মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে নিবেদিত ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী, রাজনীতি করুন বা না করুন '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের ও তাদের মিত্রদের বর্তমানে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্য করেছে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন মহামন্দায় দ্বারা আক্রান্ত, স্বদেশ যখন নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে মন্দা কাটিয়ে উন্নয়নের চেষ্টায় রত, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল হতে সক্ষম হয়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ঘটিয়ে বেকারত্ব হ্রাসের চেষ্টা করছে, তখন যুদ্ধাপরাধী দল ও যুদ্ধাপরাধী মিত্রদের অহেতুক হরতাল ডাকা, হরতালের নামে হরতালের আগেই আগুন জ্বালিয়ে গাড়ি ও চারকদের জীবন্ত দগ্ধ করে মেরে সরকারকে এবং দেশের রাজনীতিকে জঙ্গী রূপদানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে এই প্রমাণ করেছে যে,
১. আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা দেশের রাজনীতিকে জঙ্গী ও সহিংস করে তুলে অ-রাজনৈতিক অশুভ শক্তিকে ক্ষমতা গ্রহণে উৎসাহী করেছে যে অশুভ শক্তি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ বিরোধী। সুতরাং যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মিত্রদের সমর্থনকারী।
২. আগামী নির্বাচন হবে তাদের বাঁচা-মরার লড়াই, যে লড়াইয়ে জিততে তারা দেশ, দেশের স্বাধীনতা, জাতির স্বার্থবিরোধী যে কোন পন্থা বেছে নিতেও ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না। সুতরাং, এই লড়াই হতে আবার '৭১-এর লড়াই। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধী, তাদের মিত্র নব্য রাজাকার, আলবদরদের লড়াই। এ লড়াই জনগণকে সঙ্গে নিতে এখুনি মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের ব্যাপক প্রচারণায় নামতে হবে।
৩. লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের মিত্ররা প্রথমেই নিরীহ গ্রামের মানুষ মেরে দেশে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। বিএনপির জনসভায় আগত রেললাইনে বসা মানুষের ওপর রেল চালিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ওই সভায় খালেদার উপস্থিতির সময় এবং রেল চালিয়ে মানুষ হত্যার সময় দুটি খুব কাছাকাছি ছিল যা উদ্দেশ্যপূর্ণ বলেই অনেকে ধরে নিয়েছে। অর্থাৎ দেশে আওয়ামী লীগকে নির্বিঘেœ উন্নয়নের কাজ করতে দেওয়া হবে না।
৪. পরবর্তীতে দেখা গেল, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ধর্মঘটের পরিবর্তে শিক্ষক ধর্মঘট শুরু করা হলো এবং শুরু করা হলো বুয়েট দিয়ে! অবশ্য এ তথ্য সবার জানা যে, বুয়েটে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির দল ভারি। ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে পাঠদানকারীদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীপন্থীর জন্মদান করা হয়েছিল একজন ডাকসাইটে প্রকৌশলী ভিসি দ্বারা। এর পর পর শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর শাবিপ্রবিতে। শিবির দ্বারা গোলমাল শুরু করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। শান্তিপূর্ণ লেখাপড়ার পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে রাখা এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। শোনা যায়, এসব তারেকের কূটবুদ্ধি অথবা বিএনপি নেত্রীর ইচ্ছায় হয়েছে যার কাছে মাতা নত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ। এমনই গুজব রটেছে বাজারে। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পত্রিকায় তারেক রহমানের গুরুতর অসুস্থতার খবর প্রকাশ পেয়েছে।
৫. এর রেশ কাটতে না কাটতেই বিশাল খবর বের হলো রেলের কালো বিড়ালের সত্তর লাখ টাকা ধরা পড়ার অদ্ভুত ধরনের কাহিনী সম্পর্কে। সুরঞ্জিত বাবু ইঁদুর হয়ে কালো বেড়ালদের ফাঁদে পড়ছিলেন নাকি উনিও কালো বেড়ালদের অসৎ সংসর্গে কালো বেড়াল হয়ে উঠতে উঠতে হননি? বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। তবে, সত্তর লাখ টাকা হঠাৎ বিজিবির কাছে ধরিয়ে দিয়ে কাউকে না কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে একটি পরিকল্পনা হয়েছিল বলেই প্রমাণ হয়। সেটি সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান করার লক্ষ্য বলেই জনমানুষ মনে করে।
৬. এদিকে হরতালে বা মিছিলে পুলিশের একটি দলের বাড়াবাড়িকে অবশ্যই পুলিশের বিএনপি-জামায়াতপন্থী গোষ্ঠীর সাবোটাজ মূলক কাজ বলেই জনগণ মনে করে। পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কি দেখেছে পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে? এটি কেউই দেখেনি। কেননা, পুলিশ নিজের গাড়ির কাছাকাছিই থাকে এবং তাদের চোখের সামনে পুলিশের নতুন কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে ছাই করতে পিকেটারদের দ্বারা অসম্ভব হতো যদি না পুলিশ সেটি চায়! তার ওপর বিএনপি ক্যাডারদের হাতে পুলিশের মারধর খেয়ে কান্নাকাটি করা, হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেয়া সত্যি বড় বেশি নাটক নাটক হয়ে গেল না? পুলিশের হাতে আইনজীবী, সাংবাদিক, নারীর ওপর হামলা এগুলো কি উদ্দেশ্যমূলক নয়?
৭. বিদ্যুত বিভাগে তো মনে হয় জামায়াত-বিএনপির শাসনই চলছে! এত বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু লোডশেডিং আগের মতই এত বেশি কেন এ প্রশ্ন রীতিমতো জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে, ভোগান্তি তো হচ্ছেই। ডেসা বা ডেসকো, এসব অফিসে অর্থাৎ বিদ্যুত বিতরণের দায়িত্বে থাকারা তো মনে হচ্ছে অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধীপন্থী বা খালেদা-তারেকপন্থী! তা না হলে এত লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। এর মধ্যে শিল্প কারখানার মালিক, ব্যবসায়ীরা নিজেদের উন্নয়নে সোলার বিদ্যুত ব্যবহার শুরু করছেন না কেন এ প্রশ্ন না করে পারি না। কেননা, বাংলাদেশে যত রকম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তারা সরকারের কাছে তার সবটুকুই চান অথচ বিনিময়ে তারা তাদের নিজ বিদ্যুত নিজে উৎপাদন করেন না। সেইম টু ইউ! সোলার বিদ্যুতে তো একবারই খরচ, যা বেশি হলেও তা তো হবে মাত্র একবার! ওনারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণে, চিকিৎসায়, আমোদে এর চাইতে বেশি অর্থই ব্যয় করেন। তাঁদের বোধোদয় হওয়া উচিত এবং দেশের দরিদ্র নারী, শিশু ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখা উচিত। সেই সাথে পণ্য সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দিতে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন জাতি এমনটিই দেখতে চায়।
৮. এবার আসছে, গুম, অপহরণ ও খুন, ধর্ষণ প্রসঙ্গ। জনগণের গভীর সন্দেহ, ইলিয়াস আলী অপহরণই হোক, বা অন্য দলের সদস্য খুন হোক অথবা মেধাবী সংখ্যালঘু কিশোর, তরুণ খুন, অথবা কিশোরী তরুণী ধর্ষণ ও খুন এ অপরাধগুলো দেশকে অস্থিতিশীল এবং জনগণকে সরকারবিরোধী করে তোলার লক্ষ্যে এবং অপর একটি শক্তিকে ক্ষমতা দখলে আমন্ত্রণ জানানোই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লক্ষ্য নয়তো? ভাল করে হিসাব করলে দেখা যাবে :
র্যাবের মধ্যেকার একটি দল র্যাবকে বিতর্কিত করার কাজে নিযুক্ত রয়েছে এবং র্যাববিরোধী মনোভাব সৃষ্টিতে নিয়োজিত আছে।
বর্ডারে আকস্মিকভাবে বিএসএফ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে খুন করছে, যার ফলে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। বিএসএফের একটি দল কি অর্থের বিনিময়ে ভারতবিরোধী, বাংলাদেশ সরকারবিরোধী কাজ করছে?
যারা পণ্য সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফার দ্বারা সরকারবিরোধী কাজ করছে, তাদেরকে তো সরকারবিরোধীই বলতে হয়, নাকি?
পদ্মা সেতুর জন্য বাস, ট্রেন, বিমান ইত্যাদির টিকেটের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অনেক অর্থ তোলা সম্ভব। বিশ্ব ব্যাংক আঙ্গুল চুষুক না কেন যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার কার্যকর পন্থা নয়, এতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, অথচ ওই সিএনজি চালকের দেয়া প্ল্যান ও অটো সিগন্যাল, হাইওয়েতে বাঁকগুলোতে ডিভাইডার দিয়ে যানজট ও দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব এ কাজটি দ্রুত হচ্ছে না কেন?
প্রায় প্রতিদিন গুম, খুন হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী! বঙ্গবন্ধুর তিন বছরেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই খুন হয়েছে, খুন হয়নি একজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকার।
বিএনপিকর্মী খুন হচ্ছে অধিকাংশই নিজ দলের কর্মীদের কোন্দলের কারণে নারী খুন এবং ধর্ষণ ও খুন এর নির্মমতা তো বাঙালীকে নারী ও শিশু নির্যাতক উপাধি লাভের অবস্থানে নিয়ে এসেছে!
এ সঙ্গে অলক্ষ্যে খুন হচ্ছে মেধাবী সংখ্যালঘু কিশোর ও তরুণ। প্রায় প্রতিদিন, অন্তত একজন হিন্দু কিশোর বা তরুণের নিহত হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং তাদের নিরাপত্তা দেবার একটি উপায় বের করা অতি প্রয়োজন। সংখ্যালঘুদের খুনের নেপথ্যে কারা আছে, তাও তদন্ত করে বের করা ও দোষীদের দ্রুত দ-দানও অত্যন্ত জরুরী। বুঝতে হবে কারা অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে? তারা '৭১ থেকেই গুম করা, বাড়ি থেকে তুলে নেয়া, লাশ ফেলার কাজে সিদ্ধহস্ত।
তাই বলি, একটু লোডশেডিং সহ্য করুন, যানজট এত বছর সহ্য করেছেন, আর কয়েক বছর সহ্য করুন, ব্যবসায়ীরা-শিল্পপতিরা কারখানায় সোলার প্যানেল লাগান, এসি নাইবা চালালেন, ফ্যানের বাতাস কি যথেষ্ট নয়? পণ্য ব্যবসায়ীরা একটু মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের কথা ভাবুন, তরুণরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দাও, তরুণী কিশোরী শিশুদের নিরাপত্তা দাও, নিজেরা সাইবার ক্রাইম থেকে দূরে থাক, পর্নো নিয়ে ডুবে থেকে নিজেদের ধ্বংস করো না, বরং অন্যের জন্য কাজ কর, নিজের পরিবার মা, বাবা, স্ত্রী, বোন, সন্তানের জন্য দেশের অভাবীদের জন্য কাজ কর, দেখবে সাফল্য নিজে এসে তোমার পায়ে পড়বে।
নতুন প্রজন্ম আগামী নির্বাচনে আবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বিপুলভাবে জয়যুক্ত কর। এর ফলে তোমরাই লাভবান হবে, তথ্যপ্রযুক্তি বা সাংস্কৃতিক কর্মকা- এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে আরও দ্রুতগতিতে। নতুবা এ পাঁচ বছরের সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে, নেমে আসবে ঘোর অমানিশা, বেরিয়ে আসবে খুনীরা আর শকুন, চিল, শেয়াল নেকড়েরা, লাশের স্তূপ পড়বে। দেশ হবে মৃত্যু উপত্যকা! তাই সাবধান! ভুল করা, বিদ্যুতের জন্য রাগ করে উল্টো কাজ করা চলবে না, চলবে না।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট