চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের লংমার্চ
এক হাজার বাস, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ভাড়া!
হামিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম | তারিখ: ০৪-০৪-২০১৩
লংমার্চ সফল করার লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা গতকাল চট্টগ্রাম নগরে মোটর শোভাযাত্রা বের করেন
প্রথম আলো
চট্টগ্রাম থেকে এক হাজার বাস, ৭০০ মাইক্রোবাস ও কার নিয়ে ঢাকায় লংমার্চে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এর মধ্যে শুধু এক হাজার বাসের আসা-যাওয়ার ভাড়াই আসবে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই বিপুল টাকার জোগান লংমার্চে অংশগ্রহণকারীরাই দেবেন বলে দাবি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের।
সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার থেকে তাঁরা বাস ভাড়া নিতে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ৬ এপ্রিলের লংমার্চে যোগ দিতে কাল শুক্রবার তাঁদের চট্টগ্রাম থেকে রওনা হওয়ার কথা।
পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবে এক হাজার বাস ভাড়া পাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক হাজার বাস ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকলে ভাড়ার এই বিপুল অর্থের সংস্থানও হেফাজতে ইসলামকে করতে হয়েছে। আর তা না করে থাকলে তারা লংমার্চে বেশি লোকসমাগমের আওয়াজ তোলার জন্য অসত্য তথ্য দিচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের বলেছি, আমরা সরাসরি কাউকে গাড়ি দিতে পারি না। অতীতেও আমাদের এমন কোনো নজিরও নেই। তবে মালিকেরা ব্যক্তিগতভাবে চাইলে ভাড়া দিতে পারেন।'
তবে মনজুরুল আলম চৌধুরী বলেন, গাড়ি ভাড়া দেওয়া নিয়ে মালিকেরা আতঙ্কগ্রস্ত। তাঁরা আশ্বস্ত হতে চান, তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর হবে না।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অধীনে শহরের চলাচলকারী ও দূরপাল্লার মিলিয়ে বাসের সংখ্যা দুই হাজার ২০০। এর মধ্যে দূরপাল্লায় চলাচলকারী বাসের সংখ্যা পাঁচ শর মতো। এর প্রায় তিন শ-ই দুটি পরিবহন কোম্পানীর বলে মালিকদের সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসমালিক প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা আপাতত চুপ করে আছি। লংমার্চে আমরা গাড়ি দিতে চাই না। এ নিয়ে মানসিক চাপেও আছি। কারণ, আওয়ামী লীগ বলছে, না দিতে। অন্যরা চাপ দিচ্ছে গাড়ি দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের অবস্থাটা কেউই বুঝতে চান না।' তিনি বলেন, তবে হেফাজতে ইসলাম বাসের জন্য তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেনি।
হেফাজতে ইসলামের প্রচার সচিব মুনির আহমাদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, 'সব পরিবহনের মালিকই লংমার্চে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য এক হাজার বাস, ৭০০ মাইক্রোবাস ও কার। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা পরিবহনমালিকদের বলেছি, লংমার্চ শেষ পর্যন্ত ঢাকা যেতে না পারলেও পুরো ভাড়া পরিশোধ করব।'
পরিবহনমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সাধারণ বাসে প্রতি আসনের ভাড়া ৪৩০ টাকা। সে হিসাবে ৪২ আসনের এমন একটি বাসের একবারের ভাড়া ১৮ হাজার টাকা। আসা-যাওয়ার ভাড়া ৩৬ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এক হাজার বাস ভাড়া নিতে লাগবে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা।
শুধু বাস ভাড়ার জন্য এই বিশাল অঙ্কের টাকা কোথা থেকে আসবে, জানতে চাইলে গত রাত সাড়ে আটটা দিকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মোহামঞ্চদ জুনায়েদ বাবুনগরী প্রথম আলোকে বলেন, 'এটা ইমানি আন্দোলন। অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সওয়াবের আশায় খরচ করছে। ছাত্র থেকে শুরু করে যারা নেহাত গরিব, তাদের অন্যরা সহযোগিতা করছে। আমাদের যাত্রা হবে তাবলিগ জামায়াতের আদলে। এখানে রসিদ কেটে কোনো টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে না।'
হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা (আট হাজার ছাত্র) প্রত্যেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিচ্ছে। অন্যরাও চাঁদা দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, 'ছাত্রদের চাঁদা তোলার বিষয়ে আমি অবগত নই। আর অন্যরা টাকা দিলে পরিচিত দেখে দিচ্ছেন। সরাসরি কোনো ফান্ডে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কোনো দল থেকে বা ব্যক্তি থেকে সরাসরি টাকা নিচ্ছি না।'
হেফাজতে ইসলামের প্রধান কেন্দ্র হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে (হাটহাজারী মাদ্রাসা) গতকাল বুধবার দুপুরে গিয়ে জানা যায়, জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা সবাই কর্মসূচির প্রস্তুতির জন্য চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছেন। জুনাইদ বাবুনগরীও শহরে আসার মুহূর্তে মাদ্রাসার মূল ফটকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তখন অর্থের জোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, 'আমাদেরকে সবাই সাহায্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগও দিচ্ছে। সরকারও আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।'
সংগঠনের প্রচারসচিব মুনির আহমেদ বলেন, 'মাদ্রাসার ছাত্ররা সবাই এক হাজার টাকা করে দিচ্ছে। আরও অনেকে টাকাপয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও দিচ্ছেন। তাঁরাও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলছেন, এ ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজন আছে।' তবে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো নেতার নাম উল্লেখ করেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা লংমার্চে সহায়তা করছেন—হেফাজতে ইসলামের নেতার এই দাবি অস্বীকার করে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, 'এই লংমার্চে জামায়াতের তহবিল নেওয়া হচ্ছে। এটা ঢাকার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আওয়ামী লীগের কথা বলা হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হাটহাজারী মাদ্রাসার হুজুরকে জিমিঞ্চ করে ১০-১২ জন ব্যক্তি জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই কাজ করছে। এঁরা জামায়াতের লোক হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত।'
গতকাল দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্ররা লেখাপড়া করছে। শিক্ষকেরাও পাঠদান করছেন। লংমার্চের প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে ছাত্র-শিক্ষকেরা কোনো সভা করেনি। তবে লংমার্চে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাদ্রাসার ভেতরে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টি পোস্টার লাগানো হয়েছে।
কওমি মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী গরিব-অসচ্ছল পরিবারের সদস্য। তাই এদের একটা বড় অংশ বিনা পয়সার পড়ালেখা করে। এরা কোথা থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেবে—জানতে চাইলে হেফাজতের নেতারা বলেন, দিতে পারবে। সংগঠনের প্রচারসচিব বলেন, তারা নিজেদের খাবার খরচও নিজেরা দেবে। সবাইকে শুকনো খাবার (চিড়া, গুড়) সঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে জমায়েত: লংমার্চের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছেন হেফাজতের নেতারা। 'কৌশলগত কারণে' গতকাল পর্যন্ত সেটি প্রকাশ করা হয়নি বলে সংগঠনের নেতারা জানান। তবে প্রচারসচিব মুনির আহমেদ বলেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, উত্তর চট্টগ্রামের একাংশ ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের লোকজন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে এসে জড়ো হবেন। জুমার নামাজ পড়ে সেখান থেকে আমরা রওনা হব। পথে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে লোকজন আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। খাগড়াছড়ির লোকজন ফেনী হয়ে ঢাকায় যাবেন।'
প্রচারণা: গতকাল দুপুরের চট্টগ্রাম নগরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার প্রদক্ষিণ করে।
অনুমতি মেলেনি: হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় তিনটি জায়গায় লংমার্চ-পরবর্তী সমাবেশের জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে। জায়গাগুলো হচ্ছে মতিঝিল, পল্টন ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ অনুমতি মেলেনি বলে জানান সংগঠনের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, 'আরও তিন দিন সময় আছে। আশা করি, সরকার অনুমতি দেবে।'
হেফাজতের কর্মীদের কাছে বার্তা দিলেন ইমরান
চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের লংমার্চ
এক হাজার বাস, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ভাড়া!
'গণজাগরণ মঞ্চ কারও নির্দেশে হয়নি, রক্তচক্ষুকে ভয়ও করে না'
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০২-০৪-২০১৩
গণজাগরণ মঞ্চের হরতালবিরোধী মিছিল।
ছবি: সাহাদাত পারভেজ
¯'vbxq mgq: 1705 NÈv, 2 GwcÖj 2013
m¤úv`bv: Avbvg
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৩, ২৮ ফাল্গুন ১৪১৯
__._,_.___