ঈদের পর আন্দোলনের নামে সেনাবাহিনীকে সরকারের মুখোমুখি দাড় করানোর চক্রান্ত ফাঁস!
ইফ্তেখার মোহাম্মদ || সংবাদিকতার নাম করে বাংলাদেশবিরোধী, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালালে তাদের কী করা উচিৎ? ঠিক ধরেছেন, এদের এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিৎ যেন ভবিষ্যতে কেউ ঐ পথে পা না বাড়ায়।
ইফতার মাহফিলের নামে কুচক্রিদের বৈঠক। ( নিউ এজের নুরুল কবীর, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনূল হোসেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মান্না এবং প্রথমআলোর মিজানুর রহমান খান।)
২১ জুলাই, ২০১৪ রাজধানী ঢাকার সেগুন বাগিচার, সেগুন রেস্টুরেন্টে চলছে এক ইফতার পার্টি ও আলোচনা সভা। আপাত নিরীহ মনে হলেও, এতে অংশ নেয়া লোকেদের অতীত কর্মকান্ডের কথা স্মরণ হলে কিঞ্চিত চিন্তিত হতে হয় বৈ কি। আমাদের অনুমান সঠিক প্রমাণিত করে, সেখানের কতিপয় লোক পরিকল্পনা করে যে তারা জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের না নিতে অনুরোধ জানাবে! কী ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র! আসুন চিনে নেই এইসব দেশদ্রোহীদের। সেদিনের এই পরিকল্পনায় উপস্থিত নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনূল হোসেন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মান্না এবং প্রথমআলোর মিজানুর রহমান খান। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তি ঘটনা থেকে আপনারা জনাতে পারবেন যে এই কুচক্রীদের ডালাপালা কতদূর বিস্তৃত।"বাংলাদেশ সেন্ডিং ইটস ডেথ স্কোয়াডস ফর দ্যা ইউএন পিস কিপিং মিশনস", নামে একটি প্রেসরিলিজ করেছে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস নামের ইন্ডিয়া ভিত্তিক একটি তথা কথিত মানবাধিকার সংগঠন। যাদের ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশ এবং এর পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে অতিউৎসাহ বেশি লক্ষ্য করা যায়। মজার বিষয় হলো, এদের বেশিরভাগ তথ্যের উৎস হলো ডেইলি স্টার, প্রথমআলো এবং হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো বাংলাদেশি এনজিও "অধিকার"। গত জুনে একটি প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করে যেখানে হাস্যকরভাবে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ইউএন মিশনে আত্মঘাতি সেনাসদস্য পাঠাচ্ছে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। প্রেসরিলিজটির ভাষ্যও একই। তাদের এই প্রোপাগান্ডা চালানোর মূল উদ্দেশ্য হলো, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের (ডিপিকেও) প্রধান হার্ভে লাডসুসের বাংলাদেশ সফর। যেখানে সফরকালে ডিপিকেও বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা, পেশাদারি, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করছেন। যেখানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ২০১৪ সালের যে মানবউন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। যেখানে হার্ভে লাডসুস বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের সুনাম করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও অধিকসংখ্যক শান্তি কর্মী নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সেখানে আমাদের দেশের কতিপয় সাংবাদিক এবং কথিত বুদ্ধিজীবি দেশ ও সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছেন, এটা কল্পনা করা যায়? বাস্তবে তাই হয়েছে। তারা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের প্রধানের সাথে ১ ঘন্টার একান্ত বৈঠকের আয়োজন করে, সেখানেই তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী না নেয়ার অনুরোধ জানায়। ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলো বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। পৃথক বৈঠকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন আইনজীবী শাহদিন মালিক এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মান্না। পাঠক নিশ্চয়ই এখন পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন যে মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে, সেগুন রেস্টুরেন্টে সেই ইফতার পার্টির নামে কিছু এই কুচক্রি মহলের মূল অভিসন্ধী হলো, বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর শান্তিরক্ষী মিশন বন্ধ করা। যার ফলে, বাংলাদেশ বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের একটা সুযোগ হারাবে। সশস্ত্রবাহিনীতে অসন্তোষ দেখা দিবে। সেই সুযোগে তারা চক্রান্তের মাধ্যমে অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের সুযোগ খুঁজবে। আশার কথা হলো, সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের (ডিপিকেও) প্রধান হার্ভে লাডসুস তাদের এসব বক্তব্যকে কৌতুক বলে মন্তব্য করেছেন। এসময় তারা সংলাপ ও নতুন নির্বাচন নিয়ে তোড়জোর করতে চাইলে তিনি আরও বলেছেন, এসব বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক বিষয়, জাতিসংঘের এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোন ইচ্ছে নেই। তবে, তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে শান্তিরক্ষী বৃদ্ধির বিষয়টি পুনঃব্যক্ত করেছেন।
শান্তি রক্ষায় আরো কয়েক হাজার পুলিশ নেবে জাতিসংঘ
আফ্রিকা ও মালিতে নতুন শান্তিরক্ষী নিয়োগে আলোচনা চলছে
বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ লোকের মিলিত হবার কারণ।
এই ঘটনা শুনে পাঠক হয়তো বুঝতে চাইবেন যে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয় এমন লোকেরাও কেন হটাৎ করে এই ধরনের দেশ বিরোধী, সশস্ত্র বাহিনী বিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত হবেন? আশার কথা আপনাকে বেশিদূর যেতে হবে না। আপনি নিকট অতীতে বিএনপির ঈদের পরের আন্দোলনের কথা স্মরণ করুন।
জনবিচ্ছিন্ন, বিশৃংখল একটি দল যারা দেশে বিদেশে গত একটি মাস তাদের প্রায় ইফতার অনুষ্ঠানে মারামারি, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া নিয়ে শিরোনাম হয়েছে তারা কী করে আন্দোলন করতে পারে? এখানেই টুইস্ট, উপরের ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া প্রতিটি লোককে গত সপ্তাহ দু'য়েকের মাঝে খালেদা জিয়ার স্বানিধ্যে দেখা গিয়েছে। এটাই খালেদা জিয়ার তথাকথিত আন্দোলন যে তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী নেওয়া বন্ধ করতে চেয়েছে এবং সেই আনরেস্টের সুযোগে অবৈধ পথে ক্ষমতায় বসার স্বপ্ন দেখছে।
প্রশ্ন আসতে পারে যেই খালেদা জিয়া জিএসপি বাতিলের জন্য খোলা চিঠি দিতে পারে, তার পক্ষের লোকেরা শান্তি মিশনে লোক নিতে বাড়ন করবে বিচিত্র কী?
বিচিত্র হইলো খালেদা গংয়ের এই অপপ্রচারের মুখে ছাই দিয়ে জাতিসংঘ নতুন করে আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী তাদের মিশনে নিতে আগ্রহী। সেই সাথে আরও খবর হলো, আফ্রিকা ও মালিতে নতুন শান্তিরক্ষী নিয়োগে বাংলাদেশ সরকারের সাথে তাদের আলোচনা চলছে। বিশ্বের ৯টি দেশে জাতিসংঘ পরিচালিত ৯টি শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৭ হাজার ৮৩ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন এবং ১৮ বছর পরে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সম্মানী বাড়িয়েছে জাতিসংঘ। আগামী ৪ বছরেও এ সম্মানী আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হাডসাস।