন্ডি যাচ্ছেন। তবে যাওয়ার আগে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে নিহত ছাত্রদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার এবং সাম্প্রতিক কালে নিহত ছাত্রদের সমাধিস্থল আজিমপুরে যাবেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছেন। ওই কূটনীতিক তখন মুজিবকে জিজ্ঞেস করেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কি তাহলে শেষ হয়ে যাচ্ছে? দৃপ্ত মুজিব পুনঃ পুনঃ বলেন, শেষ শেষ।
সংশোধনী: ভাসানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২। গতকাল ভুলক্রমে তা ২১ ফেব্রুয়ারির পরে গঠিত হয় বলে ছাপা হয়েছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখেছে, তার প্রমাণ মেলে ওই সময়ের কিছু গোপন দলিলে। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি আজ
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ২
পাকিস্তানের ঐক্য ঝুঁকিতে পড়ল
মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলো সংগ্রহ করেছে বায়ান্নর মার্কিন দলিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা এসব গোপন দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় কিস্তি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল: মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলো সংগ্রহ করেছে বায়ান্নর মার্কিন দলিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা এসব গোপন দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ অষ্টম কিস্তি