বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল—১৮
'বাংলা দেশ' নামেরও বিরোধিতা করেছিল জামায়াত
মিজানুর রহমান খান | আপডেট: ০৬:৫৮, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
জামায়াত-ই-ইসলামী ১৯৭১ সালে কেবল বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের বিরোধিতাই করেনি, ১৯৬৯ সালে বাঙালি রাজনীতিকেরা যখন 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন, তখন জামায়াত এর বিরোধিতা করেছিল।
১৯৬৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন মার্কিন কনস্যুলেট ওয়াশিংটনকে একটি এয়ারগ্রাম বার্তায় জমায়াতের এই 'বাংলা দেশ' নামকরণ বিরোধিতার তথ্য জানিয়েছিল। মার্কিন কনস্যুলেটের ভাষ্যমতে, শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান প্রমুখ বাঙালি রাজনীতিক সমস্বরে 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি তুলেছেন। আর জামায়াত বাঙালি রাজনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে উর্দুর পরিবর্তে বাংলা ভাষা প্রচলনে তাঁদের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলা ভাষার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু জামায়াত সংগঠনগতভাবে বাংলাকে নাকচ করে কেবল উর্দুর পক্ষেই যে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল, মার্কিন কনস্যুলেটের এই এয়ারগ্রামটি তার সাক্ষ্য বহন করে।
আইয়ুব খানকে সরিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সবে ক্ষমতায় এসেছেন। ২৮ নভেম্বরে দেওয়া তাঁর একটি ভাষণকে কেন্দ্র করে 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি উনসত্তরের ডিসেম্বরে নতুন মাত্রা পেয়েছিল। ৭ ডিসেম্বরে পাকিস্তান অবজারভার-এ আতাউর রহমান খানের 'বাংলা দেশের' পক্ষে একটি বিবৃতি ছাপা হয়। এর বিরোধিতা করে ১৯৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়ই জামায়াতের ওই 'বাংলা দেশ' ও বাংলা ভাষাবিরোধী বিবৃতিটি ছাপা হয়।
মার্কিন কনস্যুলেট জানিয়েছিল, সাবেক এমপিএ এবং বর্তমানে করাচি জামায়াত-ই-ইসলামীর যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আজম ফারুকী অভিযোগ করেছেন যে, 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি পাকিস্তানের অখণ্ডতা এবং সংহতির প্রতি হুমকি এবং এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের অদেশপ্রেমিক সুর নিহিত। জামায়াতের নেতা ফারুকী আরও যুক্তি দেন যে, 'অতীতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ "ভাষার প্রশ্ন" তুলেছিলেন। তাঁরা উর্দুর বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু "সর্বসম্মতিক্রমে" গৃহীত হয়েছিল। ওই নেতাদের ভূমিকার কারণে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভেদ আরও বিস্তৃত হয়েছে।'
লক্ষণীয় যে, জামায়াতের নেতা যে 'বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ' বলতে পূর্ব পাকিস্তানিদেরই বুঝিয়েছিলেন, সে কথা নির্দিষ্টভাবে মার্কিন কনস্যুলেট ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল।
মার্কিন কনসাল উল্লেখ করে যে, ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি ভাষণের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ 'বাংলা দেশ' করার বিষয়টি ঢাকার সংবাদপত্রে সাম্প্রতিককালে বিরাট গুরুত্ব পেয়েছে। যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ 'বাংলা দেশ' করতে চাইছেন, তাঁদের যুক্তির প্রধান ভিত্তি হলো, যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভেঙে গেছে এবং প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে সিন্ধ, বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের সাবেক প্রাদেশিক নাম পুনর্জীবিত হচ্ছে। তাই পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত প্রদেশের নাম আর 'পূর্ব পাকিস্তান' রাখা সংগত হবে না।
মার্কিন কনস্যুলেট ওই বার্তায় জানায়, ইয়াহিয়ার বক্তৃতার পরদিনই এস রহমতউল্লাহ পূর্ব পাকিস্তানকে 'পূর্ব বাংলা' নামকরণের আহ্বান জানান। তবে এর আগে অন্যদের মধ্যে নানা উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান 'বাংলা দেশ' নামকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান এক সেমিনারে বলেছেন, পাকিস্তানের পূর্বাংশ এখন থেকে 'বাংলা দেশ' হিসেবে পরিচিত হওয়া উচিত। মুজিব উল্লসিত জনতার উদ্দেশে বলেছেন, 'বাংলা' শব্দের সঙ্গে এই মাটির দুই মহান সন্তান শের-ই-বাংলা ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ন্যাপের আধ্যাত্মিক গুরু মওলানা ভাসানী ৭ ডিসেম্বর প্রকাশ্য জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের পুনঃ নামকরণ সমর্থন করে বলেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে 'বাংলা দেশ' নামকরণই হবে সঠিক এবং যথার্থ। তিনিও যুক্তি দেন যে, যেহেতু এক ইউনিট ভেঙে গেছে, তাই 'বাংলা দেশ' নামটি পুনরুজ্জীবিত হওয়া উচিত।
জামায়াত-ই-ইসলামী ১৯৭১ সালে কেবল বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের বিরোধিতাই করেনি, ১৯৬৯ সালে বাঙালি রাজনীতিকেরা যখন 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন, তখন জামায়াত এর বিরোধিতা করেছিল।
১৯৬৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন মার্কিন কনস্যুলেট ওয়াশিংটনকে একটি এয়ারগ্রাম বার্তায় জমায়াতের এই 'বাংলা দেশ' নামকরণ বিরোধিতার তথ্য জানিয়েছিল। মার্কিন কনস্যুলেটের ভাষ্যমতে, শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান প্রমুখ বাঙালি রাজনীতিক সমস্বরে 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি তুলেছেন। আর জামায়াত বাঙালি রাজনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে উর্দুর পরিবর্তে বাংলা ভাষা প্রচলনে তাঁদের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলা ভাষার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু জামায়াত সংগঠনগতভাবে বাংলাকে নাকচ করে কেবল উর্দুর পক্ষেই যে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল, মার্কিন কনস্যুলেটের এই এয়ারগ্রামটি তার সাক্ষ্য বহন করে।
আইয়ুব খানকে সরিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সবে ক্ষমতায় এসেছেন। ২৮ নভেম্বরে দেওয়া তাঁর একটি ভাষণকে কেন্দ্র করে 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি উনসত্তরের ডিসেম্বরে নতুন মাত্রা পেয়েছিল। ৭ ডিসেম্বরে পাকিস্তান অবজারভার-এ আতাউর রহমান খানের 'বাংলা দেশের' পক্ষে একটি বিবৃতি ছাপা হয়। এর বিরোধিতা করে ১৯৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়ই জামায়াতের ওই 'বাংলা দেশ' ও বাংলা ভাষাবিরোধী বিবৃতিটি ছাপা হয়।
মার্কিন কনস্যুলেট জানিয়েছিল, সাবেক এমপিএ এবং বর্তমানে করাচি জামায়াত-ই-ইসলামীর যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আজম ফারুকী অভিযোগ করেছেন যে, 'বাংলা দেশ' নামকরণের দাবি পাকিস্তানের অখণ্ডতা এবং সংহতির প্রতি হুমকি এবং এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের অদেশপ্রেমিক সুর নিহিত। জামায়াতের নেতা ফারুকী আরও যুক্তি দেন যে, 'অতীতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ "ভাষার প্রশ্ন" তুলেছিলেন। তাঁরা উর্দুর বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু "সর্বসম্মতিক্রমে" গৃহীত হয়েছিল। ওই নেতাদের ভূমিকার কারণে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভেদ আরও বিস্তৃত হয়েছে।'
লক্ষণীয় যে, জামায়াতের নেতা যে 'বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ' বলতে পূর্ব পাকিস্তানিদেরই বুঝিয়েছিলেন, সে কথা নির্দিষ্টভাবে মার্কিন কনস্যুলেট ওয়াশিংটনকে অবহিত করেছিল।
মার্কিন কনসাল উল্লেখ করে যে, ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি ভাষণের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ 'বাংলা দেশ' করার বিষয়টি ঢাকার সংবাদপত্রে সাম্প্রতিককালে বিরাট গুরুত্ব পেয়েছে। যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ 'বাংলা দেশ' করতে চাইছেন, তাঁদের যুক্তির প্রধান ভিত্তি হলো, যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভেঙে গেছে এবং প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে সিন্ধ, বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের সাবেক প্রাদেশিক নাম পুনর্জীবিত হচ্ছে। তাই পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত প্রদেশের নাম আর 'পূর্ব পাকিস্তান' রাখা সংগত হবে না।
মার্কিন কনস্যুলেট ওই বার্তায় জানায়, ইয়াহিয়ার বক্তৃতার পরদিনই এস রহমতউল্লাহ পূর্ব পাকিস্তানকে 'পূর্ব বাংলা' নামকরণের আহ্বান জানান। তবে এর আগে অন্যদের মধ্যে নানা উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান 'বাংলা দেশ' নামকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান এক সেমিনারে বলেছেন, পাকিস্তানের পূর্বাংশ এখন থেকে 'বাংলা দেশ' হিসেবে পরিচিত হওয়া উচিত। মুজিব উল্লসিত জনতার উদ্দেশে বলেছেন, 'বাংলা' শব্দের সঙ্গে এই মাটির দুই মহান সন্তান শের-ই-বাংলা ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ন্যাপের আধ্যাত্মিক গুরু মওলানা ভাসানী ৭ ডিসেম্বর প্রকাশ্য জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের পুনঃ নামকরণ সমর্থন করে বলেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে 'বাংলা দেশ' নামকরণই হবে সঠিক এবং যথার্থ। তিনিও যুক্তি দেন যে, যেহেতু এক ইউনিট ভেঙে গেছে, তাই 'বাংলা দেশ' নামটি পুনরুজ্জীবিত হওয়া উচিত।
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ১
উর্দুর লাল ঝান্ডা
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখেছে, তার প্রমাণ মেলে ওই সময়ের কিছু গোপন দলিলে। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম কিস্তি আজ
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ২
পাকিস্তানের ঐক্য ঝুঁকিতে পড়ল
মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলো সংগ্রহ করেছে বায়ান্নর মার্কিন দলিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা এসব গোপন দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় কিস্তি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ৪
নূরুল আমীনের মধ্যরাতের পদত্যাগ
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ৫
কমিউনিস্টরাই ছাত্রদের খেপিয়ে তুলেছে
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ৬
৩ গোষ্ঠীর পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র
রক্তমাখা শার্টের ভয়ে ভিসি অপসারিত হননি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল-৮
ভারত ও হিন্দুদের দোষারোপ
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল: মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলো সংগ্রহ করেছে বায়ান্নর মার্কিন দলিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা এসব গোপন দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ অষ্টম কিস্তি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ৯
জিন্নাহ বাংলাকে প্রাদেশিক ভাষা করতে চেয়েছিলেন
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল -১০
সোহরাওয়ার্দীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
মর্নিং নিউজের নেতৃত্বে উর্দু চাপানোর চেষ্টা
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ১২
ব্লাডের বর্ণনায় ১৯৬২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি
মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলো সংগ্রহ করেছে বায়ান্নর মার্কিন দলিল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা এসব গোপন দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বাদশ কিস্তি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল-১৩
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চোখে জিন্নাহর ভাষা ভাবনা
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল—১৪
আইয়ুবের স্বপ্নে ছিল 'পাকিস্তানি ভাষা'
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ১৫
ভাষার প্রশ্ন স্থগিতে ৮০ দৈনিকের সম্পাদক রাজি
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল - ১৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের চেষ্টা
বায়ান্নর গোপন মার্কিন দলিল—১৭
রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে নজরুলকে ব্যবহার
__._,_.___