বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলে দলের প্রবীণ নেতারা মূল্যায়ন হারাতে পারেন। এমন আশঙ্কা থেকেই দলের একটি গ্রুপ এই মহূর্তে তার দেশে আসার পক্ষপাতী নয়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে তারা মুখ খুলছে না। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান দেশে এসে বিএনপির হাল ধরবেন এ প্রত্যাশা দলের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে অনেক দিন থেকেই রয়েছে। অতি সম্প্রতি আদালত তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা করার পর বিএনপির নেতারা মুখ খুলতে শুরু করেন। গত ২৪ মে শুক্রবার তারেককে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী অবহিত করে তার সম্পর্কে ভেবেচিন্তে কথা বলার জন্য সরকারের প্রতি পরামর্শ দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। ওই সময় তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ও নাটক সাজাচ্ছে। তিনি আমাদের মাথার তাজ হয়ে আছেন। অচিরেই দেশে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান অচিরেই দেশে ফিরে আসবেন। এ ক্ষেত্রে সময় সুযোগ বুঝেই তিনি দেশে আসবেন বলছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপির এই সূত্রটি বলছে, দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারেক রহমানও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ ক্ষেত্রে তার জন্য নির্ধারিত ২ থেকে ৩টি আসনে নির্বাচন করতে পারেন তিনি। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানও রয়েছেন দলের আকাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর তালিকায়।
দলের তৃণমূল নেতারা বলছেন, তারেকের দ্রুত দেশে আসা উচিত। বিএনপির অনেক সাংগঠনিক জেলা কমিটি এ বিষয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূল নেতারা মনে করেন, বিএনপির মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় তারেক রহমানের দেশে আসা উচিত। নির্বাচনের আগে এই দলের দুর্বল অবস্থা দূর করে শক্তিশালী অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী তারা । আর এ জন্য তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়ার পক্ষপাতীও বিএনপির তৃণমূল নেতারা। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মাঠ পর্যায় থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের দফতরে প্রতিদিন বহু লিখিত অভিযোগপত্র আসছে। এসব পত্রে তারেক রহমানকে দেশে আনার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, তারেক রহমানকে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে দলের চেয়ারপারসনের ওপর নেতাকর্মীদের চাপ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারেকের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই নিজের অবস্থান জানাবেন তারেক।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তার দেশে আসা নিয়ে উদগ্রীব হয়ে রয়েছে। উনি উনার মাতৃভূমিতে অচিরেই ফিরে আসবেন।
তবে দলের অন্য একটি সূত্র মতে, বিএনপির কিছু নেতা মনে করেন, সরকার যেভাবে বিরোধীদলকে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করছে এতে তারেক রহমান নির্বাচনের অযোগ্য হতে পারেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তারেকের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে তা চালু করে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে পারে সরকার। ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। এসব বিবেচনায় তারা নির্বাচনের আগে তারেকের দেশে আসার পক্ষপাতী নয়। দলে তারেকবিরোধী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত এসব নেতা ভেতরে ভেতরে তারেকের বিরোধিতা করছেন বলেও ওই সূত্রটি দাবি করছে। জানা গেছে, এই গ্রুপটি মনে করে, খালেদার দুর্নীতিবাজ পুত্রকে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে এলে বিএনপি কালিমামুক্ত হতে পারবে না। তাই তারা তারেকের দুর্নীতির বোঝা বিএনপির ঘাড়ে রাখতে নারাজ।
তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে লন্ডনে বসে দলের বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করছেন তারেক রহমান। এসব কারণে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঘন ঘন লন্ডনে গিয়ে তার আশীর্বাদ নিয়ে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। খুব শীঘ্রই তিনি দেশে আসবেন। গত কয়েক বছরে ছাত্রদল, যুবদলের ও বিএনপির মাঝারি পর্যায়ে নেতারাও লন্ডনে গিয়ে তার সুদৃষ্টিতে আসার প্রয়াস চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
__._,_.___