হজে যা হলো তা স্রেফ হত্যাকাণ্ড : প্রভাষ আমিন।
নিউজওয়ার্ল্ডবিডি.কম - ২৭.০৯.২০১৫
গত ১১ সেপ্টেম্বর মক্কায় মসজিদুল হারামে স্থাপিত ক্রেন ভেঙ্গে ১০৭ হাজির মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছি, অনেক রাগ হয়েছে। এর পর বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'জীবনের জন্য ধর্ম' শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। সেখানে লিখেছিলাম, ধর্ম জীবনের চেয়ে বড় নয়। জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। হজের সময় সারাবিশ্ব থেকে অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান মক্বায় সমবেত হন। এই সময় কেন মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ কাজের ক্রেন সরিয়ে রাখা হলো না। প্রশ্ন তুলেছিলাম, সৌদি কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি আর অদক্ষতা নিয়ে।
কিন্তু মক্কা ট্র্যাজেডির মাত্র ১৩ দিনের মাথায় মিনায় যা হলো, তাতে রাগ, ক্ষোভ, প্রশ্ন নয়; সৌদি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, জবাব দিতে হবে এই মৃত্যুর।
যতবার টিভিতে মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জনের মৃত্যুসংবাদ দেখি, ততবার অক্ষম একটা রাগে-দুঃখে মনটা তেতো হয়ে যায়। ম্লান হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। মিনা দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত ৪০ বছরে হজের সময় ৩ হাজার হাজি মারা গেছেন। এর বেশিরভাগই খামখেয়ালি আর অদক্ষতার কারণে হয়েছে। গত ২৫ বছরে খালি মিনাতেই মারা গেছেন প্রায় দুই হাজার হাজি। ১৯৯০ সালেই মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৪১৬ জন। ৩০ লাখ লোক একত্র হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মিনায় শয়তানকে পাথর মারতে গিয়েই হুড়োহুড়িটা হয়। হয় আপনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, নয়তো লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু বছর বছর হজ করতে গিয়ে এভাবে মানুষ অপমৃত্যুর শিকার হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
১৯৯০ সালের পর এ পর্যন্ত আটবার মিনা দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকবার আপনি একই অজুহাত দিয়ে পার পেয়ে যাবেন, কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন না; এটা হয় না হতে পারে না। লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণের চাবি তো সৌদি সরকারের হাতেই।
আপনি যতজন ম্যানেজ করতে পারবেন, তারচেয়ে বেশি মানুষকে ভিসা দেবেন কেন? প্রথমবার ঘটলে দুর্ঘটনা বলে পার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ২৫ বছরে আটবার একইস্থানে একই স্টাইলের দুর্ঘটনা ঘটলে তাকে আর নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। এ স্রেফ হত্যাকাণ্ড। সারাবিশ্বের মানুষকে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলে মেরা ফেলা।
সৌদি আরবে চুরি করলে হাত কেটে ফেলা হয়। হত্যার বদলা প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়। তাহলে এই শত শত হাজার মৃত্যুর দায় কে নেবে? আমরা দায়ীদের শাস্তি চাই। জানা গেছে, সৌদি যুবরাজ সেদিন মিনায় গিয়েছিলেন। তার সাথে ছিল ৩৫০ নিরাপত্তারক্ষীর বহর। তার গাড়িবহরকে জায়গা করে দিতে নাকি মিনার পাঁচ কিলোমিটার রাস্থা ফাঁকা করতে হয়েছিল। আর তাতেই চাপ পড়েছিল সাধারন হাজিদের রাস্তায়। হঠাৎ করেই কোনো কোনো ওয়ানওয়ে রাস্তা টু ওয়ে করা হয়। যাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা খেকেই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।
ইসলাম সাম্যের ধর্ম। হজ সেই সাম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে সবাই এক পোশাকে, এক কাতারে।
সেখানে সৌদি যুবরাজ ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিতে গিয়ে ইসলামের সবচেয়ে বড় চেতনায় আঘাত দিলেন, হত্যা করলেন ৭১৭ জনকে, যদিও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১২শ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু যুবরাজের আসার কথা বেমালুম চেপে গিয়ে সৌদি সেনা কর্মকর্তা কোনো তদন্ত ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য আফ্রিকান হাজিদের দায়ী করলেন। কী অদ্ভুত অজুহাত!
হজ কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর সমাবেশ নয় যে সবাই নিয়ম মেনে চলবে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ সমবেত হন। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, অনেকে আছেন অশিক্ষিত। তারা সৌদি নিরাপত্তা রক্ষীদের সব আদেশ ফলো নাও করতে পারেন। অনেকে তো ভাষাই বুঝবেন না। এ সবকিছু থরে নিয়েই হজ ম্যানেজ করতে হবে, যেটা করতে সৌদি সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
মিনা হত্যাকাণ্ডের আগের অপরাধ যতটা, পরের অপরাধ তারচেয়ে কম নয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ কোন দেশের কত জন মারা গেছেন, তার পুরো হিসাবটাই দিতে পারেনি এখনও। আর হাজিদের মরদেহগুলো তারা জড়ো করেছে মাটি কাটার বা ময়লা ফেলার ক্রেন দিয়ে। একটার ওপর একটা ফেলে লাশের স্তুপ করা হয়েছে। সেই স্তুপে নাকি বেঁচে থাকা কেউ কেউ নড়েচড়ে উঠেছেন। হায়, ভালো করে পরীক্ষা না করে জীবিত মানুষকেও ক্রেন দিয়ে লাশের স্তুপে ফেলা হয়েছে।
মানুষের মরদেহের এত বড় অবমাননার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে আর ঘটেনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও এরচেয়ে বড় সাম্প্রতিক উদাহরণ নেই। বাংলাদেশে যে রানা প্লাজায় চাপা পড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা গেল, তার প্রত্যেকটি মরদেহ যথাযথ সম্মানের সাথে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। কেন? মুসলমানদের জীবনের দাম কি কম? চাইলেই তাদের ভিসা দিয়ে ডেকে নিয়ে পায়ে পিষে মেরে ফেলা যায়? আচ্ছা এই ৭১৭ জন যদি যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের হতেন? হজ ইসলামের পাঁচ ফরজের একটি। এটা ঠিক যারা হজ করতে যান, তারা সকল জাগতিক হিসাব নিকাষ চুকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে যান। তারা যাওয়ার সময় আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে যান।
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, হজের সময় মারা গেলে সরাসরি বেহেশতে যাওয়া যায়। অনেকেই এই দুর্ঘটনাকে মৃতদের সৌভাগ্য হিসেবে বর্ণনা করছেন। আল্লাহ নাকি তাদের হজ কবুল করেছেন! সৌদি কর্তৃপক্ষের অপরাধ আড়াল করার কী অদ্ভুত ধর্মের ঢাল। মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া আর ক্রেন ফেলে বা পায়ে পিষে মেরে ফেলা এক কথা নয়।
স্বাভাবিক মৃত্যু আর অস্বাভাবিক মৃত্যু এক নয়। হজের সময় মৃত্যু মানেই যদি সৌভাগ্য হয়, তাহলে সৌদি সরকার হাজিদের ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেললেই পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, কার, কখন, কোথায়, কিভাবে মৃত্যু হবে; তা আল্লাহ আগেই ঠিক করে রেখেছেন। এখানে মানুষের হাত নেই। এ ধরনের যুক্তি দেয়াটাও এক ধরনের অপরাধ।
আল্লাহ সবকিছুই ঠিক করে রাখেন, কিন্তু যার যার দায় তাকে তাকে নিতে হবেই। নইলে বিশ্বের কোনো দুর্ঘটনার, কোনো হত্যার কোনো বিচার হতো না। এসব বলে পার পাওয়ার সময় ফুরিয়েছে অনেক আগেই। সৌদি সরকারের অদক্ষতা, খামখেয়ালিপনা অপরাধের মাত্রা পেরিয়েছে। সময় এসেছে হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার।
আধুনিক সভ্যতার সাথে বেমানান রাজতন্ত্রের নামে চেপে বসা সৌদ রাজবংশ নিজেরাই পবিত্রভূমি মক্কা ও মদিনার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। নইলে ইসলামের সাথে তাদের কোনো উত্তরাধিকারের সম্পর্ক নেই। আর তারা বিশ্বে ইসলামের হেফাজতে কোনো ভূমিকায় রাখে না। তাদের কুখ্যাতি অপচয় আর ভোগ বিলাসের জন্য, যা ইসলামের চেতনার সমান্তরাল নয়।
দাবি উঠেছে মক্কা আর মদিনার দেখভাল এবং হজ ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব মুসলিম নেতাদের সস্পৃক্ত করার। সবাই মিলে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মানুষকে ধর্ম দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, জাতি দিয়ে, অর্থ দিয়ে বিবেচনা করি না। মানুষকে বিবেচনা করি মানুষ হিসেবে। মক্কা ও মিনায় এবার অন্তত ৮২৪ জন মানুষ মারা গেছে। এটা নিছক সংখ্যা নয়। ৮২৪টি পরিবার স্বজন হারিয়েছে। কোনো কিছুর বিনিময়েই তাদের বেদনা প্রশমিত করা যাবে না। এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে, হজের সময় আর একজন হাজিরও যেন অস্বাভাবিক মৃত্যু না হয়।
প্রভাষ আমিন: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
- See more at: http://newsworldbd.com/bn/2015/09/27/%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%8B-%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AB-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95/#.VgdmvexViko
গত ১১ সেপ্টেম্বর মক্কায় মসজিদুল হারামে স্থাপিত ক্রেন ভেঙ্গে ১০৭ হাজির মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছি, অনেক রাগ হয়েছে। এর পর বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'জীবনের জন্য ধর্ম' শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। সেখানে লিখেছিলাম, ধর্ম জীবনের চেয়ে বড় নয়। জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। হজের সময় সারাবিশ্ব থেকে অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান মক্বায় সমবেত হন। এই সময় কেন মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ কাজের ক্রেন সরিয়ে রাখা হলো না। প্রশ্ন তুলেছিলাম, সৌদি কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি আর অদক্ষতা নিয়ে।
কিন্তু মক্কা ট্র্যাজেডির মাত্র ১৩ দিনের মাথায় মিনায় যা হলো, তাতে রাগ, ক্ষোভ, প্রশ্ন নয়; সৌদি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, জবাব দিতে হবে এই মৃত্যুর।
যতবার টিভিতে মিনায় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জনের মৃত্যুসংবাদ দেখি, ততবার অক্ষম একটা রাগে-দুঃখে মনটা তেতো হয়ে যায়। ম্লান হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। মিনা দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত ৪০ বছরে হজের সময় ৩ হাজার হাজি মারা গেছেন। এর বেশিরভাগই খামখেয়ালি আর অদক্ষতার কারণে হয়েছে। গত ২৫ বছরে খালি মিনাতেই মারা গেছেন প্রায় দুই হাজার হাজি। ১৯৯০ সালেই মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৪১৬ জন। ৩০ লাখ লোক একত্র হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মিনায় শয়তানকে পাথর মারতে গিয়েই হুড়োহুড়িটা হয়। হয় আপনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, নয়তো লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু বছর বছর হজ করতে গিয়ে এভাবে মানুষ অপমৃত্যুর শিকার হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
১৯৯০ সালের পর এ পর্যন্ত আটবার মিনা দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকবার আপনি একই অজুহাত দিয়ে পার পেয়ে যাবেন, কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন না; এটা হয় না হতে পারে না। লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণের চাবি তো সৌদি সরকারের হাতেই।
আপনি যতজন ম্যানেজ করতে পারবেন, তারচেয়ে বেশি মানুষকে ভিসা দেবেন কেন? প্রথমবার ঘটলে দুর্ঘটনা বলে পার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ২৫ বছরে আটবার একইস্থানে একই স্টাইলের দুর্ঘটনা ঘটলে তাকে আর নিছক দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। এ স্রেফ হত্যাকাণ্ড। সারাবিশ্বের মানুষকে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলে মেরা ফেলা।
সৌদি আরবে চুরি করলে হাত কেটে ফেলা হয়। হত্যার বদলা প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয়। তাহলে এই শত শত হাজার মৃত্যুর দায় কে নেবে? আমরা দায়ীদের শাস্তি চাই। জানা গেছে, সৌদি যুবরাজ সেদিন মিনায় গিয়েছিলেন। তার সাথে ছিল ৩৫০ নিরাপত্তারক্ষীর বহর। তার গাড়িবহরকে জায়গা করে দিতে নাকি মিনার পাঁচ কিলোমিটার রাস্থা ফাঁকা করতে হয়েছিল। আর তাতেই চাপ পড়েছিল সাধারন হাজিদের রাস্তায়। হঠাৎ করেই কোনো কোনো ওয়ানওয়ে রাস্তা টু ওয়ে করা হয়। যাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা খেকেই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।
ইসলাম সাম্যের ধর্ম। হজ সেই সাম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে সবাই এক পোশাকে, এক কাতারে।
সেখানে সৌদি যুবরাজ ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিতে গিয়ে ইসলামের সবচেয়ে বড় চেতনায় আঘাত দিলেন, হত্যা করলেন ৭১৭ জনকে, যদিও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১২শ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু যুবরাজের আসার কথা বেমালুম চেপে গিয়ে সৌদি সেনা কর্মকর্তা কোনো তদন্ত ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য আফ্রিকান হাজিদের দায়ী করলেন। কী অদ্ভুত অজুহাত!
হজ কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর সমাবেশ নয় যে সবাই নিয়ম মেনে চলবে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ সমবেত হন। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, অনেকে আছেন অশিক্ষিত। তারা সৌদি নিরাপত্তা রক্ষীদের সব আদেশ ফলো নাও করতে পারেন। অনেকে তো ভাষাই বুঝবেন না। এ সবকিছু থরে নিয়েই হজ ম্যানেজ করতে হবে, যেটা করতে সৌদি সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
মিনা হত্যাকাণ্ডের আগের অপরাধ যতটা, পরের অপরাধ তারচেয়ে কম নয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ কোন দেশের কত জন মারা গেছেন, তার পুরো হিসাবটাই দিতে পারেনি এখনও। আর হাজিদের মরদেহগুলো তারা জড়ো করেছে মাটি কাটার বা ময়লা ফেলার ক্রেন দিয়ে। একটার ওপর একটা ফেলে লাশের স্তুপ করা হয়েছে। সেই স্তুপে নাকি বেঁচে থাকা কেউ কেউ নড়েচড়ে উঠেছেন। হায়, ভালো করে পরীক্ষা না করে জীবিত মানুষকেও ক্রেন দিয়ে লাশের স্তুপে ফেলা হয়েছে।
মানুষের মরদেহের এত বড় অবমাননার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে আর ঘটেনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও এরচেয়ে বড় সাম্প্রতিক উদাহরণ নেই। বাংলাদেশে যে রানা প্লাজায় চাপা পড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা গেল, তার প্রত্যেকটি মরদেহ যথাযথ সম্মানের সাথে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। কেন? মুসলমানদের জীবনের দাম কি কম? চাইলেই তাদের ভিসা দিয়ে ডেকে নিয়ে পায়ে পিষে মেরে ফেলা যায়? আচ্ছা এই ৭১৭ জন যদি যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের হতেন? হজ ইসলামের পাঁচ ফরজের একটি। এটা ঠিক যারা হজ করতে যান, তারা সকল জাগতিক হিসাব নিকাষ চুকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে যান। তারা যাওয়ার সময় আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে যান।
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, হজের সময় মারা গেলে সরাসরি বেহেশতে যাওয়া যায়। অনেকেই এই দুর্ঘটনাকে মৃতদের সৌভাগ্য হিসেবে বর্ণনা করছেন। আল্লাহ নাকি তাদের হজ কবুল করেছেন! সৌদি কর্তৃপক্ষের অপরাধ আড়াল করার কী অদ্ভুত ধর্মের ঢাল। মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া আর ক্রেন ফেলে বা পায়ে পিষে মেরে ফেলা এক কথা নয়।
স্বাভাবিক মৃত্যু আর অস্বাভাবিক মৃত্যু এক নয়। হজের সময় মৃত্যু মানেই যদি সৌভাগ্য হয়, তাহলে সৌদি সরকার হাজিদের ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেললেই পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, কার, কখন, কোথায়, কিভাবে মৃত্যু হবে; তা আল্লাহ আগেই ঠিক করে রেখেছেন। এখানে মানুষের হাত নেই। এ ধরনের যুক্তি দেয়াটাও এক ধরনের অপরাধ।
আল্লাহ সবকিছুই ঠিক করে রাখেন, কিন্তু যার যার দায় তাকে তাকে নিতে হবেই। নইলে বিশ্বের কোনো দুর্ঘটনার, কোনো হত্যার কোনো বিচার হতো না। এসব বলে পার পাওয়ার সময় ফুরিয়েছে অনেক আগেই। সৌদি সরকারের অদক্ষতা, খামখেয়ালিপনা অপরাধের মাত্রা পেরিয়েছে। সময় এসেছে হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার।
আধুনিক সভ্যতার সাথে বেমানান রাজতন্ত্রের নামে চেপে বসা সৌদ রাজবংশ নিজেরাই পবিত্রভূমি মক্কা ও মদিনার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। নইলে ইসলামের সাথে তাদের কোনো উত্তরাধিকারের সম্পর্ক নেই। আর তারা বিশ্বে ইসলামের হেফাজতে কোনো ভূমিকায় রাখে না। তাদের কুখ্যাতি অপচয় আর ভোগ বিলাসের জন্য, যা ইসলামের চেতনার সমান্তরাল নয়।
দাবি উঠেছে মক্কা আর মদিনার দেখভাল এবং হজ ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব মুসলিম নেতাদের সস্পৃক্ত করার। সবাই মিলে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মানুষকে ধর্ম দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, জাতি দিয়ে, অর্থ দিয়ে বিবেচনা করি না। মানুষকে বিবেচনা করি মানুষ হিসেবে। মক্কা ও মিনায় এবার অন্তত ৮২৪ জন মানুষ মারা গেছে। এটা নিছক সংখ্যা নয়। ৮২৪টি পরিবার স্বজন হারিয়েছে। কোনো কিছুর বিনিময়েই তাদের বেদনা প্রশমিত করা যাবে না। এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে, হজের সময় আর একজন হাজিরও যেন অস্বাভাবিক মৃত্যু না হয়।
প্রভাষ আমিন: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
n‡R hv n‡jv Zv †mÖd nZ¨vKvÐ : cÖfvl Avwgb
মিনার ঘটনায় চাপে সৌদি আরব
মৃত্যুতে মানুষের হাত নেই: গ্র্যান্ড মুফতি
n‡Ri BwZnv‡m wØZxq m‡e©v"P cÖvYnvwb
__._,_.___