'কৃষক শ্রমিক জনতা লিগের' সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি ভারতকে দেয়া 'কথা' রাখছেন! 'মৌলবাদকে মদদ দেয়, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়, এমন রাজনৈতিক দল, জোটকে সমর্থন দেবেন না' বলে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে 'প্রতিশ্রুতি' দিয়েছিলেন তিনি। গত বছরের ২৫ নভেম্বর 'হঠাৎ' ভারত সফরে গিয়ে তিনি প্রণবকে এসব 'প্রতিশ্রুতি' দেন। এর অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে আগামী ২৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর, বাসাইল) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে তিনি অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, 'আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকির দলকে অংশ নিতে বলেন প্রণব মুখার্জি। নির্বাচনে অংশ না নিলেও ওই সরকারের 'বড়ো রকমের' বিরোধিতা না করতেও বলেন প্রণব। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকির দল অংশ নেয়নি। তবে ওই নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের কোনো 'কঠোর সমালোচনা'ও তার দল থেকে করা হচ্ছে না।'
রাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, 'আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অবস্থান মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, এসব কারণে ভারত এ দলের সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে। এ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সমালোচনা প্রায় ক্ষেত্রে মৌলবাদকে সমর্থন করা বলেও মনে করে ভারত। এর জন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি দেশটিতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাদের সিদ্দিকিকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে, বা আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা না করতে।'
সূত্র জানায়, 'প্রণব মুখার্জিকে ভারত সফরে গিয়ে কাদের সিদ্দিকি প্রতিশ্রুতি দেন, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের পক্ষে যায়, এমন রাজনীতিকে তিনি আর সমর্থন করবেন না। এর কারণে তিনি বিএনপি, জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৯ দলের জোটে যোগ দেননি। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাত্র দশদিন আগে বদরুদ্দোজা চৌধুরির বিকল্প ধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, কাদের সিদ্দিকির কৃষক শ্রমিক জনতা লিগ- এ তিন রাজনৈতিক দল মিলে গত ২৬ ডিসেম্বর গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)।'
সূত্রমতে, 'কাদের সিদ্দিকি গত ২৫ নভেম্বর এমন দিন ভারত সফরে যান, যেদিন সন্ধ্যায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এছাড়া জোট এ তফসিল প্রত্যাখান করে পরদিন থেকে প্রথম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এসব কর্মসূচিতে কাদের সিদ্দিকির দলকে পায়নি জোট।'
বিএনপি, জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, 'আওয়ামী লীগের সরকারের অধীনে আগামী ২৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় টাঙ্গাইল-৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকি অংশ নিলে সরকারের অনেক লাভ হবে। সরকার বিরোধী দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, বিষয়টি দেশ, বিদেশে প্রচার করতে পারবে সরকার। তখন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের যৌক্তিকতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলবেন।'
তথ্যমতে, 'কাদের সিদ্দিকি ২৫ নভেম্বর হঠাৎ করে ভারত সফরে যান। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে তিনি ভারত যান বলে তার দল থেকে দাবি করা হয়। ভারতে গিয়ে প্রণবের সঙ্গে কা. সিদ্দিকি বৈঠক করেন।'
১৯ দলের জোটের নেতাদের মধ্যে অনেকে কাদের সিদ্দিকির 'আকস্মিক' ওই সফরকে 'রহস্যজনক' বলে মনে করেন। তাদের ধারণা, 'যে কোনো কৌশলে' আওয়ামী লীগের সরকারের পক্ষে থাকতে ভারতের মাধ্যমে তাকে 'ম্যানেজ' করানোর জন্য দিল্লি ডেকে নেয়া হয়েছিল!
তখন গুজব রটেছিল, 'প্রণব মুখার্জির জন্য ইলিশ মাছ, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আর তার স্ত্রীর জন্য টাঙ্গাইলের শাড়ি মিলিয়ে ৮০ লাখ টাকার উপহার নিয়ে ভারতে গেছেন কাদের সিদ্দিকি। উপহারের টাকাটা তিনি ম্যানেজ করেছিলেন তার রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ জামায়াতের এক নেতার কাছ থেকে।'
অনেকের মতে, 'গত চার দলের জোট সরকারের আমলে কাদের সিদ্দিকির প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশন হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে। দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। আর গ্রেপ্তার ঠেকাতে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন!'
তবে ২৫ নভেম্বরের সফরের কয়েক মাস আগেও কাদের সিদ্দিকি তার সাবেক দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও ভারতের 'কঠোর সমালোচনা' করেন। এমনকি এ বঙ্গবীর মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও নানা 'বক্তব্য' দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সশস্ত্র প্রতিবাদ করে ভারতে নির্বাসনে ছিলেন। ১৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন।
আরাফাত আহমেদ, ঢাকা।
http://priyodesh.net/?p=7076