Banner Advertiser

Sunday, January 19, 2014

RE: [mukto-mona] সুধাংশু তুই পালা



You are right. I also noticed this mistake. Ershad added " State religion" in the constitution. 
Regards,
Asoke Bose



From: subimal@yahoo.com
To: mukto-mona@yahoogroups.com
Date: Sun, 19 Jan 2014 20:10:12 -0600
Subject: Re: [mukto-mona] সুধাংশু তুই পালা

 

I am little intrigued. The author of the article has claimed that the first constitution of Bangladesh published in 1972 has in it Islam as the state religion. I think he is wrong. I have read the copy of hand written constitution with Shilpacharyya Zainul Abedin's decorative art on it. I don't remember having noticed any such stipulation in it. 

It might happen that Mizan Rahman has referred to a copy that was printed after Ershad had made Islam the state religion and the publisher has not mentioned the same as "as amended".  This kind of dishonesty on the part of the government can easily mislead a reader and thereby undermine our first version of the constitution. 

I hope the present government will restore the original constitution before it's term is over. 

Meanwhile I am referring this controversial information to MMR Jalal who has a website that archives the documents related to our great liberation movement. 


Sent from my iPhone

On Jan 16, 2014, at 11:25 PM, Asoke Bose <anjbose@hotmail.com> wrote:

 

তারা কোথায় পালাবে বলুন

লিখেছেন: মীজান রহমানবিভাগ: ইতিহাসধর্মবাংলাদেশমানবতাবাদী কর্মকাণ্ডমানবাধিকারমুক্তমনারাজনীতিসমাজতারিখ:  মাঘ ১৪২০ (জানুয়ারি ১৬, ২০১৪)

মীজান রহমান 
মীজান রহমান

আমার দেশী ভাইবোনেরা আরেকদফা আলোচনাতে বসে গেছেন। এবারের আলোচ্য বিষয়ঃ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন। গরম বিষয় সন্দেহ নেই। গোল টেবিলে গোল হয়ে বসে গরম গরম বক্তৃতা করার সুবর্ণ সুযোগ। পার্লামেন্টে গিয়ে ্যালি করতে পারলে তো আরো ভালো। এদুটি জিনিস আমরা ভীষণ ভালবাসি—-আলোচনা আর ্যালি। ্যালির একটা সুবিধা যে পত্রিকার লোকেরা আসে ক্যামেরা নিয়ে। তখন ছবি তোলা হয়। সেছবি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়। ক্যানাডার মত উন্নত দেশের নামীদামী পত্রিকায় ছবি ছাপানোর অর্থ বোঝেন? সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে নাম ছড়িয়ে পড়া। নাম ছড়াতে ছড়াতে কতদূর গড়াতে পারে কে জানে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর, অর্থাৎ নির্বাচন নামক জাতীয় প্রহসনটি সংঘটিত হবার পরপরই, তুষের-আগুণের-মত-মিটমিট-করে-জ্বলতে-থাকা বিষয়টি নতুন তেজে দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে। আওয়ামি লীগের জয় হলে দোষটা ওদের কারণ ওরা দলবল নিয়ে ভোট দিয়ে এসেছে। সুতরাং ধর বেটাদের। ওদিকে বি এন পি জিতে গেলেও ওদেরই দোষ, কারণ ওরা বি এন পি'কে ভোট দেয়নি। অতএব ধর বেটাদের—-ঘাড় ধরে চালান কর ওপারে

এবারের সমস্যাটি আরো জটিল। এবার নির্বাচন হয়েছে, প্রতিযোগিতা হয়নি। মানে জেনারেল এরশাদ নামক এক ঘূণেধরা, একদা-ধিকৃত, একদা-সর্বজনঘৃণিত, অশীতিপর 'নেতা' ততোধিক ঘূণেধরা পার্টিকে ধর্তব্যের কাতারে না রেখে অবশ্য। ধর্তব্যভাবে প্রতিযোগী হবার কথা ছিল যাদের তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি, কারণ তাদের নেতারা নেত্রীরা তাদের অন্য কাজে ব্যস্ত রেখেছিলেন। বাস পোড়ানো, রেললাইন উপড়ানো আর ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠানোর কাজ  নিয়ে দারুণ ব্যস্ত—-১৬ কোটি মানুষের দেশটাকে ৪৮ ঘন্টা আর ৭২ ঘন্টাব্যাপী অচল করে দেয়া চাট্টিখানি কথা নাকি। কড়া নিষেধ ছিল সাধারণ ভোটারদের ওপরঃ সাবধান, ভোট দেবে না। ভোট দিলে বিপদ হবে। সংখ্যালঘুরা সে নিষেধ অমান্য করেছে। কতবড় সাহস তাদের। সেকারণেই ওদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তচনচ করে দেওয়া ওদের সর্বস্ব। সারাজীবনেও যাতে 'ভোট' দেবার কথা না ভাবে তারা সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এক ভয়ার্ত ভদ্রমহিলাকে ধাওয়া করে নদী পাড়ি দিয়ে প্রাণরক্ষা করতে বাধ্য করেছে তারা। তিনি ওদের হাতেপায়ে ধরে বলেছিলেনঃ বাবাগো, তোমরা আমার ভোটের অধিকার নিয়ে নাও। তবুও আমাকে বাঁচতে দাও। তাঁর নিজের দেশ এটি। তাঁর জন্মভূমি এটি। তাঁর বাবামা পিসিমা দিদিমা সবাই এদেশের মাটির উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ হয়ত এই দেশটির জন্যে প্রাণও দিয়েছিলেন '৭১ সালে। জন্মসূত্রে যদি 'সংখ্যালঘু' না হতেন তিনি তাহলে হয়ত বীরাঙ্গনা উপাধি পেতেন রাষ্ট্রপতির নিজের হাতে। কিন্তু তিনি হিন্দু, অতএব 'অপবিত্র', অতএব এই পাকপবিত্র দেশটিতে বসবাসের অযোগ্য

আরো একটি বীভৎস সংবাদ শুনলাম আজকে। গুটিকয় ক্ষুব্ধ যুবক, জামাত কি বি এন পি কি আওয়ামী তাতে কি আসে যায়, একটি আর্তকাতর ভীতসন্ত্রস্ত গৃহস্তের বাড়িতে ঢুকে বাবামাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে্র ভেতর গুঁজে দেয় মোটা গামছা, যাতে টুঁশব্দটি করতে না পারে। তারপর বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে পালাবার চেষ্টা করতে যাওয়া কিশোরী মেয়েকে পাঁজা করে নিয়ে আসে তারা বাবামায়ের সামনে। তারপর তারা কিশোরীটিকে ধর্ষণ করে, ঠিক যেভাবে ধর্ষণ করে গেছে একাত্তরের বর্বরেরা, ঠিক যেভাবে ধর্ষণ করে গেছে একাত্তরের রাজাকারেরা, আল-বদরেরা—-বিয়াল্লিশ বছর পর যাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে আজকে। কিন্ত আমাদের জাতি কি কখনো প্রশ্ন তুলবে ভবিষ্যতে, কখনো কি কোনও মমিন মুসলমান বুকের পাটা খুলে দাঁড়াতে সাহস পাবে জনগণের সামনে এই বলে যে আজকের হিন্দু পরিবারের এই অসহায় মেয়েটিকে যারা, যে পশুগুলি, বারবার, বার বার, একের পর এক, বাবামায়ের অভিশপ্ত দৃষ্টির সামনে, ধর্ষণ করে বেরিয়ে গেল বীরদর্পে, তারাও তো এযুগের নতুন রাজাকার বই কিছু নয়, এবং এদেরও একদিন ঝুলতে হবে ফাঁসির দড়িতে যেমন করে ঝুলেছে ৪২ বছর আগেকার বর্বর কাদের মোল্লা? বিগত যুগের ঘৃণ্য পশুদের শাস্তি দিয়ে যে প্রজন্ম আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে গেছে, তারা কি ঠিক এমনি কঠোর শাস্তির দাবি তুলবে '১৩ সালের নব্য কাদের মোল্লাদের বিরুদ্ধে? না, আমার মনে হয়না। কারণ পুরনো কাদের মোল্লা হিন্দু-মুসলমান বাছবাছাই করেনি, 'স্বাধীনতা' পক্ষে হলেই হল—-কল্লা কাটো। কিন্তু এবার কল্লা যাচ্ছে কেবল 'কাফের'দের। সুধীজনরা হয়ত বলবেন, এটা 'দুঃখজনক', কিন্তু মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডণীয় অপরাধ? নাহ, তা কি করে হয়। দুটো এক জিনিস হয় কি করে একটা ইসলামিক দেশে?

'ইসলামিক' দেশ শব্দটিতে কি পাঠক খুব আপত্তিকর কিছু দেখতে পাচ্ছেন? দেশের শতকারা আশিজনই হয়ত সোৎসাহে বলবেন, কেন আপত্তির কি আছে? আমরা কি ইসলামিক রাষ্ট্র নই? কিন্তু আপনি নিজেকে আধুনিক উচ্চশিক্ষিত নগরকেন্দ্রিক ব্যক্তি হিসেবে ভাবতে পছন্দ করেন। আপনি হয়ত বলবেনঃ না, আমরা ইসলামিক রাষ্ট্র নই, আমরা 'ধর্মনিরপেক্ষ' দেশ। আমরা 'সেকুলার' স্টেট। প্রথমত সেকুলার আর ধর্মনিরপেক্ষ, আমার মতে, দুটি সমার্থক শব্দ নয়। ধর্মনিরপেক্ষ বলতে বোঝায়, সব ধর্মই আছে, সমান অধিকার নিয়ে, এবং রাষ্ট্রকর্মে সব ধর্মকেই সমান সম্মান দেওয়া হবে। আর সেকুলার শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলঃ ধর্মবিষয়ে পরিপূর্ণভাবে নির্লিপ্ত নিরাসক্ত। রাষ্ট্রপরিচালনার ব্যাপারটি সর্বাঙ্গীনভাবেই ইহজাগতিক। এবং 'ইহজাগতিক' দৃষ্টিভঙ্গী, ব্যক্তিগত, সামাজিক রাজনৈতিক বিষয়াদিতে—-একেই আমি বলি সত্যিকার 'সেকুলারিজম', যা আমাদের দেশে নেই, কোনদিন ছিল না, কোনদিন হবে বলেও আমার মনে হয়না। সেকুলার স্টেটের অর্থই ভালো করে বুঝি না আমরা। এর মর্ম কেবল ফ্রান্স, নেদারল্যাণ্ডস, জার্মানীসহ গুটিকয় দেশ ছাড়া আর কেউই ভালো করে বোঝে বলে আমার মনে হয় না। 'সেকুলার' একটি বড়মাপের আইডিয়া, যা সাধারণ মানুষের অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করতে বেশ কতগুলো যুগান্তকারি ঘটনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসতে হয় একটা জাতিকে, বেশ কতগুলো বিপ্লবাত্মক ঘটনা, যার ব্যাপ্তি কেবল রাজনীতিতেই নয়, সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মতেও। এগুলোর কোনটাই আমাদের দেশে ঘটেনি, এবং ঘটবার সম্ভাবনাও খুব আশাপ্রদ নয়

আমাদের রাজনৈতিক নেতানেত্রীগণ, এমনকি শিরোপাপ্রাপ্ত মহা মহা বুদ্ধিজীবীরাও, জোরগলায় দাবি করতে ভালোবাসেন যে আমাদের সোনার দেশটি সর্বতোভাবেই 'ধর্মনিরপেক্ষ' আমি নিজেকে দারুণ কোনও বুদ্ধিজীবী বলে দাবি করিনা বলেই সমান জোরের সঙ্গে দাবি করতে প্রস্তুত যে আমার সোনার দেশটি সর্বতোভাবেই '-ধর্মনিরপেক্ষ' এখন তো নয়ই, এমনকি ১৯৭২ সালেও ছিল না। '৭২ এর ৪ঠা নভেম্বর যে সংবিধানটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়েছিল জাতীয় সংসদে তাতে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' একটি প্রধান শর্ত ছিল সেটা আমি অস্বীকার করছিনা। কিন্তু পাঠক যদি দয়া করে সংবিধানের ছোট অক্ষরগুলো ভালো করে খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলে লক্ষ করবেন যে ওতে লেখা আছেঃ বাংলাদেশের 'রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, যদিও সব ধর্মকেই দেওয়া হবে সমান অধিকার' এটা আবার কেমনতরো কথা। একমুখে বলছি, 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম', আরেকমুখে বলছি 'সব ধর্মের সমান অধিকার' তাহলে সব ধর্মই 'সমানভাবে রাষ্ট্রধর্ম' হল না কেন? অতএব, আমার মতে, ইঁদুরের গর্তটি আসলে গোড়াতেই খোঁড়া হয়েছিল তখনই। প্রথমবারের ছোট্ট ছিদ্রটিকে ভরসা করে পরবর্তী দু'দুজন সামরিক নেতা, যাঁদের উভয়ই জাতির ওপর নিজেদের অক্ষয় পদচিহ্ন অঙ্কন করে গেছেন নিজ নিজ রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে, তাঁরা সেটিকে বিশাল সিংহদুয়ারে পরিণত করে দিয়েছেনএকজন বলেছেন সংসদের প্রতিটি অধিবেশন শুরু হবে 'বিসমিল্লা' দ্বারা (যাতে করে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' ভণিতাটিও সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যায়), আরেকজন  বলেছেন তাঁর সোনার দেশটি এখন থেকে 'ইসলামিক প্রজাতন্ত্র' বলে পরিচিত হবে। সেই 'বিসমিল্লা' সেই 'ইসলামিক প্রজাতন্ত্র' এখনো বলবৎ রয়েছে, এবং থাকবেও। একটি হতদরিদ্র রাষ্ট্রে যদি একবার সরকারি ভর্তুকি ঢোকানো হয় খাদ্যমূল্যতে তাহলে সে ভর্তুকি পরবর্তী কোন সরকারের পক্ষেই তুলে নেওয়া যেমন সম্ভব হয়না বড়রকমের কোনও বিপ্লব ছাড়া, ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের মত একটি ধর্মান্ধ পশ্চাদপদ দেশের সংসদ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ক্রিয়াকাণ্ডে যখন একবার 'বিসমিল্লা' ঢোকানো হয়েছে তখন সেটাকে তুলে নেবার সাধ্য একমাত্র আল্লাপাক ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না। এবং আমাদের নেতানেত্রীদের লেবাস আবাস দেখে মনেও হয়না যে তাঁরা 'বিসমিল্লা-আলহামদুলিল্লা-ইনশাল্লা' প্রভৃতি আরবি অনুপ্রাসযুক্ত বাক্যব্যবহারের প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত থাকার কোনরকম অভিলাস পোষণ করেন। সুতরাং আমার মমিন মুসলমান ভাই-ভগিনীরা, আর যা' করুন দয়া করে দেশটিকে 'ধর্মনিরপেক্ষ' বলবেন না। ওটা বড় কর্কশ একটা গালির মত শোনায়। শুনেছি আমাদের সোনার দেশটি ধনেজনে বিষয়-বৈভবে এশিয়ার অন্য সকল দেশকে টপকে যাবার উপক্রম, আগামি 'সাত বছরের মাঝে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ধনী দেশসমূহের অন্যতম বলে পরিগণিত হবে বলেও ভবিষ্যদবাণী করেছেন জ্ঞানীগুণি পণ্ডিতজনেরা। এসব সুসংবাদ শুনে কার না দিল ভরে যায় খুশিতে। তখন শুধু একটা শব্দই বহির্গত হয় জবান দিয়েঃ 'আলহামদুলিল্লাহ' আল্লার কাছে হাজার শুকুর। -সবই আমি মানিতে রাজি আছি। কিন্তু ভাই, দয়া করে, দোহাই আপনার, আপনার কদম স্পর্শ করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমি, আমাকে কোনক্রমেই উচ্চারণ করতে বলবেন না যে এই দেশটি একটি 'ধর্মনিরপেক্ষ' রাষ্ট্র। আর যা' হই না কেন, হাজার ধনদৌলত থাকুক আমাদের, কিন্তু ধর্ম একটা জিনিস যা থেকে আমরা কস্মিনকালেও নিরপেক্ষ থাকতে পারিনা। আমাদের এদেশটিতে কোনকিছুই মানুষের ইচ্ছায় হয় না, সবই হয় আল্লার ইচ্ছায়, এবং এই আল্লা কোনদিনই চাইবেন না তাঁর পবিত্র নামটি, তাঁর পবিত্র লেবাসটি অন্তর্হিত হোক এখান থেকে

আরো একটি বিশেষ্য প্রতিনিয়তই ব্যবহার করা আমাদের 'রাষ্ট্রধর্ম'টিকে নিয়েসহনশীলতা। আমার জানামতে, একমাত্র প্রাচীনধারার মূর্তিপূজকরা ছাড়া, অন্য কোন ধর্মেই যথার্থভাবে 'সহনশীলতা' বলে কিছু নেই। বিশেষ করে তিনটি বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম, এগুলোতে তো নিজেদের ভেতরেই সহনশীলতা নেই, অন্য ধর্মের প্রতি সেটা থাকার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। আয়ারল্যাণ্ডের ক্যাথলিক আর প্রটেস্টান্টদের মাঝে যে কি সুমধুর সম্পর্ক সেটা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। কিম্বা প্রটেস্টান্টদেরই হাজারখানেক শাখাপ্রশাখার আভ্যন্তরীন কোন্দল, যার রক্তাক্ত ইতিহাস পড়ে পড়েই ছোটবেলায় আমরা পরীক্ষা পাস করেছি। ইহুদীদের খবর জানেন? ইজরায়েলের অন্দরমহলে একটু উঁকি মেরে দেখুনদেখবেন কি তুমুল ঝগড়া সেখানে। যারা ইউরোপ থেকে এসেছে তারা কখনোই আফ্রিকা থেকে আগত ইহুদিদের সঙ্গে এক বাসনে খাওয়া দূরে থাক, এক টেবিলে, এমনকি এক পাড়াতে থাকতেও রাজি নয়। এবার আমাদের নিজেদের মহান ধর্মটি সম্বন্ধে শুনতে চান? পাকিস্তানে মসজিদ পোড়ানো হয় সেটা জানেন তো? বোমা মারা হয় নামাজীদের ওপরই, সেটাও কোন গোপন খবর নয়। এবং সেই বর্বরতাগুলো তারা অবলীলাক্রমে সাধন করে ধর্মের নামেই—-একদল হল শিয়া, আরেকদল সুন্নি। সৌভাগ্যবশত আমাদের 'অপেক্ষাকৃত উদারনৈতিক, সহনশীল' দেশটিতে শিয়ার সংখ্যা খুবই সামান্য, নইলে সেখানেও আরবি তৈলপুষ্ট কওমি মাদ্রাসার গরিব ঘরের বালকগুলোর হাতে হয়ত মারণাস্ত্র দেওয়া হত শিয়াদের উপাসনাগৃহ আক্রমণ করার জন্যে। এটা অবশ্য আমি সর্বান্তরণে স্বীকার করি যে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত আরবি-পাকিস্তানী-আলকায়দা কায়দার বর্বরতা প্রবেশ করেনি পুরোমাত্রায়, তবে তার কারণ এই নয় যে আমাদের সুবোধ বালকেরা বা যুবকেরা সেধরণের পাশবিকতাতে সম্পূর্ণ অপারগ। অপারগ যে নয় তার প্রমাণ তো আমরা সাম্প্রতিক চালচিত্র থেকেই আহরণ করতে পারছি। তাছাড়া কয়েক বছর আগে, বি এন পি' শাসনকালে, মৌলবিসাহেবরা যে ঘড়ি দেখে যুগপৎ গোটা ষাটেক বোমা ফাটালেন সারা দেশব্যাপী তাতেই তো প্রমাণ মেলে যে আল্লাচাহেত হুজুরদের কোনও হিম্মতের অভাব নাই—-হুকুম পেলেই হুজুরেরা জিহাদের প্রাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন অনায়াসে। অতএব, দয়া করে আমাকে 'সহনশীলতা' কথাও শোনাবেন না। সহনশীল আমরা তখনই হই যখন মাথার ওপর ডাণ্ডার ভয় থাকেযেমন  সামরিক শাসন, একনায়ত্ব। খেয়াল করে দেখুন মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশে গণতন্ত্র বলে কোন জিনিস নেই—-হয় রাজা নয় আমির নয় সামরিক শাসনকর্তা। বলতে পারেন, কেন, ইরাণে তো গণতন্ত্র আছে। হ্যাঁ আছে, নাম-কা-ওয়াস্তে। ক্ষমতার চাবিটা কিন্তু প্রেসিডেন্টের হাতে নয়, সেটা হল বড় হুজুরের হাতে—-তাঁর অঙ্গুলিনির্দেশে ঘড়ির কাঁটা ঘোরে, নতুবা ঘোরে না। ইরাণে গণতন্ত্র একটা গণধাপ্পা বই কিছু নয়। আমাদের দেশেও প্রায় একই অবস্থা দাঁড়িয়ে যাবার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত মতে আধুনিক গণতন্ত্র আর ইসলাম, দুটির সহাবস্থান সম্ভব নয়, বরং বলব একে অন্যের জাতশত্রু। আমরা যেন ভুলে না যাই যে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশগুলিতে (এছাড়া অবশ্য অন্য কোনপ্রকার দেশ নেইও সেখানে) সবচেয়ে ঘৃণ্য যে-শব্দটি সেটি হল 'সেকুলারিজম' এটিকে তারা পশ্চিমের সকল দুষ্টরোগের সেরা দুষ্ট বলে মনে করে। এবং আমরা, পাকিস্তানি ইসলামের বর্বরতায় হারানো বহু লক্ষ প্রাণ বহু লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই স্বাধীন দেশটি, আবারো ঠিক সেই পথেই পূর্ণ বিক্রমের সাথে ধেয়ে চলেছি, সেই একই পাকিস্তানি পদ্ধতির ইসলামের সন্ধানে। তার সুস্পষ্ট লক্ষণ আজকের বাংলাদেশের সর্বত্র

লোকে বলে বাংলাদেশের মুসলমান একেবারেই ধর্মান্ধ নয়। আমার মতে সেটি একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। আমাদের মত ধর্মান্ধ জাতি খুব কমই আছে পৃথিবীতে। ধর্ম আমাদের প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে। ধর্ম আমাদের অধরে উদরে গতরে বসনে ভূষণে, সর্বত্র। ধর্ম আমাদের হিজাবে নিকাবে গুম্ফে শশ্রূতে। ধর্ম আমাদের কর্মে চর্মে বর্মে, আমাদের অন্নে বস্ত্রে শিরস্ত্রানে। আমাদের হালাল খাদ্য না হলে চলবে না (যদিও হারাম রুজিতে উল্লেখযোগ্য অরুচি এখনো পরিলক্ষিত হয়নি), হালাল পানীয় না হলে চলবে না, হালাল বস্ত্র না হলে চলবে না। ধর্ম আমাদের শোবার ঘরে, আমাদের পাকের ঘরে, আমাদের শৌচাগারে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি আল্লার নাম। যেদিকে কান পাতি সেদিকেই শুনি আল্লার নাম। এমনকি আল্লার নাম নিয়ে আমাদের মমিন মুসলমানগণ প্রত্যহ উৎকোচও গ্রহণ করেন। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সরকারি তহবিল থেকে। লক্ষ কোটি মুদ্রা ধার করেন সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে, এবং সে ধার পরিশোধ করার যে ব্যাপার আছে একটা সেকথা বেমালুম ভুলে গিয়ে পবিত্র মক্কাশরিফে গিয়ে হজ আদায় করে আসেন, প্রতিবছর উমরাহ করেন, পীরের দরগায় গিয়ে লাখ দুলাখ টাকা সেলামি দান করেন। তা নাহলে, এত ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও, আমরা কেমন করে পরপর কয়েক বছর পৃথিবীর সেরা দুর্নীতিপরায়ন রাষ্ট্র বলে গণ্য হলাম আন্তর্জাতিক জরিপে। এবং আমাদের পর দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্থানীয় দেশগুলিও কেমন করে হয়ে গেল মুসলিমপ্রধানই। নিশ্চয়ই 'ইসলাম'এর সঙ্গে দুর্নীতির কোনরকম সম্পর্ক নেই, অতএব পেয়ারের সম্পর্কটা হয়ত 'মুসলমান'এরই সঙ্গে। এই ধাঁধাটি এখনো ঠিক পরিষ্কার নয় আমার কাছে। বলতে পারেন যে এর কারণ ধর্ম নয়, দারিদ্র্য। হ্যাঁ সেটা একটা যুক্তি বটে। তবে কি জানেন, আফ্রিকার অমুসলমান দেশেও কিন্তু কম দারিদ্র্য নেই। ল্যাটিন আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকাতেও কম দারিদ্র্য নেই। কই, তারা তো দুর্নীতির মাপে আমাদের ধারেকাছে নেই। তাহলে সমস্যাটা কোথায় মনে হচ্ছে আপনার?

সম্প্রতি 'সুধাংশু তুই পালা' শীর্ষক একটা লেখা পড়লাম অনলাইন পত্রিকা 'মুক্তমনা'তে। লিখেছেন অভিজিৎ রায়, অত্যন্ত উঁচুমানের একজন বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী যিনি তাঁর দেশকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, অতীতের শতসহস্র বিপদ বিপর্যয় সত্ত্বেও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই তাঁর কথায় বা কলমে নৈরাশ্য প্রকাশ পায়নি কিন্তু এবার পেয়েছে। এবার যেন তাঁর মনটা একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। তিনি লিখেছেন যে শামসুর রাহমানের প্রিয় কবিতাগুলোর একটির নাম ছিলঃ 'সুধাংশু যাবে না' ভীষণ ভালো লাগতো তাঁর -কবিতাটি, কারণ এর মধ্যে তিনি তাঁর নিজেরই আশাবাদী কন্ঠস্বর শুনতে পেতেন। তাইতো, সুধাংশু কেন যাবে? এদেশ কি তার দেশ নয়? এদেশের মাটি কি তাকে লালন করেনি যেমন করেছে টুপি-দাড়িপরিহিত মমিন মুসলমানদের? এদেশের আলোহাওয়া আকাশজমিন বৃক্ষলতার সমান অধিকার কি তাঁর নেই অন্য সকল দেশবাসীর মত? অবশ্যই আছে। কিন্তু তাই কি? সেই সংশয় থেকেই নির্গত হয়েছে তাঁর এই ব্যথাভারাক্রান্ত রচনাঃ 'সুধাংশু তুই পালা' তাঁরই এক বন্ধু, আলমগীর হুসেন নামক এক সহপাঠী, অনেকদিন আগে লিখেছিলেন শামসুর রাহমানের কবিতার প্যারডি। সেই প্যারডি আজকে ভীমাকার বাস্তবতা নিয়ে দেখা দিয়েছে

অভিজিতের একটি পরিসংখ্যান খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে আমার। ১৯৪১ সালে, অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে, পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ জন, ১৯৪৭ সালে সেটা নেমে যায় ২২ , ১৯৬১ তে ১৮., ১৯৭৪ সালে ১৩., ১৯৮১ তে ১২., ১৯৯১ ১০। এবং বর্তমান সংখ্যা এর নিচে নেমে এসেছে। সংখ্যাগুলো অর্থপূর্ণ, কারণ ক্রমাগত কমে যাওয়ার ধরণটি অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে বেশ মিলে যায়। যেন এরা সবাই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন জাতিকে থাকতে দেওয়া হবে না দেশে। কার্যত তাই ঘটে যাচ্ছে সর্বত্র। আজকে খোলা মন নিয়ে যদি আপনি তাকান চারিদিকের মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাহলে কি চোখে পড়বে আপনার? মনে হবে সব শুকিয়ে গেছে। কেমন যেন মরুভূমির ধূধূ বালির হুহু হাওয়া বইছে চতুর্দিকে। যেন বিরাট এক শ্মশান—-মানবতার শ্মশান। একসময় মধ্যপ্রাচ্য ছিল খৃষ্টধর্মের জন্মস্থান। আজকে ভ্যাটিকেনের পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা না দিয়ে পারেন নাঃ "আমরা যেন স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে না নিই যে মধ্যপ্রাচ্যে খৃস্টান জাতির কোনও চিহ্ন থাকবে না" ব্রিটেনের পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ধর্মমন্ত্রী ব্যারনেস সাইদা ওয়ার্সি নিজে মুসলিম হয়েও মুসলিমপ্রধান দেশগুলোকে খৃস্টানমুক্তকরণের সঙ্ঘবদ্ধ উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গত বছর তাঁর এক ভাষণে তিনি বলেছিলেনঃ

" আমার মতে, যে ধর্ন অন্য কোন ধর্মের অস্তিত্ব সহ্য করতে পারে না, সে ওই অসহিষ্ণুতার ভেতর দিয়ে নিজেরই আভ্যন্তরীণ দুর্বলতাটি প্রকাশ করে দেয়"

ব্যারনেস ওয়ার্সি এই খৃস্টান ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশছাড়া করবার অনতিপ্রচ্ছন্ন প্রয়াসকে একটি 'বিশ্বসংকট' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর উক্তিটি যে অতিরঞ্জিত নয় মোটেও তার প্রমাণ তো সর্বত্র। বাংলাদেশে যেমন সংখ্যালঘুদের বিপদ আসে নির্বাচনের পরপর, তেমনি অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশে খৃস্টানদের মহা বিপদের সময় হল বড়দিন। এবছরই ইরাকে, বড়দিনের কেনাকাটার সময়, গির্জার প্রার্থনাশেষে বাড়ি ফেরার সময় অনেক ধর্মপ্রাণ খৃস্টান হতাহত হয়েছেন। কেনিয়ার মোম্বাসাতে দুটি গির্জায় বোমা ফেলা হয়েছে। ইরাণে বড়দিন উপলক্ষে আনন্দ উৎসব করার অপরাধে অনেক খৃস্টান গ্রেপ্তার হয়েছেন।  সোমালিয়াতে তো সোজা বেআইনিই করে ফেলা হয়েছে বড়দিন পালন করা। এমনকি ফিলিপিনের মত অপেক্ষাকৃত উদারপন্থী দেশেও চার্চ প্রাঙ্গনে বোমা ছোঁড়া হয়েছে। তারপর আমাদের মৌলবিসাহেবদের পেয়ারা দেশঃ পাকিস্তান। সেখানে তো হিন্দু বলে কোন জিনিসই নেই। এবার খৃস্টানও না থাকার দশা। পেশোয়ারে অল সেইন্টস এংলিকানদের একটা চার্চ আছে—-মানে, ছিল। এবছর উপাসকরা সেখানে গিয়ে উপাসনা করেননি, কেঁদেছেন কেবল। কেঁদেছেন গতবছরের কথা স্মরণ করে। ,০১৩ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সেই চার্চের উপসনালয়ে হলভর্তি লোকের উপস্থিতিতে, একটি আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে ৮৭ জন খৃস্টান নিহত হন, আরো ১২০ জন উপাসক হন আহত। ওই গির্জার চূড়ায় দাঁড়ানো ঘড়ির কাঁটাতে সেদিন ছিলঃ ১১ঃ৪৩। সে কাঁটা এখনো থিতু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক জায়গাতেই। পেশোয়ারের খৃস্টানদের জন্য সময় থেমে গেছে সেই অকল্পনীয় মুহূর্তটিতে। পাঠক হয়ত ভাবতে শুরু করেছেন, আমি কেবল খারাপ খবরগুলোই তুলে ধরছি। না ভাই, খারাপ খবর যখন একটা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রকল্প গ্রহণ করে, যখন প্রাণের ভয়, অপমানের ভয়, সম্পত্তি হরণের ভয় আর ধর্ষণের ভয় দিয়ে কুব্জ করে ফেলা হয় পুরো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তখন আর কোনও ভরসাই থাকে না যে সেজায়গাতে মনুষ্যত্ব নামক সূক্ষ্ম বিষয়টির কোনও মূল্য দেবার মত কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। দুবছর আগে মিশরের তথকথিত 'আরব বসন্ত' নিয়ে কতই না মাতামাতি হল সারা বিশ্ব জুড়ে। সে-বসন্তের বাতাস যে নতুন যুগের নতুন সভ্যতার বার্তা বহন করে আনেনি  তার আভাস পেতে কি বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের? 'আরবি বসন্ত' আরবি রূপকথার মতই একটা সশব্দ রসালো গল্প ছাড়া কিছু নয়। যদি মৌলিক পরিবর্তনই হত ওদের সত্যিকার লক্ষ তাহলে আজকে যে সেখানে কপ্ট খৃস্টানদের দেশছাড়া করবার একটা অনতিসূক্ষ্ম প্রয়াস শুরু হয়ে গেছে, মিশরী যুবকযুবতীরা নিশ্চয়ই চুপ করে চেয়ে থাকত না সেদিকে। কপ্টরা হলেন পৃথিবীর আদিমতম খৃস্টানদের একটি স্বতন্ত্র শাখা। প্রায় দুহাজার বছর ধরে তাঁরা বসসাস করেছেন মিশরে। গতানুগতিক খৃস্টানদের থেকে এতটাই স্বতন্ত্র তাঁরা যে তাঁদের নিজস্ব একজন পোপ আছেন। তাঁদের বড়দিনের উৎসব ঠিক একই সময় অনুষ্ঠিত হয়না। তাঁদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি সবকিছুই আলাদা। তাঁদের দুহাজার বছরের ইতিহাসে কখনো কোনও সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী চিন্তাধারার আভাস দেখা যায় নি। পরিপূর্ণভাবে একটি শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী, সেটি তাঁদের পরম শত্রুরাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করবে। অথচ, আজ মিশরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বদোলার মাঝে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে কেবল এই নিরীহ জাতিটিরই, যার একমাত্র কারণ তারা সংখ্যালঘু এবং তারা খৃস্টান। শুনছি তাঁরা দলে দলে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মত করে

এবার চলুন খলিফাদের দেশ তুরস্কে। ১৯২০ সালে ইস্তাম্বুল শহরে প্রায় ২০ লক্ষ খৃস্টান বাস করতেন। ১৯২৩ সালে খেলাফতের পতন ঘটে এবং বীর নেতা কামাল আতাতুর্ক সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন একটি 'সেকুলার' রাষ্ট্র—-ইসলামি দুনিয়ার জন্য যা ছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইস্তাম্বুল শহর থেকে খৃস্টান সম্প্রদায়ের বহির্মুখি গমন চলতে থাকলো অব্যাহত গতিতে। আজকে ইস্তাম্বুলের খৃস্টানসংখ্যা সর্বকূল্যে কয়েক হাজার! সেটা যে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মানুযায়ী ঘটেনি তা বোধ হয় কোন পাঠকের কাছেই অস্পষ্ট নয়

সবার শেষে চলুন যাই মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থল, সৌদি আরবের দেশে, যে দেশের প্রতি সেজদা দিয়ে আমরা প্রত্যহ নামাজ আদায় করি, যে দেশ পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমানের অন্তিম গন্তব্য, যেদেশের কুয়ো থেকে দূষিত জল বয়ামে করে তুলে এনে আমরা দুরারোগে রুগ্ন প্রিয়জনদের নিরাময় আশা করি, সেই দেশের অপরূপ রূপের বর্ণনা শুনুন ধৈর্য ধরে। হজরত মোহম্মদ (দঃ) এর জন্মকালে সেদেশে মুসলমান পরিচয়ের একটি মানুষেরও অস্তিত্ব ছিল না। বেশির ভাগই ছিলেন হাজারো গোত্রভেদে বিভক্ত বেদুইন জাতি, আর ছিলেন প্রচুর পরিমাণ খৃস্টান আর ইহুদী। আজকে, সেই মুসলমানমুক্ত দেশে, দেড় হাজার বছর পর, সেখানে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন জাতির স্থায়ীভাবে বসবাস করার অধিকার নেই। অমুসলমান, যাকে তারা 'কাফের' বা 'বিধর্মী' বলে অভিহিত করেন, তারা সেখানে শ্রমিক হিসেবে সাময়িক অনুমতি পেতে পারেন বাস করার, কিন্তু তারা যেন ভুল করেও নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা চেষ্টা না করেন। তাহলে বিপদ আছে। সেখানে হিন্দু আছে, কিন্তু হিন্দুমন্দির নেই। নিষিদ্ধ। সেখানে গুটিকয়েক খৃস্টানও আছেন, কিন্তু কোনও গির্জা নেই। নিষিদ্ধ। এবং তারা যেন ভুল করেও প্রকাশ্যে বড়দিনের উৎসব পালনের চেষ্টা না করেন। তাহলে তৎক্ষণাৎ শ্রীঘরে চলে যেতে হবে। সৌদিরা অপরাধীকে শাস্তি দেন কিভাবে জানেন তো? দুবছর আগে 'জন বাংলাদেশীকে কিভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাই করেছিলেন তারা সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি কেউ। দয়ামায়া, আপীল আদালত, ওসব সূক্ষ্ম পশ্চিমা জিনিসের ধার ধারে না তারা। কেতাবে লেখা আছেঃ চোখের বদলে চোখ, জানের বদলে জান, ব্যস, তার ওপরে কথা নেই। তারা কেবল কল্লা কেটেই নিবৃত্ত হয়না, সেই মুণ্ডচ্ছিন্ন দেহটিকে হেলিকপ্টারে করে ঝুলিয়ে রাখে, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে অপরাধের শাস্তি কাকে বলে। এর চেয়ে বর্বর, গা-শিউরে-ওঠা, অমানুষিক কাজ পৃথিবীর সবচেয়ে অসভ্য জাতির পক্ষেও সম্ভব নয়

অথচ কি আশ্চর্য, আমরা, স্বাধীন বাংলার স্বাধীন জাতি, পৃথিবীর অন্য সকল জাতিকে বাদ দিয়ে, সভ্যতার সকল ঐতিহ্যময় ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে, আধুনিকতার সকল প্রদীপ্ত আলোকবর্তিকা হতে মুখ ফিরিয়ে, অন্ধ পুজারীর মত, আবিষ্টভাবে, নেশাগ্রস্ত নাবিকের মত, ছুটছি ঠিক ওই সর্বনাশের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের পথে। আজকে আমাদের বিমানবন্দরে আরবি, দোকানের বিজ্ঞাপনে আরবি, রিক্সার পেছনে আরবি, গায়ের অন্তর্বাসে আরবি, টেলিভিশনের পর্দায় আরবি। এই বর্বর জাতির প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি আচার, রীতিনীতি, রেওয়াজ, তাদের 'আল্লা হাফেজ', তাদের কথায় কথায় 'ইনশাল্লাহ' আর 'আলহামদুলিল্লাহ', তাদের পর্দা, বোরখা, হিজাব—-যাকিছু আরবি তা' পাকপবিত্র আমাদের চোখে। এক অদ্ভুত বিড়ম্বনা—-বাহ্যিক দাসত্ব হয়ত এখন আর নেই আমাদের, একাত্তরে তার একটা মীমাংসা হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের স্বেচ্ছাকৃত মানসিক দাসত্বটি দূর করবে কে? এবং ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর প্রহসন যে এই দাসত্বটি আমরা কোন আধুনিক সভ্য জাতির কাছে সঁপে দিই নি, দিয়েছি সবচেয়ে সভ্যতাবিবর্জিত যে-দেশটি, তারই কাছে। আজকে আমাদের সোনার দেশটিতে গিয়ে মনে হবে সৌদি আরবেরই একটা উপনিবেশ হয়ত হবে। তারা দখল করে নিয়েছে বহু লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে প্রাপ্ত দেশটিকে, বিনা যুদ্ধে, কেবল অর্থের জোরে, আর ধর্ম নামক একটি নেশাদ্রব্যের জোরে। আজকে চারিদিকে কেবল আরবি অক্ষর। চারিদিকে আরবি পোশাকএমন জোব্বাজাব্বা আলখোল্লা আমি জীবনেও দেখিনি বাঙালি পুরুষের গায়ে। এমন পাগড়ি আর এমন নুরানি, হেনারাঙ্গা, খুবসুরৎ দাড়িও দেখিনি আগে। এরা কারা? এই জীবগুলো কেমন করে দখল করে নিয়েছে আমাদের দেশটিকে?

সুতরাং আজকে যে হিন্দুদের সংখ্যা এর নিচে নেমে গেছে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। অচিরেই আমরা প্রভু আরবেরই মত হিন্দুমুক্ত রাষ্ট্র হয়ে জান্নাতে ফেরদৌসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছুতে সক্ষম হব। আমাদের দেশে হিন্দুর প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে বৌদ্ধের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই খৃস্টান-জৈন বা বাহাই-কাদিয়ানির। আমরা একটি মরুভূমি তৈরি করব এই দেশটিতে। যেখানে একদিন ধানের চাষ হবে না, হবে কেবল খেজুরের চাষ

আজকে আমি শামসুর রাহমানের মত জোরগলায় ঘোষণা করতে পারছি নাঃ সুধাংশু তুমি যাবে না। আবার আলমগী্র হুসেনের মত তামাসার সুরে বলতেও পারছি নাঃ সুধাংশু তুই পালা। পালিয়ে তারা যাবে কোথায়? ভারত? সেখানে তো কেউ তাদের চেনাজানা কেউ নেই। সেখানে তাদের ঠাঁই হবেই বা কোথায়? জাতিসঙ্ঘের আশ্রয়শিবিরে? আফ্রিকার কোটি কোটি শরণার্থীর মত?

কেন? কেন তাদের পালাতে হবে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে? এই 'কেন'টি কি সোচ্চার হবে একটু? একটু কি কন্ঠ পাবে কারুর? কোনও সাহসী যুবকের? কোনও 'মুক্তিযোদ্ধা'? একটু কি বিবেক নাড়া দেবে কারুর? একটিবার কি আমাদের তরুণসমাজ কাদের মোল্লাদের ফাঁসির দাবি মুলতুবি রেখে হিন্দুনিগ্রহের অভিযানকে রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করবে? যে আমাদের নিজেদেরই জীবনমরণের পরীক্ষা

 

অটোয়া, ১৫ জানুয়ারি, '১৪

মুক্তিসন ৪৩

 





__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___