তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে নাশকতা করতে কয়েকশ' কোটি টাকার বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত শিবির। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল থানাসহ ভিআইপিদের ওপর। এজন্য গ্রেনেডসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করতে ইতিমধ্যে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ পরিকল্পনার সমন্বয় করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সাতকানিয়ার সাবেক এমপি জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে। শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল কবির রিমান্ডে পুলিশের কাছে এ তথ্য দিয়েছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় একই বক্তব্যে জবানবন্দি দিয়েছেন এনামুলের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া শিবির নেতা মুশফিক আবরার।
সূত্র জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জাব্বারের নাশকতার বিশেষ বার্তা নিয়ে
চট্টগ্রামে আসার পর এনামুলের সঙ্গে প্রথমে শিবিরের মহানগর শাখার (দক্ষিণ) সভাপতি আ.ম.ম. মসরুর হোসাইনের যোগাযোগ হয়। মসরুর এনামুলকে শিবিরের মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি নূরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। নূরুল আমিন তাকে নিয়ে চকবাজার কলেজ রোডে পার্সিভিল হিল এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে রাখেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি এনামুলের সঙ্গে নগর ও জেলার ছাত্রশিবিরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে যারা উপস্থিত হতে পারেননি তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবিরের মহানগর (দক্ষিণ) নেতা খালিদের সঙ্গে গিয়ে ফয়'স লেক এলাকায় এইচ এম সোহেলসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এনামুল।
১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজ এলাকায় শিবির মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি নূরুল আমিন ও দক্ষিণের সভাপতি এইচ এম সোহেলসহ চট্টগ্রামে বেশ কয়েক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে বৈঠক হয় এনামুলের। গোপন এ বৈঠকে হেফাজতে ইসলামী, বিএনপি ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি, তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন করে দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গুজব রটিয়ে সরকারি কেপিআই ও বিভিন্ন স্থানে একযোগে নাশকতা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে জঙ্গি ও পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্রোহীদের কাছ থেকে গ্রেনেড, অস্ত্র গোলা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়। কামারুজামানের ফাঁসি বাস্তবায়ন হওয়ার আগে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যেই জামায়াত শিবির ইস্টার্ন রিফাইনারি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তেল ডিপো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নাশকতার মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়ার নীল-নকশা করেন। এর জন্য ওই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামায়াত-শিবিরের আর্দশের অনুসারী শ্রমিক-কর্মচারীদের সহায়তা নেয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানান এনামুল।
পুলিশকে এনামুল জানান, এ বিশেষ পরিস্থিতি তৈরির ছক নিয়ে শিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল জাব্বার তাকে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছেন। বৈঠকে থাকা নেতাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে আরো জানানো হয়, তাদের প্রত্যেকের কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে 'হিট অ্যান্ড রান' পদ্ধতিতে বিভিন্ন বাস, ট্রাক, পেট্রল পাম্প ও জনবহুল এলাকায় হামলা করে নাশকতা চালিয়ে প্রশাসন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চলমান প্রক্রিয়া আরো জোরদার করার ওপর জোর দেয়া হয় বেঠকে। একই সঙ্গে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে মিশে থাকা এবং আত্মগোপনের প্রয়োজন হলে বেশভূষণ পরিবর্তন করে আওয়ামী ঘরানার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ইস্টার্ন রিফাইনারি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিকে নাশকতার মাধ্যমে আগুন দেয়া সম্ভব হলে এক মাসের আগে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবে এবং বিশেষ বাহিনীকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ডাকা হলেই তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সাফল্য আসবে।
এদিকে এনামুলের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মুশফিক আবরার মাহিন আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় পেট্রলবোমা হামলা, ছাবেরিয়া এলাকায় বাসে আগুনসহ বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে শিবিরের একটি বিশেষ স্কোয়াড জড়িত। তবে পশ্চিম পটিয়ার শাহ মিরপুর এলাকায় অটোরিকশায় পেট্রলবোমা হামলাটি তাদের সংগঠন করেনি বলে জানান আদালতকে। মাহিন জামায়াত-শিবিরের দলীয় চিত্রগ্রাহক ও জামায়াতের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক। তার বাবা ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মহিবুল হক। বাঁশখালী উপজেলার চেচুরিয়া গ্রামের মহিবুল বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন।
এছাড়া পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ডে থাকা মোস্তাফা শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) শাখার পাঠাগার সম্পাদক ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। মোস্তফা ফাটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের মনির আহম্মদের ছেলে। থাকেন নগরীর চন্দনপুরা এলাকায় মিয়ার বাপের মসজিদ এলাকায়।
এনামুল কবির ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। বর্তমানে শিবিরের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা 'ল' কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেছেন তিনি। এনামুল অসম্ভব সম্মোহনী শক্তির অধিকারী। তৃণমুলের শিবির নেতাদের নাশকতায় জড়িয়ে যেভাবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়পরবর্তী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্র তৈরি করাই জামায়াত-শিবিরের বর্তমান লক্ষ্য বলে পুলিশকে জানান এনামুল। তার দেয়া তথ্যে নড়েচড়ে উঠেছেন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহ।
__._,_.___