পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতি : চমকের পর চমক!
গোলটেবিল, বক্তৃতা, সেমিনার, TV টক শোতে - বর্তমান সরকারকে ঘায়েল করার জন্য যে কয়টি অনুমান ভিত্তিক এবং অসত্য বিষয় - প্রায়ই উল্লেখ করা হয় - তার মধ্যে আছে পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতি!
এই সেইদিনও সজীব ওয়াজেদ জয়কেও আমাদের একজন নামকরা সাংবাদিক ও TV টক শোর সঞ্চালকও পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতি - এই অনুমান বা আন্দাজ ভিত্তিক অভিযোগে করে প্রশ্ন করেন!
মিডিয়া - সাংবাদিকদের কাজ কি?
· সত্যকে - মিথ্যা বানানো!
· সন্দেহ সৃষ্টি করা, বিভ্রান্তি বাড়ানো, গুজবের পালে বাতাস দেওয়া!
· নাহ সকল বিভ্রান্তি দূর করে প্রকৃত তথ্য -খবর দেশবাসীকে জানানো ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা!
সেদিন একজন বেশ সিনিয়র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বললেন, "ভাই, এই যে সৈয়দ আবুল হোসেনরা মিলে পদ্মা সেতুর ত্রিশ হাজার কোটি টাকা মেরে দিল তার কী কিছু হবে না? "
সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যলয়ের আরেকজন সাবেক উপাচার্য তাকে বলেন, "কথাটা সম্পূর্ণ অসত্য।"
একজন বিশ্ববিদ্যলয়ের সিনিয়র শিক্ষক এই ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য কথা বলতে পারেন!
এই ভাবেই পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির গুজব ও মিথ্যার ফানুস ছড়ানো হয়েছে, হচ্ছে!
যেখানে কোন অর্থই লেনদেন হয়নি, সেখানে ত্রিশ হাজার কোটি কেন, ত্রিশ টাকা মেরে দেয়াও সম্ভব নয়।
কোনো ধরনের উৎকোচের প্রতিশ্রুতি, উৎকোচ প্রস্তাব কারী ও উৎকোচ গ্রহীতার মাঝে উৎকোচ সংক্রান্ত কোন চিঠি, মেইল, টেক্সট - অভিযোগ করার এই দুই বছরেও - কোন কিছুই বিশ্বব্যাংক দেখাতে পারে নাই এবং উৎকোচের (এমনকি কোনো ধরনের টোকেন পরিমান) দেওয়ার কোন প্রমান কেউ দিতে পারে নাই!
তথাকথিত উৎকোচ প্রস্তাব কারী এবং তথাকথিত উৎকোচ গ্রহীতার - কেউ স্বীকারও করে নাই!
বিশ্বব্যাংক বলেছে দুর্নীতির একটা পরিকল্পনার তারা 'গন্ধ' পেয়েছিল; কারণ, কানাডিয়ান পরামর্শক কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুজন মধ্যম সারির কর্মকর্তার 'ডায়েরিতে' মন্ত্রী আবুল হোসেনসহ কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছিল।
আমি ৭ সমুদ্রের ওপার থেকে আপনার নাম ডায়েরিতে লিখে রাখলাম আর আপনি চোর হয়ে গেলেন।
তারপরেও দেখুন,
ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা উঠল কানাডার কোর্টে। মামলার শুনানি আর হয় না। এই পর্যন্ত তিনবার পিছিয়েছে।
কানাডার আদালতে শুনানীর তারিখ শুধু ৩ বার পিছায়ই নাই,
অভিযোগের ভাষা, মূল অভিযুক্ত (দোষী) এবং মূল অভিযোগের প্রমানের 'জিনিসে'ও পরিবর্তন হয়েছে!
পত্রিকার ছাপা ভাষ্য অনুযায়ী,
"এ সময় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পদ্মাসেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে বিতর্কিত এসএনসি-লাভালিন বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল।"
এমনকি বিশ্বব্যাংক নিজেরাই এখন তাদের সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টা ড মশিউর রহমানকে 'দোষী তালিকা' থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে অথচ এই বিশ্বব্যাংকই সেই উপদেষ্টা বেচারাকে কত অপমানই না তারা করেছে - জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল!
এখন বলা হচ্ছে আসলে ওটি 'ডায়েরি' ছিল না। একটি 'ডেস্ক ক্যালেন্ডার' ছিল।
কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার কথা ও তাদের (মন্ত্রী -উপদেষ্টার) নাম কেউ তার টেবলের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে লিখে রাখবে - এমন আহাম্মক কি এই দুনিয়াতে আছে?
এই যুক্তি বা প্রমানকি বিশ্বাসযোগ্য এবং কেউ কি বিশ্বাস করবে?
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী কানাডার বিতর্কিত এসএনসি-লাভালিন কোম্পানীও বিশ্বব্যাংকের সেই অভিযোগ ও আদালতে অস্বীকার করেছে!
এসএনসি-লাভালিন কোম্পানী বলেছে তারা কোনো ধরনের ঘুষ বা ঘুষের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছিলো:
বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর "নির্মাণ তদারকি পরামর্শক'' কাজ পেতে ঘুষের চিন্তা এবং ঘুষের পরিকল্পনা করার বা ষড়যন্ত্র করার -- বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে অভিযুক্ত কানাডার এসএনসি লাভালিন কোম্পানীর অন্তর্জাতিক প্রকল্পের সাবেক পরিচালক কানাডার নাগরিক বুয়েটের প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসমাইল দাবী করেছেন যে কোনো ধরনের উৎকোচ, উৎকোচের প্রতিশ্রুতি বা তথাকথিত প্রজেক্ট কনসালটেন্সী কষ্ট (পিসিসি) ছাড়াই পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছিলো!
এই মামলায় অভিযুক্ত প্রকৌশলী ইসমাইল আরো দাবি করেন, বেশ তার কোম্পানীর আরো কয়েকটি প্রকল্পেই এই পিসিসি (ঘুষ) ব্যবহৃত হয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পেও পিসিসি (ঘুষ) ব্যবহারের জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।
কিন্তু তিনি সেটি করতে অস্বীকৃতি জানান এবং পিসিসি (ঘুষ) ছাড়াই পদ্মা সেতুর "নির্মাণ তদারকি পরামর্শক'' কাজের প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেন।
আসলে সরকারও অনেকটা তাদের অজান্তেই (সচিবদের ষড়যন্ত্রে) বিশ্বব্যাংকের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক তো শুরুতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ছিলই না। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পর অনেকটা স্বেচ্ছায় তাতে যোগ দেয় এবং তার মূল (অর্থনৈতিক) অবদানও ৫০% এর কম!
পদ্মা সেতুর প্রাথমিক দাপ্তরিক কাজের শুরু থেকেই সবকিছুতেই অনৈতিক ভাবে, ইচ্ছাকৃত ভাবে , তাদের সীমা বহির্ভূত ভাবে এবং অপ্রয়জনীয় কারনে হস্তক্ষেপ করে ও জটিলতা সৃষ্টি করে, যেমন, বার বার সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন, একই জিনিস বার বার টেন্ডার আহবান, একটি বিশেষ কোম্পানী কে অনৈতিক ভাবে অন্তর্ভুক্তির জন্য বার বার মৌখিক- লিখিত চাপ, যে কোন জিনিস অনুমোদনে দেরী ইত্যাদি ইত্যাদি করে, পুরো কাজটাই দেরী করে - সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে।
দিন দিন পদ্মা সেতুর "নির্মাণ তদারকি পরামর্শক'' কাজ পেতে বা পাইয়ে দিতে সম্ভাব্য ঘুষ দেওয়ার ষড়যন্ত্র - বিশ্বব্যাংকের এমনি (একতরফা এবং যৌক্তিক প্রমানহীন) দাবি বা অভিযোগের প্রমানাদি, যৌক্তিকতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা -- দুর্বল ও ক্ষীনতর (বা ছোট) হয়ে আসছে!
আমি ৭ সমুদ্রের ওপার থেকে আপনার নাম ডায়েরিতে লিখে রাখলাম আর আপনি চোর হয়ে গেলেন।
এখন বলা হচ্ছে আসলে ওটি 'ডায়েরি' ছিল না। একটি 'ডেস্ক ক্যালেন্ডার' ছিল।
কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার কথা ও তাদের (মন্ত্রী -উপদেষ্টার) নাম কেউ তার টেবলের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে লিখে রাখবে - এমন আহাম্মক কি এই দুনিয়াতে আছে?
এই যুক্তি বা প্রমানকি বিশ্বাসযোগ্য এবং কেউ কি বিশ্বাস করবে?
কিন্তু বাংলাদেশে আছে, করে এবং করবে!
ওই সব কেতাদুরস্ত, দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতি সমর্থক , নীতি-আদর্শ হীন, জ্ঞানপাপী, মিথ্যুক, লোভী, নিঃলজ্জ, ভীরু, অপেশাদার এবং মেরুদন্ড হীন সুশীলরা – সাংবাদিকরা - সম্পাদকরা সময় ও সুযোগ পেলেই - টিভি টক শো হোক আর সেমিনার হোক বা গোলটেবিল আলোচনা হোক - এমনকি সাধারণ মানুষকেও তারা হরদম এই অনুমান নির্ভর মিথ্যা কথা - দিনের পর দিন বলেই চলছেন।
সেলুকাস, কী বিচিত্র আমাদের এই সব দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতি সমর্থক , নীতি-আদর্শ হীন, জ্ঞানপাপী, মিথ্যুক, লোভী, নিঃলজ্জ, ভীরু অপেশাদার এবং মেরুদন্ড হীন সুশীল !
সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশের সাংবাদিকতা!
সেলুকাস, কী বিচিত্র আমাদের নিঃলজ্জ, দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতি সমর্থক, নীতি-আদর্শ হীন, জ্ঞানপাপী, মিথ্যুক, লোভী, অপেশাদার এবং মেরুদন্ড হীন সাংবাদিক-সম্পাদক, মিডিয়া!
প্রকৌশলী সফিকুর রহমান অনু
অকলেন্ড, নিউজিলেন্ড
দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন
সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন
জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু
শুভেচ্ছান্তে
Engr. Shafiqur Rahman Anu
__._,_.___