মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার: জবানবন্দিতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী
সাকা চৌধুরী ও পাকিস্তানি সেনারা বাবা-কাকাসহ তিনজনকে হত্যা করেন
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২০-০৩-২০১৩
বিএনপির সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষী। এর মধ্যে এক সাক্ষী বলেছেন, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সাকা চৌধুরী তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অনুসারী ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাঁদের গ্রামে যান। পরে তারা তাঁকে ও তাঁর বাবা-কাকাসহ চারজনকে গুলি করলে তিনজন মারা যান।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল জবানবন্দি দেন রাষ্ট্রপক্ষের ২২তম সাক্ষী অনিলবরণ ধর (৬৮) ও ২৩তম সাক্ষী বনগোপাল দাশ (৬০)। দুজনেরই জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহ্মুদ। সাকা চৌধুরী এ সময় আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন।
প্রথমে জবানবন্দি দেন ২২তম সাক্ষী অনিলবরণ ধর। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর দক্ষিণ বণিকপাড়া গ্রামে। একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকালে তিনি মা ও ভাই-বোনদের অন্য স্থানে রেখে বাড়ি ফিরে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা। ওই দিন দুপুরে ফজলুল কাদেরের অনুসারী ও পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে সাকা চৌধুরী তাঁদের গ্রামে আসেন। তারপর অনিলবরণ, তাঁর বাবা উপেন্দ্র লাল ধর, কাকা মনীন্দ্র লাল ধর ও নেপাল চন্দ্র ধর নামে আরেকজনকে বাড়ির উঠানে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হলে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই সাক্ষী আরও বলেন, গুলি লাগার পর তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলে দেখেন, তাঁর বাঁ হাত এবং পিঠের বাঁ পাশে গুলি লেগেছে। বাবা ও কাকাসহ অন্য তিনজন মারা গেছেন।
অনিল বলেন, আহত অবস্থায় তিনি মামার বাড়ি ফটিকছড়ির ইছাপুর গ্রামে যান। পরে জাফর নামের এক চিকিৎসকের সহায়তায় নাম গোপন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তাঁর বাঁ হাত কেটে ফেলা হয় এবং পিঠ থেকে গুলি বের করা হয়। জবানবন্দির এ পর্যায়ে অনিল তাঁর কাটা হাত ও পিঠের গুলির দাগ ট্রাইব্যুনালকে দেখান।
অনিল বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে হামলার দিন গহিরা, মধ্য গহিরা, বিশ্বাস পাড়া, কুণ্ডেশ্বরী, জগৎমল্লপাড়া এবং উনসত্তরপাড়াতেও একই ধরনের হামলা চালানো হয়। এদিন তাঁদের প্রতিবেশী উমেশ চন্দ্র বিশ্বাসকেও হত্যা করা হয়।
জবানবন্দি শেষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাকা চৌধুরীকে শনাক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী অনিল। তাঁকে আসামিপক্ষের জেরার জন্য ২১ মার্চ দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এরপর জবানবন্দি দেন রাষ্ট্রপক্ষের ২৩তম সাক্ষী বনগোপাল দাশ। তিনি বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী থানার কদুরখিল গ্রামে। একাত্তরের জুন মাসের শেষ দিকে তিনি ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। পরে দেশে ফিরে ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি বোয়ালখালীর সিও কার্যালয়ে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালান। ওই যুদ্ধে তাঁদের কমান্ডার ফজলু ওস্তাদ ও রেজাউল করিম মারা যান। আবদুল ওয়াজেদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পাকিস্তানি সেনাদের টহল ট্রেন কাছাকাছি চলে এলে তাঁরা পিছু হটেন। পরদিন দুপুরে তাঁদের এক সংবাদদাতার (সোর্স) মাধ্যমে জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে সাকা চৌধুরী সেখানে গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদের মুখে থুথু দেন এবং গাড়িতে করে গুডস হিলে (সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি) নিয়ে যান। এরপর আর ওয়াজেদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে রাজাকার জাকির, সিরাজসহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওয়াজেদ সম্পর্কে একই তথ্য পাওয়া গেছে।
সাক্ষী অনিল আরও বলেন, ওই রাজাকারদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, বোয়ালখালীতে যুদ্ধ চলাকালে কদুরখিল ও শাকপুরা গ্রামে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী ও মুসলিম লীগের সমর্থকেরা ৩০০-৩৫০ জনকে হত্যা করে। এর মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন সাকা চৌধুরী।
জবানবন্দি শেষে বনগোপালকে জেরা শুরু করেন সাকা চৌধুরী। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় এই মামলার কার্যক্রম ২১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
'মানহানিকর হয়রানি' থেকে রক্ষা পেতে আবেদন: এদিকে 'মানহানিকর হয়রানি' থেকে রক্ষা পেতে গতকাল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন সাকা চৌধুরী। গতকাল তাঁর আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম আবেদনটি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। এ বিষয়ে সাকা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালকে বলেন, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগারে (পার্ট-১) তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই কথোপকথন রেকর্ড করা হয়। ১৫ মিনিটের ওই অডিও রেকর্ড ওয়েবসাইট ইউটিউবে ছাড়া হয়। এর এক সপ্তাহ পরে তাঁর নামে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে ৩১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে দিয়ে মানহানিকর অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাকা চৌধুরী আরও বলেন, 'এত দিন জানতাম জানের নিরাপত্তা নেই, এখন দেখি মানেরও নিরাপত্তা নেই, আমার মান নিয়ে টানাটানি...।' তিনি এসব বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশনা চান।
এ আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ বলেন, আসামির এ ঘটনা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ আবেদন তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে করতে পারেন।
এর জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, তিনি যেহেতু ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন, তাই ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে।
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-03-20/news/338076
ইউটিউব-ফেসবুকে পোস্ট : প্রতিকার চেয়ে সালাউদ্দিন কাদেরের আবেদন
-
Mar 4, 2013 - Uploaded by funnycommonmam
we got this audio clip from the fb page of Bangla.leaks! we thought it ... the leaked audio ofsaka chowdhury ... Aug 1, 2011 - Uploaded by TheBdtube
SAKA Chowdhury Challenging Tareq Zia. TheBdtube·57 ... Sony 7.2 MU-TE-KI SurroundSound Systemby ...
saka chowdhury conversation leaked from kashimpur jail 4th march ... audio and legal we recommended saka chowdhuryconversation leaked ...