বাংলাদেশেরহিন্দু, রুখিয়াদাড়াও-যুক্তরাস্ট্রঐক্যপরিষদবাংলাদেশেরহিন্দু, রুখিয়াদাড়াও-যুক্তরাস্ট্রঐক্যপরিষদ
সাতক্ষীরায় ৭ সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
Daily Janakanta/3rd April, 2010: সাতক্ষীরায় ৭ সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশ ছিল নীরব দর্শক॥ হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট পূর্বপরিকল্পিত মিজানুর রহমান, কালীগঞ্জের চাকদহা থেকে ফিরে ॥ চারদিকে পোড়া গন্ধ। হাঁড়ির ভাত, মেটেতে রাখা চাল, পোড়া কাপড়, হাঁড়ি পাতিল, ঘরের চালের টিন আর মাটির পোড়া গন্ধের মধ্যে বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে চাকদহা গ্রামের ৭টি সংখ্যালঘু পরিবার। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ব্যবসায়ী পরিবারে সহায় সম্বল আর খাদ্য সবই ছিল। সোমবার সকালে এসব পরিবারে চলছে সব হারানোর বোবা কান্না।
প্রচ- রোদে মাথা গোঁজার ঠাই নেই। গৃহবধূ থেকে স্কুলছাত্র সকলেই একটি পরিধেয় বস্ত্রে এখন দিন কাটাচ্ছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ সব পরিবারে কোন চুলো জ্বালানো সম্ভব হয়নি। ভাংচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগে এরা এখন নিঃস্ব। কালিগঞ্জের ফতেপুরে ধর্মান্ধদের তা-বের পর চাকদহা গ্রামের নারকীয় তা-ব হার মানিয়েছে '৭১-এর পাকসেনা ও তাদের দোসরদের।
চাকদহা গ্রামে যেভাবে হামলা করা হয়
ফতেপুর গ্রামের লক্ষ্মীপদ ম-লের মেয়ে নমিতা চাকদহা গ্রামের শ্যামাপদ সরদার পরিবারের গৃহবধূ। শনিবার রাতে হামলাকারীরা পুড়িয়ে দেয় ফতেপুরের লক্ষ্মীকান্তের বসতবাড়ি। রবিবার দুপুরে বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে শ্যামাপদের স্ত্রী ললিতা সরদার (৪৫) ও পাশের গ্রামের ফজর আলির স্ত্রী আনুরা (৪০)এর মধ্যে কথা হয় ফতেপুরের হামলার ঘটনা নিয়ে। ফতেপুরের নিরীহ গ্রামবাসীর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া অন্যায় হয়েছে এমন মন্তব্যে নাখোশ হয় আনুরা বেগম। নবীজি সম্পর্কে কটূক্তি করেছে ললিতা এমন প্রচারে বিকাল থেকেই এই সরদার পরিবারের বাড়ির সামনে লোক জড়ো হতে থাকে। সন্ধ্যার কিছু আগে স্থানীয় নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি ফিরোজ কবীর কাজল, স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ সকলে ললিতার বাড়িতে বসে তাকে এধরনের কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইতে চাপ প্রয়োগ করে। সমঝোতা বৈঠকে উত্তেজিত হয়ে ওঠে বাইরের গ্রাম থেকে আসা ২ শতাধিক যুবক ও ক্যাডার। তারা লাথি মেরে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জড়ো হতে থাকে, এসব বাড়ি থেকে প্রায় ৫শ' গজ দূরের চৌরাস্তায়। পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে এই আশঙ্কায় সেখানে প্রায় ৩০ সদস্যের পুলিশ রাখা হয। সন্ধ্যার পর প্রায় ৭টার দিকে মোবাইলের মাধ্যমে ডেকে আনা হয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক হাজার কিশোর যুবককে। পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকা এসকল বহিরাগতরা আধাঘণ্টার মধ্যেই চিৎকার দিতে দিতে জড়ো হয় এসকল বাড়ির সামনে। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বাড়ির মধ্যে। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ আশ্র্রয়ের জন্য ছুটতে থাকলে শুরু হয় লুটপাট। দরজা জানালা ভেঙ্গে তারা ঘরে ঢুকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান কাপড়সহ জমির দলিল, মূল্যবান কাগজপত্র সব কিছু লুট করতে থাকে দলবদ্ধ ভাবে। ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা সুজিতের স্ত্রীর কানের দুল খুলে নেয়। ললিতার হাতে থাকা সোনার গয়নার কৌটা কেড়ে নেয় তারা কৃষ্ণপদ, শ্যামাপদ, রন সরকার, সুধীর সরদার, নিরঞ্জন, শিবু, ভবরঞ্জন, জগদীশ, বিশ্বজিতসহ ১০টি পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুট করা হয়। লুটের মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে এসে তারা পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্যামাপদ সরদারের পাকা ঘরে। এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়
কৃষ্ণপদের ৩টি, শ্যামাপদের ২টি, রনসরকারের ৩টি ও সুধীর সরদারের ১টি বসতঘর। পুলিশের উস্থিতিতে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে এই নারকীয় তা-ব চললেও পুলিশ ছিল নির্বিকার ও নীরব দর্শক।
আগুন নেভাতে বাধা
ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে চাকদহা গ্রামে ধর্মান্ধদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের তা-বে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদ্যের নমনীয়তার কারণে আগুন নেভাতে যাওয়া অগ্নিনির্বাপক দলের সদস্যরা এলাকায় ঢুকতে পারেনি। আগুনের লেলিহান শিখায় ৮টি বাড়ি পুড়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত হামলাকারীরা অগ্নিনির্বাপক দলের সদস্যদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। রাতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এডিশনাল ডিআইজি, র্যাব সদস্যসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
ঘটনার সূত্রপাত যে কারণে
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কালীগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ডিগ্রী বাংলা ভাষা পাঠ্য বইয়ের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের লেখা 'হুজুর কেবলা' নাটকটি অভিনয় করে। এই নাটকে নবীজী সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে এই অভিযোগে স্থানীয় একটি দৈনিকে ২৯ মার্চ রিপোর্ট প্রকাশিত হলে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী আবু জাফর সাপুই লিখিত অভিযোগে বলেছেন, দৈনিক দৃষ্টিপাতে এ বিষয়ে লেখা প্রকাশিত হলে কালীগঞ্জসহ ফতেপুর ওই এলাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা মিছিল মিটিং করে আসামিদের বিচার দাবি করে। এ কারণে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলামসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বলে
মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এই মামলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে ডেকে এনে গ্রেফতার করলেও শনিবার সকাল থেকে বহিরাগত কয়েক হাজার মানুষ গ্রামে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। রাতে তারা হাজতে আটক স্কুল শিক্ষিকা মিতা রানীর বাড়িসহ আরও ৩টি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। পুলিশের উপস্থিতিতে এই নারকীয় তা-ব হলেও কালীগঞ্জ থানার ওসি ফরিদউদ্দিনসহ পুলিশের জেলা পর্যায়ের চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে যায় বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেন। এই হামলা ও উত্তেজনায় মদদদাতা হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে
কালীগঞ্জ থানায় থাকা ওসি ফরিদ উদ্দিনের প্রত্যাহারসহ জেলা পুলিশের প্রত্যাহার দাবি করেন। ফতেপুর গ্রামে অব্যাহত হামলা ও তান্ডবের পর রবিবার ফতেপুর গ্রামবাসী এলাকায় শান্তি মিছিল ও প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ফতেপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চাকদহা গ্রামে একই ইস্যুকে পুঁজি করে এই হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। হামলায় অংশ নেয়া অধিকাংশ ব্যক্তির
১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
রাজনৈতিক নেতাদের তোপের মুখে ডিসি এসপি
জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির মুখে সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরীভাবে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকা হয়। জেলা প্রশাসক ড.মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান এমপি, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ
সম্পাক এডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যার্থতার অভিযোগ এনে ডিসি ও এসপিকে সাতক্ষীরা থেকে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সভায় সদর এমপি আব্দুল জব্বার, জেলা পরিষদ প্রশাসক মনসুর আহমেদ, অধ্যাপক আবু আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছিম ময়না, কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ
ও জনপ্রতিনিধিরা এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। জেলা প্রশাসক এই ধর্মীয় ইস্যুকে উস্কে দেয়ার জন্য স্থানীয় একটি দৈনিককে চিহ্নিত করে বলেন, হামলাকারীরা ফতেপুরে একটি বাড়িতে আগুন দিয়ে সেখানে কোরান শরিফ পুড়িয়েছে। নতুন করে কাউকে ঘটনা ঘটাতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে প্রত্যককে আইনের আশ্রয়ে নেয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের চাকদহা গ্রামে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রাখা হয়েছে। বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সোমবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হামলা ও বর্বরতার শিকার পরিবারগুলোতে রয়েছে অজানা আতঙ্ক। আবার হামলা হতে পারে এই আশংকায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি, মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির ঘটনাগুলোও তারা
সাংবাদিকদের কাছে বলতে ভয় পাচ্ছেন।
সাতক্ষীরায় মিতারানীর বাড়িও পোড়ানো হলো পুলিশের সামনে
সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১২: স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ ধর্মীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর গ্রামে বহিরাগত হামলাকারীদের তা-বের পর এলাকাবাসী এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসী মোড়ে মোড়ে বহিরাগত হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পাহারা বসিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় ফের বহিরাগতরা গ্রামে ঢুকে স্কুল শিক্ষিকা মিতারানীর লুট করা ও ভেঙ্গে দেয়া বসতবাড়িটি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার পর গ্রামবাসী এখন একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। শনিবার রাতে মিতারানীর সঙ্গে আগুনে পুড়েছে লক্ষ্মীপদ ম-লের বসতবাড়ি, আসবাবপত্র, ধানের গোলা। হামলাকারীরা সুভাস হাজরার বাড়িতেও আগুন লাগায়। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সকলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করলেও সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের উপস্থিতিতে ফের ৩টি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে সবকিছু ভস্মীভূত করার ঘটনা ঘটলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ছিল নির্বিকার। এ সময় বাঁচার জন্য পালিয়ে যাওয়া প্রায় ১০টি পরিবারের বাড়িতে লুটপাট করার ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের চেন অব কমান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কালিগঞ্জ থানায় দু'দফায় প্রায় সাড়ে ৩ বছর চাকরিরত রাজনৈতিক নেতার আর্শীবাদপুষ্ট ওসি ফরিদ আহমেদের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া পুলিশ প্রশাসনের আশু বদলি দাবি করার পাশাপাশি সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
ফতেপুর গ্রামজুড়ে আতঙ্ক। ফের হামলা ও লুটতরাজের আশঙ্কায় বাঁশতলা বাজারের প্রায় ১০ জন দোকানি শনিবার রাতে তাদের মূল্যবান মালামাল সরিয়ে নিয়েছে নিরাপদ স্থানে। ফতেপুর গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারগুলো তাদের পরিবারের সদস্যদের দূরগ্রামে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। হামলা, লুটপাট, ভাংচুরের রবিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়নি। ওসি ফরিদ আহমেদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে শুধু জিডি করে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ অভিযোগ দিলে মামলা রেকর্ড করা হবে। ঘটনায় এদিকে বহিরাগতদের হামলা, ভাংচুর, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ প্রতিহত করতে এবং এলাকায় সব ধর্মের মানুষদের মধ্যে সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনতে রবিবার বের করা হয় শান্তি মিছিল। রবিবার দিনভর দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মানুষ শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পক্ষে মিছিল করেছে।
স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের অভিনীত একটি নাটকে নবীজী সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে এই অভিযোগে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য আবু জাফর সাঁপুই বাদী হয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, তিনজন সদস্য, দু'জন শিক্ষক ও নাটক পরিচালনাকারীর নাম উল্লেখ করে শুক্রবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা করার পরই ওসি স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয়কে বাড়ি থেকে স্কুলে ডেকে এনে তাদের গ্রেফতার করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ঘটনায় আইনী প্রক্রিয়া শুরু হলেও শনিবার সকাল থেকে বহিরাগত ইউনিয়নের গ্রাম থেকে আসা হাজার হাজার উগ্র মানুষ তা-ব চালায় ফতেপুর গ্রামে। হামলা চালিয়ে লুটপাট করে হাজতে আটক থাকা মিতারানীর বসতবাড়ি। আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আকুল মেম্বারসহ তার তিনভাই-এর বসতবাড়ি। পোড়ানো হয় স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ। ভেঙ্গে তছনছ করা হয় ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র। লুট করা হয় হাকিমের বাঁশতলা বাজারের কম্পিউটারের দোকান। শনিবার সকাল ১১টায় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষ এই অতর্কিত হামলায় অংশ নেয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জেলা প্রধানদের উপস্থিতিতে হামলাকারীরা আর কোন অঘটন ঘটাবে না বলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করলেও সন্ধ্যার পর ফের হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এই হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কথা স্বীকার করে কালিগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন রবিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী জাফর সাপুই-এর ভাই জুলফিকার সাপুই-এর নেতৃত্বে ৪শ' থেকে ৫শ' জন লোক লাঠিসোটা মিছিল নিয়ে ফতেপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে হামলা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। শনিবার সকালে ভেঙ্গে দেয়া ও লুটকরা শিক্ষিকা মিতারানীর বাড়িতে তারা পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় আরো ৩টি সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িতে হামলা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে ওসি স্বীকার করেন।
এদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ফতেপুর গ্রামবাসী এখন বাঁচার লড়াইয়ে নেমেছে। সকালে শান্তি মিছিল চলাকালে শনিবার রাতের হামলার নেতৃত্বদানকারী জুলফিকার সাপুই শান্তি মিছিলের সামনে পড়ে জনরোষের মুখে পালিয়ে বাঁচেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মৌলবাদী সংগঠনের সদস্য এলাকার জনৈক কলেজ শিক্ষক বিভিন্ন মসজিদে যেয়ে এ বিষয়টি নিয়ে উস্কে দিয়ে এই পরিকল্পিত হামলার পট তৈরি করে সরকারের ইমেজ নষ্ট করেছেন। এই ইস্যু তৈরির নেপথ্যে যারা জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করার দাবি উঠেছে।