বৃহস্পতিবার আদালত না ওঠা পর্যন্ত এই দুই সাংবাদিককে সেখানে অবস্থান করতে হবে। এটাই তাদের দণ্ড হিসেবে গণ্য হবে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বৃহত্তর আপিল বেঞ্চ আলোচিত এই অবমাননা মামলার রায় ঘোষণা করে।
পাশাপাশি দুই সাংবাদিককে দশ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে সর্বোচ্চ আদালত।ওই টাকা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দিয়ে আদালতে তার রশিদ দাখিল করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা না দিলে তাদের সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।
সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরুর সময় পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের বেঞ্চে বসে ছিলেন। প্রধান বিচারপতি সাজা ঘোষণার পরও তারা সেখানেই বসে থাকেন।
এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় বৃহস্পতিবার ৮৪টি মামলা রয়েছে। কোর্ট চলার কথা রয়েছে বেলা ১টা পর্যন্ত। রায় অনুযায়ী, পুরো সময় দুই সাংবাদিককে আদালত কক্ষে অবস্থান করতে হবে।
এ বেঞ্চের অন্য পাঁচ সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এ বিষয়টির শুরু হয় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় প্রকাশের আগে গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে স্বদেশ রায়ের লেখা একটি নিবন্ধকে কেন্দ্র করে।
২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর রায় ঘোষণার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নিবন্ধের লেখকের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। অবমাননার দায়ে কেন তাদের সাজা দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে দুজনকে তলব করা হয়।
১০ অগাস্ট এ বিষয়ে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের নির্দেশে ওই নিবন্ধের বিভিন্ন অংশ পড়ে শোনান।
'সাকার পরিবারের তৎপরতা: পালাবার পথ কমে গেছে' শিরোনামে ওই নিবন্ধের একটি অংশে বলা হয়, "এখানেই কি শেষ ৭১-এর অন্যতম নৃশংস খুনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্পাপ বাঙালির রক্তে যে গাদ্দারগুলো সব থেকে বেশি হোলি খেলেছিল এই সাকা তাদের একজন। এই যুদ্ধাপরাধীর আপিল বিভাগের রায় ২৯ জুলাই। পিতা মুজিব! তোমার কন্যাকে এখানেও ক্রুশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই যদি না হয়, তাহলে কিভাবে যারা বিচার করছেন সেই বিচারকদের একজনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের লোকেরা? তারা কোন পথে বিচারকের কাছে ঢোকে, আইএসআই ও উলফা পথে না অন্য পথে? ভিকটিমের পরিবারের লোকদেরকে কি কখনও কোন বিচারপতি সাক্ষাৎ দেয়। বিচারকের এথিকসে পড়ে! কেন শেখ হাসিনার সরকারকে কোন কোন বিচারপতির এ মুহূর্তের বিদেশ সফর ঠেকাতে ব্যস্ত হতে হয়। যে সফরের উদ্যোক্তা জামায়াত-বিএনপির অর্গানাইজেশান।"
বিবাদীদের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আলাদা বেঞ্চ গঠনের আবেদন করলেও তা নাকচ হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতি ছয় সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির সিদ্ধান্ত দেন।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রধান বিচারপতিকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল কি না- শুনানির এক পর্যায়ে তা জানতে চায় আদালত। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো বিচারককে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া হয়নি।
১০ অগাস্ট শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি একান্তই তার নিজের এখতিয়ার। এমনকি উচ্চ আদালতের বিচারকসহ বিচার বিভাগের কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার বিষয়টিও প্রধান বিচারপতির এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
"প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক একাধিক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের পরামর্শ নিয়েছি কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ..প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। তিনি বিচার বিভাগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে নাক গলান না।"
বিচারপতি এস কে সিনহা শুনানিতে বলেন, "সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা থেকে যদি প্রধান বিচারপতি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতেন তবে কারা লাভবান হত? শুনানি শেষে রায়ের আগে যদি প্রধান বিচারপতি সরে যেত তাহলে তো ওই মামলায় রায়ই হত না।"
এরপর ১১ অগাস্ট শুনানিতে জনকণ্ঠের আইনজীবী একটি অডিও রেকর্ডের শ্রুতিলিখন উপস্থাপন করেন, যা বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলা এবং মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে মামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক বিচারকের কথোপকথন বলে তিনি দাবি করেন।
এই বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক ও বিচারিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাকে বিভিন্ন বিচারকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।
"প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমারও নানা বিষয়ে কথা হয়, বিতর্কও হয়। এখন আমি যদি সব সময় টেপ নিয়ে যাই, তাহলে প্রধান বিচারপতি আমাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন? তাহলে কি কোনো প্রধান বিচারপতি কাজ করতে পারবেন?"
বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, "এখানে শুধু প্রধান বিচারপতিকে মেলাইন করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তিতে আঘাত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান। সর্বোচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।"
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1010280.bdnews
জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের কোর্ট চলাকালীন সময় বসে থাকার নির্দেশ
- আদালত অবমাননা
- http://www.dailyjanakantha.com/?p=details&csl=136632
জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে রুলের বিষয়ে রায় ১৩ আগস্ট
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ভয়াবহ স্খলন ???
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৫ ০০:৪১ টা | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪২ টা
প্রধান বিচারপতির সাথে মানিকের ফোনালাপ
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ফোনালাপের সিডি উপস্থাপন করা হয়। ফোনালাপটি তুলে ধরা হলো-
বিচারপতি মানিক: এই যে সেদিন বললেন না, আপনি সেদিন বললেন যে, সাকার ফ্যামিলি আপনার কাছে এপ্রোচ করছে আমারে না করার জন্য কিন্তু পরবর্তী টাইমে দেন।
প্রধান বিচারপতি: সাকারটাতো হিয়ারিং হয়ে গেছে।
বিচারপতি মানিক: না, সেটা বলতেছি না। আপনি বলছিলেন, সাকার ফ্যামিলি আপনাকে বলছে আমাকে না রাখার জন্য এ জন্য রাখতে পারেন নাই।
প্রধান বিচারপতি: হ্যাঁ..হ্যাঁ।
বিচারপতি মানিক: কিন্তু, এখন পরবর্তীটা
প্রধান বিচারপতি: পরবর্তীতে হিয়ারিংয়ে যেটাই যাই, আমি আপনাকেই রাখব।
বিচারপতি মানিক: আমার কিন্তু আছে আর এক মাস।
প্রধান বিচারপতি: হ্যাঁ..?
বিচারপতি মানিক: এক মাস আছে।
প্রধান বিচারপতি: এক মাস আছে? কবে শেষ হবে?
বিচারপতি মানিক: আমারতো... মানে এই ছুটিতেই শেষ। নইলে আর পাব না কিন্তু। আমাকে দেন। অন্তত সাকার ফ্যামিলি থেকে আপনাকেও বলছে আপনি দিতে পারেন নাই, সাকার ফ্যামিলি মেম্বাররা বলছে। কিন্তু এইটাতো...
প্রধান বিচারপতি: সাকার ফ্যামিলি মেম্বার মানে, সাকার পক্ষ থেকে।
বিচারপতি মানিক: যাই হোক, সাকার পক্ষ থেকে বলছে আমারে না দেয়ার জন্য।
প্রধান বিচারপতি: হ্যা না দিতে বলছিলেন।
আরেক সিডিতে বিচারপতি মানিকের সাথে আরেকটি টেলিফোন আলাপে প্রধান বিচারপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের 'বাড়ি আত্মসাৎ' মামলা নিয়ে কথা বলেন। এতে শোনা গেছে-
বিচারপতি মানিক: আচ্ছা কালকে তো ১১ নাম্বারে মওদুদের। মওদুদেরটা ১১ নাম্বারে। মওদুদেরটায় কিন্তু আমার নাম ছিলো লিস্টে।......আজকে কিন্তু আমার নাম নেই।......আমি ছিলাম কিন্তু। আপনি কালকে বললেন না কালকে, মওদুদ আসছিলো। আপনার হাতে পায়ে ধরছে।
প্রধান বিচারপতি: হ্যাঁ।
বিচারপতি মানিক: কি বলছে?
প্রধান বিচারপতি: আপনি দয়া করে যাকে দেন চৌধুরী সাহেবকে দিবেন না। হাতে পায়ে ধরছে।
বিচারপতি মানিক: ধরছেতো কি হইছে?
প্রধান বিচারপতি: অস্পষ্ট
বিচারপতি মানিক: কি বলছে, যে মানিক সাহেবকে দিবেন না?
প্রধান বিচারপতি: হ্যাঁ, জ্বি, জ্বি।
বিচারপতি মানিক: হ্যাঁ, কি বলছে?
প্রধান বিচারপতি: চৌধুরী সাহেবকে বাদ দিয়ে যাকে দেন। তাকে দিয়েন না।
Details at:
http://onlinebangla.com.bd/post/10072/ বিচারপতি-শামসুদ্দিন-চৌধুরী-মানিকের-ভয়াবহ-স্খলন
আরও পড়ুন: স্বীকার করলেন প্রধান বিচারপতি
- সাকা পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ
- "আপনি বলেছিলেন- সাকার ফ্যামিলি/ আপনাকে বলছে আমাকে না রাখার জন্য.../ প্রধান বিচারপতি- হ্যাঁ হ্যাঁ".../ হ্যাঁ, না দিতে বলেছিলেন।
- "আপনি বললেন না কালকে, মওদুদ আসছিলো। আপনার হাতে পায়ে ধরেছে।/ প্রধান বিচারপতি- হ্যাঁ। ...হাতে পায়ে ধরছে
http://www.dailyjanakantha.com/?p=details&csl=136085
জনকণ্ঠের মন্তব্য প্রতিবেদনটি পড়ুন : সাকার পরিবারের তৎপরতা ॥ পালাবার পথ কমে গেছে - স্বদেশ রায়
http://www.dailyjanakantha.com/?p=details&csl=131979
__._,_.___