__._,_.___
If India sends an administrator or a so-called governor to Bangladesh to run its administration, that would not be such a bad idea. We have proved without any doubt that our so-called leaders (elected in corrupt elections) are not only corrupt, dishonest, devoid of any decency but also illiterate and totally incompetent. And, as it stands, we do not have legal means to get rid of these uncouth and corrupt people; so India's imposition of an administration who can run the country properly would be a blessing in disguise. These fat, nasty, corrupt ladies can then rot in the gutters.- AR
From: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>
To: mukto-mona@yahoogroups.com
Sent: Tuesday, 10 December 2013, 13:12
Subject: [mukto-mona] মিশন ইম্পসিবল!!
মিশন ইম্পসিবল!!
সাঈদ তারেক
আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি '৭২-'৭৫এর স্বাক্ষী, সমস্যা হচ্ছে রাজনীতির কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে গেলে আগে ওই সময়ের কথা মনে এসে যায়। এইযে আজকের ভোট এবং ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন, এ প্রসঙ্গেও সেই '৭১এ জল্লাদ টিক্কা খানের করানো একতরফা নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে আজকের যে স্বাষরুদ্ধকর পরিস্থিতি গনতন্ত্রের নামে ভন্ডামী এক ব্যক্তির স্বৈরশাষন-, মনে পড়ছে '৭২-'৭৫এর সেই বিভীষিকার স্মৃতি। '৭৫এর জানুয়ারিতে বাকশাল কায়েম হবার পর থেকে শুরু হলো অনিশ্চিয়তা। কি হয় কি হবে।
বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে যে অচলাবস্থা, তারানকোর দৌড়ঝাঁপ, ফলাফল নিয়ে যে শ্বাষরুদ্ধকর অপেক্ষা-, তাতেও কেন যেন বারবার সেই '৭১-এর ডিসেম্বরের দিনগুলির কথাই মনে পড়ছে। ১৩ই ডিসেম্বরেই বোঝা যাচ্ছিল পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে গেছে মনোবল ভেঙ্গে গেছে, হয়তো পরাজয় মেনে নেবে। ১৪ই ডিসেম্বর জল্লাদরা পোড়ামাটি নীতি নিয়ে হত্যা করলো বুদ্ধিজীবিদেরকে। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর খবর রটে গেল পাকবাহিনী হয়তো আত্মসমর্পন করতে চলেছে। কথাবার্তা চলছে দূতিয়ালি চলছে। তারপরও অনিশ্চিয়তা। রাত কেটে সকাল হলো। টানটান উত্তেজনা। আকাশবাণী থেকে জানানো হলো শেষ পর্যন্ত পাক বাহিনী আত্মসমর্পনে রাজী হয়েছে। বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে ভারতীয় জেনারেল অরোরার কাছে অস্ত্রসমর্পন করবেন নিয়াজি। তারপরও সংশয়। কি হয় কি হয়। শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পন হবে তো! যদি বেঁকে বসে নিয়াজি!
ঢাকায় তারানকো দৌড়ঝাপ চলছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হয়তো জানাবেন ফলাফল। গত তিনদিনে কিছুই জানাননি, বলেছেন সব শেষ করে একবারে বলবেন। গোটা জাতি উন্মুখ কি ফর্মূলা তিনি বের করেন। কোন সমঝোতা হবে কিনা! বা তিনি যে ফর্মূলা দেবেন সব পক্ষ মানবে কিনা!
কেউ কেউ মনে করেন তারানকো মিশন ফেল মারবে। আমারও ধারনা অনেকটা সে রকমেরই। তার প্রধান কারন দিল্লী। তারানকো চাইছেন সব দলের অংশগ্রহনে অবাধ ও নিরুপেক্ষ নির্বাচন। দিল্লী চাইছে একমাত্র আওয়ামী লীগের অংশগ্রহনে একদলীয় বা একতরফা নির্বাচন। তারানকো চাইছেন বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে আসুক। দিল্লী চাইছে বিএনপি এ নির্বাচনে না আসুক। শেখ হাসিনা এখন আর খুব একটা ম্যাটার নন। সুজাতা সিংয়ের সাম্প্রতিক সফর এবং শেখ হাসিনার পক্ষে প্রকাশ্য দূতিয়ালিতে এটা ষ্পষ্ট হয়ে গেছে বাংলাদেশের নির্র্বাচন নিয়ে দিল্লী তাদের আগের অবস্থানেই অনড় আছে। তারা যেনতেন প্রকারে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দিতে চায়। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাদের সে আশা পুরন হবেনা। তারানকো বা জাতিসংঘের ইচ্ছার সাথে ইন্ডিয়ার চাওয়া পাওয়ার এখানেই ফারাক। সে কারনেই প্রশ্ন তারানকো ইন্ডিয়াকে উইনওভার করতে পারবেন কিনা। সে কারনেই সন্দেহ তারনাকো মিশন সফল হবে কিনা।
তিন দিনে তারানকো ঢাকায় অনেকের সাথে দেখা করেছেন কথা বলেছেন। একজনের সাথে একাধিকবারও। জানা যায় তিনি রাস্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানের সাথেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তা হতে দেন নাই। তাতে খুব একটা কিছু যায় আসেনা। রাষ্ট্রপতি একটা ঠুটো জগন্নাথ, যিনি সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা বলে নৈতিক দায় এড়িয়ে গেছেন এবং প্রমান করেছেন তিনি ষোল কোটী মানুষের নন আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট। কাজেই এমন একজন রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে বঙ্গভবনের 'উষ্ণ আতিথেয়তা' ছাড়া তারানকো আর কিছুই পেতেন না। সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করা হতে পারতো শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ কারন সমস্যাটা রাজনীতির, রাজনীতির সমস্যা সমাধানে সেনাপ্রধানকে ভুমিকা নিতে যেমন বলা যায়না তেমনি সেনাপ্রধানেরও এ বিষয়ে কথা বলার কথা নয়। কাজেই এই দুই বিশিষ্টজনের সাথে দেখা করতে না পারায় তারানকোর মিশন সফল করতে যে খুব একটা সমস্যা হবে তেমনটি নয়।
তবে একজনের সাথে কথা বলাটা ছিল খুবই জরুরী, তিনি হচ্ছেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মি: পঙ্কজ শরণ। আমি এই খবরটাই রাখার চেষ্টা করছিলাম। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বর্তমানের যে সংকট তার আসল চাবিকাঠি যার হাতে তিনি হচ্ছেন এই ভদ্রলোক। দিল্লীর সরকার অঙ্গরাজ্যগুলোর নির্বাচনে খুব একটা নাক গলাতে বা মাথা ঘামাতে না পারলেও বাংলাদেশের ব্যপারে রীতিমত ক্রিড়নকের ভুমিকায় অবতীর্ণ। কাল চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এমনকি খোদ দিল্লীতে হোয়াইটওয়াশ হলেও কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশে জিততে মরীয়া। অনেকে বলেন মি: শরণকে দিল্লী বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত নয় কার্যত এ্যডমিনিস্ট্রেটর বা প্রশাসক বানিয়ে পাঠিয়েছে। তিনিই নাকি এখানকার সব কিছু ঠিকঠাক করে দেন। এই লোকই নাকি আসল লোক! অনেকের ধারনা আজকে আমাদের এখানে নির্বাচন নিয়ে যে সমস্যা তা এক মূহুর্তে সমাধান করে দিতে পারেন মি: শরণ। সে কারনেই ভাবছিলাম তারানকো সাহেব যতই দৌড়ঝাঁপ করুন আসল লোকের সাথে কথা না বলে কি সমাধান বের করবেন!
শেখ পর্যন্ত জানা গেছে মহাসচিবের দূত মি: শরণের সাথে দেখা করেছেন। কি কথা হয়েছে জানা যায় নাই তবে সেখান থেকেই তিনি ছুটে গেছেন বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টার কাছে। এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। আমি জানিনা দিল্লী শেষ মূহুর্তে তাদের পলিসি রদবদল করবে কিনা তবে জাতিসংঘের মিশন সফল হতে হলে এর বিকল্প কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা।
কেউ মানুক আর নাই মানুক সকল দলকে বাইরে রেখে ভোটের মক্শো করিয়ে অথবা না করিয়ে দিল্লী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দিতে পারে, একমাত্র দৈব দূর্বিপাক ছাড়া তাদের এ মতলব বাঞ্চাল হওয়ার কোন অবকাশ নাই। তাতে হয়তো কাশ্মিরের শেখ আব্দুল্লাহর মত আর এক শেখ এখানে গদীনশিন থাকবেন কিন্তু এই দেশটা নিয়ে দিল্লীকে সব সময় টেনশনেই থাকতে হবে। কাশ্মিরে কোন গৃহযুদ্ধ নাই তারপরও সেখানে কয়েক ডিভিশন সেনা মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছে। বাংলাদেশে সড়াসড়ি সেনা মোতায়েনের কোন উছিলা এখন পর্যন্ত নাই কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নাই দেশটাকে প্রায় গৃহযুদ্ধাবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখলে দিল্লীর জন্য কতটুকু স্বস্তিদায়ক হবে তা তারাই বিবেচনা করবে তবে চোখকান খুলে গেলে একদিন বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য যে সোচ্চার হবেনা তার গ্যারান্টি কি! সচেতন মহলের প্রশ্ন, দিল্লী কি আর একটা কাশ্মীর ফ্রন্ট খুলতে চায়!
এই হিসাব কিতাবগুলো যে বিশ্ব সম্প্রদায় বোঝে না তা নয়। একথা সবাই জেনে গেছে শেখ হাসিনা কোন ফ্যাক্টর নন শেখ হাসিনাকে উছিলা ধরে ভারত বাংলাদেশকে তাদের অধিকারে রাখতে চায়। এখানে সমঝোতাটা হতে হবে দিল্লীর সাথে। বিএনপি বারবারই তাদেরকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করেছে যে ক্ষমতায় যেতে পারলে দিল্লীর স্বার্থের কোন হানি হবেনা। কিন্তু দিল্লী বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে নাই। কারন জামাত। জামাতের সাথে আদর্শগত দ্বন্ধ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের। আবার আহমদিয়ারা গাঁটছড়া বাঁধা ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মোসাদ কাজ করে র'য়ের সাথে মিলে। জানা যায় এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আহমদিয়ারা মোসাদকে দিয়ে র'য়ের কাছে জামাত সম্পর্কে এই ধারনা দিয়েছে যে এরা হচ্ছে একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী সংগঠন। এরা ভারতবিরোধী। এরা যদি বাংলাদেশে টিকে থাকে ভারতের জন্য এক সময় হুমকী হয়ে উঠবে। সে কারনে এবার ক্ষমতা হাতে পেয়ে ইন্ডিয়া প্রথমেই জামাতের ওপর হামলে পড়ে। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধি বিচারের ধূয়া তুলে এই দলটিকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে নামে। জামাত বিএনপির সাথে জোটবাঁধা। সে কারনে ইন্ডিয়া বিএনপির ওপর ভরষা করার সাহস পায়না। মনে করে জামাত এক সময় বিএনপিকে পরিচালনা করবে এবং বিএনপি ভারতের আয়ত্বের বাইরে চলে যাবে।
তারানকো কি ভারতকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে তাদের এ আশংকা অমুলক! এখন গোটা ব্যপারটাই নির্ভর করছে ভারতের সদিচ্ছার ওপর তারা বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারবে কিনা। এরশাদ সাহেবও তাদের লাইনের লোক। চেষ্টা করেছিল তাকে নির্বাচনে রাখতে। হয়তো তাকে ধারনা দেয়া হয়েছিল এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট সব তার বাক্সে পড়বে, হাসিনার বদলে তিনিই জিতে সরকার গঠন করবেন। কিন্তু ক'দিনেই দেখা যায় দিল্লী হাসিনার পক্ষেই। তাকেই সরকারে রাখবে। এরশাদ সাহেব হিসাব করে দেখলেন- যে নির্বাচন তাতে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে তাকে থাকতে হবে বিরোধী দলে। তাতে তার কি লাভ! বরঞ্চ বিএনপিসহ নির্বাচনে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তিনি সটকে পড়েছেন। এখন চাইছেন এমন একটা নির্বাচন যাতে বিএনপি আওয়ামী লীগ ১২০/১০০ সীট পাবে আর তিনি ৪০/৫০টায় জিতে চরম বার্গেংিয়ের পজিশনে যাবেন।
কেউ কেউ ইতিমধ্যে আশংকা প্রকাশ করেছেন তারানকো মিশন ব্যর্থ হবে। ইন্ডিয়া কিছুতেই ছাড় দেবেনা। তারা যে কোন মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দেবে। তারানকোকে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে আমি এখনও তা মনে করতে চাইনা। তারপর যদি তেমনটি হয়! তারানকোর মুখ থেকে শুনতে হয় হতাশার বাণী! এরপরে দেশের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বান কি মুন তখন কি করবেন! ইন্ডিয়ার সঙ্গে বিরোধে জড়াবেন না বাংলাদেশের সিকিমের মর্যাদা মেনে নেবেন! আমাদের তো এখন শেষ ভরষা ওই জাতিসংঘই।
৯ ডিসেম্বর, '১৩
e-mail: mail@saeedtarek.com This e-mail address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view itsaeedtarek@yahoo.com
ঘটনাটা ২০১০ সালের। সেবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন চীনের লেখক ও মানবাধিকারকর্মী লিও সিয়াওবো। চীনের রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন তিনি। কারারুদ্ধ অবস্থাতেই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
ডিসেম্বরে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়, তখনও লিও চীনের কারাগারে আটক। আর তাঁর স্ত্রী গৃহবন্দি। নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাইকে। মিজ পিল্লাই সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে অসম্মতি জানান। তাঁর পক্ষ থেকে অবশ্য তখন জানানো হয় যে, জাতিসংঘ ভবনে তাঁর মানবাধিকার বিষয়ক একটি কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত থাকায় তিনি নোবেল পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না।
তাঁকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তাঁর পক্ষে বা জাতিসংঘের পক্ষে যে কোনো পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা যেন ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। অন্তত জাতিসংঘের কোনো একজন কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়েছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও। কিন্তু নাভি পিল্লাই তাতেও সম্মতি দেননি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর বা জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধি ওই অনুষ্ঠানে যাবেন না।
কারারুদ্ধ একজন মানবাধিকারকর্মী, নোবেলের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত একটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, আর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ওই অনুষ্ঠানে নিজে তো যাবেন-ই না, তাঁর কোনো প্রতিনিধিকেও সেখানে যেতে দিবেন না, এ কেমন কথা!
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষযক হাইকমিশনার কাদের মোল্রার ফাঁসি কার্যকর না করতে সরকারকে কার্যত চাপ দিতে চেয়েছেন
লিও'র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া আর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের চীন সফরের ঘটনাটা ঘটেছিল কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে। সদ্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া একজন মানবাধিকারকর্মীর প্রতি জাতিসংঘের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব সহানুভূতিশীল হবেন– এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন দেশ-বিদেশের মানবাধিকারকর্মীরা। বান কি মুনকে তাঁরা অনুরোধ জানান, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি যেন লিও'র মুক্তির বিষয়টা তাঁর কাছে তুলে ধরেন। বান কি মুন সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি নোবেল পুরস্কার বিজয়ের জন্য লিও-কে অভিনন্দন জানাতেও রাজি হননি তিনি।
চীনের নিপীড়িত মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় লড়াই করতে গিয়ে একজন মানবাধিকারকর্মী যখন বিপন্ন, জাতিসংঘ কিংবা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তাঁর পাশে দাঁড়াতে সরাসরি অসম্মতি জানিয়েছেন! তাহলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন কাদের জন্য কাজ করে? যে নাভি পিল্লাই মানবতার বিরুদ্ধে পৈশাচিক অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত একজন অপরাধীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে নেমেছেন, সেই ব্যক্তিই কিনা নোবেল পুরস্কার পাওয়া একজন মানবাধিকারকর্মীর পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন!
দুই.
চলতি বছরের জুলাই কী আগস্ট মাসের ঘটনা। তামিল গেরিলাদের সঙ্গে চলমান দীর্ঘদিনের সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে সে দেশ সফরে যান নাভি পিল্লাই। তিনি কোথায় যাবেন, কী করবেন সবকিছুই জানানো হয় শ্রীলঙ্কা সরকারকে। কিন্তু একটি কর্মসূচি সম্পর্কে সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস থেকে। শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত লিবারেশন টাইগার অব তামিল ইলম (এলটিটিই) সদস্যদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি নেন তিনি। কলম্বো সরকারকে না জানালেও ঘটনাটা মিডিয়া ফাঁস করে দেয়। তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সরকার এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করে।
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নাভি পিল্লাই-র সফরকে শ্রীলঙ্কা সরকার স্বাগত জানাবে। কিন্তু নিহত তামিল গেরিলাদের সমাধিতে ফুল দেওয়ার মতো কোনো কর্মসূচি নেওয়া হলে তার পরিণাম হবে খুবই খারাপ। কিন্ত ভারতীয় তামিল বংশোদ্ভূত মিজ পিল্লাই তাঁর কর্মসূচিতে অটল থাকেন এবং তা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেন। শ্রীলঙ্কান সরকারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, তিনি তাদের অনুমোদিত কর্মসূচির বাইরে কোনো কিছু নিতে চাইলে পুরো সফরটিই বাতিল করে দেওয়া হবে। বাধ্য হয়ে পিল্লাই তার কর্মসূচি বাদ দেন।
শ্রীলঙ্কায় অবস্থানকালেই মিজ পিল্লাই-এর তৎপরতা সমালোচনার মুখে পড়ে। কলম্বোর প্রায় সব ধরনের মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ব্লগ সর্বত্রই তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ফিরে যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে শ্রীলঙ্কান মিডিয়ার সমালোচনার জবাব দেন এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
সফর শেষে ফিরে গিয়ে তিনি শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সরকার সম্পর্কে তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। আর তাঁর এ বিবৃতির পর শ্রীলঙ্কান মিডিয়া তাকে আরেক দফা তুলোধুনা করে ছাড়ে।
তিন
গত বছরের ঘটনা। টিউশন ফি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে কানাডার কুইবেকের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে কুইবেক প্রাদেশিক সরকার ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। কুইবেকের ক্ষমতাসীন দল 'ছাত্রদের কোনো ধরনের বিক্ষোভ আয়োজনের অন্তত ৮ ঘন্টা আগে কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং বিক্ষোভের এলাকাসমূহ সম্পর্কে জানানোর নিয়ম বাধ্যতামূলক করে' সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে।
কুইবেক প্রাদেশিক সরকারের এই বিলটিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল সবকটি রাজনৈতিক দলই সমর্থন করে। কিন্তু নাভি পিল্লাই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, কুইবেক জনসমাবেশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে দিচ্ছে। তিনি কুইবেককে কালো তালিকাভূক্ত করারও হুমকি দেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে নাভি পিল্লাই-র এই বক্তৃতার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় কানাডায়। কুইবেক প্রাদেশিক সরকার তো বটেই, ফেডারেল সরকার পর্যন্ত তাঁর বক্তৃতার তীব্র সমালোচনা করে। সেই সমালোচনায় যোগ দেয় কানাডার মিডিয়াও। শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো অভিযোগ করে, নাভি পিল্লাই জাতিসংঘের মানবাধিকারের সংজ্ঞাকেই 'টুইস্ট' করছেন। কোনো কোনো পত্রিকা এমনও মন্তব্য করে যে তাঁর বর্ণাঢ্য পেশাদার জীবন থাকলেও, কানাডার সংবিধান এবং চার্টার অব রাইটস সম্পর্কে কোনো পড়াশুনা নেই। আর কোনো দেশের আইন কানুন সম্পর্কে না জেনে, পড়াশুনা না করে দায়িত্বশীল পদ থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলেও মন্তব্য করে সেদেশের মিডিয়া।
টরন্টো, মন্ট্রিয়লসহ কানাডার বড় বড় শহরে বিক্ষোভ বা সভা সমাবেশ করতে হলে অন্তত ৩০ ঘন্টা আগে লিখিতভাবে জানিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। এমনকি জাতিসংঘের সামনে সমাবেশ করতেও ৩০ ঘন্টা আগে জানাতে হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ৮ ঘন্টা আগে জানানোর নিয়মকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নাভি পিল্লাই।
চার
এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা কিংবা পশ্চিমের দেশ কানাডা– যেখানেই ভুল পথে পা রেখেছেন সেখানেই তীব্র সমালোচিত হয়েছেন জাতিসংঘের এই হাইকমিশনার। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকর-আলবদরদের নৃশংসতা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা থাকবে না– সেটি বিশ্বাস করলে ভুল করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার সম্পর্কেও তাঁর ধারণা আছে বলেই আমরা মনে করি।
তবু তিনি শেষ মুহূর্তে বিবৃতি দিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে সরকারকে কার্যত চাপ দিয়েছেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সেই চাপের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যতটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে, ক্ষোভ দেখা গেছে, মূলধারার মিডিয়াতে তার ছিটেফোঁটাও নেই। ঢাকার কোনো একটি মিডিয়া কি নাভি পিল্লাই-র বিবৃতির সমালোচনা করে সম্পাদকীয় লিখেছে? বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া্ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন করেছে? কিংবা কোনো সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বা কোনোভাবে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কি?
৯ ডিসেম্বর রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েও অকস্মাৎ তা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় পুরো দেশ যেভাবে ফুঁসে উঠেছিল, নাভি পিল্লাই-র বিবৃতির বিরুদ্ধেও সেভাবেই প্রতিবাদ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। এমনকি শ্রীলঙ্কার মিডিয়া যে কাজটি করতে পেরেছে, বাংলাদেশের মিডিয়া তার সামান্য কিছুও করতে পারেনি।
কানাডার অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা 'দ্য মেট্টোপলিটন'-এর কলামিস্ট ব্যারিল ওয়াজসম্যান একটি কলাম থেকে খানিকটা উদ্ধৃতি দিই–
"And what of Pillay herself? As Adrien Pouliot has pointed out, did she bother to talk about the Chinese repression of Tibet where a monk recently set himself on fire in protest? He was the thirtieth such suicide since 2009. Did she protest the jailing and torture of a Cuban dissident after he had testified in front of an American Senate Committee? Did she express concern over the 13 year prison sentence meted out to Iranian dissident leader Addolfattah Soltani? No! Her reaction, and that of the UN, has been total silence on China, on Iran, on North Korea on Zimbabwe, and the list goes on. But somehow Pillay found the time for Quebec.
Pillay is the perfect ethically bankrupt mouthpiece for a morally bankrupt organization.
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে কেউ কোনো নেতিবাচক কথা বলতে এলে আমাদেরও এভাবেই রুখে দাঁড়ানো উচিত। সে ব্যক্তি জন কেরিই হোন আর জাতিসংঘের কোনো কেউকেটা হোন। কানাডার 'দ্য মেট্টোপলিটন' পত্রিকার মতো আসুন আমরাও উচ্চকণ্ঠে বলে দিই– 'ইথিক্যালি ব্যাংকক্রাপ্ট' মানুষের আর যাই হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করার অধিকার নেই।
শওগাত আলী সাগর: দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক বিজনেস এডিটর, টরন্টো থেকে প্রকাশিত নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক।
http://bangla.bdnews24.com/opinion_bangla/article713961.bdnews
৭১-এ কুখ্যাত কসাই কাদেরদের এই সব নির্মম-নিষ্ঠুর-ভয়ঙ্কর-জঘন্য মানবাধিকার লঙ্গনের সময় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল কোথায় ছিলো?