ফাঁস হচ্ছে নেপথ্য তথ্য
০ সর্বমোট ২৭ বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির ভস্মীভূত
০ যুবদল ও এমপির জড়িত থাকার সেলফোন কললিস্ট মিলছে
০ ৪৮ ঘণ্টায় প্রণীত নীলনক্সা
মোয়াজ্জেমুল হক, এইচএম এরশাদ ॥ গত শনি ও রবিবার কক্সবাজারের তিন উপজেলা রামু, উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মৌলবাদী জামায়াত ও তাদের দোসর বিএনপির সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিহার এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে আক্রমণ, ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৌদ্ধ বিহার ও মন্দিরে আক্রমণ ও ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে কর্মরত জামায়াতে ইসলামীভুক্ত ইসলামী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সমর্থক শ্রমিক কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে সরকারীভাবে বিএনপি ও মৌলবাদী সংগঠনসমূহ দায়ী বলে বিভিন্ন পর্যায়ে বলা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে এখনও বক্তব্য মেলেনি। শনি ও রবিবারে সংঘটিত এসব ঘটনায় সর্বমোট ২৭টি বৌদ্ধ বিহার ও হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর ও আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি। মঙ্গলবার পর্যন্ত এসব ঘটনা নিয়ে গ্রেফতার হয়েছে সর্বমোট ২৫২ জন।
অনুসন্ধানে এবং দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্রেপ্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিশ্চিত হওয়া গেছে এ ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। এর নেপথ্যে জামায়াত শিবির ও বিএনপির উগ্র একশ্রেণীর সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্তদের রয়েছে প্রণীত নীলনকশা। রামু, উখিয়া ও টেকনাফে গান পাউডার ও পেট্রোল দিয়ে বিহার, মন্দির ও বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনার কাজে জড়িতদের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের একটি অংশ। আর চট্টগ্রামের পটিয়ায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে কর্মরত ইসলামী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সমর্থক নেতাকর্মীরা সরাসরি বিহার-মন্দির ভাংচুরে নেতৃত্ব ও উস্কানি দেয়ার তথ্য মিলেছে। নেতৃত্বদানকারীদের পরিচয় মিলেছে ওয়েস্টার্ন মেরিনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে।
উখিয়া এক আইনজীবী সহকারী (মুন্সী) জনৈক উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুকে ট্যাগ করা পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননাকর একটি ছবি প্রদর্শিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রণীত নীলনকশা অনুযায়ী প্রথমে এ্যাকশন শুরু হয়ে যায় রামু উপজেলায়। শনিবার রাত ৮টার পর থেকে জঙ্গী তৎপরতায় মিছিল বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর রাত ১২টা থেকে শুরু হয় হামলা, ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা। যে তা-ব ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে। এ সময় রামুর ১২ বিহার ও মন্দির এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়াপাড়াগুলোর বসতবাড়ি ম্যাসাকার হয়। একের পর এক জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায় বিহার, মন্দির ও বসতবাড়ি। ঐদিন রাতেই উখিয়া ও টেকনাফে অনুরূপ পন্থায় বিহার, মন্দির ও সংখ্যালঘুপাড়া আক্রান্ত হয়ে ভাংচুর ও আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। রবিবার রাতেও উখিয়া এবং টেকনাফে বিহার-মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
রামুর ঘটনার সূত্রপাত, জঙ্গী মিছিলে কারা নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় বিএনপিদলীয় এমপির ভূমিকা কী ছিল তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনার পর রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৪৪ ধারা এখনও অব্যাহত আছে। মামলা হয়েছে সর্বমোট ১৭টি। মঙ্গলবার পটিয়ার ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের আরও ১২ ইসলামী সমাজ কল্যাণ ফেডারেশনের সমর্থক কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে এ সংস্থার ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরাও ঐ সংগঠনের সমর্থক। ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের যত কর্মচারী বেরিয়েছিল বলে দাবি করেছে মূলত তার চেয়ে বেশি ভাংচুরের ঘটনায় অংশ নিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
গত দুদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, পবিত্র কোরান অবমাননার কথা ছড়িয়ে দিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করা হয় প্রথমে রামুতে। তারপর একে একে তা উখিয়া, টেকনাফ এবং পরদিন পটিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। রামু, টেকনাফ, উখিয়ায় বড়ুয়া ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা, লুটপাট ও মন্দিরে আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রশিক্ষিত জঙ্গী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আনা হয় বলে দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্রে জানানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে এখনও এদের কারও নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। রামু হাইটুপি এলাকার উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুকে 'ইনসাল্ট আল্লাহ' নামে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে কোরান অবমাননাকর ছবি দেয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত কৌশলে সাধারণ ধর্মপ্রিয় মানুষের মাঝেও চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসেছে, উক্ত ছবিটি মোবাইলে ধারণ করে অতি উৎসাহী একশ্রেণীর যুবক খুব দ্রুত বিভিন্ন জনের মোবাইলে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশে অস্থিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রামু, উখিয়া, টেকনাফ এবং পটিয়ায় ন্যক্কারজনক যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে জামায়াত-বিএনপির একশ্রেণীর সন্ত্রাসীদের ইন্ধন এখন পরিষ্কার। রামুর পুরো ঘটনা ঘটেছে রীতিমতো কমান্ডো স্টাইলে। সাধারণ কিছু মানুষ এদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে প্রণীত নীলনকশার বাইরে থেকে কিছু না বুঝে। ধর্মীয় উন্মাদনা তাদের মধ্যে যে ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী খুবই সুস্থ ও ঠা-া মস্তিষ্কে জঘন্যতম এ ঘটনা ঘটাতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনদের দুই ধরনের কথা বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো কাজ হয়েছে। একদিকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বোঝানো হয়েছে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মিয়ানমারের রাখাইনদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে সেখানে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনরায় অত্যাচার, নিপীড়ন ও জুলুম চালাবে এবং হত্যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নির্মূল করতে থাকবে। এ ধরনের ঘটনায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হতেই থাকবে। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকার তাদের গ্রহণও করবে না। অপরদিকে, পবিত্র কোরান অবমাননাকর ছবি ফেসবুকে কৌশলে ট্যাগ করে দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজনকে। যার নেপথ্যে জামায়াত-বিএনপির ইন্ধনের বিষয়টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ ঘটনা ঘটানোর পূর্বে জামায়াত-বিএনপির কিছুসংখ্যক নেতা বিভিন্ন পয়েন্টে গোপন বৈঠক করার তথ্যও মিলছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাথাছাড়া দিয়ে ওঠা জামায়াতে আরাকান, হিযবুত তাহ্রীর, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরআই) ও দেশীয় জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্রপন্থী একাধিক জঙ্গী সংগঠন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্তমান সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করে বেকায়দায় ফেলার অপতৎপরতার অংশ হিসেবে এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নীলনকশায় ছিল এ ঘটনা দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হবে সর্বত্র। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বানচাল ও নাশকতা সৃষ্টির বিষয়টি এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
ঘটনার পূর্বে রোহিঙ্গা মৌলভী দ্বারা পরিচালিত কক্সবাজার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক মাদ্রাসা থেকে উস্কানি দিয়ে অসংখ্য উগ্র ছাত্রদের একাধিক ট্রাকযোগে জমায়েত করা হয়েছিল রামু স্টেশন ও এলাকার মিঠাছড়িতে। পাশাপাশি শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া সৃষ্টির মাধ্যমে ধর্মীয় সেøাগান দিয়ে বিহার, মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায় ক্যাডাররা। তারপর একে একে গান পাউডার ও পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় বিহার, মন্দির ও বসতবাড়ি।
গত শনিবার রাতে ঘটনার সময় রামু স্টেশনে প্রতিবাদসভায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের উত্তেজিত লোকজনরা ধারণা করেছিল যে, ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ও কোরানের অবমাননার বিরুদ্ধে হয়ত প্রতিবাদ সভা হবে। নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখা হবে। এতে শরিক হলে পুণ্যের ভাগি হওয়া যাবে। এ ধারণায় যোগ দেয় সাধারণ একশ্রেণীর মানুষ। কিন্তু প্রতিবাদসভা চলাকালে দেখা গেছে, লিংকরোড ও নাইক্ষ্যংছড়ির উভয় দিক থেকে অসংখ্য মোটরসাইকেল ও ট্রাকযোগে খ- খ- মিছিল সহকারে অচেনা লোকজন এসে সভাস্থলে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। মিছিল সহকারে গিয়ে বড়ুয়াপাড়ায় এবং মন্দিরগুলোর ওপর হামলে পড়ে গান পাউডার ও পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। এ ভয়াবহ তা-ব রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে। আবার দমকল বাহিনীকে বাধা দিতে পথিমধ্যে কিছুসংখ্যক উগ্রবাদী জঙ্গী নেতা রোহিঙ্গা ছাত্রদের নিয়ে অবস্থান নেয়। ঘটনার নীলনকশা তৈরি করে তাদের সহযোগীদের পুরো দায়িত্ব অর্পণ করে কতিপয় জঙ্গী ও জামায়াতের সংশ্লিষ্টরা ঘটনার রাতে এলাকার বাইরে চলে যায়। এর কারণ হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তাদের দাবি হবে তারা ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং আক্রোশমূলক। সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহে জানানো হচ্ছে, রামুতে ঘটনা সৃষ্টির পূর্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাড়াটে রোহিঙ্গাদেরও জড়ো করা হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক বৈঠকও করা হয় অতি গোপনে।
ছবি ট্যাগকারী কারা ॥ পবিত্র কোরান অবমাননাকর ছবি ট্যাগ-শেয়ার করার নেপথ্যে যাদের নাম জানা যাচ্ছে তারা হলো, রামু মেরুংলোয়া ফতেখাঁরকুলের বাসিন্দা মৃত শামসুল হুদার পুত্র যুবদল নেতা আজিজ, লম্বরীপাড়ার বাদশা মিয়ার পুত্র ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজলের অফিস কর্মী যুবদল নেতা আতিক ও ফতেখাঁরকুল মৃত বদরুজ্জামানের পুত্র যুবদল নেতা মোঃ কামাল উদ্দিন মেম্বার। তারা তিনজন ঘটনার আগে থেকে প্রায়শ অভিযুক্ত উত্তম কুমারের অফিসে বসে তার ই-মেইলে বিভিন্ন ছবি ডাউনলোড করত বলে তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সরেজমিন তথ্যে বেরিয়ে আসছে রামুর ঘটনার দিন অর্থাৎ শনিবার রাত ৯টায় রামু বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী ও নিরীহ ব্যক্তিদের একটি মিছিল রামু স্টেশনে আসে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে হেঁটে সাধারণ উত্তেজিতদের আরও একটি মিছিল এসে জমায়েত হয়। শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিকভাবে চলছিল প্রতিবাদ সমাবেশ। রাত সাড়ে ১১টার পর ট্রাক-মিনিট্রাক ও ড্যাম্পার যোগে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫টি খ- খ- মিছিল আসে মারমুখী অবস্থায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টিকল্পে সেøাগান দিতে থাকে। অল্পক্ষণের মধ্যে কমান্ডো স্টাইলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পেট্রোলের বোতল হাতে একটি গ্রুপ মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে সমাবেশ স্থলের দিকে এসেই বড়ুয়া পল্লীর দিকে এগিয়ে যায় এবং তা-ব শুরু করে দেয়।
মিছিলে যারা নেতৃত্ব দেয়
তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পূর্ব মেরুংলোয়া থেকে আসা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবদল নেতা আজিজ, যুবদল নেতা দিদার ও কামাল উদ্দিন মেম্বার। তেচ্ছিপুল থেকে ছাত্রদল নেতা লিটন ও সাবেক ছাত্রদল নেতা গায়ক কাশেস, পশ্চিম মেরুংলোয়া থেকে যুবদল নেতা আফসার মেম্বার, উখিয়ারঘোনা থেকে বিএনপি নেতা মোঃ ইসলাম, রামুর দক্ষিণ দিক থেকে যুবদল নেতা ফতেখারকুলের আবদুল গণি, চকরিয়া খোটাখালীর নুরুল হক। পাশাপাশি ম-লপাড়া থেকে আসা মিছিলে বাইট্যা রশির পুত্র নুরুল হোসেন। সিপাহিপাড়া থেকে আসা মিছিলের নেতৃত্বে ছিল যুবদল নেতা টিপু কোম্পানি। এছাড়া কাউয়ারখোপ থেকে যুবদল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন (স্থানীয় সাংবাদিক)। রাজারকুল থেকে আসা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবদল নেতা আরিফুর রশিদ, নুরুল ইসলাম ও আমান উল্লাহ। কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন থেকে মুরাপাড়ার জামায়াত নেতা মৌলভী মোজাহের, জামায়াত নেতা জহির উদ্দিন বাবুল, ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম, যুবদল সভাপতি মাহমুদুল হক মামুন, মোহাম্মদ শফি ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। খুনিয়াপালং থেকে যুবদল নেতা আলমগীর মেম্বার ও আবদুর রহিম বৈদ্য। চাকমারকুল থেকে জামায়াত নেতা ফারুক ও হাবিবুর রহমান, বিএনপি নেতা মনির আহমদ, জামশেদ, জামায়াত নেতা মোস্তফা ও হাবিবুল্লাহ এবং ঈদগাও থেকে আসা মিছিলে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ আলম ও আলতাজ আহমদ নেতৃত্বে দিয়েছেন বলে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে এবং রামুর সাধারণ লোকজন সূত্রে জানানো হয়েছে। ঐসব মিছিলে নেতৃত্বদানকারীদের আগে থেকে বলা হয়েছিল কে কোন্ মন্দিরে এবং বড়ুয়াপল্লীতে জ্বালাও- পোড়াও এবং হামলা-লুটপাটের ঘটনায় অংশ নেবে। মিছিল সহকারে আসা দুষ্কৃতকারীরা রামুর বড়ুয়াপল্লীতে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটকারীদের মারমুখী অবস্থায় প্রত্যক্ষ করা গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আরও জানা গেছে, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য পিএস দেলোয়ার মুঠোফোনে হামলাকারীদের এই বলে আহ্বান করেছে যে, 'আপনারা ট্রাক-গাড়ি নিয়ে মিছিল সহকারে চলে আসুন।' গাড়ি ভাড়ার চিন্তা করবেন না। এমপি সাহেব চলে আসছেন। ঐ দেলোয়ারের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট চেক করলে সত্যতা মিলবে বলে কয়েকটি সূত্রে জানানো হয়েছে।
জঙ্গীদের নতুন সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন ও জামায়াতে আরাকান কক্সবাজারের কয়েক নেতা ভুয়া ঠিকানায় বাংলাদেশের জাতীয় সনদ গ্রহণকারীরাও এ ঘটনায় সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেকনাফের লম্বাবিলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত রবিবার বিকেল ৪টায় জামায়াতের রোকন হোয়াইক্যং ইউপি চেয়াম্যান নুর মোহাম্মদ আনোয়ারীর নেতৃত্বে এক গোপন বৈঠকে হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াত রোকন মাস্টার মীর কাশেম, ইউপি সদস্য জামায়াত নেতা রশিদ আহমদ, বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল ও জালাল আহমদ মৌলবাদীপন্থী স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে যোগ দেয়। ঐ গোপন বৈঠক শেষে মৌলভী কামাল হোসেকে দিয়ে মাইকিংয়ের মাধ্যমে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উস্কানিমূলক প্রচারণায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ঘোষণার রেশ ধরে এবং জামায়াত নেতা নুর আহমদ আনোয়ারী মোটরসাইকেল নিয়ে এসে 'নারায়ে-তকবির' সেøাগান দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করার পর হোয়াইক্যং বড়ুয়াপল্লীতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু হয়। তবে টেকনাফ উপজেলা জায়ামাতের আমির অধ্যক্ষ নুর হোসেন ছিদ্দিকি মঙ্গলবার এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে বলেন, এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর দূরতম সম্পর্কও নেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এক নেতার দিকে ইঙ্গিত করে জেলা জামায়াতের আমির মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বড়ুয়াপল্লীতে হামলা ঘটনায় প্রশাসন অহেতুক জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করছে। সরকার এটি পলিটিক্যাল ইস্যুতে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, কক্সবাজারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দীর্ঘস্থায়ী ছিল এবং আছে। সৃষ্ট ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি এতে জামায়াতে ইসলামীর দূরতম সম্পৃক্ততাও নেই বলে দাবি করেন।
সাবধানবাণী: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই সাইটের কোন উপাদান ব্যবহার করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

This message has been truncated

Show Full Message