পথ
আমাদের এই ক্ষণভঙ্গুর জীবনে দু'টি পথ খোলা । একটি সত্যের বা উত্তরণের পথ, অন্যটি মিথ্যা বা অধঃপতনের পথ । এই দু'টি পথ সমান্তরাল হয়ে প্রতিষ্ঠিত, তবে অনুভূতির স্তরে । কোন পথে কে হাঁটছেন, সেটি প্রথম জানতে পারেন সেই পথের পথিক । তাই কেউ যদি বলেন, আমি ভুল করে এই পথে এসে পড়েছি, সেটি সঠিক তথ্য নয় । যে যার মানসিক প্রবৃত্তির থেকে খুঁজে নেন তার পথ । সেটি সম্পূর্ণ নিজস্ব চেতনার বহিঃপ্রকাশ ।
এই দুই পথের মাঝখানে একটি রেখা আছে । তাকে আমরা 'নো ম্যানস লাইন' বলতে পারি । আবার বলতে পারি 'লক্ষণ রেখা' । এই রেখা সহজে অতিক্রম করা যায়, নেই কোনও সীমান্তরক্ষী বা কাঁটাতার । যেহেতু এই দু'টি পথ অনুভূতির স্তরে, তাই পথ পরিবর্তন করা খুব সহজ । এখানে আমাদের চৈতন্যে বিবেকের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে । অন্তরের অন্তঃস্থলে সে-ই নেতৃত্বের গুণগত পার্থক্য নির্দিষ্ট করে দেয়, কোন পথ কার ।
আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি যে, কোন পথে হাঁটছি । তাই সেই পথের অন্য বন্ধুদের খুব সহজে চিনতে পারি । তেমনি বিপরীত পথের ব্যক্তি-সমষ্টিকে চিনতেও খুব একটা দেরি হয় না । কারণ সত্যের পথ যদি উত্তর দিক হয়, তবে মিথ্যার পথ দক্ষিণ । ঠিক আমাদের রাজপথের আপ অর্থাৎ উত্তরণ এবং ডাউন অর্থাৎ অধঃপতনের মতো স্পষ্ট । সে, যে পথের পথিক হোক না, কিছুদূর হাঁটার পর নিজের পথ এবং বিপরীত পথ সহজেই অনুধাবন করতে পারে ।
এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা সত্যের পথ এবং মিথ্যার পথের স্বরূপ কী এবং আমাদের মানবজীবনে এর গুরুত্ব কতখানি । এ ছাড়াও কীভাবে এই দুই পথে মানুষ ঢুকে পড়ে !
প্রথমেই বলা যায় যে, মিথ্যার পথ এবং সত্যের পথের শুরুতে একটি সাইনবোর্ড আছে । এই সাইনবোর্ডের ভাষ্য আমরা আমাদের গুরুজন, বই, অভিজ্ঞতা প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে জানতে পারি । মিথ্যার সাইনবোর্ডে লেখা থাকে প্রচুর উন্নতির কথা, লোভের কথা এবং সেই পথের ধারে-কাছে এলে মিথ্যার দালালদের মনোমুগ্ধকর মিথ্যার ফুলঝুরি আমাদের আকর্ষণ করবে । বিজ্ঞাপনী চটকদারি এবং কৃত্রিম আলোর ছটায় প্রায় লুপ্ত ক রে দেবে আমাদের চৈতন্য, বোধশক্তি । আমরা স্বাভাবিক-ভাবেই লোভের ফাঁদে পা দেব, উন্নতির সূচকে নিজেকে আরও দামি করার চেষ্টা করব । এছাড়া উপায় কী ! কারণ সত্যের পথের মুখে যে, চটকহীন সাইনবোর্ডে রাবীন্দ্রিক ভাষায় লেখা থাকে, এই পথে ধনবান হওয়া যায় না, বলবানও নয়, সম্মান পেতেও পারেন আবার নাও পেতে পারেন, তবে অবদমিত হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা । তাই এই পথে কে আর কষ্ট পেতে চায় । কে আর বুঝতে পারে সত্যের কষ্ট থেকে মিথ্যার যন্ত্রণার যে তীব্রতা কোটি কোটি গুণ বেশি ।
মিথ্যার পথে যেই ঢুকলেন তখন দেখবেন আপনার চারিদিক থেকে ধ্বনিত হচ্ছে 'সুস্বাগতম' । এই দৃশ্যটি ঠিক প্রথম সিগারেট এবং মদ ধরানো বন্ধুদের মতো । রাশি রাশি ভোগবাদের উপকরণ, চমকদার পোশাকে সুগন্ধী প্রচুর মানুষ, অর্থের পাগল করা ঝনঝনানি, আরও কত বর্ধিত সুখ । আপনার অনুভূতিতে স্পন্দিত হবে 'ফিল গুড' । আর যদি আপনি এই পথে না এসে সত্যের পথে হাঁটতে চান, তাহলে বেশ টের পাবেন সব কমতে শুরু করেছে ।
বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে, অর্থের ঘাটতি, একাকিত্ব, চারিদিক থেকে সন্দেহের তির, শারীরিক বিপর্যস্ত আরও কত কষ্ট । আপনার অনুভূতিতে স্পন্দিত হতে পারে 'ফিল ব্যাড' ।
এই তো সবে কাহিনির শুরু । এরপর আপনি যত এগোবেন মিথ্যার পথে তত ধনলাভ, জনবল বৃদ্ধি, সম্মান বৃদ্ধি প্রভৃতি খুব পরিষ্কারভাবে ঘটতে থাকবে । আর সত্যের পথে সবকিছু আরও কমতে থাকবে । স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া যায় যে সত্যের পথে আপনার সাথে আপনার বৃদ্ধ পিতা-মাতা, স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানেরা থাকতে পারেন । তারা যদি স্বেচ্ছায় এ পথে এসে থাকেন তবে এই দুর্গম পথে আপনি স্বস্তি বোধ করবেন । যদি উল্টো হয়, তবে তারা কিন্তু আপনাকে ভোগাবে । এ ব্যাপারে তাদেরও চেতনায় ভ্রম দেখা দিতে পারে । যখন তারা দেখবেন যে তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন উল্টো পথে হেঁটেও সুখ-সমৃদ্ধিতে উজ্জ্বল, তখন তারাও আপনার পথকে পতনের পথ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেন । তাদের কটূক্তি, নাছোড় মনোভাব আপনাকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে । তখন সত্যের পথে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে আপনার তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর সেই চিরন্তন শক্তির অহেতুক কৃপা ।
বন্ধু, তাহলে বারবার ভেবে দেখুন জীবনের কোন পথে আপনি হাঁটবেন । কী বললেন ? মিথ্যার পথ ! একদম নয় । এতক্ষণ যা পড়লেন, সবকিছুই ক্ষণিকের প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি । আসল খেলা তো এখন শুরু হবে, এবার মিথ্যা পথযাত্রীর আবরণ থেকে খুব দ্রুত খসে পড়বে মিথ্যার সব অলঙ্কার । ধন নাশ হবে, তাকে ব্যবহারকারী লোকের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে, সম্মান হারিয়ে পেতে থাকবে নির্মম অসম্মান, ঘৃণা । অবদমিত শুধু নয়, একেবারে খাদের গভীরে পড়ে ধ্বংস হবে তার অসৎ পথের ধনদৌলত, সম্মান, প্রতিপত্তি, স্বাস্থ্য প্রভৃতি । সে খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে কৃত্রিম আলোর অন্ধকারে । এরকম তথাকথিত নক্ষত্রপতন আমাদের চারপাশে অনবরত ঘটছে । দৃষ্টি থাকলে দেখা যায় ।
আর যিনি সত্যের পথে হাঁটছেন, তার কাছে সর্বপ্রকার ধন আসতে থাকবে । অজান্তে তাকে অনুসরণ করা প্রকৃত মানুষের দল তার সাথে হাঁটতে থাকবে । পথ-সঙ্গীদের মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় তার চারিদিকে ছেয়ে থাকবে শান্তির বাতাবরণ, এমন সম্মান সে পেতে থাকবে যা কোনওদিন কল্পনাও করতে পারেনি । এমনকি সে অমরত্ব পেয়ে যেতে পারে ।
পরিশেষে যে কথাটি আমাদের মননে ঢেউ তোলে, কেন ভালো মানুষেরা কষ্ট পাচ্ছেন ! গভীর পর্যবেক্ষণ করলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে । বাইরের ভালো আর অন্তরের ভালোর মধ্যে একটা টালমাটাল অবস্থা এদের মধ্যে দেখা যায় । তাদের এক পা সত্যে এবং অন্যটি মিথ্যায় । এই দোদুল্যমান অবস্থায় তার বেসামাল । তাই সত্য- পথযাত্রীদের উচিত সত্য পথের মাঝখান দিয়ে হাঁটা, শিরদাঁড়া টানটান করে । তখন তিনি আর কোনও সজীব বস্তু নন,হয়ে উঠবেন মানুষ ।
এই সত্য আমার অভিজ্ঞতায় সত্য । সত্যের পথ চিরন্তন পথ, মানবিকতার পথ ।এই পথে গড়ে উঠেছে প্রকৃত মানুষদের কর্মভূমি । অনন্ত কণ্ঠে আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হোক 'সত্যমেব জয়তে' ।
একশো সন্দীপনী
১। একজন বৈজ্ঞানিক এবং একজন কবির মধ্যে মিল কোথায় বলুন তো , দুজনেই সত্যান্বেষী ।
২। আপনি ছিলেন না, আছেন, থাকবেন না । তাই মুহূর্তকে উপভোগ করুন । নিজেকে মেলে দিন নিজের কাছে ।
৩। কারোর কাছে জবাব দিতে হবে না। নিজের কাছে জবাব দিন, আপনি সজীব বস্তু নাকি মানুষ।
৪। আপনার অন্তরে যে অন্য 'আমি ' আছেন তাঁকে খুঁজুন । তিনি ঈশ্বর , আল্লা , গড ।
৫। সম্পর্কের মতলব খুঁজুন । মতলবের সম্পর্ক গড়বেন না ।
৬। সমাজে বসবাস করলে সামাজিক হওয়া যায় না । সমাজকে যিনি ভালোবাসেন তিনি সামাজিক ।
৭। দেশ থেকে কী পেলাম , কী পেলাম না, এটা বিচার্য নয়। দেশকে কী দিলাম, কী দিলাম না, এটাই বিচার্য হওয়া উচিত ।
৮। ভারতবর্ষ মানে শুধু একটি দেশ নয় । চিরন্তন মানবিক দর্শন ।
৯। শুধু বহিরঙ্গে সাম্য নয়, অন্তরঙ্গে সাম্য চাই । সেই সাম্য সব বৈষম্য ঘোচাবে ।
১০। সমাজকে অসুস্থ করে কোন স্বার্থান্বেষী ভালো থাকতে পারে না । সত্যের কষ্ট থেকে মিথ্যার যন্ত্রণা যে কোটি কোটি গুণ তীব্র ।
১১। লাভক্ষতির হিসাব দিয়ে জীবনকে মাপতে যাবেন না । জীবন BALANCE SHEET নয় ।
১২। এই দুঃসময়ে যার নিন্দা বেশি হয়, সেই হয়ে ওঠে পপুলার ।
১৩। প্রশংসা করতে না পারলেও নিন্দা করবেন না । নিন্দায় চৈতন্যে ক্ষয়রোগ হয় ।
১৪। প্রতিবাদ করুন নিঃস্বার্থ হয়ে । নিজের স্বার্থের জন্য প্রতিবাদী হলে, একদিন আপনার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ হবে ।
১৫। পরিবর্তন সবাই চায় । সেই পরিবর্তন যেন উত্তরণ হয় ।
১৬। জীবনটা সমুদ্রের মতো, যা দেবেন ষোল আনা ফেরত পাবেন ।
১৭। হাসি পেলে হাসুন , কান্না পেলে কাঁদুন , রেগে গেলে রাগুন, আনন্দে নাচুন । মুখোশহীন মানুষদের এটাই স্বভাব ।
১৮। রাজা উলঙ্গ হলে তাকে উলঙ্গ বলুন । রাজা পোশাক পরবেন ।
১৯। একটি পথভ্রষ্ট সমাজ , পথভ্রষ্ট রাজনীতিবিদ , শিক্ষক, চিকিৎসক ইত্যাদি যোগান দেয় । সব দায় কি সমাজের নয় !
২০। জীবনের জন্য অর্থ । অর্থের জীবনকে উৎসর্গ করা কি ঠিক !
২১। বড় মনের মানুষ শুধু বড় কবি, লেখক, শিল্পী হন না । তিনি বড় মানুষ হয়ে ওঠেন । এটাই পরম প্রাপ্তি ।
২২। অন্যের প্রসিদ্ধিতে যদি হিংসা করেন তবে তার দুঃখে দুঃখিত হন, শোকে শোকাহত । তবেই তো হিংসা করা মানায় ।
২৩। ভোগবাদ মানুষকে ডাইনোসর বানায় । যুগকে জুরাসিক ।
২৪। সন্তানকে কত সম্পদ দিতে পারলেন সেটা কোন বড় ব্যাপার নয়, তাকে সংস্কার দিন । কুপ্রভাব মুক্ত সংস্কার । সংস্কার অমূল্য সম্পদ ।
২৫। মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব । সব ধর্ম সেই শিক্ষা দেয় ।
২৬। জ্ঞানীকে সম্মান দিলে জ্ঞানী হবেন , ধনীকে সম্মান দিলে ঠকবেন , গরিবকে সম্মান দিলে ইতিহাস হয়ে যাবেন ।
২৭। সম্মান যে পায় সে ভাগ্যবান , কিন্তু সম্মান যিনি দেন তিনি নিশ্চিত ভগবান । ইতিবাচক ভাবনা সম্মান দিতে শেখায় ।
২৮। বিষয়-সুখ যদি আপনার নিজস্ব হয়, তবে বিষয়-বিষ নিজের ভিতর রাখুন। সমাজে ছড়িয়ে সমাজ বিষাক্ত করবেন না।
২৯। নিচু মনের মানুষেরা কোনও ভালো কাজ করতে পারে না। ভালো মানুষেরা ভালো কাজের উপযুক্ত।
৩০। ভালো মানুষকে সবাই বিশ্বাস করে, শ্রদ্ধা করে, এমনকি মন্দ লোকেরাও । কিন্তু মন্দ লোককে মন্দ লোকেরাও ঘৃণা করে ।
৩১। যে মন্দ তাকে সবাই চেনে । ওপেন সিক্রেট ।
৩২। গঙ্গানদী সবার । ঘটিতে ভরলে আমার ।
৩৩। আর কত মুখোশ লাগাবেন, যেদিন মুখোশ খসে পড়বে নিজেকে চিনতে পারবেন তো !
৩৪। বিশ্বাস হারানো পাপ । কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করা মহাপাপ ।
৩৫। নিজের সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখতে চেয়ে, অন্যের সন্তানকে গরু বানাবেন না ।
৩৬। অন্যের সন্তানকে যেদিন নিজের সন্তান ভাবতে পারবেন, সে'দিন আপনার সন্তান মানুষ হবে । আপনি পিতৃদেব ভবঃ ।
৩৭। শিক্ষকতা শুধু বৃত্তি নয় , আচার্যদেব হয়ে ওঠার সাধনা ।
৩৮। অশিক্ষিতের চেয়ে অর্ধ -শিক্ষিত , কু -শিক্ষিতরা সমাজে অনেক বেশি ক্ষতিকর ।
৩৯। নিরক্ষরতা ব্যক্তির অপমান নয়, সমগ্র সমাজ ব্যবস্থার অপমান ।
৪০। শিশু-শ্রমিক সমস্যা বিজ্ঞাপনে দূর হয় না। বিজ্ঞবোধে এই সমস্যার সমাধান ।
৪১। মানবিকের বিপরীত অমানবিক হারিয়ে পারমাণবিক হয়ে উঠেছে । মানববোমা এই বোধের ফসল ।
৪২। কুসন্তান কখনও সুপিতা বা সুমাতা হতে পারে না ।
৪৩। বৃদ্ধরা সমাজের সম্পদ । বৃদ্ধাবাসে না রেখে তাঁদের নিজের ঘরে রাখুন । বাড়ি গৃহ হয়ে উঠবে ।
৪৪। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে অণু পরিবার রমরমা। পরমাণু পরিবার শুরু হয়েছে। আধুনিক মানুষ হয়ে উঠছে 'একমেবানাত্মীয়' ।
৪৫। ধর্ম মানুষকে মানব করে তোলে । কিন্তু ধর্ম-ব্যবসায়ীরা মানুষকে সাম্প্রদায়িক করে দেয় ।
৪৬। অন্যের হৃদয়ে বিশ্বাস নষ্ট করে আবার সেই বিশ্বাস ফেরানো শৈশব ফেরানোর মতো অসম্ভব ।
৪৭। মায়ের চেয়ে যে বেশি ভালোবাসে, সে ডাইনি । পিতার চেয়ে যে বেশি শুভাকাঙ্ক্ষী, সে ডাইনোসর।
৪৮। আকাশের দিকে তাকান , আকাশ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে । নদীর কাছে কান পাতুন , নদী আপনার সাথে কথা বলবে । মানুষকে প্রকৃত ভালবাসুন , মানুষ আপনাকে ঠিক ভালবাসবে ।
৪৯। যিনি নাট্যচর্চা করেন তিনি লোক শিক্ষক । ইতিহাসের বুকে তাঁদের আসন চিরস্থির ।
৫০। যিনি প্রকৃত মানুষ গড়েন , মানুষ তাকে ঈশ্বর মানেন ।
৫১। ভালোকে আবিষ্কার করতে দীর্ঘ সময় লাগে । জুহুরী যে অপ্রতুল ।
৫২। অযথা এদিক - ওদিক না ঘুরে জুহুরীর কাছে যান । তখন বুঝতে পারবেন আপনি কাঁচ নাকি হীরা ।
৫৩। সম্পাদকের সাধনা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা নয়, সবার প্রিয় হয়ে ওঠা ।
৫৪। সাংবাদিকের ধর্ম সত্যের পক্ষে জনমত তৈরি করা । বিশুদ্ধ মানবিকতা ।
৫৫। মনুষ্যের পাশবিক সত্তার বলি যেখানে ধর্ম , সেখানে নিরীহ পশুর হত্যা কি অধর্ম নয় !
৫৬। কালো মেয়েকে যিনি বধূ বা পুত্রবধূ রূপে গ্রহণ করতে পারেন, কালীপূজায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেন ।
৫৭। একটি গাছ যে উপকার করে , লাখো মানুষ মিলে সেই উপকার করতে পারে না । মানুষের থেকে বৃক্ষ বেশি আপনজন ।
৫৮। পিতার বন্ধু পিতৃসম , মাতার বন্ধু মাতৃসম , নিজের বন্ধু আত্মসম । সৌহার্দ্যের মধ্যে আছে সমগ্রতা ।
৫৯। একটি জাতি গড়ে ওঠে জাত্যভিমানে । তখন ধ্বনিত হয় এক জাতি , এক দেশ , এক প্রাণ ।
৬০। ধর্মহীন ধর্মীয় বাতাবরণে কর্মহীন কামুক মানুষের ভিড়ে ঈশ্বর থাকতে পারেন না । তাঁর সিংহাসন আমাদের অন্তরে ।
৬১। এই দুনিয়ায় প্রকৃত নাস্তিক নেই । প্রত্যেকের মধ্যে সুপ্ত আস্তিকতা প্রকট । প্রকৃত নাস্তিক ঈশ্বরের সমতুল্য ।
৬২। প্রকৃত ঈশ্বর বিশ্বাস মানুষকে শুদ্ধ করে তোলে । সেই বিশুদ্ধ মানুষ সর্বত্র ঈশ্বরকে দেখতে পান ।
৬৩। বর্তমান সময়ে ডিগ্রি ধারীর পূজা চলছে । ডিগ্রি তো তাপমাত্রার পরিচয় । আলোর উৎস প্রকৃত বিদ্বান মানুষেরা ।
৬৪। বুদ্ধিজীবী নয় , প্রকৃত বুদ্ধিমান মানুষের বড় প্রয়োজন ।
৬৫। বই পড়লে জ্ঞান হয় । সেই জ্ঞান আত্মশুদ্ধি ঘটায় । আত্মশুদ্ধি মহৎ কর্মে প্রেরণা যোগায় । গ্রন্থ না পড়লে মহৎ কর্ম করা খুব কঠিন ।
৬৬। লিটল ম্যাগাজিনের কোন সংখ্যা সাধারণ নয়। সব সংখ্যাই বিশেষ পুনর্জন্ম সংখ্যা ।
৬৭। প্রকৃত শিল্পী আত্মা দ্বারা আত্মাকে আত্মাতে দেখে আত্মমুক্তির পথ খুঁজে পান ।
৬৮। যে কবি যৌনতাকে শারীরিক প্রভাব কাটিয়ে আত্মিক বা নৈসর্গিক করে তুলতে পারেন, তিনি হবেন যৌনতা বিষয়ক কবিতা রচনার অধিকারী ।
৬৯। আজও ভারতীয় নারীরা সহস্রাব্দ অতিক্রান্ত ভারতীয় সংস্কৃতির গুপ্তধনে সিদ্ধ । তাই তাঁদের সাহিত্য- সংস্কৃতিতে মানবিক বোধের পরিচয় স্পষ্ট ।
৭০। শ্রোতার নজর গায়ক , গায়কের নজর তবলাবাদক , এই নজরে সব রহস্য লুকিয়ে আছে ।
৭১। হাজার কবিতা - লেখকদের চেয়ে একজন নিবিষ্ট পাঠক কবিতার জগতে অনেক বেশি অক্সিজেন যোগান । প্রকৃত কবিতা-প্রেমী কবিতা এবং কবির শ্রেষ্ঠ সম্পদ ।
৭২। সাধারণ মানুষ যখন কাঁদেন, ঈশ্বর স্থির। কবি যখন কাঁদেন, ঈশ্বর প্রলয় ডেকে আনেন।
৭৩। যখন কৃষক কাস্তে ছেড়ে অস্ত্র ধরে , শ্রমিক হাতুড়ি ছেড়ে বোম । তখন বুঝতে হবে সমাজে বৈষম্য চরম ।
৭৪। সব মতবাদ মহান । যতক্ষণ মতবাদী মতলবি না হয়ে ওঠেন ।
৭৫। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মতাবলম্বীদের মধ্যে মিল কোথায় বলুন তো ! এরা ধৃতরাষ্ট্রের যমজ সন্তান ।
৭৬। রক্তক্ষয়ী কোনও বিপ্লব সমাজে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে নি । একমাত্র চেতনায় বিপ্লব সমাজে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
৭৭। রাজনীতির অর্থ বদলে যাচ্ছে। প্রাচীনযুগে নীতির রাজা রাজনীতি, মধ্যযুগে রাজার নীতি রাজনীতি, বর্তমানে রাজ করার নীতি রাজনীতি।
৭৮। নেতাদের ক্ষমতা দখলের পিছনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, বিশেষভাবে গরিব মানুষ ।
৭৯। রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র , ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র প্রভৃতি তন্ত্র থেকে তামসিক তান্ত্রিকদের সৃষ্টি হয়, সেই তান্ত্রিকরা খড়গ হাতে নরবলিতে সিদ্ধ হয়ে ওঠে।
৮০। কবিতার শহর কলকাতা। কবিদের দেশ নদীয়া ।
৮১। মান আর হুঁশ যার মধ্যে থাকে, তিনি মানুষ। এখন মানি ( অর্থ ) এবং হুঁশিয়ারি যার বেশি থাকে, সেই ক্ষমতাবান মানুষ।
৮২। যে নিজের বা অপরের দেহ হত্যা করে তাকে দেহ - হত্যাকারী বলা যায় । কিন্তু যে নিজের বা অপরের বিবেক , মনুষ্যত্ব , মূল্যবোধ , সততাকে হত্যা করে তাকেই আত্ম -হত্যাকারী বলা উচিত । এই হত্যাই আত্মহত্যা ।
৮৩। 'নিরপেক্ষ ' শব্দের ব্যঞ্জনা ও কার্যকারিতা প্রায় লুপ্ত । তাই সত্যের পক্ষে সরব হন এবং নিজেকে গড়ে তুলুন ।
৮৪। শিশুর মধ্যে ভগবান আছেন। কারণ শিশুরা ভগবানকে নিজের মনে করে। সংকোচহীন ভাগ্যবান মানুষ ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করেন।
৮৫। দেশবাসীর অর্থ নিয়ে যারা দেশের কাজ করেন , তাদের কোন ইউনিয়ন থাকা উচিত নয় । যে সব ইউনিয়ন আছে সেগুলি দেশের কোনও উপকার করে না বরং দেশবাসীদের শোষণ করে ।
৮৬। অনেকে বলেন, ভারতবর্ষের গণতন্ত্র অশিক্ষার কারণে কার্যকারী হয়ে উঠতে পারছে না । কিন্তু ভোট ব্যবস্থায় শিক্ষিত লোকেরাই তো দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করেন । তারা কেন সৎ , দেশভক্ত , মূল্যবোধ সম্পন্ন মানবিক প্রার্থী নির্বাচন করছেন না !
৮৭। অফুরন্ত মদ্যপান প্রমাণ করে এক শ্রেণির মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ থাকলেও শান্তি নেই ।
৮৮। বর্তমান সময়ে মদ্যপান মহামারির আকার নিয়েছে । মাদকাসক্ত পিতা-মাতার অ্যালকোহলিক সন্তানে বিশ্ব পূর্ণ হতে আর দেরি নেই !
৮৯। ধূমপান করুন, একদম ছাড়বেন না । একদিন ও-ই গুডবাই জানাবে!
৯০। আপনি যদি সুন্দর হয়ে ওঠেন , তাহলে আপনার পরিবার সুন্দর হবে , সমাজ সুন্দর হবে , রাষ্ট্র সুন্দর হবে , সমগ্র বিশ্ব সুন্দর হয়ে উঠবে । তাই নিজে সুন্দর হয়ে উঠুন ।
৯১। মিছিলে যদি নেতাকে চেনা যায় , তবে সেই মিছিল শক্তি হারায় ।
৯২। বছরে কমপক্ষে সাতদিন গৃহত্যাগ করুন । মন সজীব হয়ে উঠবে ।
৯৩। দান করলে অর্থ কমে , মান বাড়ে । মানি থেকে মান অনেক দামি ।
৯৪। ভাগ্যের সহায় যদি কিছু পান, সেটি সযত্নে লুকিয়ে রাখুন। কর্মের সহায় যদি কিছু পান, তবে উদার মনে বিলিয়ে যান। আরও বেশি ফেরত পাবেন ।
৯৫। শিল্পী যদি মার্কেট ধরেন, মার্কেট তাকে ছাড়বে না। শিল্প উধাও।
৯৬। কেউ যদি আপনার দিকে তাকিয়ে না হাসে , তাহলে একা একা হাসুন । প্রকৃতি আপনার সাথে হাসবে ।
৯৭। আমার জিনিস দান করা যায় কিন্তু আমাদের জিনিস অর্জন করতে হয় ।
৯৮। মহাকালের বিচারে সেই লেখা উত্তীর্ণ হয় , যার মধ্যে উত্তরণ আছে । উত্তরণের পথ তিনি দেখাতে পারেন , যিনি সেই পথে হাঁটছেন । বৃহৎ এবং শক্তিশালী মনের মানুষ না হলে কোনও লেখক কী সেই পথ পাড়ি দিতে পারেন !
৯৯। একদিন সেই সূর্য উঠবে । যার চৈতন্যময় আলোকে চারিদিক আলোকিত হবে । আমরা সেই আলোর প্রত্যাশী ।
১০০। স্বপ্ন দেখুন , স্বপ্নহীন মানুষ জীবিত নয় ।
আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কাম্য ।
সন্দীপ গোস্বামী, বনচারী বাগান, নবদ্বীপ, নদীয়া, ভারত, পিন- ৭৪১৩০২