Pradip Das posted in American Hindu Council . Pradip Das March 13 at 12:11pm গরু জবেহঃ প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা প্রদীপ দাস সপ্তাহ দুয়েক আগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে যত্রতত্র গোহত্যার প্রেক্ষাপটে "আইন করে গোহত্যা বন্ধ করার সুপারিশ" করে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সমাজ সংগঠক শ্যামল চক্রবর্তীর এক খেদোক্তিকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্ক সহ সারা বিশ্বে বাঙালীদের মাঝে এখন বিতর্কের ঝড় চলছে। দেশে ও প্রবাসে মানব জমিন, আমার দেশ ও ইনকিলাব মার্কা পত্রিকাগুলো উপরোক্ত ছয়টি শব্দের আগে ও পরে কি বলা হয়েছে, এবং কোন প্রেক্ষাপটে বক্তব্যটি এসেছে তার তোয়াক্কা না করে, তিলকে তাল বানিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে যাচ্ছেতাই লিখে যাচ্ছেন। ঐক্য পরিষদ অনলাইন মিডিয়া ও পত্রিকান্তরে তাৎক্ষনিক বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঐ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন এবং গোহত্যা সম্পর্কিত বক্তব্যটিকে একান্তই শ্যামল চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত হিসাবে অভিহিত করেন। অনেকগুলো প্রগতিশীল মিডিয়া ঐক্য পরিষদের বক্তব্যকে গ্রহন করে, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে গঠনমূলক ও প্রশংসনীয় ভুমিকা রাখেন। অপরদিকে, কিছু অপসাংবাদিক সংগঠনের বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে একজনের ব্যক্তিগত বক্তব্যকে সংগঠনের উপর চাপিয়ে দিয়ে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত দুই এক জন অকাল কুষ্মাণ্ডের প্ররোচনায়, উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে ঘোলা জলে মাছ শিকারে প্রয়াসী হন এবং পুনরায় তাদের হলুদ সাংবাদিকতার মুখোশ উন্মোচন করেলন। সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ প্রথমেই লিখিত বক্তব্য ও সংগঠনের তরফে কিছু দাবী দাওয়া পেশ করেন, যার অনুলিপি সাংবাদিকদের কাছে পূর্বেই বিতরন করা হয়। পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে তার সারাংশ এখানে উল্লেখ করছি। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন বলে দাবী করেন। তারা সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত নিপীড়ন নির্যাতন এবং ইহা প্রশমনের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা ও দৃশ্যমান প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বক্তারা দেশব্যাপী মৌলবাদী অপশক্তি কর্তৃক সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, উপাসনালয় আক্রমন, সহায় সম্পত্তির জবরদখল, অপহরন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীকরন ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মত জঘন্য আক্রমন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না করার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট এর মত বাহারি নামের জঙ্গীরা আস্তানা গেড়েছে। দিনাজপুরে সপ্তদশ শতাব্দীর কান্তাজিউর মন্দিরে লাখ লাখ ভক্তের উপস্থিতিতে বোমা হামলা, পঞ্চগড়ে গৌড়ীয় মঠে হামলা ও মধ্যযুগীয় কায়দায় পুরোহিত হত্যা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিদেশি নাগরিক হত্যা, এক ডজন খৃষ্টান যাজককে হত্যার চেষ্টা এবং আহমদিয়া ও শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলাসহ অনেকগুলো ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার এর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই ছিল সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনের মূল বিষয়গুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ টি দাবী পেশ করা হয়, যেগুলো এখানে হুবহু তুলে ধরা হল- একঃ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিতে মাইনরিটি ও হেইট ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন। দুইঃ সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে মাইনরিটি মন্ত্রনালয় গঠন। তিনঃ সরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা সারা দেশের সকল দেবোত্তর সম্পত্তি ও রাজা ও জমিদার বাড়িগুলো ফাউন্ডেশন গঠন করে এসব রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব ইহার অধীনে ন্যস্ত করা। চারঃ সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের ইতিহাস ও সভ্যতা পাঠ্যসুচীর অন্তর্ভুক্তকরন। পাঁচঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সরকারী খরচে স্বতন্ত্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। ছয়ঃ পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, আদিবাসী এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের প্রত্যাহার করে আদিবাসীদের কাছে তাদের ন্যায্য ভুমি ফিরয়ে দেয়া। সাতঃ স্বাধীনতা উত্তর সকল সাম্প্রাদায়িক অপরাধের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান। আটঃ অবিলম্বে সকল সাম্প্রদায়িক হামলা ও জবর দখল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান। গোটা দু'য়েক জগত শেঠ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের আন্দোলনকে একটি দল ও গোষ্ঠীর স্বার্থের বেড়াজালে বন্দী করে রাখতে চায়। তারাই মুলতঃ গরু জবাই তত্ত্ব নিয়ে এতো বেশী মাতামাতি ও এক শ্রেণীর সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের যোগসাজশে উদোর পিণ্ডি ভুঁদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। তারা গরু নিয়েই যেহেতু কথা বলতে আগ্রহী, তাহলে গরুর কথাই বলি। গেল বছর কোরবানির সময় ঢাকার রামপুরায় অবস্থিত শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরের উঠোনে গরু জবাই করার সংবাদ আমরা ছবি সমেত পত্রিকায় দেখেছি। কোরবানির মাংস না ঢেকে, সম্পূর্ণ উন্মূক্ত অবস্থায় হিন্দু বাড়ির উপর দিয়ে আনা-নেয়া হয়। বাজারে ও রেস্তোরায় দোকানীরা অন্য মাংসের সাথে গরুর মাংস নির্দ্বিধায় রেখে দেয়। এই ঘটনাগুলো হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত স্পরশকাতর ও আপত্তিকর। এটা যে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, দেশের সংখ্যাগুরু জনগণ বোধ হয় ভুলেই গেছে। তাছাড়া যত্রতত্র কোরবানি, হার-মাংস-চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা পরিবেশকে দূষণের পাশাপাশি জন জীবনেও বেশ অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। তাবদ বিশ্বের সর্বত্রই কসাইখানায় জবাই সম্পাদন করা হয়, এমনকি সৌদি আরবেও। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যাপারে নিয়ম নীতির কোন বালাই নাই। এখন একজন ব্যক্তি যদি অন্য কোন কারনে না হোক, শুধুমাত্র তার ধর্মীয় অধিকারের দাবীতে বলে, হয় কোরবানির ক্ষেত্রে যথাযথ একটা পন্থা বেছে নিতে হবে, না হয় তা বন্ধ করতে হবে তাহলে কি সেটা অপরাধ? কিন্তু সাংবাদিকরা শ্যামল চক্রবর্তীর বলা কথাগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু সাউন্ড বাইট নিয়েছে এবং তাহা এমন বিকৃত করে ছাপিয়েছে যাহা মূল বক্তব্যের সাথে কোন ভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে, তাতে দেশের সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব নিয়ে আমি যারপরনাই শঙ্কিত। কেউ কেউ লিখেছেন গরু কোরবানি দিতে না পারলে তারা পরের ঈদে মালাউনদের কোরবানি দিবেন। কেউ লিখেছেন "যুব সমাজ কে বলি এতদিন নিজের জাত ভাইদের কে হত্যা করেছ এখন ঐ মালূ নেতাদের কে হত্যা কর" । "এরা তোমার আল্লাহর ও রাসুলের বিরুদ্ধে, তোমার বিরুদ্ধে আইন চাচেছ তাই এদেরকে হত্যা কর"। " সামনে যে সময় আসবে ঐ সময় বুঝবিরে শালা মালাউনরা ,তখন গরু জবাই বাদ দিয়ে তোদের করা হবে" । "বৌদ্ধরা মায়নমারে জীবিত মুসলমানদের কাবাব বানায় আর আমাদের দেশে লাল কাপড় পরে গায়ে বাতাস লাগায়; বাহ কি চমৎকার" ৷ " সালা গরু জবাই না করে হিন্দু জবাই করা দরকার" ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যে আর কিছু না হোক —হিন্দুদের প্রতি সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মনোভাবটা খুব স্পষ্টভাবেই প্রকাশ পেয়েছে। শুনেছি বাংলাদেশে সাতান্ন ধারা না কি যেন একটা আইনের খুব ধাঁর আছে। উপরোক্ত হুমকি গুলো ঐ ধারায় পড়ে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগের একটি বিবৃতি চোখে পড়েছে। এই দলটির উপর জামাত ভর করেছে একথা মাঝে মাঝেই শুনা যায় । তাদের বিবৃতির পর সেব্যাপারে আমার আর কোন সন্দেহ নাই। অত্যন্ত অশালীন ও বিদ্বেষপূর্ণ বিবৃতিটি আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা, কোন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই আশা করা যায় না। বলা বাহুল্য, ঐক্য পরিষদের বক্তব্যকে গ্রাহ্য না করে তারা ক্ষীণদৃষ্টি ও বৈরী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে তাদের সাম্প্রদায়িক চরিত্র ও মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু এই বৈরীতা কার সাথে? মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুরা একচ্ছত্র ভাবে তাদের ভোটের এক তৃতীয়াংশ। সংখ্যালঘুরা যদি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলকে সমান হারেও ভোট দেয় তাহলে এই দলটি নির্বাচনী লড়াইয়ে শহীদ বা গাজী দুটোর একটাও হবে না। একটি রাজনৈতিক দল হয়েও আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদেরকে তুলোধুনো করেছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই মর্মাহত। একজন হিন্দু হিসাবে সঙ্গত কারনেই আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন মনে করি। বিবৃতিতে তারা চাকুরী বাকুরীতে সঙ্খালঘুদেরকে অধিকতর সুযোগ দিচ্ছে দাবী করে খুব আটখানা ভাব দেখিয়েছে। চাকুরী বাকুরী কোন ব্যক্তি বা দলের বাপ দাদার সম্পত্তি নয়, নাগরিক হিসাবে প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার। সংখ্যালঘুরা দয়া দাক্ষিণ্য নয়, মেধার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডে সমতা চায়। তারা সমান অধিকার চায়। রাষ্ট্রপরিচালকদের সাথে সংখ্যালঘুদের সম্পর্ক মহাজন-ক্রীতদাসের নয়। এযাবৎ বাংলাদেশে ১৭ জন রাষ্ট্রপতি, ১০ জন প্রধানমন্ত্রী, ১১ জন স্পিকার, ১২ জন ডেপুটি স্পিকার, ২১ জন প্রধান বিচারপতি, ৫ জন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, ১০ জন চিফ হুইপ, ১৫ জন অ্যাটর্নি জেনারেল, ৪৪ জন সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীপ্রধান, ২৮ জন পুলিশের আইজি, ১০ জন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ২৩ জন জাতীয় অধ্যাপক, ১১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালন করেছে। ভেবে দেখুন এদের মধ্যে কয়জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের? এযাবত শুধু একজন বিচারপতি ও একজন জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে।এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (১৫ জন), আইন কমিশনের চেয়ারম্যান (০৭ জন), জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি (১৪ জন), মহা হিশাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (১১ জন), র্যা ব এর মহাপরিচালক (০৮ জন), বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক (১৫ জন), পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান (১৩ জন), দুদকের চেয়ারম্যান (০৪ জন), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (১২ জন) ইত্যাদি পদেও এখনো কোন সংখ্যালঘুকে স্থান দেয়া হয়নি। মন্ত্রীপরিষদে কখনো কি সংখ্যালঘুরা শুন্য, এক বা দুইয়ের কোটা অতিক্রম করেছে? তাও হাফ ও কোয়ার্টার মন্ত্রী। সারা বিশ্বে এতগুলো রাষ্ট্রদূতের কয়জন সংখ্যালঘু? মেধা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তের সংখ্যা শুন্য হতে পারে, আবার হতে পারে দশ। কোটা কেনো? তাও আবার একের অধিক নয়। ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। আর এটাও তথ্য উপাত্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠিত যে, নানা অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বেহাত হওয়া সম্পত্তির তিন চতুর্থাংশ আওয়ামী লীগের দখলে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেওয়া রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনটা আওয়ামী লীগ পূরণ করেছে? আদালত কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম সহ সামরিক শাসনামলে গৃহীত সকল কালাকানুন বাতিল করার পরও আওয়ামীলীগ স্বপ্রণোদিত হয়ে সংবিধানে কৌশলে রাষ্ট্রধর্ম পুনর্বহাল করেছে। এর কি খুবই প্রয়োজন ছিল? শত্রু সম্পত্তি আইনের শুধু "শত্রু" বাতিল হয়েছে, "সম্পত্তি" এখনো দূর অস্ত রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এটা ভুলে যেতে পারে না যে তাদের আমলেই উখিয়া এবং পটিয়াতে শত শত বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই গেল নির্বাচনের আগে পাবনার সাথিয়া ও কুষ্টিয়ার অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রামে ও মহল্লায় আক্রমন হয়েছে। তাহলে জামাত-বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কোথায়? বর্তমানে সংঘটিত আক্রমনের মাত্রা কি জামাত-বিএনপি দুঃসাশনের চেয়ে একটুও কম? আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে, ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ তুলে মৌলবাদীদের সস্তা বুলি ও জুজুর ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যাহা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ও দুঃখজনক। একই ভাবে এক সাংবাদিক সেদিনের সভায় ভারতে গরু জবাইয়ের অবতারনা করে ধুম্রজাল সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক উত্তরদাতা, এটা ভারতের ব্যাপার এবং ভারতীয় দুতাবাসে গিয়ে জিগ্যেস করার কথা বলার পর ও সাংবাদিক মহোদয় উত্তর জানার জন্য নাছোড়বান্দা ছিলেন। পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে সংবাদটি পরিবেশন করেন। আওয়ামী লীগ যখন ভারতের কথা তুললই, তাহলে তারা কেন মুসলমান অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘুদের অধিকার হরন এমনকি সারা বিশ্বের অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের কথা তুললেন না। ভারতের ঘটনা নিয়ে তারা মারাত্মক তথ্যবিভ্রাট ও ঘটিয়েছেন। ভারতে দাঙ্গার শুরুটা হয়েছিল গোধরা রেল স্টেশনে হিন্দুদের দ্বারা ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দুই হাজার মুসলমান নাগরিককে পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে নয়, বরং তার উলটো। ট্রেনের বগীতে মুসলমানদের আগুনে হিন্দুরা মারা গিয়েছিল। হিন্দুরা বাংলাদেশে কিছু না করেই মার খায়, যত্রতত্র নানা অজুহাতে নিপীড়িত হয়। ভাবতে পারেন বাংলাদেশে তারা ট্রেনে আগুন দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করলে কি হত? অভিযোগ তুলেছেন হিন্দুরা বাংলাদেশে পুকুরে ডুব দেন আর ভেসে উঠেন ভারতে। কি জঘন্য মানসিকতা আপনাদের। বাপ দাদার ভিটামাটি ছেড়ে হিন্দুরা কেন চলে যায় তা আপনারা অনুধাবন করতে পারবেন না কখনই, কারন আপনাদের অনেকেরই হাত পরিস্কার নয়। আমাদের নাবালিকা মেয়েদের যখন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আপনাদের ভুমিকা কি সেটা তো নতুন করে জানার প্রয়োজন নেই। কোন ভাবে অপহৃত একজন মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকার। এখনো প্রচলিত, তথাকথিত সরকারী নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে নাবালিকা সন্তানকে অভিভাবকদের হাতে তুলে না দিয়ে, আত্মীয়-পরিজনদের উপর আক্রমনের ভয় ভীতি দেখিয়ে ধর্মান্তরে প্ররোচনা দেয়া হয়। যেটা অপহরণকারীরা করতে পারে না, সরকারী হেফাজতে অবলীলায় তাই হয়ে যায়। অদ্যাবধি বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর বিচারের ক্ষেত্রে সব সরকারেরই এতো অনীহা কেন? মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা কেন দলে দলে দেশত্যাগ করছে? আর কয়জনই শান্তির দেশ বাংলাদেশে আসছে? বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা সবাই বাঙ্গালী হয়ে গেছি। বললেই হল, ব্যাপারটা কি তাই? একজন চাকমা, সাঁওতাল বা মং কে আপনারা বাঙালী বলেন কি করে। তারা তো তাদের ভুমিতে আদিবাসী, তাদের রক্তে কখনো বাঙালীত্ব ছিল না। জাতিসংঘ সহ সারা বিশ্ব যখন আদিবাসীদের স্বাতন্ত্রকে সংরক্ষন করতে তৎপর সেখানে আপনারা একটি গর্বিত জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক স্বকীয়তাকে অস্বীকার করি কিভাবে? আমি কি আমার বাঙালীত্ব বিসর্জন দিতে পারব? স্বাধীনতার কথা আপনারা বলেন, কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ কি তা কি ভেবে দেখেছেন? এবার আসি দেশের গনতন্ত্র প্রসঙ্গে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে পচাত্তর পর্যন্তই দেশে গনতন্ত্র ছিল। বাংলার হিন্দু-মুসলময়ান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকলের রক্ত রঞ্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ইহা কারো একার কৃতিত্ব নয়। সদ্য একটি স্বাধীন দেশে যুদ্ধজয়ী জাতি চেয়েছিল দেশটাকে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে। তার আগেই হায়নারা ছোবল হেনেছে। যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী, গর্বিত একটি দল আওয়ামী লীগ সেটা অস্বীকার করার উপায় নাই। অস্বীকার করার উপায় নাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বও। কিন্তু দেনা পাওনার বিচারে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কেহই সমালোচনার বাইরে নয়, বঙ্গবন্ধু ও না। গনতন্ত্রের "মানস পুত্র" সোহরাওয়ারদীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গনতন্ত্র কোথায়, কবে ছিল আমাদের দেশে? ঐ যে স্বাধীনতার পরের তিন বছর ছাড়া সব গণতন্ত্রের নমুনাই আমরা দেখেছি। হাঁ-না গনতন্ত্র আমরা দেখেছি। বন্দুকতন্ত্র দেখেছি। জামাত-বিএনপির ইসলামতন্ত্র দেখেছি। ফখরুদ্দিনের মাইনাস তন্ত্র দেখেছি। সবশেষে ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া যেটা হয়েছে তার কি তন্ত্র নাম দেওয়া যায় তা আমি জানিনা। গনতন্ত্র থাকলে সংখ্যালঘুরা নির্বিবাদে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র জায়গা করে নিতে পারতো। গনতন্ত্র থাকলে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড থেকে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হবার কারনে রিক্ত হস্তে ফিরতে হত না অসংখ্য যোগ্য প্রার্থীরা। তারাও হতে পারতো প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। এখন সবই ভেল্কি বাজি। যেমন খুশী তেমন সাজো ব্যাপার স্যাপার। এসব দেখে সোহরাওয়ারদী সাহেব কবরেও আড়মোড়া করছেন বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিরসনে সংখ্যাগুরু জনগনের সক্রিয় সমর্থন অপরিহার্য। ঐক্য পরিষদের বক্তব্যেও সেটা বলা হয়েছে। দুঃখজনক ভাবে সেটাকে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করলেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা শান্তিতে আছে, বা অমুক-তমুক দেশের চেয়ে ভালো আছে এসব বলে প্রকারান্তরে পরিস্থিতির ব্যাপারে নিজেদের অজ্ঞতা বা সমস্যা সমাধানে তাদের অনীহাই প্রকাশ করেছেন। শান্তি শান্তি বললেই সংখ্যালঘুরা শান্তি পাবে না, আস্বস্ত হবে না। শান্তিকে এমন শান্তিতেই রাখা হয়েছে যে, শান্তির মা এখন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যেতে বাধ্য হচ্ছে। পরিশেষে, সাংবাদিক সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছিল পঞ্চগড়ে শান্ত গৌড়ীয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলাকেটে হত্যা করার প্রতিক্রিয়ায়। এর মাস দুয়েকের মধ্যে আরও বেশ কিছু মন্দির, গির্জা সহ সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন ও হুমকি এসেছে। এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দল বিবৃতি দিয়েছে কিনা তা আমার চোখে পড়েনি। তাই গরু জবাই নিয়ে গাত্রদাহ খুবই রহস্যজনক। যদি কেউ গরু, শুকর, কচ্ছপ, এমনকি আরশোলাও খায়, আমার মনে হয়না সেটা নিয়ে কারো আপত্তি থাকতে পারে। কে কি খাবে বা না খাবে সেটা মানুষের মৌলিক অধিকার ও রুচির ব্যাপার। কিন্তু সকলকে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, নিজের অধিকার চর্চা করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকারের অমর্যাদা না হয়। তাহলেই মানুষে মানুষে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। প্রতিটি জনগোষ্ঠীই নিজ দেশে নিজ অধিকার নিয়ে, স্বাধীনতা নিয়ে থাকতে চায়। কারো অনুকম্পা নিয়ে বেঁচে থাকার মানে স্বাধীনতা নয়। জন্মভিটায় মুক্ত ও নির্ভীক পরিবেশে সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার নামই স্বাধীনতা। ইহাই গনতন্ত্রের সূতিকাগার। (প্রবন্ধটি লেখকের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত) Like Comment | | | | | | Pradip Das posted in American Hindu Council. | | | | | | গরু জবেহঃ প্রতিক্রিয়া ও বাস্তবতা প্রদীপ দাস সপ্তাহ দুয়েক আগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে যত্রতত্র গোহত্যার প্রেক্ষাপটে "আইন করে গোহত্যা বন্ধ করার সুপারিশ" করে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সমাজ সংগঠক শ্যামল চক্রবর্তীর এক খেদোক্তিকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্ক সহ সারা বিশ্বে বাঙালীদের মাঝে এখন বিতর্কের ঝড় চলছে। দেশে ও প্রবাসে মানব জমিন, আমার দেশ ও ইনকিলাব মার্কা পত্রিকাগুলো উপরোক্ত ছয়টি শব্দের আগে ও পরে কি বলা হয়েছে, এবং কোন প্রেক্ষাপটে বক্তব্যটি এসেছে তার তোয়াক্কা না করে, তিলকে তাল বানিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে যাচ্ছেতাই লিখে যাচ্ছেন। ঐক্য পরিষদ অনলাইন মিডিয়া ও পত্রিকান্তরে তাৎক্ষনিক বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঐ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন এবং গোহত্যা সম্পর্কিত বক্তব্যটিকে একান্তই শ্যামল চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত হিসাবে অভিহিত করেন। অনেকগুলো প্রগতিশীল মিডিয়া ঐক্য পরিষদের বক্তব্যকে গ্রহন করে, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে গঠনমূলক ও প্রশংসনীয় ভুমিকা রাখেন। অপরদিকে, কিছু অপসাংবাদিক সংগঠনের বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে একজনের ব্যক্তিগত বক্তব্যকে সংগঠনের উপর চাপিয়ে দিয়ে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত দুই এক জন অকাল কুষ্মাণ্ডের প্ররোচনায়, উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে ঘোলা জলে মাছ শিকারে প্রয়াসী হন এবং পুনরায় তাদের হলুদ সাংবাদিকতার মুখোশ উন্মোচন করেলন। সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ প্রথমেই লিখিত বক্তব্য ও সংগঠনের তরফে কিছু দাবী দাওয়া পেশ করেন, যার অনুলিপি সাংবাদিকদের কাছে পূর্বেই বিতরন করা হয়। পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে তার সারাংশ এখানে উল্লেখ করছি। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন বলে দাবী করেন। তারা সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত নিপীড়ন নির্যাতন এবং ইহা প্রশমনের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা ও দৃশ্যমান প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বক্তারা দেশব্যাপী মৌলবাদী অপশক্তি কর্তৃক সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, উপাসনালয় আক্রমন, সহায় সম্পত্তির জবরদখল, অপহরন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরীকরন ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মত জঘন্য আক্রমন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না করার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট এর মত বাহারি নামের জঙ্গীরা আস্তানা গেড়েছে। দিনাজপুরে সপ্তদশ শতাব্দীর কান্তাজিউর মন্দিরে লাখ লাখ ভক্তের উপস্থিতিতে বোমা হামলা, পঞ্চগড়ে গৌড়ীয় মঠে হামলা ও মধ্যযুগীয় কায়দায় পুরোহিত হত্যা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিদেশি নাগরিক হত্যা, এক ডজন খৃষ্টান যাজককে হত্যার চেষ্টা এবং আহমদিয়া ও শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলাসহ অনেকগুলো ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার এর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই ছিল সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনের মূল বিষয়গুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ টি দাবী পেশ করা হয়, যেগুলো এখানে হুবহু তুলে ধরা হল- একঃ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিতে মাইনরিটি ও হেইট ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন। দুইঃ সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে মাইনরিটি মন্ত্রনালয় গঠন। তিনঃ সরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা সারা দেশের সকল দেবোত্তর সম্পত্তি ও রাজা ও জমিদার বাড়িগুলো ফাউন্ডেশন গঠন করে এসব রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব ইহার অধীনে ন্যস্ত করা। চারঃ সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের ইতিহাস ও সভ্যতা পাঠ্যসুচীর অন্তর্ভুক্তকরন। পাঁচঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সরকারী খরচে স্বতন্ত্র হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। ছয়ঃ পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, আদিবাসী এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের প্রত্যাহার করে আদিবাসীদের কাছে তাদের ন্যায্য ভুমি ফিরয়ে দেয়া। সাতঃ স্বাধীনতা উত্তর সকল সাম্প্রাদায়িক অপরাধের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান। আটঃ অবিলম্বে সকল সাম্প্রদায়িক হামলা ও জবর দখল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান। গোটা দু'য়েক জগত শেঠ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের আন্দোলনকে একটি দল ও গোষ্ঠীর স্বার্থের বেড়াজালে বন্দী করে রাখতে চায়। তারাই মুলতঃ গরু জবাই তত্ত্ব নিয়ে এতো বেশী মাতামাতি ও এক শ্রেণীর সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের যোগসাজশে উদোর পিণ্ডি ভুঁদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। তারা গরু নিয়েই যেহেতু কথা বলতে আগ্রহী, তাহলে গরুর কথাই বলি। গেল বছর কোরবানির সময় ঢাকার রামপুরায় অবস্থিত শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরের উঠোনে গরু জবাই করার সংবাদ আমরা ছবি সমেত পত্রিকায় দেখেছি। কোরবানির মাংস না ঢেকে, সম্পূর্ণ উন্মূক্ত অবস্থায় হিন্দু বাড়ির উপর দিয়ে আনা-নেয়া হয়। বাজারে ও রেস্তোরায় দোকানীরা অন্য মাংসের সাথে গরুর মাংস নির্দ্বিধায় রেখে দেয়। এই ঘটনাগুলো হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত স্পরশকাতর ও আপত্তিকর। এটা যে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে, দেশের সংখ্যাগুরু জনগণ বোধ হয় ভুলেই গেছে। তাছাড়া যত্রতত্র কোরবানি, হার-মাংস-চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা পরিবেশকে দূষণের পাশাপাশি জন জীবনেও বেশ অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। তাবদ বিশ্বের সর্বত্রই কসাইখানায় জবাই সম্পাদন করা হয়, এমনকি সৌদি আরবেও। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যাপারে নিয়ম নীতির কোন বালাই নাই। এখন একজন ব্যক্তি যদি অন্য কোন কারনে না হোক, শুধুমাত্র তার ধর্মীয় অধিকারের দাবীতে বলে, হয় কোরবানির ক্ষেত্রে যথাযথ একটা পন্থা বেছে নিতে হবে, না হয় তা বন্ধ করতে হবে তাহলে কি সেটা অপরাধ? কিন্তু সাংবাদিকরা শ্যামল চক্রবর্তীর বলা কথাগুলো থেকে বেছে বেছে কিছু সাউন্ড বাইট নিয়েছে এবং তাহা এমন বিকৃত করে ছাপিয়েছে যাহা মূল বক্তব্যের সাথে কোন ভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে, তাতে দেশের সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব নিয়ে আমি যারপরনাই শঙ্কিত। কেউ কেউ লিখেছেন গরু কোরবানি দিতে না পারলে তারা পরের ঈদে মালাউনদের কোরবানি দিবেন। কেউ লিখেছেন "যুব সমাজ কে বলি এতদিন নিজের জাত ভাইদের কে হত্যা করেছ এখন ঐ মালূ নেতাদের কে হত্যা কর" । "এরা তোমার আল্লাহর ও রাসুলের বিরুদ্ধে, তোমার বিরুদ্ধে আইন চাচেছ তাই এদেরকে হত্যা কর"। " সামনে যে সময় আসবে ঐ সময় বুঝবিরে শালা মালাউনরা ,তখন গরু জবাই বাদ দিয়ে তোদের করা হবে" । "বৌদ্ধরা মায়নমারে জীবিত মুসলমানদের কাবাব বানায় আর আমাদের দেশে লাল কাপড় পরে গায়ে বাতাস লাগায়; বাহ কি চমৎকার" ৷ " সালা গরু জবাই না করে হিন্দু জবাই করা দরকার" ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যে আর কিছু না হোক —হিন্দুদের প্রতি সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মনোভাবটা খুব স্পষ্টভাবেই প্রকাশ পেয়েছে। শুনেছি বাংলাদেশে সাতান্ন ধারা না কি যেন একটা আইনের খুব ধাঁর আছে। উপরোক্ত হুমকি গুলো ঐ ধারায় পড়ে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগের একটি বিবৃতি চোখে পড়েছে। এই দলটির উপর জামাত ভর করেছে একথা মাঝে মাঝেই শুনা যায় । তাদের বিবৃতির পর সেব্যাপারে আমার আর কোন সন্দেহ নাই। অত্যন্ত অশালীন ও বিদ্বেষপূর্ণ বিবৃতিটি আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা, কোন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই আশা করা যায় না। বলা বাহুল্য, ঐক্য পরিষদের বক্তব্যকে গ্রাহ্য না করে তারা ক্ষীণদৃষ্টি ও বৈরী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এতে তাদের সাম্প্রদায়িক চরিত্র ও মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু এই বৈরীতা কার সাথে? মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘুরা একচ্ছত্র ভাবে তাদের ভোটের এক তৃতীয়াংশ। সংখ্যালঘুরা যদি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলকে সমান হারেও ভোট দেয় তাহলে এই দলটি নির্বাচনী লড়াইয়ে শহীদ বা গাজী দুটোর একটাও হবে না। একটি রাজনৈতিক দল হয়েও আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদেরকে তুলোধুনো করেছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই মর্মাহত। একজন হিন্দু হিসাবে সঙ্গত কারনেই আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন মনে করি। বিবৃতিতে তারা চাকুরী বাকুরীতে সঙ্খালঘুদেরকে অধিকতর সুযোগ দিচ্ছে দাবী করে খুব আটখানা ভাব দেখিয়েছে। চাকুরী বাকুরী কোন ব্যক্তি বা দলের বাপ দাদার সম্পত্তি নয়, নাগরিক হিসাবে প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার। সংখ্যালঘুরা দয়া দাক্ষিণ্য নয়, মেধার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডে সমতা চায়। তারা সমান অধিকার চায়। রাষ্ট্রপরিচালকদের সাথে সংখ্যালঘুদের সম্পর্ক মহাজন-ক্রীতদাসের নয়। এযাবৎ বাংলাদেশে ১৭ জন রাষ্ট্রপতি, ১০ জন প্রধানমন্ত্রী, ১১ জন স্পিকার, ১২ জন ডেপুটি স্পিকার, ২১ জন প্রধান বিচারপতি, ৫ জন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, ১০ জন চিফ হুইপ, ১৫ জন অ্যাটর্নি জেনারেল, ৪৪ জন সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীপ্রধান, ২৮ জন পুলিশের আইজি, ১০ জন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ২৩ জন জাতীয় অধ্যাপক, ১১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালন করেছে। ভেবে দেখুন এদের মধ্যে কয়জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের? এযাবত শুধু একজন বিচারপতি ও একজন জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে।এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (১৫ জন), আইন কমিশনের চেয়ারম্যান (০৭ জন), জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি (১৪ জন), মহা হিশাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (১১ জন), র্যা ব এর মহাপরিচালক (০৮ জন), বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক (১৫ জন), পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান (১৩ জন), দুদকের চেয়ারম্যান (০৪ জন), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (১২ জন) ইত্যাদি পদেও এখনো কোন সংখ্যালঘুকে স্থান দেয়া হয়নি। মন্ত্রীপরিষদে কখনো কি সংখ্যালঘুরা শুন্য, এক বা দুইয়ের কোটা অতিক্রম করেছে? তাও হাফ ও কোয়ার্টার মন্ত্রী। সারা বিশ্বে এতগুলো রাষ্ট্রদূতের কয়জন সংখ্যালঘু? মেধা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তের সংখ্যা শুন্য হতে পারে, আবার হতে পারে দশ। কোটা কেনো? তাও আবার একের অধিক নয়। ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। আর এটাও তথ্য উপাত্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠিত যে, নানা অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বেহাত হওয়া সম্পত্তির তিন চতুর্থাংশ আওয়ামী লীগের দখলে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেওয়া রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনটা আওয়ামী লীগ পূরণ করেছে? আদালত কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম সহ সামরিক শাসনামলে গৃহীত সকল কালাকানুন বাতিল করার পরও আওয়ামীলীগ স্বপ্রণোদিত হয়ে সংবিধানে কৌশলে রাষ্ট্রধর্ম পুনর্বহাল করেছে। এর কি খুবই প্রয়োজন ছিল? শত্রু সম্পত্তি আইনের শুধু "শত্রু" বাতিল হয়েছে, "সম্পত্তি" এখনো দূর অস্ত রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এটা ভুলে যেতে পারে না যে তাদের আমলেই উখিয়া এবং পটিয়াতে শত শত বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই গেল নির্বাচনের আগে পাবনার সাথিয়া ও কুষ্টিয়ার অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রামে ও মহল্লায় আক্রমন হয়েছে। তাহলে জামাত-বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কোথায়? বর্তমানে সংঘটিত আক্রমনের মাত্রা কি জামাত-বিএনপি দুঃসাশনের চেয়ে একটুও কম? আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে, ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ তুলে মৌলবাদীদের সস্তা বুলি ও জুজুর ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যাহা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ও দুঃখজনক। একই ভাবে এক সাংবাদিক সেদিনের সভায় ভারতে গরু জবাইয়ের অবতারনা করে ধুম্রজাল সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক উত্তরদাতা, এটা ভারতের ব্যাপার এবং ভারতীয় দুতাবাসে গিয়ে জিগ্যেস করার কথা বলার পর ও সাংবাদিক মহোদয় উত্তর জানার জন্য নাছোড়বান্দা ছিলেন। পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে সংবাদটি পরিবেশন করেন। আওয়ামী লীগ যখন ভারতের কথা তুললই, তাহলে তারা কেন মুসলমান অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘুদের অধিকার হরন এমনকি সারা বিশ্বের অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের কথা তুললেন না। ভারতের ঘটনা নিয়ে তারা মারাত্মক তথ্যবিভ্রাট ও ঘটিয়েছেন। ভারতে দাঙ্গার শুরুটা হয়েছিল গোধরা রেল স্টেশনে হিন্দুদের দ্বারা ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দুই হাজার মুসলমান নাগরিককে পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে নয়, বরং তার উলটো। ট্রেনের বগীতে মুসলমানদের আগুনে হিন্দুরা মারা গিয়েছিল। হিন্দুরা বাংলাদেশে কিছু না করেই মার খায়, যত্রতত্র নানা অজুহাতে নিপীড়িত হয়। ভাবতে পারেন বাংলাদেশে তারা ট্রেনে আগুন দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করলে কি হত? অভিযোগ তুলেছেন হিন্দুরা বাংলাদেশে পুকুরে ডুব দেন আর ভেসে উঠেন ভারতে। কি জঘন্য মানসিকতা আপনাদের। বাপ দাদার ভিটামাটি ছেড়ে হিন্দুরা কেন চলে যায় তা আপনারা অনুধাবন করতে পারবেন না কখনই, কারন আপনাদের অনেকেরই হাত পরিস্কার নয়। আমাদের নাবালিকা মেয়েদের যখন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আপনাদের ভুমিকা কি সেটা তো নতুন করে জানার প্রয়োজন নেই। কোন ভাবে অপহৃত একজন মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকার। এখনো প্রচলিত, তথাকথিত সরকারী নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে নাবালিকা সন্তানকে অভিভাবকদের হাতে তুলে না দিয়ে, আত্মীয়-পরিজনদের উপর আক্রমনের ভয় ভীতি দেখিয়ে ধর্মান্তরে প্ররোচনা দেয়া হয়। যেটা অপহরণকারীরা করতে পারে না, সরকারী হেফাজতে অবলীলায় তাই হয়ে যায়। অদ্যাবধি বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর বিচারের ক্ষেত্রে সব সরকারেরই এতো অনীহা কেন? মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা কেন দলে দলে দেশত্যাগ করছে? আর কয়জনই শান্তির দেশ বাংলাদেশে আসছে? বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা সবাই বাঙ্গালী হয়ে গেছি। বললেই হল, ব্যাপারটা কি তাই? একজন চাকমা, সাঁওতাল বা মং কে আপনারা বাঙালী বলেন কি করে। তারা তো তাদের ভুমিতে আদিবাসী, তাদের রক্তে কখনো বাঙালীত্ব ছিল না। জাতিসংঘ সহ সারা বিশ্ব যখন আদিবাসীদের স্বাতন্ত্রকে সংরক্ষন করতে তৎপর সেখানে আপনারা একটি গর্বিত জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক স্বকীয়তাকে অস্বীকার করি কিভাবে? আমি কি আমার বাঙালীত্ব বিসর্জন দিতে পারব? স্বাধীনতার কথা আপনারা বলেন, কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ কি তা কি ভেবে দেখেছেন? এবার আসি দেশের গনতন্ত্র প্রসঙ্গে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে পচাত্তর পর্যন্তই দেশে গনতন্ত্র ছিল। বাংলার হিন্দু-মুসলময়ান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকলের রক্ত রঞ্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ইহা কারো একার কৃতিত্ব নয়। সদ্য একটি স্বাধীন দেশে যুদ্ধজয়ী জাতি চেয়েছিল দেশটাকে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে। তার আগেই হায়নারা ছোবল হেনেছে। যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী, গর্বিত একটি দল আওয়ামী লীগ সেটা অস্বীকার করার উপায় নাই। অস্বীকার করার উপায় নাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বও। কিন্তু দেনা পাওনার বিচারে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কেহই সমালোচনার বাইরে নয়, বঙ্গবন্ধু ও না। গনতন্ত্রের "মানস পুত্র" সোহরাওয়ারদীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গনতন্ত্র কোথায়, কবে ছিল আমাদের দেশে? ঐ যে স্বাধীনতার পরের তিন বছর ছাড়া সব গণতন্ত্রের নমুনাই আমরা দেখেছি। হাঁ-না গনতন্ত্র আমরা দেখেছি। বন্দুকতন্ত্র দেখেছি। জামাত-বিএনপির ইসলামতন্ত্র দেখেছি। ফখরুদ্দিনের মাইনাস তন্ত্র দেখেছি। সবশেষে ভোটার ও প্রার্থী ছাড়া যেটা হয়েছে তার কি তন্ত্র নাম দেওয়া যায় তা আমি জানিনা। গনতন্ত্র থাকলে সংখ্যালঘুরা নির্বিবাদে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র জায়গা করে নিতে পারতো। গনতন্ত্র থাকলে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড থেকে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হবার কারনে রিক্ত হস্তে ফিরতে হত না অসংখ্য যোগ্য প্রার্থীরা। তারাও হতে পারতো প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। এখন সবই ভেল্কি বাজি। যেমন খুশী তেমন সাজো ব্যাপার স্যাপার। এসব দেখে সোহরাওয়ারদী সাহেব কবরেও আড়মোড়া করছেন বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিরসনে সংখ্যাগুরু জনগনের সক্রিয় সমর্থন অপরিহার্য। ঐক্য পরিষদের বক্তব্যেও সেটা বলা হয়েছে। দুঃখজনক ভাবে সেটাকে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করলেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা শান্তিতে আছে, বা অমুক-তমুক দেশের চেয়ে ভালো আছে এসব বলে প্রকারান্তরে পরিস্থিতির ব্যাপারে নিজেদের অজ্ঞতা বা সমস্যা সমাধানে তাদের অনীহাই প্রকাশ করেছেন। শান্তি শান্তি বললেই সংখ্যালঘুরা শান্তি পাবে না, আস্বস্ত হবে না। শান্তিকে এমন শান্তিতেই রাখা হয়েছে যে, শান্তির মা এখন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যেতে বাধ্য হচ্ছে। পরিশেষে, সাংবাদিক সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছিল পঞ্চগড়ে শান্ত গৌড়ীয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলাকেটে হত্যা করার প্রতিক্রিয়ায়। এর মাস দুয়েকের মধ্যে আরও বেশ কিছু মন্দির, গির্জা সহ সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন ও হুমকি এসেছে। এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দল বিবৃতি দিয়েছে কিনা তা আমার চোখে পড়েনি। তাই গরু জবাই নিয়ে গাত্রদাহ খুবই রহস্যজনক। যদি কেউ গরু, শুকর, কচ্ছপ, এমনকি আরশোলাও খায়, আমার মনে হয়না সেটা নিয়ে কারো আপত্তি থাকতে পারে। কে কি খাবে বা না খাবে সেটা মানুষের মৌলিক অধিকার ও রুচির ব্যাপার। কিন্তু সকলকে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, নিজের অধিকার চর্চা করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকারের অমর্যাদা না হয়। তাহলেই মানুষে মানুষে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। প্রতিটি জনগোষ্ঠীই নিজ দেশে নিজ অধিকার নিয়ে, স্বাধীনতা নিয়ে থাকতে চায়। কারো অনুকম্পা নিয়ে বেঁচে থাকার মানে স্বাধীনতা নয়। জন্মভিটায় মুক্ত ও নির্ভীক পরিবেশে সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার নামই স্বাধীনতা। ইহাই গনতন্ত্রের সূতিকাগার। (প্রবন্ধটি লেখকের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত) |
|
| |
| |
| | | | | | Reply to this email to comment on this post. | |
| | | | This message was sent to jnrsr53@yahoo.com. If you don't want to receive these emails from Facebook in the future, please unsubscribe. Facebook, Inc., Attention: Community Support, Menlo Park, CA 94025 |
| | |
|