"'১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এ দেশটাকে পেয়েছি । ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ মানচিত্রটা পেয়েছি "'। বাহ ! কি চমৎকার দুটি লাইন । এই দুই লাইনের মধ্যেই আমাদের বীরত্ব গাঁথা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে ধারণ করে ফেললাম । স্বাধীনতা ও বিজয়কে এই দুইটি লাইন দ্বারাই তো শেষ করা যায় , তাই এত কিছু বলার দরকার পরে কি ? এই মতগুলো আমার না কিন্তু আমার বয়সী অনেক তরুণ-তরুণীরাই এই ধারণাগুলো পোষণ করে সেটা জেনেই হোক আর না জেনেই হোক । জেগে জেগে যারা ঘুমাচ্ছে তাদেরকে জাগানো আমার পক্ষে তো সম্ভবই না অন্য কারো পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে সেটাও আমার বোধগম্য নয়। তবে যারা না জেনে এই অন্ধকার ঘোরের মধ্যে আছে তাদের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে না ধরলে তারাও একসময় ভুল পথের পথিক হয়ে যাবে । আসলে এই দুই লাইনের মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে নির্মম সত্যের এক মর্মন্তুদ ইতিহাস সেই সত্য তাদের সামনে উন্মোচন না করলে একসময় তা মিথ্যার তলে চাপা পড়ে যাবে ।
১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা ধর্মের নামে এই দেশে চালিয়েছে ভয়ংকর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাইয়ের সামনে বোনকে এমনকি ছেলের সামনে মাকে ধর্ষণ করতেও ওই বেজন্মাদের একটুও বাঁধে নি । যেখানেই ধর্ম প্রসঙ্গ এসেছে সেখানেই তারা বলেছে — " বিধর্মীদের সাথে ছহবত করলে গুনাহ হয় না , ওরা হইল গনিমতের মাল । আর যুদ্ধের ময়দানে ইসলাম ( পাক স্তান) কে রক্ষা করার জন্য জেনা করাও জায়েজ । " যদিও এখন পর্যন্ত কোথাও কেউ খুঁজে পায়নি কোরআন শরিফের কোথায় এগুলো কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । নরপিশাচদের এইসব নারকীয় গণহত্যা সংগঠনের গা কাঁপানো রূপ সানডে টাইম্স এর মাধ্যমে যখন বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল তখন তাদেরও স্মৃতির কুহরে আতংক তোলপাড় করে উঠেছিল , গা শিউরে উঠেছিল ।
তাই ৭১ এর সেই ধারনাকে পোষণ করতে হবে আমাদের চেতনাতে আর সেটাকে লালন করার পদক্ষেপ যদি আমরা নেই তাহলে প্রথমেই আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলংক মুক্ত করা । আর সেই মহান ও গুরুদায়িত্বটুকু আমরা দিয়েছে বর্তমান সরকারের হাতে। এই বিচার সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেই আমরা এই রাজনৈতিক দলটিকে ভোট দিএ ক্ষমতাই এনেছিলাম । কিন্তু সরকার বিচারকার্যে যেই হাত দিয়েছে সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত । প্রসঙ্গত কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় ———————
কিছুদিন আগে গু আযম কে নিয়ে একটি ৭ মিনিটের ভিডিও চিত্র বের হয় যেটাতে ওই রাজাকার কে দেখানো হয়েছে একজন মহান রাজনৈতিক নেতা এবং সেই ভিডিওটিতে তার পক্ষে জোর সাফাই গাওয়া হয় । এবং ভিডিও টি মধ্যপ্রাচ্যে খুব প্রচার দেওয়া হয়। ঠিক তার কিছুদিন পর আমরা দেখলাম কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরার প্রতিবেদন ।
আলজাজিরার প্রতিবেদক নিকোলাস হক তার প্রতিবেদন এ বলে যে "" বাংলাদেশের সাবেক রাজনীতিবিদ গোলাম আযম ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি। ৮৯ বছর বয়সী গোলাম আযম হাঁটতে পারেন না, দেখতে পান না, এমনকি শুনতেও পান না"' হা হা হা !! কি সুন্দর কাল্পনিক বানোয়াট একটা কথা । যে লোকটি কিছুদিন আগেও দেখলাম টিভি চ্যানেল এ বক বক করছে , নামায পরতে মসজিদ এ যাচ্ছে কিন্তু রিপোর্ট একি শুনাল , সে নাকি বয়রা !!! আরও অনেক সাংবাদিক আসবে , নতুন নতুন রিপোর্ট তৈরি করবে । এখন হইতবা বলবে নিযামি , মুযাহিদ সাকারা হাঁটতে পারে না , কানে শুনে না এমনকি এরা তো নপুংসক(!!!) ৭১ এ ধর্ষণ করবে কেমন করে ইত্যাদি ইত্যাদি …
এবং সবশেষে দুই একদিন আগে শুনলাম ইকোনমিষ্ট এর প্রতিবেদন যেটি উপরুক্ত প্রতিবেদনের ধারা থেকে বাইরে যেতে পারেনি । ইকোনমিষ্ট এর প্রতিবেদন শুনে বিরোধী দলেরও এত আনন্দে উদ্দাম নৃত্য কররা মত কিছু নেই । প্রতিবেদনটিতে খুব সুন্দরভাবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করার হয়েছে এবং ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষ অবলম্বন করা হয়েছে । কেননা এই নরপিশাচদের বিচারকে স্রেফ রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ করে প্রত্যক্ষ ভাবেই তাদের পক্ষ নেওয়া হয়েছে ।
তাই এখন সময় এসেছে আমাদেরও কিছু বলার — আলজাজিরা ইকোনমিষ্ট সহ তাবৎ মিডিয়া কে বলছি , সরকারের কাজের সমালোচনা করে রিপোর্ট প্রকাশ করুন সমস্যা নেই কিন্তু আপনাদের রিপোর্ট যখনি যুদ্ধাপরাধীদের সুরে গান ধরবে তখনি ওদের বিরদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে লক্ষ কোটি উদাহরন … গু আযম , নিযামি , মুযাহিদ এবং সাকাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী আজও পাওয়া যাবে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে , মহাকালের সাক্ষ্য হয়ে সারা বাঙলায় ছড়িয়ে থাকা গণকবরগুলোতে ,সন্তানহারা মায়ের অগ্নিদৃষ্টিতে , ভাইহারা বোনের আর্তনাদে , ধর্ষিতার রক্তেভেজা শাড়িতে ।
সবশেষে বলব যে , দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের বেড়াজালে এক কঠিন সময়ে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি । যার কাণ্ডারি কেবলমাত্র তরুণরাই । তাই আমার বিশ্বাস কাঁঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রজন্ম অবশ্যই সৃষ্টিকে বেছে নেবে , ধংসকে নয়; জন্মকে বেছে নেবে, মৃত্যুকে নয়; স্বর্গকে বেছে নেবে , নরককে নয় । সকল গ্লানি এবং লজ্জা দূর করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে কলংক মুক্ত করতে হবে ।। যেটার সঙ্গী হব আমি, আপনি , আমরা সকলেই ..
আর আপনার লেখাটা আসলেই খুবি ভালো হয়েছে।
এরা হচ্ছে Propagandist। এদের সাথে journalist দের বিস্তর ফারাক।
loved these words
একটা সময় ছিল (১৯৭২-১৯৭৫) যখন শিক্ষিত লোক কম ছিল। কিন্তু এখন সে সময় নই।এখন শিক্ষিতের হার বেড়েছে।এখন মানুষ আর বিভ্রান্ত হয়না এই প্রতিবেধন নিয়ে মানুষ আর চিন্তও করেনা।