মন্ত্রী অবস্থায়ও এ কে খন্দকার প্রায় একই কথা বলেছিলেন
08 Sep, 2014
'১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, যুদ্ধ প্রস্তুতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা- ইত্যাকার নানা বিষয়ে মুক্তি-বাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকার
যেসব কথা লিখেছেন, ঠিক সে রকম বক্তব্যই তিনি উপস্থাপন করেছেন মন্ত্রী থাকাবস্থায়ও। আওয়ামী লীগ সরকারের এর আগের মেয়াদের এক বছরের মাথায় 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' নামে তাঁর আরেকটি বই বের হয়। তিনজনের আলাপচারিতার ওই সংকলনে এ কে খন্দকার বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।
গত মাসে প্রকাশিত '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে এ কে খন্দকার শুধু আগের বক্তব্যই আরো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' বলে ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন- এমন কথা তিনি আগের বইতে লেখেননি।
'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইটি মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকার, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসান ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গঠিত যুব শিবিরের মহাপরিচালক এস আর মীর্জার মধ্যকার আলাপচারিতাভিত্তিক। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্রের উদ্যোগে ওই তিনজনের যৌথ আলাপের অডিও ধারণ করে বইটি লেখা হয়। পরে সেটি প্রকাশের আগে তাঁরা নিজ নিজ অংশ পড়ে দেখেন ও সম্পাদনা করেন। প্রথমা ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম প্রকাশ করে।
'১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিও প্রথমা থেকে প্রকাশিত। যে বই নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে তুমুল বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারা বইটি বাজেয়াপ্ত করার দাবিও তুলেছেন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, লেখক সত্যি কথা বলছেন বলেই আওয়ামী লীগ নেতাদের গায়ে আগুন লেগেছে।
দুটি বইতেই কয়েকটি বিষয়ে এ কে খন্দকার যা বলেছেন, তা আওয়ামী লীগের দাবিকে নাকচ করে দেয়। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে একেবারে নাকচ করে দেন লেখক। এমনকি তিনি বিভিন্নজনের বরাত দিয়ে এও বলেছেন যে, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একটি স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করিয়ে রাখতে চাইলে তাতেও রাজি হননি বঙ্গবন্ধু। দুটি বইতেই এ কে খন্দকার মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আবার তাঁকে ডিঙিয়ে অন্য আরেকজনকে বড় পদ দেওয়ায় ব্যক্তিগত ক্ষোভও উঠে এসেছে এ কে খন্দকারের বইয়ে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এ কে খন্দকার অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার (১৯৭৬-১৯৮২) ছিলেন। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন।
মন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রকাশিত বইয়ে একই ধরনের কথা লেখা হলেও আওয়ামী লীগ তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরায়নি। এ নিয়ে বড় কোনো বিতর্কও বাধেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় এক দফা আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল শাহবাগের শহীদ রুমি স্কোয়াডের অনশনরতদের কাছে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন তিনি। তখন গুঞ্জন ওঠে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে তিনি মূলত সরকার থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভায় আর তাঁর জায়গা হয়নি।
শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি : 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' ও '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বই দুটিতে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে এ কে খন্দকারের বক্তব্য হলো- 'প্রথমে ঘোষণাটি তৈরি করেন বেতারের কিছু কর্মী। যেটি ২৬ মার্চ পাঠ করা হয়। পরে মেজর জিয়াউর রহমানকে ডেকে এনে তাঁকে দিয়ে আবার পাঠ করানো হয় ২৭ মার্চ।'
এ বিষয়ে 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইতে এ কে খন্দকার বলেন, '...তখন তাঁরা (বেতারকর্মীরা) সবাই মিলে একটা স্বাধীনতার ঘোষণার খসড়া তৈরি করলেন এবং সেই খসড়াটি তাঁরা ২৬ মার্চ দুপুর ২টায় কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে গিয়ে নিজেরা তা চালু করে প্রচার করেন। সেই ঘোষণা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান পাঠ করেন।'
আওয়ামী লীগের দাবি, ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ দাবিটি সম্পূর্ণ নাকচ করে দেন এ কে খন্দকার '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইয়ে। তিনি লিখেছেন, 'পরবর্তী সময়ে ঘটনার প্রায় এক বছর পর আরেকটা কথা প্রচার করা হয় যে, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। এই তথ্যটি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
এ কে খন্দকার লিখেছেন, '...তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু যাঁর মারফত এই ঘোষণা ইপিআরের বার্তাকেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তি স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও জনসমক্ষে এলেন না কেন? বঙ্গবন্ধুও তাঁর জীবদ্দশায় কখনো সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি কেন? একইভাবে চট্টগ্রামের ইপিআর বেতারকেন্দ্র থেকে কে, কিভাবে জহুর আহমেদকে বার্তাটি পাঠালেন, তা রহস্যাবৃত্তই থেকে গেছে। কাজেই ইপিআরের বার্তাকেন্দ্র ব্যবহার করে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন- এটা সম্ভবত বাস্তব নয়। দ্বিতীয়ত, জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে এমন কোনো সংবাদ আমরা শুনিনি।'
জিয়ার ঘোষণা স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না : এ কে খন্দকার জিয়াউর রহমানকেও স্বাধীনতার ঘোষক মানেননি। 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন'-এ তিনি উল্লেখ করেছেন, 'বেতারকর্মীরা প্রথমে বেতারকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করতে মেজর জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এতে মেজর জিয়া সম্মতি দিয়েছিলেন। পরে সেখানে একজনের মনে হয়, স্বাধীনতার ঘোষণা একজন সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে বেতারে বলানো গেলে এর প্রভাব সারা দেশে পড়বে। সে চিন্তা থেকেই জিয়াউর রহমানকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা আবার পাঠ করানো হয়। অবশ্য এ কে খন্দকার এও বলেন, চট্টগ্রাম বেতারের কর্মচারীরা নিজ উদ্যোগে মেজর জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। জিয়া তাঁদের কাছে যাননি।'
বইটিতে এ কে খন্দকার আরো উল্লেখ করেন, 'মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে প্রথম ঘোষণাটি ভুলভাবে দিলেন। তাতে তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। এতে সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ঘোষণা তো তাঁর দেওয়ার কথা নয়! এরপর তা সংশোধন করা হয়। ঘোষণা আগে থেকেই যেটি তৈরি ছিল, সেটি আবার জিয়ার কণ্ঠে টেপে ধারণ করা হয় এবং সেটি জিয়া পড়েন ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে।'
আর '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইয়ে এ কে খন্দকার বলেন, 'মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন না বা স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না।'
ঘোষণা রেকর্ডও করতে চাননি বঙ্গবন্ধু : বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন এ কে খন্দকার। '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে তিনি এ প্রসঙ্গে লেখেন, '২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকা ছেড়ে চলে যান, তখন একটা চরম সংকটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবাই ভাবতে থাকেন, এখন আমাদের কী করণীয়। এ সময় তাজউদ্দীন আহমদসহ আরো কিছু নেতা বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি টেপ রেকর্ডার এবং স্বাধীনতা ঘোষণার একটা খসড়া বঙ্গবন্ধুকে দেন এবং তাঁকে তা পড়তে বলেন। কিন্তু তিনি তা পড়েননি।... কোনো মাধ্যমে বা চিরকুট পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে- ২৫ মার্চ রাতে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন। অথচ তাঁরা কেউ কিছু আঁচ করতে পারবেন না বা জানতে পারবেন না, এটা তো হয় না। ... বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেনই, তবে তিনি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় থাকবেনই বা কেন।'
'১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে এ কে খন্দকার আরো লেখেন, 'তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করিয়ে রেকর্ড রাখার চেষ্টা করলে তা না করার কারণ হিসেবে তাজউদ্দীনকে শেখ মুজিব বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের বিচার করতে পারবে। এ কথায় তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত রাত ৯টার পরপরই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে মঈদুল হাসান এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনিও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মোমিন বলেন, তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন দেখেন, তাজউদ্দীন আহমদ খুব রাগান্বিত চেহারায় ফাইলপত্র বগলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল মোমিন তাজউদ্দীনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রেগে চলে যাও কেন? তখন তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর কাছে আগের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু একটু ঝুঁকিও নিতে রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছে।'
তাজউদ্দীন আহমদের লেখা খসড়াটি পড়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচার হতে থাকে, তখন অবাক হয়ে যান এ কে খন্দকার। তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'অবাক করার বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণার সেই খসড়াটি, যা তাজউদ্দীন আহমদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রায় হুবহু একটি নকল বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের ঘোষণা হিসেবে প্রচার হতে দেখি।'
আওয়ামী লীগের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না : ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর আগে পাকিস্তানিরা প্রস্তুতি নিলেও আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনো যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না বলে দুটি বইতেই দাবি করেছেন এ কে খন্দকার। তাঁর মনে হয়েছিল, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান ভুল করেছিলেন ও তাজউদ্দীন আহমদেরও যুদ্ধ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না বলে দাবি এ কে খন্দকারের।
পাকিস্তানিদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইয়ে তিনি লেখেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পথে। কিন্তু আমাদের করণীয় কী- এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। কোনো নির্দেশ আমরা পাইনি। এ থেকে আমাদের, অর্থাৎ কর্মরত বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের মনে হয়েছিল, আসলে আওয়ামী লীগের দিক থেকে কোনো প্রকার যুদ্ধ প্রস্তুতি নেই। এমনকি এ-সংক্রান্ত কোনো চিন্তাভাবনাও তাদের ছিল বলে মনে হয়নি।'
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল না বলে উল্লেখ করে '১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইয়ে লেখা হয়েছে, 'ভাষণে চূড়ান্ত কোন দিকনির্দেশনা পাওয়া গেল না। ভাষণটির পর মানুষজন ভাবতে শুরু করল- এরপর কী হবে? আওয়ামী লীগের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় যুদ্ধ শুরু করার কথা বলাও একেবারে বোকামি হতো। সম্ভবত এ কারণেই বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে বিরত থাকেন। তা ছাড়া ইয়াহিয়া খান নিজেও ওই ধরনের ঘোষণা না দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়তো ঢাকায় ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণে যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দ ছিল 'জয় পাকিস্তান'। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, 'জয় পাকিস্তান।' অবশ্য বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি 'জয় পাকিস্তান' শব্দের আগে 'জয় বাংলা' শব্দটি জুড়ে দিয়ে একটি সংশোধনী দিয়েছেন।
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাটিকে এ কে খন্দকারের কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, '...যাহোক, বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি আপাতত একটি রহস্য হয়ে আছে। আমার বিশ্বাস, এ রহস্যকে বহু গবেষক ও ঐতিহাসিক বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করবেন। যদি কেউ একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবের গ্রেপ্তার হওয়াকে বিশ্লেষণ করেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ হবে না। বিষয়টিকে দেখতে হবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, আঙ্গিক ও অবস্থান থেকে। এ নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া উচিত।'
২ মার্চ 'এমভি সোয়াত' নামের একটি পাকিস্তানি জাহাজে প্রায় সাত হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার খবর উল্লেখ করে '১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইতে এ কে খন্দকার লিখেছেন, 'এ সংবাদ আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই জানতেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি এবং পূর্ব পাকিস্তানে (পাকিস্তানিদের) শক্তি বৃদ্ধির দিকে ছিল না। তাঁদের একটি ধারণা ছিল, তাঁরা সমস্যাটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করে ফেলবেন। আমি মনে করি, জাতির এ ধরনের ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়াও একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল, যাতে একটি ব্যর্থ হলে অন্যটি প্রয়োগ করা যায়। আমি এমন কোন তথ্য পাইনি, যাতে মনে করতে পারি যে, রাজনৈতিক পন্থা ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের নেতারা বিকল্প পন্থা হিসেবে অন্য কোন উপায় ভেবে রেখেছিলেন।'
এ কে খন্দকার আরো লিখেছেন, 'সেনা কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় চট্টগ্রামসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানেই বাঙ্গালি সেনাদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, ফলে যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ২৫ মার্চ রাতেও শেষ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন শেখ মুজিবকে জয়দেবপুর নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে। তাঁর এ উদ্যোগও সফল হয়নি।'
'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইটিতে যুদ্ধ সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, '... ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু করে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ নিলেন না যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্ব যুদ্ধ পরিচালনা করবেন কিভাবে? যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না, এমনকি তাজউদ্দীন আহমদেরও।'
ওসমানী যুদ্ধের জন্য কিছুই করেননি : এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন'-এ তিনি বলেন, 'প্রথম থেকে প্রায় শেষের কাছাকাছি পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একজনের নির্ভর করে ছিল। তিনি হচ্ছেন কর্নেল ওসমানী। সত্যি কথা বলতে কি, কর্নেল ওসমানী তখন অর্থাৎ মার্চে এবং পরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের সদর দপ্তরে থেকেও যুদ্ধের জন্য বস্তুত কিছুই করেননি।'
'১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইতে যুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের ওসমানীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ কে খন্দকার। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণেই যুদ্ধ পরিচালনার মতো দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও ওসমানীকে এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়।'
আতাউল গণি ওসমানী যুদ্ধ বুঝতেন না বলেও স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে এ কে খন্দকারের বইয়ে। তিনি বলেছেন, 'কর্নেল ওসমানী মাঠপর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যুদ্ধ চলাকালে তিনি মূলত প্রশাসন বিষয়ে বেশি নজরদারি করতেন। যেমন- অমুককে ওই স্থান থেকে বদলি করা, এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে কাউকে নিযুক্ত করা, কারও পদোন্নতি বা পদভ্রংশ করা, বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা ইত্যাদি। তিনি যুদ্ধের কলাকৌশল নিয়ে বিশেষ কোন নির্দেশ দিতেন না।'
অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আবদুর রবকে চিফ অব আর্মি স্টাফ ও এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল এ কে খন্দকারের। তিনি বলেন, 'চিফ অব স্টাফের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েও রবকে সার্বক্ষণিক আগরতলায় রাখা হয়েছিল। আর চিফ অব স্টাফের সব দায়িত্ব শেষ দিন পর্যন্ত আমাকেই পালন করতে হয়।'
এ কে খন্দকার আরো বলেন, তাজউদ্দীন সাহেব নিজেই একদিন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, 'খন্দকার সাহেব, আমি আপনাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি, কারণ আমাকে বলা হয় যে এ বিষয়ে সেনা সদস্যদের কয়েকজন বিরোধিতা করতে পারে।'
যেসব কথা লিখেছেন, ঠিক সে রকম বক্তব্যই তিনি উপস্থাপন করেছেন মন্ত্রী থাকাবস্থায়ও। আওয়ামী লীগ সরকারের এর আগের মেয়াদের এক বছরের মাথায় 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' নামে তাঁর আরেকটি বই বের হয়। তিনজনের আলাপচারিতার ওই সংকলনে এ কে খন্দকার বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।
গত মাসে প্রকাশিত '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে এ কে খন্দকার শুধু আগের বক্তব্যই আরো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধু 'জয় পাকিস্তান' বলে ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন- এমন কথা তিনি আগের বইতে লেখেননি।
'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইটি মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকার, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসান ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গঠিত যুব শিবিরের মহাপরিচালক এস আর মীর্জার মধ্যকার আলাপচারিতাভিত্তিক। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণাকেন্দ্রের উদ্যোগে ওই তিনজনের যৌথ আলাপের অডিও ধারণ করে বইটি লেখা হয়। পরে সেটি প্রকাশের আগে তাঁরা নিজ নিজ অংশ পড়ে দেখেন ও সম্পাদনা করেন। প্রথমা ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম প্রকাশ করে।
'১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিও প্রথমা থেকে প্রকাশিত। যে বই নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে তুমুল বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারা বইটি বাজেয়াপ্ত করার দাবিও তুলেছেন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, লেখক সত্যি কথা বলছেন বলেই আওয়ামী লীগ নেতাদের গায়ে আগুন লেগেছে।
দুটি বইতেই কয়েকটি বিষয়ে এ কে খন্দকার যা বলেছেন, তা আওয়ামী লীগের দাবিকে নাকচ করে দেয়। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে একেবারে নাকচ করে দেন লেখক। এমনকি তিনি বিভিন্নজনের বরাত দিয়ে এও বলেছেন যে, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একটি স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করিয়ে রাখতে চাইলে তাতেও রাজি হননি বঙ্গবন্ধু। দুটি বইতেই এ কে খন্দকার মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আবার তাঁকে ডিঙিয়ে অন্য আরেকজনকে বড় পদ দেওয়ায় ব্যক্তিগত ক্ষোভও উঠে এসেছে এ কে খন্দকারের বইয়ে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এ কে খন্দকার অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার (১৯৭৬-১৯৮২) ছিলেন। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন।
মন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রকাশিত বইয়ে একই ধরনের কথা লেখা হলেও আওয়ামী লীগ তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরায়নি। এ নিয়ে বড় কোনো বিতর্কও বাধেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় এক দফা আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল শাহবাগের শহীদ রুমি স্কোয়াডের অনশনরতদের কাছে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন তিনি। তখন গুঞ্জন ওঠে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে তিনি মূলত সরকার থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভায় আর তাঁর জায়গা হয়নি।
শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি : 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' ও '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বই দুটিতে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে এ কে খন্দকারের বক্তব্য হলো- 'প্রথমে ঘোষণাটি তৈরি করেন বেতারের কিছু কর্মী। যেটি ২৬ মার্চ পাঠ করা হয়। পরে মেজর জিয়াউর রহমানকে ডেকে এনে তাঁকে দিয়ে আবার পাঠ করানো হয় ২৭ মার্চ।'
এ বিষয়ে 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইতে এ কে খন্দকার বলেন, '...তখন তাঁরা (বেতারকর্মীরা) সবাই মিলে একটা স্বাধীনতার ঘোষণার খসড়া তৈরি করলেন এবং সেই খসড়াটি তাঁরা ২৬ মার্চ দুপুর ২টায় কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে গিয়ে নিজেরা তা চালু করে প্রচার করেন। সেই ঘোষণা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান পাঠ করেন।'
আওয়ামী লীগের দাবি, ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ দাবিটি সম্পূর্ণ নাকচ করে দেন এ কে খন্দকার '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইয়ে। তিনি লিখেছেন, 'পরবর্তী সময়ে ঘটনার প্রায় এক বছর পর আরেকটা কথা প্রচার করা হয় যে, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। এই তথ্যটি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
এ কে খন্দকার লিখেছেন, '...তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু যাঁর মারফত এই ঘোষণা ইপিআরের বার্তাকেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তি স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও জনসমক্ষে এলেন না কেন? বঙ্গবন্ধুও তাঁর জীবদ্দশায় কখনো সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি কেন? একইভাবে চট্টগ্রামের ইপিআর বেতারকেন্দ্র থেকে কে, কিভাবে জহুর আহমেদকে বার্তাটি পাঠালেন, তা রহস্যাবৃত্তই থেকে গেছে। কাজেই ইপিআরের বার্তাকেন্দ্র ব্যবহার করে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন- এটা সম্ভবত বাস্তব নয়। দ্বিতীয়ত, জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে এমন কোনো সংবাদ আমরা শুনিনি।'
জিয়ার ঘোষণা স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না : এ কে খন্দকার জিয়াউর রহমানকেও স্বাধীনতার ঘোষক মানেননি। 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন'-এ তিনি উল্লেখ করেছেন, 'বেতারকর্মীরা প্রথমে বেতারকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে আলাপ করতে মেজর জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এতে মেজর জিয়া সম্মতি দিয়েছিলেন। পরে সেখানে একজনের মনে হয়, স্বাধীনতার ঘোষণা একজন সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে বেতারে বলানো গেলে এর প্রভাব সারা দেশে পড়বে। সে চিন্তা থেকেই জিয়াউর রহমানকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা আবার পাঠ করানো হয়। অবশ্য এ কে খন্দকার এও বলেন, চট্টগ্রাম বেতারের কর্মচারীরা নিজ উদ্যোগে মেজর জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। জিয়া তাঁদের কাছে যাননি।'
বইটিতে এ কে খন্দকার আরো উল্লেখ করেন, 'মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে প্রথম ঘোষণাটি ভুলভাবে দিলেন। তাতে তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। এতে সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ঘোষণা তো তাঁর দেওয়ার কথা নয়! এরপর তা সংশোধন করা হয়। ঘোষণা আগে থেকেই যেটি তৈরি ছিল, সেটি আবার জিয়ার কণ্ঠে টেপে ধারণ করা হয় এবং সেটি জিয়া পড়েন ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে।'
আর '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইয়ে এ কে খন্দকার বলেন, 'মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন না বা স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না।'
ঘোষণা রেকর্ডও করতে চাননি বঙ্গবন্ধু : বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন এ কে খন্দকার। '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে তিনি এ প্রসঙ্গে লেখেন, '২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকা ছেড়ে চলে যান, তখন একটা চরম সংকটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবাই ভাবতে থাকেন, এখন আমাদের কী করণীয়। এ সময় তাজউদ্দীন আহমদসহ আরো কিছু নেতা বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি টেপ রেকর্ডার এবং স্বাধীনতা ঘোষণার একটা খসড়া বঙ্গবন্ধুকে দেন এবং তাঁকে তা পড়তে বলেন। কিন্তু তিনি তা পড়েননি।... কোনো মাধ্যমে বা চিরকুট পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে- ২৫ মার্চ রাতে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন। অথচ তাঁরা কেউ কিছু আঁচ করতে পারবেন না বা জানতে পারবেন না, এটা তো হয় না। ... বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেনই, তবে তিনি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় থাকবেনই বা কেন।'
'১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' বইটিতে এ কে খন্দকার আরো লেখেন, 'তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করিয়ে রেকর্ড রাখার চেষ্টা করলে তা না করার কারণ হিসেবে তাজউদ্দীনকে শেখ মুজিব বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের বিচার করতে পারবে। এ কথায় তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত রাত ৯টার পরপরই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে মঈদুল হাসান এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনিও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মোমিন বলেন, তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন দেখেন, তাজউদ্দীন আহমদ খুব রাগান্বিত চেহারায় ফাইলপত্র বগলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল মোমিন তাজউদ্দীনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রেগে চলে যাও কেন? তখন তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর কাছে আগের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু একটু ঝুঁকিও নিতে রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছে।'
তাজউদ্দীন আহমদের লেখা খসড়াটি পড়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচার হতে থাকে, তখন অবাক হয়ে যান এ কে খন্দকার। তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'অবাক করার বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণার সেই খসড়াটি, যা তাজউদ্দীন আহমদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রায় হুবহু একটি নকল বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের ঘোষণা হিসেবে প্রচার হতে দেখি।'
আওয়ামী লীগের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না : ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর আগে পাকিস্তানিরা প্রস্তুতি নিলেও আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনো যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না বলে দুটি বইতেই দাবি করেছেন এ কে খন্দকার। তাঁর মনে হয়েছিল, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান ভুল করেছিলেন ও তাজউদ্দীন আহমদেরও যুদ্ধ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না বলে দাবি এ কে খন্দকারের।
পাকিস্তানিদের প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইয়ে তিনি লেখেন, 'পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পথে। কিন্তু আমাদের করণীয় কী- এ প্রসঙ্গে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। কোনো নির্দেশ আমরা পাইনি। এ থেকে আমাদের, অর্থাৎ কর্মরত বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের মনে হয়েছিল, আসলে আওয়ামী লীগের দিক থেকে কোনো প্রকার যুদ্ধ প্রস্তুতি নেই। এমনকি এ-সংক্রান্ত কোনো চিন্তাভাবনাও তাদের ছিল বলে মনে হয়নি।'
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল না বলে উল্লেখ করে '১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইয়ে লেখা হয়েছে, 'ভাষণে চূড়ান্ত কোন দিকনির্দেশনা পাওয়া গেল না। ভাষণটির পর মানুষজন ভাবতে শুরু করল- এরপর কী হবে? আওয়ামী লীগের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় যুদ্ধ শুরু করার কথা বলাও একেবারে বোকামি হতো। সম্ভবত এ কারণেই বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে বিরত থাকেন। তা ছাড়া ইয়াহিয়া খান নিজেও ওই ধরনের ঘোষণা না দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়তো ঢাকায় ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণে যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দ ছিল 'জয় পাকিস্তান'। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, 'জয় পাকিস্তান।' অবশ্য বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি 'জয় পাকিস্তান' শব্দের আগে 'জয় বাংলা' শব্দটি জুড়ে দিয়ে একটি সংশোধনী দিয়েছেন।
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাটিকে এ কে খন্দকারের কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, '...যাহোক, বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি আপাতত একটি রহস্য হয়ে আছে। আমার বিশ্বাস, এ রহস্যকে বহু গবেষক ও ঐতিহাসিক বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করবেন। যদি কেউ একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবের গ্রেপ্তার হওয়াকে বিশ্লেষণ করেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ হবে না। বিষয়টিকে দেখতে হবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, আঙ্গিক ও অবস্থান থেকে। এ নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া উচিত।'
২ মার্চ 'এমভি সোয়াত' নামের একটি পাকিস্তানি জাহাজে প্রায় সাত হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার খবর উল্লেখ করে '১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইতে এ কে খন্দকার লিখেছেন, 'এ সংবাদ আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই জানতেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি এবং পূর্ব পাকিস্তানে (পাকিস্তানিদের) শক্তি বৃদ্ধির দিকে ছিল না। তাঁদের একটি ধারণা ছিল, তাঁরা সমস্যাটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করে ফেলবেন। আমি মনে করি, জাতির এ ধরনের ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়াও একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল, যাতে একটি ব্যর্থ হলে অন্যটি প্রয়োগ করা যায়। আমি এমন কোন তথ্য পাইনি, যাতে মনে করতে পারি যে, রাজনৈতিক পন্থা ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের নেতারা বিকল্প পন্থা হিসেবে অন্য কোন উপায় ভেবে রেখেছিলেন।'
এ কে খন্দকার আরো লিখেছেন, 'সেনা কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় চট্টগ্রামসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানেই বাঙ্গালি সেনাদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, ফলে যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ২৫ মার্চ রাতেও শেষ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন শেখ মুজিবকে জয়দেবপুর নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে। তাঁর এ উদ্যোগও সফল হয়নি।'
'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন' বইটিতে যুদ্ধ সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, '... ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু করে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র পদক্ষেপ নিলেন না যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্ব যুদ্ধ পরিচালনা করবেন কিভাবে? যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না, এমনকি তাজউদ্দীন আহমদেরও।'
ওসমানী যুদ্ধের জন্য কিছুই করেননি : এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। 'মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন'-এ তিনি বলেন, 'প্রথম থেকে প্রায় শেষের কাছাকাছি পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একজনের নির্ভর করে ছিল। তিনি হচ্ছেন কর্নেল ওসমানী। সত্যি কথা বলতে কি, কর্নেল ওসমানী তখন অর্থাৎ মার্চে এবং পরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের সদর দপ্তরে থেকেও যুদ্ধের জন্য বস্তুত কিছুই করেননি।'
'১৯৭১ : ভেতরে-বাইরে' বইতে যুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের ওসমানীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ কে খন্দকার। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণেই যুদ্ধ পরিচালনার মতো দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও ওসমানীকে এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়।'
আতাউল গণি ওসমানী যুদ্ধ বুঝতেন না বলেও স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে এ কে খন্দকারের বইয়ে। তিনি বলেছেন, 'কর্নেল ওসমানী মাঠপর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যুদ্ধ চলাকালে তিনি মূলত প্রশাসন বিষয়ে বেশি নজরদারি করতেন। যেমন- অমুককে ওই স্থান থেকে বদলি করা, এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে কাউকে নিযুক্ত করা, কারও পদোন্নতি বা পদভ্রংশ করা, বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা ইত্যাদি। তিনি যুদ্ধের কলাকৌশল নিয়ে বিশেষ কোন নির্দেশ দিতেন না।'
অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আবদুর রবকে চিফ অব আর্মি স্টাফ ও এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল এ কে খন্দকারের। তিনি বলেন, 'চিফ অব স্টাফের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েও রবকে সার্বক্ষণিক আগরতলায় রাখা হয়েছিল। আর চিফ অব স্টাফের সব দায়িত্ব শেষ দিন পর্যন্ত আমাকেই পালন করতে হয়।'
এ কে খন্দকার আরো বলেন, তাজউদ্দীন সাহেব নিজেই একদিন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, 'খন্দকার সাহেব, আমি আপনাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি, কারণ আমাকে বলা হয় যে এ বিষয়ে সেনা সদস্যদের কয়েকজন বিরোধিতা করতে পারে।'
উৎসঃ কালের কণ্ঠ
__._,_.___