গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে যাদের কথা হয়
20 Apr, 2014
১. আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী যাদের বন্ধু, যাদের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়- তাদের সবারই কর্তব্য কি কথা হয়েছিল, তা আগে থেকেই লিখে যাওয়া। সূত্র : সাপ্তাহিক আজকাল, নিউইয়র্ক।
এবিএম মূসা'র মৃত্যুর পর গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা দেখে আমার এই উপলব্ধি। ধারণা করি যে অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হবেন।
২. এবিএম মূসা কিছুদিন ধরেই বলতেন, আমার এখন 'কাউন্টডাউন' চলছে। এই লম্বা জীবনে কতজনের সঙ্গে কত রকমের ব্যবহার করেছি। আমি এখন সবার কাছে 'মাফ' চেয়ে যাব।
গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে নানা কথা প্রসঙ্গে এই বিষয়টিও আলোচনা করেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ এসেছিল। এবিএম মূসা প্রচনমব সমালোচনা করতেন শেখ হাসিনা সরকারের, যা পছন্দ করতেন না গাফ্ফার চৌধুরী। সমালোচনা না করার কথা গাফ্ফার চৌধুরী অনেকবার বলেছেন এবিএম মূসাকে। সে কথা তিনি আমাকেও একাধিকবার বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারাজীবন লিখেছি, সংগ্রাম করেছি শেষ সময় পর্যন্ত করে যাব।
একদিনের টেলিফোন আলোচনায় মূসা ভাই গাফ্ফার চৌধুরীকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনি ঢাকায় আসেন, আপনিসহ শেখ হাসিনার কাছে যাব। সরকারের কাজের সমালোচনা করব কিন্তু 'মুজিব ভাইয়ের' মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা বৈরী রাখতে চাই না। কয়দিনই আর আছি, সম্পর্কটা ঠিক করে ফেলব। প্রয়োজনে আমি 'সরি' বলব।
এই ঘটনাটিও মূসা ভাই তার শেষ সময়ের ঘনিষ্ঠজনদের বলেছিলেন।
৩. 'প্রয়োজনে দুঃখ প্রকাশ করব' বিষয়টিকে গাফ্ফার চৌধুরী লিখলেন, 'হাসিনাকে বলবেন, সে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়।' মৃত মানুষের একটি বক্তব্যকে কীভাবে বিকৃত করলেন গাফ্ফার চৌধুরী! অবশ্য এতে আমাদের বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। মৃত মানুষের রেফারেন্স দিয়ে অসত্য কথা বলার তার এই অভ্যেসের সঙ্গে তো আমরা বেশ ভালোভাবেই পরিচিত।
৪. আমার সঙ্গে গাফ্ফার চৌধুরীর জীবনে একবারই টেলিফোনে কথা হয়েছে। যা কখনও লিখিনি, লিখব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন মনে করছি লিখে রাখা ভালো।
৫. ২০০৭ সাল। আমি সবেমাত্র সাপ্তাহিক ২০০০ ছেড়েছি। তখন খিলগাঁওয়ে থাকি। বাসার ফোনে এক সন্ধ্যায় ফোন করলেন। 'আমি গাফ্ফার চৌধুরী বলছি, লন্ডন থেকে।'
কি খবর, কেমন আছি দু'একটি কথা আদান-প্রদানের পর গাফ্ফার চৌধুরী বললেন, 'মতি-মাহফুজকে একটু ভালো করে ধরতে চাই। আপনার (তুমি না আপনি বলেছিলেন মনে নেই) কাছ থেকে নিশ্চয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। আপনার সঙ্গেও তো – খুব বড় অন্যায় করেছে। অনেক দিন ওদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সাপ্তাহিক ২০০০ কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ওদের অনেক অন্যায় অনিয়ম নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার। সেসব কাহিনী বলেন, আমি কয়েক পর্বে ঢাকার কাগজে লিখব।'
৬. গাফ্ফার চৌধুরীর ফোন পেয়েই কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম। কথা শোনার পর বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল।
বললাম, গাফ্ফার ভাই আপনি ফোন করেছেন, এজন্য আমি খুশি, আপনাকে ধন্যবাদ। আমি তাদের সঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছি। সবসময়ই খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কই ছিল। ঈদ সংখ্যায় দাউদ হায়দারের একটি লেখা ছাপাকে কেন্দ্র করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঈদসংখ্যা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, লেখাটি ছাপা ঠিক হয়নি। আমি মনে করি লেখা ছেপে কোনো ভুল করিনি। এই জটিলতাকে কেন্দ্র করে আমার সেখান থেকে চলে আসা। এটুকুই ঘটনা। মাহফুজ আনাম বা মতিউর রহমান সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। আমার কোনো অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে। আর আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে আগ্রহীও নই।
৭. আমার কথায় বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। গাফ্ফার চৌধুরী কয়েকদিন পরে ঢাকার কাগজে (কোন কাগজে নাম মনে নেই) লিখলেন, মাহফুজ আনাম এবং মতিউর রহমানকে ধুয়ে-মুছে দিয়ে। এই দুই বিখ্যাত সম্পাদকের সঙ্গে আমার মতো ছোট সম্পাদকের নামজুড়ে দিয়ে লিখলেন, 'ঐ হাউজে আরেকজন ছিলেন গোলাম মোর্তোজা। কয়েকদিন আগে সেখান থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছে (উদ্ধৃতিটি হয়ত হুবহু হলো না। তবে 'বিতাড়িত' করা হয়েছে এটা লিখেছিলেন, খেয়াল আছে।)'
৮. সাপ্তাহিক ২০০০-এর প্রকাশক মাহফুজ আনাম। তার সঙ্গে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বলেছিলেন, 'এক সঙ্গে কাজ করলে অনেক ঘটনা ঘটে। যিনি চলে যায় তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি, যিনি চলে যান তিনি প্রতিষ্ঠানের/ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেন। একটা অসুস্থ্য কাদা ছোড়াছুড়ি চলে। আমি কখনো এমন কিছু করব না।'
আমিও বলেছিলাম, 'এমন কিছু কখনও করব না।'
পরবর্তীতে কেউই তেমন কিছু করিনি।
১. আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী যাদের বন্ধু, যাদের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়- তাদের সবারই কর্তব্য কি কথা হয়েছিল, তা আগে থেকেই লিখে যাওয়া। সূত্র : সাপ্তাহিক আজকাল, নিউইয়র্ক।
এবিএম মূসা'র মৃত্যুর পর গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা দেখে আমার এই উপলব্ধি। ধারণা করি যে অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হবেন।
২. এবিএম মূসা কিছুদিন ধরেই বলতেন, আমার এখন 'কাউন্টডাউন' চলছে। এই লম্বা জীবনে কতজনের সঙ্গে কত রকমের ব্যবহার করেছি। আমি এখন সবার কাছে 'মাফ' চেয়ে যাব।
গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে নানা কথা প্রসঙ্গে এই বিষয়টিও আলোচনা করেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ এসেছিল। এবিএম মূসা প্রচনমব সমালোচনা করতেন শেখ হাসিনা সরকারের, যা পছন্দ করতেন না গাফ্ফার চৌধুরী। সমালোচনা না করার কথা গাফ্ফার চৌধুরী অনেকবার বলেছেন এবিএম মূসাকে। সে কথা তিনি আমাকেও একাধিকবার বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারাজীবন লিখেছি, সংগ্রাম করেছি শেষ সময় পর্যন্ত করে যাব।
একদিনের টেলিফোন আলোচনায় মূসা ভাই গাফ্ফার চৌধুরীকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনি ঢাকায় আসেন, আপনিসহ শেখ হাসিনার কাছে যাব। সরকারের কাজের সমালোচনা করব কিন্তু 'মুজিব ভাইয়ের' মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা বৈরী রাখতে চাই না। কয়দিনই আর আছি, সম্পর্কটা ঠিক করে ফেলব। প্রয়োজনে আমি 'সরি' বলব।
এই ঘটনাটিও মূসা ভাই তার শেষ সময়ের ঘনিষ্ঠজনদের বলেছিলেন।
৩. 'প্রয়োজনে দুঃখ প্রকাশ করব' বিষয়টিকে গাফ্ফার চৌধুরী লিখলেন, 'হাসিনাকে বলবেন, সে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়।' মৃত মানুষের একটি বক্তব্যকে কীভাবে বিকৃত করলেন গাফ্ফার চৌধুরী! অবশ্য এতে আমাদের বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। মৃত মানুষের রেফারেন্স দিয়ে অসত্য কথা বলার তার এই অভ্যেসের সঙ্গে তো আমরা বেশ ভালোভাবেই পরিচিত।
৪. আমার সঙ্গে গাফ্ফার চৌধুরীর জীবনে একবারই টেলিফোনে কথা হয়েছে। যা কখনও লিখিনি, লিখব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন মনে করছি লিখে রাখা ভালো।
৫. ২০০৭ সাল। আমি সবেমাত্র সাপ্তাহিক ২০০০ ছেড়েছি। তখন খিলগাঁওয়ে থাকি। বাসার ফোনে এক সন্ধ্যায় ফোন করলেন। 'আমি গাফ্ফার চৌধুরী বলছি, লন্ডন থেকে।'
কি খবর, কেমন আছি দু'একটি কথা আদান-প্রদানের পর গাফ্ফার চৌধুরী বললেন, 'মতি-মাহফুজকে একটু ভালো করে ধরতে চাই। আপনার (তুমি না আপনি বলেছিলেন মনে নেই) কাছ থেকে নিশ্চয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। আপনার সঙ্গেও তো – খুব বড় অন্যায় করেছে। অনেক দিন ওদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সাপ্তাহিক ২০০০ কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ওদের অনেক অন্যায় অনিয়ম নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার। সেসব কাহিনী বলেন, আমি কয়েক পর্বে ঢাকার কাগজে লিখব।'
৬. গাফ্ফার চৌধুরীর ফোন পেয়েই কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম। কথা শোনার পর বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল।
বললাম, গাফ্ফার ভাই আপনি ফোন করেছেন, এজন্য আমি খুশি, আপনাকে ধন্যবাদ। আমি তাদের সঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছি। সবসময়ই খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কই ছিল। ঈদ সংখ্যায় দাউদ হায়দারের একটি লেখা ছাপাকে কেন্দ্র করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঈদসংখ্যা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, লেখাটি ছাপা ঠিক হয়নি। আমি মনে করি লেখা ছেপে কোনো ভুল করিনি। এই জটিলতাকে কেন্দ্র করে আমার সেখান থেকে চলে আসা। এটুকুই ঘটনা। মাহফুজ আনাম বা মতিউর রহমান সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। আমার কোনো অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে। আর আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে আগ্রহীও নই।
৭. আমার কথায় বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। গাফ্ফার চৌধুরী কয়েকদিন পরে ঢাকার কাগজে (কোন কাগজে নাম মনে নেই) লিখলেন, মাহফুজ আনাম এবং মতিউর রহমানকে ধুয়ে-মুছে দিয়ে। এই দুই বিখ্যাত সম্পাদকের সঙ্গে আমার মতো ছোট সম্পাদকের নামজুড়ে দিয়ে লিখলেন, 'ঐ হাউজে আরেকজন ছিলেন গোলাম মোর্তোজা। কয়েকদিন আগে সেখান থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছে (উদ্ধৃতিটি হয়ত হুবহু হলো না। তবে 'বিতাড়িত' করা হয়েছে এটা লিখেছিলেন, খেয়াল আছে।)'
৮. সাপ্তাহিক ২০০০-এর প্রকাশক মাহফুজ আনাম। তার সঙ্গে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বলেছিলেন, 'এক সঙ্গে কাজ করলে অনেক ঘটনা ঘটে। যিনি চলে যায় তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি, যিনি চলে যান তিনি প্রতিষ্ঠানের/ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেন। একটা অসুস্থ্য কাদা ছোড়াছুড়ি চলে। আমি কখনো এমন কিছু করব না।'
আমিও বলেছিলাম, 'এমন কিছু কখনও করব না।'
পরবর্তীতে কেউই তেমন কিছু করিনি।
__._,_.___