রাষ্ট্রধর্ম মামলা
বাতিলের বিরুদ্ধে আপীল করবো: শাহরিয়ার কবির
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণে সোচ্চার জাতির বিবেক শাহরিয়ার কবির বলেছেন, রাষ্ট্রধর্ম মামলাটি বাতিল হয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের জন্যে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে এবং তারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপীল করবেন। তিনি বলেন, ২৮ বছর আগে আমরাই মামলাটি করেছিলাম, কিন্তু একটি খোড়া যুক্তি দিয়ে সেটি বাতিল করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবির আজ শনিবার বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘুদের সাথে এক কনফারেন্স কলে একথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় (১) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন হওয়া দরকার (২) ন্যাশনাল মাইনরিটি কমিশন দেয়া উচিত এবং (৩) পৃথক সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, গতমাসে সংখ্যালঘুদের জন্যে আমরা এই ৩টি সুনির্দিস্ট দাবী উত্থাপন করেছি এবং এনিয়ে আইনমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছি। আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রচলিত আইনে সকল অপরাধীর বিচার করা যাচ্ছেনা, তাই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চাই। তিনি বলেন, ১৪ দলের কমিশন দিয়ে কাজ হবেনা, তাই জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্যে পৃথক মন্ত্রনালয় থাকলে ১০% সংখ্যালঘুর জন্যে মন্ত্রনালয় থাকবে না কেন?
৩টি মহাদেশ ও ৯টি দেশের বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা আজ শনিবার দুপুরে (নিউইয়র্ক সময়) শাহরিয়ার কবিরের সাথে এক টেলি-কনফারেন্স কলে যোগদান করেন। এ সময়
কনফারেন্স যেসব দেশের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন ঐসব দেশ ও নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন: শাহরিয়ার কবির, বাংলাদেশ। তরুণ চৌধু
রী, সভাপতি, ইউরোপিয় ঐক্য পরিষদ, সুইডেন। চিত্রা পাল, সভাপতি, সুইডেন হিন্দু ফোরাম, সুইডেন। অরুন বড়ুয়া, সভাপতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি ফোরাম, জেনেভা।
স্বদেশ বড়ুয়া, সভাপতি, ফ্রান্স ঐক্য পরিষদ, ফ্রান্স। উদয়ন বড়ুয়া, সভাপতি, ইউরোপিয় ঐক্য পরিষদ, ফ্রান্স। ডা: চিত্ত দাস, লন্ডন ঐক্য পরিষদ, লন্ডন। তরুণ চক্রবর্তী, লন্ডন। তাপস নন্দী, সিঙ্গাপুর। ড: মোহিত রায়, কোলকাতা, ভারত। দিলীপ কর্মকার, কানাডা ঐক্য পরিষদ, মন্ট্রিল। অরুণ দত্ত, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস এলায়েন্স, টরন্টো, কানাডা। স্বীকৃতি বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র। সুশীল সাহা, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ,নিউইযর্ক। ও শিতাংশু গুহ, বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভ্মেন্ট, নিউইয়র্ক। ক্যালগিরি থেকে রুমা মোদক সময়ের ব্যবধানে পরে যোগ দেন।
টেলি-কনফারেন্সের শুরুতে শাহরিয়ার কবির প্রথমে তার বক্তব্য রাখেন এবং পরে তাকে সবাই প্রশ্ন করেন। যেসব সংগঠন এতে অংশ নেয়
সেগুলো হচ্ছে: ঐক্য পরিষদের বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শাখা। বাংলাদেশ মাইনরিটি কাউন্সিল। বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস ম্যুভ্মেন্ট। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস এলায়েন্স, টরন্টো। জেসব
দেশ থেকে নেতারা অংশ নিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ। ভারত। আমেরিকা। ব্রিটেন। কানাডা। ফ্রান্স। সুইজারল্যান্ড। সিঙ্গাপুর। সুইডেন। এটি মডারেট করেন সুইডেন থেকে তরুণ চৌধুরী। শাহরিয়ার কবির সুইডেন থেকে কথা বলেন। রোববার তিনি ফ্রান্স যাচ্ছে এবং সেখান থেকে জেনেভা যাবেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, রাষ্ট্রধর্ম কোন সভ্য দেশে থাকতে পারেনা। মানবাধিকার হচ্ছে সংখ্যালঘুর অধিকার; নারীর অধিকার। হাইকোর্ট যে এখতিয়ারের কথা বলে মামলাটি বাতিল করেছে সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নোত্তরে শাহরিয়ার কবির বলেন, যে ১৫জন বিশিস্ট ব্যক্তি ওই মামলাটি করেছিলেন, তাদের যদি এখতিয়ার না থাকে, তবে কাদের এখতিয়ার থাকবে? তিনি রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্যে কাজ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। স্বাধীন বাংলাদেশের পরিপন্থী। রাষ্ট্রধর্মের জন্যে পাকিস্তান আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এরআগে সুপ্রিমকোর্টের অসাধারণ রায়ে ৫ম/৮ম সংশোধনী বাতিল হয়ে যেতে পারতো, যদিনা সরকার ১৫শ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম পুনর্বহাল করতেন-এমত এক মন্তব্য করে একজন প্রশ্নকর্তা জানতে চান ১৫শ সংশোধনী 'জগাখিচুড়ি' কিনা? উত্তরে শাহরিয়ার কবির বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, রাষ্ট্রধর্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। স্বাধীন বাংলাদেশের পরিপন্থী। রাষ্ট্রধর্ম বাতিলে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই সবকিছু করতে হবে। তিনি বলেন, এমন কিছু করবেন না যা বিএনপি-জামাত-কে সাহায্য করে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে শুধু আওয়ামী লীগ বা মহাজোট নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেই কিছু থাকবেনা। তিনি বলেন, একটি মহল বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণ করতে চায়, তারা বাংলাদেশকে একটি 'মনোলিথিক ইসলামিক দেশ' বানাতে চায়।
শাহরিয়ার কবির জানান, মে মাসে তারা আড়াই হাজার পৃষ্টার আর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করছেন।
তনু হত্যা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, আমরা একে সমর্থন করি। কিন্তু এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন কই? এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনে কঠোর আইন আছে, কিন্তু এর প্রয়োগ নেই, এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হবার আহবান জানান। আওয়ামী লীগ আমলে সংখ্যালঘু'র ওপর প্রতিদিন অত্যাচার হচ্ছে, সরকার কিছুই করছেন না, এমত প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, শেখ হাসিনার আন্তরিকতা সম্পর্কে আমার কোন সংশয় নেই, কিন্তু সরকার ও দলে অনেকেই জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল আছেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সবকিছু করতে পারছেন না! ব্যক্তিগত স্বার্থে অনেকে অনেক কিছু করছেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারে ৩জন হিন্দু পুর্ণমন্ত্রী ছিলেন, এখন ১জনও নেই, আমরা এরও প্রতিবাদ করছি। শাহাবুদ্দিন কমিটির সুপারিশ কার্যকর না করাটা দু:খজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত নিষিদ্ধকরণের দাবিতে যেমনি সোচ্চার, একইভাবে সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়েও বদ্ধপরিকর।
জনাব কবির বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ
আমলেও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমন হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ৫৭ ধারায় মুক্তমনাদের আটক এবং ধর্মীয় অনুভুতি মানে কি শুধু সন্খ্যাগরিস্টের অনুভুতি কিনা, এমত এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, ৫৭ ধারায় সংশোধন আসছে। ধর্মীয় অনুভুতি মানে সকল ধর্মের অনুভুতি। নাস্তিকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু আস্তিকেরা স্বাধীন করেনি, নাস্তিকেরাও করেছে।