বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৭ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৯-১০)
মুনতাসীর মামুন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
মহিউদ্দিন বলছেন, আর্মি জওয়ান ও মিলিশিয়াদের বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু বিদ্রোহ দমন করতে হবে। ভাষার পার্থক্য অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে। যতই অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত হোক না কেন বাঙালী মুসলমানের আত্মমর্যাদা জ্ঞান টনটনে। তাকে যখন তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সামনে প্রকাশ্যে অপমান করা হয় তখন সে কী তা ভুলবে? দেখুন, পাকিস্তানী হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার জন্য একজন রাজাকার কত ধরনের যুক্তি তুলে ধরে। মহিউদ্দিন যে সব পুঁথিকারের উদাহরণ দিয়েছেন তিনিও তাদের মতো। তার মতে, পুঁথিকারের ফ্যান্টাসি মানুষ বিশ্বাস করে। তা'হলে, তার ফ্যান্টাসি ও মানুষ বিশ্বাস করবে। এই আশায়ই এত সব যুক্তি, গাল গল্প যা এক ধরনের ফ্যান্টাসি। রাজাকারী বিশ্বাসের মূল কথা হলো যা যাকে বেঁচে থাকতে উৎসাহিত করে ও কর্ম প্রেরণা যোগায় তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, এগুলো সত্য-ঘটনা নয়, পাকিস্তান এখনও আছে। সে বাংলাদেশে নয়, পাকিস্তানে বসবাস করছে এবং পাকিস্তানের জন্যই সে কাজ করে যাচ্ছে।
॥ ১০ ॥
২৭ এপ্রিল নোয়াখালী জামায়াতের এক সমর্থক লক্ষ্মীপুরে মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলেন। সেনা কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানের সঙ্গে একটি বৈঠক করতে চাচ্ছে। এবং মহিউদ্দিনকে সে সভায় যোগ দিতে হবে। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও মা'র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মহিউদ্দিন রওয়ানা হলেন নোয়াখালীর দিকে।
সভাটি ছিল শান্তি কমিটি গঠনের সভা। নোয়াখালী শান্তি কমিটি গঠিত হলো। মহিউদ্দিনকে শান্তি কমিটির সম্পাদক নির্বাচন করা হলো। সভাপতি হলেন কাউন্সিল মুসলিম লীগের এ্যাডভোকেট সৈয়দুর রহমান, সহ-সভাপতি পিডিপির এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লাহ, এ্যাডভোকেট শামসুল আলমসহ কয়েকজন সদস্য। মহিউদ্দিন লিখেছেন, "আমাদের মূল কাজ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা এবং মানুষের মনে কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনা। যেসব কর্মচারী ভয়ে কাজ ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে এনে কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করা।" [পৃ:৮৯]
সেনাবাহিনী তাদের কৌশল অনুযায়ী চলেছে। কখনও কখনও জানিয়েছেন মহিউদ্দিন, তারা "আমাদের পরামর্শ শুনেছে, কখনও নিজেদের মতো করেছে; অনেক সময় নিজ স্বার্থ উদ্ধারে অনেকে আর্মির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তবে, আমরা সেসব ক্ষেত্রে ছিলাম সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। [পৃ.৮৯]
'ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকদের' জন্য এরপর মহিউদ্দিন তার জেলায় এ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন।
মহিউদ্দিনের গ্রামে হাজি শাহাবুদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বাস করতেন। তার মেয়ের জামাই, একজন উকিল বিসমিল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাহাবুদ্দিনের পুত্রকেও গ্রেফতারের চেষ্টা হয়। তিনি পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। তার পরিবর্তে হাজি সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তার আরেক পুত্র মহিউদ্দিনের কাছে মিনতি করলেন পিতাকে মুক্ত করার। মহিউদ্দিনের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি। এর কারণ কী? তার মতে, লক্ষ্মীপুর শান্তি কমিটির একজন সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু, মহিউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। কারণ, তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। আর্মির সঙ্গে মাঝে মাঝে শুধু তার সংক্ষিপ্ত মিটিং হতো। সুতরাং তার বদলে যার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ তার কথাই তো আর্মি শুনবে। মহিউদ্দিন বলতে চেয়েছেন, সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিটির কারণে হাজি সাহাবউদ্দিনকে তিনি মুক্ত করতে পারেননি। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে একটি থানার এবং যিনি নাকি জামায়াত নেতা তার সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠতা ছিল না।
তিনি লিখেছেন, মাইজদি কোর্টে ঐ সময় আবদুল মালেক উকিল, কচি মিয়া ও আরও কয়েকজনের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। কেন বা কারা এই কাজ করেছিল তা তিনি জানেন না। কারণ, বাড়ি পোড়ানোর পরামর্শ তিনি দেননি।
মাইজদি কোর্টে জামায়াত অফিসের জন্য যে বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল তা ছিল এক হিন্দু ভদ্রলোকের। তার বিয়ের সময় মহিউদ্দিনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ আগরতলা চলে গেছেন। কিন্তু তখনও তিনি বাড়ি ছাড়েননি। তার ভাই লিচুও তার সঙ্গে থাকতেন। মুসলিম লীগের এক অজনপ্রিয় কর্মীর প্ররোচনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। নৃপেন ও লিচু নামের এই দুই ভাইকে হত্যা করা হয়। নৃপেনের হত্যার সময় তার কাছে চাবির একটি ছড়া ছিল। তাকে হত্যার সময় আর্মি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনকে ডেকে পাঠায়। মানুষের মনে ধারণা জন্মাল সেই এক ছড়া চাবির জন্য নৃপেনকে হত্যা করিয়েছেন মহিউদ্দিন। কয়েকদিন পর সেই মুসলিম লীগার মহিউদ্দিনের কাছে চাবির ছড়াটি চাইলেন। মহিউদ্দিন চাবির ছড়া দিয়ে দিলেন। কারণ তিনি কী করবেন চাবি দিয়ে। পরে তিনি জানলেন নৃপেনের বাড়ি ও দোকানের দখল নিয়েছে সেই মুসলিম লীগার।
প্রশ্ন থেকে যায়, নৃপেনকে হত্যার সময় মহিউদ্দিনকে কেন ডেকে পাঠানো হলো। তিনি কি তখন নৃপেন একজন 'ভালো হিন্দু' বলে তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন? তাকে চাবির ছড়াও বা কেন দেয়া হয়েছিল? তিনি সেই চাবি মুসলিম লীগারকে কেন দিয়েছিলেন? এর উত্তর কিন্তু নেই তার লেখায়।
তার দূর সম্পর্কের এক শালাকে রাজাকাররা গ্রেফতার করেছিল। সেই শালার শালা এলেন মহিউদ্দিনের কাছে। তিনি তাকে নিয়ে গেলেন রাজাকার ক্যাম্পে এবং তাকে মুক্ত করলেন। আত্মীয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু মহিউদ্দিনকে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
মহিউদ্দিন লিখেছেন, "আগেই উল্লেখ করেছি, নৈতিকভাবে আমরা এক দেউলিয়া জাতি। প্রায় ক্ষেত্রে আমরা আইন-বেআইন, আল্লার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কথা ভাবি না। পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের কারণে এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং সুযোগ পাওয়া গেলে গ্রহণ করতে আপত্তি কী। দোষ তো পড়বে পাকিস্তান বাহিনী, রাজাকার বা আলবদরদের ওপর।" [পৃ. ৯২]
মহিউদ্দিন যেসব ঘটনার উল্লেখ করেছেন তার একটিও পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেনি। এবং ঐ সময় এ ধরনের ঘটনাই ঘটেছে বেশি? তা হলে মহিউদ্দিনের ব্যাখ্যা তো প্রযোজ্য বা যুক্তিযুক্ত নয়। মহিউদ্দিনের ভাষা ধার করে বলতে হয়, একজন রাজাকার কখনও যুক্তির ধার ধারে না। তার যে যুক্তি সেটিই প্রমাণের চেষ্টা করে তা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন? (চলবে)
মহিউদ্দিন বলছেন, আর্মি জওয়ান ও মিলিশিয়াদের বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু বিদ্রোহ দমন করতে হবে। ভাষার পার্থক্য অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে। যতই অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত হোক না কেন বাঙালী মুসলমানের আত্মমর্যাদা জ্ঞান টনটনে। তাকে যখন তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সামনে প্রকাশ্যে অপমান করা হয় তখন সে কী তা ভুলবে? দেখুন, পাকিস্তানী হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার জন্য একজন রাজাকার কত ধরনের যুক্তি তুলে ধরে। মহিউদ্দিন যে সব পুঁথিকারের উদাহরণ দিয়েছেন তিনিও তাদের মতো। তার মতে, পুঁথিকারের ফ্যান্টাসি মানুষ বিশ্বাস করে। তা'হলে, তার ফ্যান্টাসি ও মানুষ বিশ্বাস করবে। এই আশায়ই এত সব যুক্তি, গাল গল্প যা এক ধরনের ফ্যান্টাসি। রাজাকারী বিশ্বাসের মূল কথা হলো যা যাকে বেঁচে থাকতে উৎসাহিত করে ও কর্ম প্রেরণা যোগায় তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, এগুলো সত্য-ঘটনা নয়, পাকিস্তান এখনও আছে। সে বাংলাদেশে নয়, পাকিস্তানে বসবাস করছে এবং পাকিস্তানের জন্যই সে কাজ করে যাচ্ছে।
॥ ১০ ॥
২৭ এপ্রিল নোয়াখালী জামায়াতের এক সমর্থক লক্ষ্মীপুরে মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করলেন। সেনা কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানের সঙ্গে একটি বৈঠক করতে চাচ্ছে। এবং মহিউদ্দিনকে সে সভায় যোগ দিতে হবে। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও মা'র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মহিউদ্দিন রওয়ানা হলেন নোয়াখালীর দিকে।
সভাটি ছিল শান্তি কমিটি গঠনের সভা। নোয়াখালী শান্তি কমিটি গঠিত হলো। মহিউদ্দিনকে শান্তি কমিটির সম্পাদক নির্বাচন করা হলো। সভাপতি হলেন কাউন্সিল মুসলিম লীগের এ্যাডভোকেট সৈয়দুর রহমান, সহ-সভাপতি পিডিপির এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লাহ, এ্যাডভোকেট শামসুল আলমসহ কয়েকজন সদস্য। মহিউদ্দিন লিখেছেন, "আমাদের মূল কাজ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা এবং মানুষের মনে কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনা। যেসব কর্মচারী ভয়ে কাজ ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে এনে কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করা।" [পৃ:৮৯]
সেনাবাহিনী তাদের কৌশল অনুযায়ী চলেছে। কখনও কখনও জানিয়েছেন মহিউদ্দিন, তারা "আমাদের পরামর্শ শুনেছে, কখনও নিজেদের মতো করেছে; অনেক সময় নিজ স্বার্থ উদ্ধারে অনেকে আর্মির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তবে, আমরা সেসব ক্ষেত্রে ছিলাম সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। [পৃ.৮৯]
'ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকদের' জন্য এরপর মহিউদ্দিন তার জেলায় এ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ঘটনার উদাহরণ দিয়েছেন।
মহিউদ্দিনের গ্রামে হাজি শাহাবুদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ বাস করতেন। তার মেয়ের জামাই, একজন উকিল বিসমিল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাহাবুদ্দিনের পুত্রকেও গ্রেফতারের চেষ্টা হয়। তিনি পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। তার পরিবর্তে হাজি সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তার আরেক পুত্র মহিউদ্দিনের কাছে মিনতি করলেন পিতাকে মুক্ত করার। মহিউদ্দিনের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি। এর কারণ কী? তার মতে, লক্ষ্মীপুর শান্তি কমিটির একজন সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু, মহিউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। কারণ, তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। আর্মির সঙ্গে মাঝে মাঝে শুধু তার সংক্ষিপ্ত মিটিং হতো। সুতরাং তার বদলে যার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ তার কথাই তো আর্মি শুনবে। মহিউদ্দিন বলতে চেয়েছেন, সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিটির কারণে হাজি সাহাবউদ্দিনকে তিনি মুক্ত করতে পারেননি। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে একটি থানার এবং যিনি নাকি জামায়াত নেতা তার সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠতা ছিল না।
তিনি লিখেছেন, মাইজদি কোর্টে ঐ সময় আবদুল মালেক উকিল, কচি মিয়া ও আরও কয়েকজনের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। কেন বা কারা এই কাজ করেছিল তা তিনি জানেন না। কারণ, বাড়ি পোড়ানোর পরামর্শ তিনি দেননি।
মাইজদি কোর্টে জামায়াত অফিসের জন্য যে বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল তা ছিল এক হিন্দু ভদ্রলোকের। তার বিয়ের সময় মহিউদ্দিনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ আগরতলা চলে গেছেন। কিন্তু তখনও তিনি বাড়ি ছাড়েননি। তার ভাই লিচুও তার সঙ্গে থাকতেন। মুসলিম লীগের এক অজনপ্রিয় কর্মীর প্ররোচনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। নৃপেন ও লিচু নামের এই দুই ভাইকে হত্যা করা হয়। নৃপেনের হত্যার সময় তার কাছে চাবির একটি ছড়া ছিল। তাকে হত্যার সময় আর্মি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনকে ডেকে পাঠায়। মানুষের মনে ধারণা জন্মাল সেই এক ছড়া চাবির জন্য নৃপেনকে হত্যা করিয়েছেন মহিউদ্দিন। কয়েকদিন পর সেই মুসলিম লীগার মহিউদ্দিনের কাছে চাবির ছড়াটি চাইলেন। মহিউদ্দিন চাবির ছড়া দিয়ে দিলেন। কারণ তিনি কী করবেন চাবি দিয়ে। পরে তিনি জানলেন নৃপেনের বাড়ি ও দোকানের দখল নিয়েছে সেই মুসলিম লীগার।
প্রশ্ন থেকে যায়, নৃপেনকে হত্যার সময় মহিউদ্দিনকে কেন ডেকে পাঠানো হলো। তিনি কি তখন নৃপেন একজন 'ভালো হিন্দু' বলে তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন? তাকে চাবির ছড়াও বা কেন দেয়া হয়েছিল? তিনি সেই চাবি মুসলিম লীগারকে কেন দিয়েছিলেন? এর উত্তর কিন্তু নেই তার লেখায়।
তার দূর সম্পর্কের এক শালাকে রাজাকাররা গ্রেফতার করেছিল। সেই শালার শালা এলেন মহিউদ্দিনের কাছে। তিনি তাকে নিয়ে গেলেন রাজাকার ক্যাম্পে এবং তাকে মুক্ত করলেন। আত্মীয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু মহিউদ্দিনকে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
মহিউদ্দিন লিখেছেন, "আগেই উল্লেখ করেছি, নৈতিকভাবে আমরা এক দেউলিয়া জাতি। প্রায় ক্ষেত্রে আমরা আইন-বেআইন, আল্লার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কথা ভাবি না। পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের কারণে এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং সুযোগ পাওয়া গেলে গ্রহণ করতে আপত্তি কী। দোষ তো পড়বে পাকিস্তান বাহিনী, রাজাকার বা আলবদরদের ওপর।" [পৃ. ৯২]
মহিউদ্দিন যেসব ঘটনার উল্লেখ করেছেন তার একটিও পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেনি। এবং ঐ সময় এ ধরনের ঘটনাই ঘটেছে বেশি? তা হলে মহিউদ্দিনের ব্যাখ্যা তো প্রযোজ্য বা যুক্তিযুক্ত নয়। মহিউদ্দিনের ভাষা ধার করে বলতে হয়, একজন রাজাকার কখনও যুক্তির ধার ধারে না। তার যে যুক্তি সেটিই প্রমাণের চেষ্টা করে তা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন? (চলবে)
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৭ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (১-২)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩০ মাঘ ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৩ - ৪ )
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৫ - ৭)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ২ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৭ - ৮)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩ ফাল্গুন ১৪২০
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৬ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী ( ৮-৯)
মুনতাসীর মামুন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
প্রকাশ :মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৬ ফাল্গুন ১৪২০
__._,_.___