খালেদা জিয়া ঈদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে কি বললেন? গুলশান হামলার দিনে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কি বললেন? আর প্রেস কনফারেন্সে কি বললেন? শোলাকিয়ার মুফতি সম্বন্ধে আমরা কতখানি জানি? কেন তাকে হত্যা করার প্লান? জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির জন্মের কারণ ও সময়কাল জানা আছে কি?! যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মহলে মীর কাশেমের লবিংয়ের কথা কি আমরা ভুলে গেছি?
আসুন এবার আমরা সমীকরণ মিলিয়ে দেখি!
১জঙ্গির মৃতদেহের ছবিটি দেখুন! এই নিহত জঙ্গির পরিচয় এসেছে সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবির রহমান। সে আট মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। উপরে ইসলামী পোশাক পরা থাকলেও ভিতরে কিন্তু হাফপ্যান্ট ও বেল্ট বাধা পুরোদমে এক নারকীয় জঙ্গি।
শোলাকিয়াতে যে জঙ্গি ধরা পড়েছে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে যে, সে দিনাজপুর মাদ্রাসার ছাত্র, তার ওস্তাদের কাছ থেকে এসাইনমেন্ট নিয়ে দিনাজপুর থেকে কিশোরগঞ্জ এসেছিলো। তাহলে মাদ্রাসায় কে তার ওস্তাদ? কি শিক্ষা পাচ্ছে তারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে?
পিস টিভির জাকির নায়েকের বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে এতদিন ধরে যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন হলো তার খবর কি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছিলো না? যেখানে লালমাটিয়ায় বি-ব্লকে অবস্থিত 'পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল' এর প্রথম শ্রেণীর কোমলমতি মনের এক শিশু বলে,"আমরা আপনাদের দলে নেই। জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন না। এসব আমরা গাই না। এগুলো ইসলামবিরোধী কাফেররা গায়, আমরা না।" স্কলাস্টিকা সহ অন্যান্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে যে ১৪০০ বাচ্চা নিখোঁজ তারা কোন শিক্ষা কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোন জেহাদের পতাকাতলে হারিয়ে গেলো? তারদিকে নজর দেবার তাগিদ কি শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করেননি? নাকি এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়?
ফেসবুক, ইউটিউবে যে সালাফি মতবাদের হুজুরদের বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল থেকে হিন্দুদের মূর্তি ভাঙার, জাতির পিতার অবমাননার, ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হিংসার সৃষ্টির যে কার্যক্রম সেদিকে কি কারো খেয়াল করার সময় নেই? অথচ সেখানে হাজার হাজার লাইক ও কমেন্টে ভেসে যাচ্ছে কিন্তু হেফাজতিদের খুশি করবার জন্য ৫৭ ধারায় কতজনকে গ্রেপ্তার করেছেন এ পর্যন্ত? যারা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী।
সহিহ মুসলিম হাদিসে আছে, "তিনি (মহানবী (সা:) বলেছিলেন, ইসলাম ধর্মের লেবাসে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ইসলামের বিশ্বাসকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করবে। 'একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে, যারা চিন্তায় হবে অপরিণত'। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে, কিন্তু করবে সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ। তারা এত বেশি ধর্ম পালন করবে, যার কাছে মুসলমানদের ইবাদত তুচ্ছ বলে মনে হবে। "তারা মানুষকে কোরআনের কথা বলবে, কিন্তু তা হবে কেবল তাদের মুখের কথা। অর্থাৎ, তারা এর মর্মার্থ বুঝবে না, কেবল বেছে বেছে কিছু অংশ আওড়াতে থাকবে। মহানবী তাদের 'সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট' বলেছেন।"
তাহলে এরাই কি সেই সন্ত্রাসীদল? যারা ভিতরে মানবকুলের চির শত্রু "শয়তান" কিন্তু বাইরে ঠিক এভাবেই ইসলামের পোশাকের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রাখে। যারা ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা:) এর পবিত্র নগরী মদিনাকেও আঘাত করতে কুণ্ঠিত বোধ করেনা! তাই এদেরকে আমি কোনো মতেই ইসলামের একজন সেবক বলে মানতে পারছিনা। বরং ঐ পুলিশদের কে বলবো ইসলামের সেবক যাদের উসিলায় হাজার হাজার ঈদ জামাতের মুসল্লিরা পদদলিত হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন। এরাই হবে বেহেস্তবাসী কারণ এরা দেশের জন্য মানুষদের জন্য তাদের জীবন দান করে গেলো। এরাই প্রকৃত শহীদ! আর জঙ্গিরা জাহান্নামে খালেদিন, নরকের কীট।
২খালেদা জিয়া রোজার ইফতার পার্টিতে প্রত্যেকদিনই বলে যাচ্ছিলেন যে, "দেশে গণতন্ত্র (এখানে তার কথিত গণতন্ত্র মানেই তার ক্ষমতা) না দিলে জঙ্গি হামলা বন্ধ হবে না। আদতে তিনি প্রত্যেকদিনই সরকারকেই এক একটা হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এবং ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই যখন জঙ্গিদের হাতে ঐ রেস্টুরেন্টে জিম্মিরা বন্দি তিনি ঐ ঘটনাকে এক পাশে রেখে বজ্রকন্ঠে তার নিজের নিরাপত্তা কেন চাইলেন এবং বললেন দেশের পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল।
গুলশানে যখন জঙ্গি হামলা চলছে তখন সব ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে তার নিরাপত্তা কেনো এতো জরুরি হয়ে উঠলো তা বোধগম্য হলো না, যদিও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি তার নিরাপত্তার অজুহাতে বেশ কয়েকদিন উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। আবার নিন্দুকেরা বলে ১৯৭১ সালেও নাকি তিনি তার নিরাপত্তার জন্যই পাকিস্তান আর্মিদের হেফাজতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু পরেরদিন যখন আমাদের যৌথ বাহিনীর কমান্ডোরা "থান্ডার বোল্ড "সাফল্যের সাথে সমাধা করলেন। তখন তিনি বললেন সবাইকে নিয়ে একসাথে এই জঙ্গিদের প্রতিহত করতে হবে, যৌথ বাহিনীকে জঙ্গি দমনের জন্য তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করলেন।
এখানে একটা প্রশ্ন অনেকের মস্তিষ্কেই আঘাত করেছে তা হলো "সবাই" বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন? এই সবাই বলতে কি তিনি জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিলেই জঙ্গি হামলা আর হবেনা তাই বুঝতে চেয়েছেন? আমরা জানি যে, খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশে "মোসাদ"-কে আমন্ত্রণ করেছে আবার আমেরিকা, ইংল্যান্ড বার বার সরকারকে বলছে বাংলাদেশে আইএস রয়েছে যা সরকার স্বীকার করছে না।
আমেরিকা বন্ধুর হাত বাড়াবার জন্য মরিয়া, বাংলাদেশ শুধু ঘোষণা দিক যে তারা আইএস-এ আক্রান্ত, তাহলেই তাদের কংগ্রেস থেকে তারা বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানোর বৈধতা পেয়ে যাবে। ওদিকে মোসাদ আমাদের এই সেক্যুলার সরকারকে তুলনা করছে মিশরের ইসলামী ব্রাদারহুড দলের সঙ্গে যাতে ওখানে জাতিসংঘের সৈন্য যেতে পারে জঙ্গি দমন করবার জন্য। যে কারণে হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ও বিদেশি হত্যা হচ্ছে, বিশেষ করে ইতালিয়ান ও জাপানি নাগরিকদের, যে দুটি দেশ এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ বন্ধুত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
খালেদা জিয়া তার সংবাদ সম্মেলনে ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে যেই মাত্র তার প্রথম শুভেচ্ছা গ্রহণকারী হলো বার্নিকাট ও আরো কিছু বিদেশি কূটনৈতিকগণ। সাথে সাথে তার স্বর আবার সপ্তমে চড়ে গেলো এবং তিনি হাসিমুখে আস্থার সাথে বললেন, এই সরকার ব্যর্থ সরকার, এই সরকারের এখনই তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্বাচন দিতে হবে। ধরে নিলাম নির্বাচন হলো বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ক্ষমতায়ও এলো আর জঙ্গি তৎপরতাও বন্ধ হয়ে গেলো। তাতে কি প্রমাণিত হবে না যে, দেশে কখনোই আই এস ছিলোনা, এসবই ছিল জামায়াত-বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়া মাত্র?
বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা দুইদিন আগেই সতর্ক বাণী পাঠিয়েছিল যে দেশে একটা বড় ধরণের নাশকতা ঘটতে পারে এমনকি তারা একটা মিলিটারি ক্যু হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছিলো। অন্যদিকে খালেদা জিয়া এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষে বার বার ভারতের সাথে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করেও সফল হয়ে ওঠেননি। আবার ভারতকে পাশ কাটিয়ে এদেশে অন্যকোনো দেশের অগ্রাসন ও স্বপ্নমাত্র।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি শেখ হাসিনার সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো এবং জানিয়ে দিলো যে, "এই জঙ্গি মোকাবেলায় তিনি তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে এই সরকারের পাশে থাকবেন এমনকি তাদের কমান্ডো সৈন্য বাহিনীও তৈরি রেখেছিলেন যে, বাংলাদেশ চাইলে যে কোনো অবস্থায় তারা পাশে এসে দাঁড়াবেন। "ভারত ১৯৭১ এর মত এবারও তার বন্ধুত্বের স্বাক্ষরই রেখেছে।
তবে কি এই কারণেই খালেদা জিয়া কি মিউ মিউ করে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন? নাকি তাদের প্লান "বি" টি ভেস্তে গিয়েছিলো মোদির সাহায্যের কারণে, যা গুলশানে মানুষের দৃষ্টিকে ব্যস্ত রেখে অন্যকোথাও মূল ঘটনাটি ঘটার কথা ছিল? ধরা পরে গেলেন কি তিনি? তাই হঠাৎ মিউ মিউ করলেন তারেক জিয়ার মা। আবার সেই তারেক জিয়ার মা তার স্বরটি সপ্তমে চড়ালেন ঈদের দিন বার্নিকাট-এর সাথে হাত মেলানোর পরপরই।
৩
এই দেশে আইএস নেই তবে মীর কাশেম আছে, যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সর্বোচ্চ টাকার ক্ষমতা দেখিয়েছেন এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিল করবার জন্য। তার অর্থের কাছে বিক্রি হয়েছে অনেক দেশি ও আন্তর্জাতিক রথী-মহারথী। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অনেক নামকরা সলিসিটিং ফার্ম, অনেক নামকরা আইনজীবী, সাংবাদিক, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের মানুষরা। ঠিক সেভাবেই মীর কাশেমের টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে আইএস-এর মিডিয়া কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারেনি, কোনোমতেই শেখ হাসিনাকে তার জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। তাই তাদের হাতের শেষ ঘুটি ছিল দেশকে জঙ্গিবাদের তকমা পরিয়ে দেয়া।
আইএস-এর প্রয়োজন টাকা আর মীর কাশেমদের দরকার আতঙ্ক ছড়ানো, বিএনপির দরকার ক্ষমতায় যাওয়া। মীর কাশেমের দরকার ফাঁসিটা রোধ করে দেয়া! জামাত বিএনপির আছে পাকিস্তান এর আইএসআই, আর তাদের ট্রেনিং দেয়া জঙ্গি। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছেনা কারণ এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তাদের মুরুব্বিদের খেলার কোর্টটি সুবিধাজনক মসৃণ হচ্ছে না। তাই তাদের প্রয়োজন পড়ছে পৃথিবীর বর্তমান ইসলামের নামে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদল আইএস, আদতে যা জামায়াতের মুরুব্বীদেরই সৃষ্টি।
তাই আমাদের দেশে ঘটনা ঘটাচ্ছে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা কিন্তু এডভার্টাইস করছে আইএস অর্থাৎ আইএস তাদের নাম বিক্রি করছে মীর কাশেমদের কাছে। আর এই সব কর্মযজ্ঞের মূল খেলাটি যিনি খেলছেন তিনি একজন যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তান। যিনি জামায়াতের জনসভায় সরাসরি ঘোষণা দিয়েছিলো যে জামায়াত ও বিএনপি একই পরিবারের সদস্য। তিনি তারেক জিয়া। আর তিনি যে কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি ছোঁড়েন তিনি খালেদা জিয়া, যোগ্য ছেলের যোগ্য মা।
তাই একথা কথা বুঝতে আমাদের মত সাধারণ মস্তিষ্কেও কোনো অসুবিধা হয়না যে, "বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই।" আছে আইএসআই-এর প্রশিক্ষিত জামাত+বিএনপি =পাকিস্তানের জঙ্গি বাহিনী যারা জঙ্গিবাদ ঘটাতে ইসলামের লেবাস ধারণ করে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।