যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করুন - '৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তারা
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামাত-শিবির মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে গণআন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় আজ যখন একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য জামাত-শিবির ও তাদের দোসর বিনপি সারাদেশে নাশকতা ও সহিংসতার সৃষ্টি করে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ হুমকির সম্মুখিন, তাই দেশের ১৬কোটি জনগনকে আজ জামাত-শিবির ও বিনপির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
গত ১৭ই জানুয়ারি '৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সভাপতি ফাহিম রেজা নুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচকবৃন্দ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও তাঁর আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভার শুরুতেই শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের দুইজন উপদেষ্টা মানবিধাকার নেতা রতন বড়ুয়া ও শিক্ষাবিদ ডঃ মনসুর খান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি'র মত জনপ্রিয় গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদার এবং গণতান্ত্রীক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ নুরুন নবী বলেন যুক্তরাষ্ট্রের মত পরাশক্তির চাপে সব দেশের নেতাই কিছু না কিছু বিচলিত হন, কিন্ত একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ উনি বঙ্গবন্ধুর কন্য, সৎ সাহস উনার আছে। তাই শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এই সরকারের বিকল্প নেই।
নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা ও কলামিষ্ট শিতাংশু গুহ বলেন, আমি কয়েকদিন আগে দেশ থেকে ঘুরে এসেছি, আমি লক্ষ্য করেছি দেশের মানুষ বিনপি ও খালেদা জিয়ার মিত্যাচারে আর বিশ্বাস করেনা। জামাত-শিবিরের মৌলবাদী রাজনীতিতে শিক্ষিত যুব সমাজের সম্পৃক্ততা নেই। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে এবং জামাত-শিবির পালাপার পথ খুজে পাবেনা।
নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট চলচিত্রকার কবির আনোয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন বিনপি-জামাত যে নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে, তাতে আমি শংকিত। তারা শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে উৎখাত করার মহাষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, তাই তাদের শক্তিকে হালকাভাবে নিলে, তার পরিণাম আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে, দেশের ১৬ কোটি মানুষকেই ভোগ করতে হবে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দেশের গরীব দুঃখী মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটান, তাই আমাদের উচিৎ এই সংকটময় মূহুর্তে সরকারের পাশে এসে দাঁড়ানো।
নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, কবি ও লেখক হাসান আব্দুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে প্রবাসে নির্মূল কমিটিকে আরো সুসংগঠিত করে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীকে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার নেতাদের কাছে নিয়ে যাবার আশা ব্যক্ত করেন। বক্তব্য শেষে তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শুনান।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া বলেন যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল এবং এই সরকারকে নাশকতার মাধ্যমে উৎখাতের জন্য দেশে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিনপি-জামাত আজ গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা আজ হুমকির সম্মুখিন। তাই দেশে ও প্রবাসে বিনপি-জামাতের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান এবং পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ফাহিম রেজা নুর বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের মত প্রবাসেও নির্মূল কমিটির কার্যক্রম চলবে। তিনি অবিলম্বে জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানান এবং সারাদেশে যারা নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদের বিচার করে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবীও জানান।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য যথাক্রমে সফি চৌধুরী হারুন, সুব্রত বিশ্বাস, সাপ্তাহিক বর্ণমালা প্রত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ডঃ জিনাত নবী, সহসভাপতি যথাক্রমে নিনি ওয়াহেদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, লেখক নাজনিন সিমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদেক শিবলু, দপ্তর সম্পাদক গোপাল স্যান্নাল, কার্যকরি কমিটির সদস্য হেলাল মাহমুদ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান, ওবায়দুল্লাহ মামুন। আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকার ইঞ্জিনিয়ার জামাল উদ্দিন হোসেন, জি এইচ আরজু, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাসেম ভুঁইয়া, ফিরোজ মাহমুদ, আব্দুল মান্নান, সামসুল আলম, রিমন ইসলাম, সৈয়দ আজিজুর রহমান, মোহাম্মদ আকতার হোসেন, শাহ সহিদুল হক প্রমুখ।
__._,_.___