মসজিদে নারীর ক্রেডিট কার্ড চৌর্যবৃত্তি
ঢাকা: বয়স আনুমানিক ৩৫। প্রকৃত নাম জোবায়দা ইসলাম হলেও কখন পরিচয় দেন মুন, কখনোবা মৌসুমী। নামে যেমন আকর্ষণীয়, চেহারায়ও তেমনি আভিজাত্যের ছাপ। তবে সবসময় চুপচাপ।
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলেই আমন্ত্রিতের মতো ঢুকে পড়েন ভেতরে। বাকি অতিথিদের মতো তিনিও অবাধে বিচরণ করেন। তবে চোখ থাকে বিত্তবানদের স্ত্রী-মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগের দিকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডই তার মূল টার্গেট।
প্রথম আলাপ-পরিচয়েই কিছুটা ঘনিষ্ঠ হওয়া তার মূলমন্ত্র। সঙ্গে ব্যাংকের কার্ড বা টাকা আছে কিংবা থাকতে পারে, এমন ধারণা হলেই সুযোগের অপেক্ষা। আর সুযোগ পেলেই ব্যাগ বা কার্ডটি নিয়ে সটকে পড়েন।
এভাবেই রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে চলে জোবায়দা ইসলামের চৌর্যবৃত্তি। এমনকি মসজিদও বাদ যায় না তার হানা থেকে।
রোববার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশান ইয়্যুথ ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্টের মায়ের মৃত্যুতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন চলছিল গুলশান আজাদ মসজিদে। খবর পেয়েই সেখানে ঢুকে পড়েন জোবায়দা। তক্কেতক্কে থেকে হাত দেন ইপিলিয়ন গ্রুপের পরিচালক কিশোর জাহানের ভ্যানিটি ব্যাগে। ক্রেডিট কার্ডটি নিয়ে দ্রুত মসজিদ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন তিনি।
হাতে যেহেতু ক্রেডিট কার্ড এসেই গেছে, এবার তবে কিছু কেনাকাটা হয়ে যাক- এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন জোবায়দা। সোজা চলে যান পান্থপথের পারটেক্স ফার্নিচারে। আর বিপত্তি ঘটে সেখানেই। একটা আলমারি আর ওয়্যারড্রোব কিনে যখন দাম পরিশোধ করতে ক্রেডিট কার্ডটি পাঞ্চ করা হলো, তখনই ৬৫ হাজার টাকার ক্রেডিট নোটিশ সংক্রান্ত একটি এসএমএস চলে যায় কার্ডের প্রকৃত মালিক কিশোর জাহানের মোবাইল ফোনে। তিনি তাৎক্ষণিক পারটেক্স গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা জানালে তারা জোবায়দাকে আটকে রেখে তেঁজগাও থানায় খবর দেয়। কার্ডটি যেহেতু গুলাশান থেকে চুরি হয়েছে, তাই তাকে পরে গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জোবায়দা ইসলাম একজন ছদ্মবেশী সুন্দরী চোর। তার কাজই হচ্ছে অভিজাত এলাকার অনুষ্ঠানে ঢুকে নারীদের ব্যাগ বা ব্যাগ থেকে কার্ড হাতিয়ে নেয়া।
এর আগেও গুলশানের আমারি হোটেল থেকে এক বিদেশি নারীর ব্যাগ চুরি করেছিল সে। তখন এ নিয়ে একটি মামলাও হয়েছিল। সে মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন জোবায়দা। এছাড়া বনানী থানাতেও এমন চুরির অভিযোগে মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, আজাদ মসজিদ থেকে ক্রেডিট কার্ড চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছে জোবায়দা। তিনি তিন বছর ধরে এ পেশায় আছেন। থাকেন উত্তরায়। তবে বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বলে জানিয়েছেন। তার স্বামীর নাম সাইদুল ইসলাম। তিনি মারা গেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর অধিনস্ত ইপিলিয়ন গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (অ্যাডমিন) মো. মিজানুর রহমান মেহেদী গুলশান থানায় একটি চুরির মামলা (১২ নম্বর) দায়ের করেছেন।
ওসি সিরাজুল ইসলাম আরো জানান, সোমবার (১১ এপ্রিল) জোবায়দাকে আদালতে চালান করা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
ইইউডি/আরএইচ
http://www.banglanews24.com/national/news/480849 /মসজিদে-সুন্দরী-নারীর-ক্রেডিট-কার্ড-চৌর্যবৃত্তি
__._,_.___