চার্জশিট নয় ফাইনাল রিপোর্ট দিচ্ছে পুলিশ
কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের বহুল আলোচিত 'অপহরণ' কাহিনীর পুলিশের দীর্ঘ ও নিবিড় তদন্তে সত্যতা মেলেনি। বরং অভিযোগটি ভুয়া, ভিত্তিহীন ও সাজানো নাটক বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই ওই ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা 'অপহরণ' মামলাটির চার্জশিট (অভিযোগপত্র) নয়, ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দিচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শিগগিরই এ পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ডিবি কর্মকর্তা জানান, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের অপহরণের শিকার হওয়ার অভিযোগটি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেই ভুয়া বলে প্রতীয়মান হয়। বস্তুগত প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি অপহরণের সাজানো নাটক। তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেছিলেন। ডিবির দীর্ঘদিনের প্রযুক্তিগত ও নিবিড় তদন্তেও ফরহাদ মজহারের অভিযোগটি কোনো সত্যতা মেলেনি। তার দেয়া বক্তব্যে সঙ্গে পুলিশের প্রাপ্ত তথ্যের যথেষ্ট গরমিল রয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা জানান, আইনানুযায়ী কোনো মামলার অভিযোগের সত্যতা না পেলে সেক্ষেত্রে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে থাকে পুলিশ। ফরহাদ মজহারের ঘটনায়ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের দায়ের করা মামলাটিও একইভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
তারা জানান, আদালতে এ মামলার প্রতিবেদন দেয়ার পরবর্তী ধার্য দিন হলো আগামী ১০ সেপ্টেম্বর। এই তারিখের আগেই যেকোনো দিন ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এতে যদি ফরহাদ মজহার বা তার স্ত্রী চ্যালেঞ্জ করেন, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ করার দায়ে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) ২১১ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলাও হতে পারে।
ডিবি সূত্র জানায়, পুলিশি তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফাঁকি দিয়ে অর্চনা রানী নামের সেই নারীকে আর্থিক সাহায্য ও সরকারকে বিপাকে ফেলতেই অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। তিনি ও স্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত এনজিও উবিনীগ-এর কর্মী ওই নারী। আর এই অর্চনা রানীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ফরহাদ মজহার।
নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য দাবি করে এই নারী জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন ও ১৫ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন। খুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে ফরহাদ মজহারের যাওয়ার এবং ওই এলাকায় তার একাকী ঘোরাফেরার ভিডিও দৃশ্যও সাংবাদিকদের সরবরাহ করে পুলিশ। খুলনা নিউমার্কেট এলাকার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ঘুরছেন ফরহাদ মজহার। অথচ ওই রাতে যশোর থেকে উদ্ধারের পরের দিন ঢাকার আদালতে জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন, অপহরণকারী চোখ বেঁধে রাখার পর সন্ধ্যা ৭টায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন তিনি।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেব। অভিযোগের সত্যতা না মিললে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেব।
এর আগে ১৩ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার অপহৃত হননি, স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। মামলার তদন্তে পাওয়া তথ্য ও সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমনটি জানতে পেরেছে পুলিশ। সরকারকে বিব্রত করতেই অপহরণ নাটক সাজানো হয়।
আইজিপি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত উনি (ফরহাদ মজহার) ১০ বার মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার অন্য আরেকটি নম্বর থেকে তিনি অপর এক নারীর (অর্চনা রানী) সঙ্গে ছয়বার কথা বলেছেন। ফরহাদ মজহারের খুলনায় পৌঁছানোর পর রকেট সার্ভিসের মাধ্যমে একবার ১৩ হাজার ও আরেকবার ২ হাজার টাকা ওই নারীর জন্য পাঠিয়েছেন।
এর আগের দিন ১২ জুলাই আরেক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, ফরহাদ মজহার আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তার সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্যের মিল নেই। তিনি বলেন, এই অপহরণ নিয়ে অত্যন্ত রহস্য তৈরি হয়েছে। কারণ ফরহাদ মজহার আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যে ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি, কল লিস্ট পেয়েছি, বস্তুগত সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি, তার সঙ্গে উনার বক্তব্যের মিল নেই।
মানবকণ্ঠ/এসএস
নিজের অপহরণ ঘটনার বর্ণনায় যা বললেন ফরহাদ মজহার - Channel i Online
ফরহাদ মজহার সম্পর্কে আদালতে যা বলেছেন অর্চনা - Bangla Tribune
এখন নিজেকে আড়াল করছেন ফরহাদ মজহার - Dhakatimes24
__._,_.___